Ajker Patrika

পোশাকশ্রমিকদের নতুন মজুরি বাস্তবায়নে ক্রেতাদের কাছে বিজিএমইএর চিঠি

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১৫: ৪৫
পোশাকশ্রমিকদের নতুন মজুরি বাস্তবায়নে ক্রেতাদের কাছে বিজিএমইএর চিঠি

পোশাকশ্রমিকদের নতুন মজুরি বাস্তবায়নে বিদেশি ক্রেতাদের সহায়তা চেয়েছে এই খাতের শিল্পমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। গতকাল বুধবার বিদেশি ব্র্যান্ড, খুচরা বিক্রেতা ও বায়ারদের বাংলাদেশি প্রতিনিধিদের উদ্দেশে সংগঠনটির সভাপতি ফারুক হাসানের লেখা চিঠিতে সহায়তা চাওয়া হয়।

২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকেই বিজিএমইএ নতুন মজুরি বাস্তবায়নের প্রস্তুতি নিয়েছে উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি ও শ্রমিকদের শালীন জীবনযাপন নিশ্চিত করা নিয়ে বিশ্ব সম্প্রদায়, বিভিন্ন ফ্যাশন ব্র্যান্ড ও খুচরা বিক্রেতাদের তাগিদ ছিল। কিন্তু এই বর্ধিত মজুরি বাস্তবায়ন নিঃসন্দেহে প্রতিটি কারখানার ব্যয় বাড়াবে। 

চিঠিতে বিজিএমইএর সভাপতি জানান, বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির জন্য অ্যামফোরি, আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশন (এএএফএ), অ্যাকশন কোলাবোরেশন ট্রান্সফরমেশনের (এসিটি) মতো প্রভাবশালী সংস্থাগুলো তাগিদ দিয়েছে। এমনকি অনেক সংস্থা সরাসরি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কাছে শ্রমিকদের মজুরির বিষয়টি নিয়ে চিঠি লিখেছিলেন। 

ফারুক হাসান চিঠিতে উল্লেখ করেন, মজুরি সমস্যাসহ শ্রমিকের ক্ষমতায়ন ও অধিকারের বিষয়ে ইউরোপীয় কমিশন ও যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রত্যাশা ছিল সাম্প্রতিক পদক্ষেপ ও কার্যক্রমের মাধ্যমে গতিশীল হয়েছে। গত ১৫ ডিসেম্বর এএএফএর কাছে লেখা ৮ মার্কিন কংগ্রেসম্যানের চিঠির কথাও উল্লেখ করেন তিনি। সেই চিঠিতে তাঁরা বাংলাদেশের গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরির দাবিকে জোরালোভাবে সমর্থন করার জন্য এএএফকে অনুরোধ জানান। 

বিদেশি ক্রেতাদের কাছে লেখা চিঠিতে বিজিএমইএর সভাপতি লেখেন, ‘আমরা নীতিগতভাবে শ্রমিকদের উন্নত জীবনযাপনের পক্ষে (প্রকৃতপক্ষে আমাদের অনেক কারখানায় শ্রমিকদের মূল মজুরির বাইরে এবং আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক নয় এমন অনেক সুবিধা দেওয়া হয়) এবং শ্রমিকেরা খুশি হলে আমরা আনন্দিত বোধ করি। কিন্তু আমাদের তৈরি পোশাকের এমন একটি মূল্য প্রয়োজন, যা আমাদের ন্যূনতম মজুরি বজায় রাখতে সক্ষম করবে।’ 

নতুন মজুরি নির্ধারণের ক্ষেত্রে মজুরি বোর্ড ভারসাম্য বজায় রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে উল্লেখ করে ফারুক হাসান বলেন, মূলত শ্রমিকদের জীবিকা সুরক্ষিত রাখতে ও এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে এমনটা করা হয়েছে। ‘নতুন মজুরি যাতে যথাসময়ে পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয় তা নিশ্চিত করা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।’ 

চিঠিতে আরও বলা হয়, বিদ্যুতের দাম ২৫ শতাংশ, গ্যাসের দাম ২৮৬ দশমিক ৫ শতাংশ ও ডিজেলের দাম ৬৮ শতাংশ বৃদ্ধি পাওয়ায় পরিবহন এবং অন্যান্য ব্যয়ও বেড়ে গেছে। চলতি বছরের জুলাই থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রাস্ফীতি রোধে সুদহার বাড়িয়েছে, যা গার্মেন্টস মালিকদের ব্যয় আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়েছে এবং একই সঙ্গে পণ্যের দামও বেড়েছে। 

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘গত ১৫ নভেম্বর ঢাকায় বিজিএমইএর অফিসে বিভিন্ন ব্র্যান্ড, খুচরা বিক্রেতা ও তাদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে একটি বৈঠকে উল্লিখিত বিষয়গুলো আলোচনা করেছি। তৈরি পোশাকের মূল্য নির্ধারণের সময় মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টি সমন্বয় করার বিষয়ে অনেকের কাছ থেকে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় আমরা আপনার কাছে কৃতজ্ঞ। আমরা বেশ কয়েকটি ব্র্যান্ডের কাছ থেকে অফিশিয়াল চিঠিও পেয়েছি, যেখানে মজুরির বিষয়টি প্রশমিত করতে মূল্য বৃদ্ধির বিষয়ে তাদের অবস্থান নিশ্চিত করা হয়েছে।’ 

বিদেশি ব্র্যান্ড, খুচরা বিক্রেতা ও বায়ারদের বাংলাদেশি প্রতিনিধিদের মজুরি বৃদ্ধির পাশাপাশি অন্যান্য খরচ বৃদ্ধির প্রভাবও বিবেচনা করার অনুরোধও জানান বিজিএমইএ সভাপতি। সব পক্ষের পারস্পরিক সহযোগিতার ওপর জোর দেন তিনি, যাতে তৈরি পোশাকের সরবরাহ চেইন মসৃণভাবে চলতে পারে এবং বাংলাদেশ বিদেশি ক্রেতাদের কাছে আরও ভালোভাবে পণ্য সরবরাহ করা যায়।

ফারুক হাসান বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, সমর্থন ও সহযোগিতার এই যাত্রা অব্যাহত থাকবে।’ 

এর আগে গত ২০ সেপ্টেম্বর, ৮ নভেম্বর ও ১৭ নভেম্বর বিদেশি ব্র্যান্ড, খুচরা বিক্রেতা ও বায়ারদের বাংলাদেশি প্রতিনিধিদের কাছে একই ইস্যুতে চিঠি লিখেছিলেন বিজিএমইএ সভাপতি। সেসব চিঠিতেও তিনি ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নে তাদের সহায়তা কামনা করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত