১৪ জেলায় ৪ হাজার কোটির প্রকল্প, গ্রিডে যুক্ত হবে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ

  • আসছে নতুন প্রকল্প, ৬ বিভাগের ১৪ জেলায় বাস্তবায়ন
  • সঞ্চালন ও বিতরণ লাইন স্থাপন
  • জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে ২০৩০ সালে
  • খরচ হবে ৪০০৪ কোটি টাকা
মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা
প্রকাশ : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২: ০০
আপডেট : ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১: ৫৫

দেশে বিদ্যুতের চাহিদা দিনে দিনে বাড়লেও সরবরাহে এখনো বড় ঘাটতি রয়ে গেছে। প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দিতে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎকে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করতে সরকার হাতে নিয়েছে একটি বিশেষ প্রকল্প—‘পাওয়ার ট্রান্সমিশন স্ট্রেংদেনিং অ্যান্ড ইন্টিগ্রেশন অব রিনিউবেল এনার্জি প্রজেক্ট’।

এই প্রকল্প দেশের ছয়টি বিভাগের ১৪টি জেলায় বাস্তবায়ন করবে পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশ পিএলসি। বিভাগগুলো হলো ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, খুলনা, বরিশাল ও রাজশাহী। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয়ে ২০২৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি সম্পন্ন করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

সরকারের পাওয়ার সিস্টেম মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে।

নবায়নযোগ্য জ্বালানি হচ্ছে এমন শক্তির উৎস, যা সহজে পুনরায় ব্যবহার করা যায়। যেমন সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি এবং জ্বালানির অন্যান্য প্রাকৃতিক উৎস। এর ব্যবহার পরিবেশের ওপর চাপ কমায় এবং দীর্ঘমেয়াদে জীবাশ্ম জ্বালানির বিকল্প হিসেবে কার্যকর। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ করার পাশাপাশি দেশের বিদ্যুৎব্যবস্থার মানোন্নয়ন করা হবে। এতে করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতেও বিদ্যুতের প্রবাহ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে থাকা প্রকল্পটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় গত ২৭ অক্টোবর উত্থাপন করা হয়েছে। এখন জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য (সচিব) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, প্রকল্পটি ইতিমধ্যে নীতিগত অনুমোদন পেয়েছে এবং সরকার এটি নিয়ে ইতিবাচক অবস্থান নিয়েছে। তবে প্রকল্পের সুষ্ঠু বাস্তবায়নের জন্য কিছু সুপারিশ প্রদান করা হয়েছে।

মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, কর্মপরিকল্পনা আরও সুনির্দিষ্ট করা এবং প্রকল্প বাস্তবায়নের বিভিন্ন ধাপের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নির্ধারণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। সুপারিশগুলো কার্যকর করা হলে প্রকল্পের বাস্তবায়ন আরও সহজ এবং ফলপ্রসূ হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সরকারের এই ইতিবাচক মনোভাব প্রকল্পটির সফল বাস্তবায়নের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলছে, যা দেশের বিদ্যুৎ খাতে নতুন মাত্রা যোগ করবে।

প্রকল্পের আর্থিক কাঠামো

প্রকল্পটির মোট ব্যয় ৪ হাজার ৪ কোটি ২ লাখ টাকা, যা তিনটি উৎস থেকে নির্বাহ করা হবে। সরকারের তহবিল থেকে ১০২২ কোটি ৪০ লাখ টাকা (২৫.৫৩%), এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক থেকে ঋণ হিসেবে ২৩৬০ কোটি টাকা (৫৮.৯৪%) এবং পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশের নিজস্ব তহবিল থেকে ৬২১ কোটি ৬২ লাখ টাকা (১৫.৫৩%) ব্যয় করা হবে। এই ত্রিমুখী আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।

কেন এই প্রকল্প?

দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের একটি বড় অংশ জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। সোলার প্যানেল ও বায়ুশক্তির মতো নবায়নযোগ্য উৎস থেকে উৎপাদিত বিদ্যুৎ পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী। বিশেষত কক্সবাজারের পেকুয়া, চকরিয়া, মাতারবাড়ী, মহেশখালী ও টেকনাফে ১ হাজার ৫৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করতে আধুনিক সঞ্চালনব্যবস্থা অপরিহার্য।

প্রকল্পের কার্যক্রম

প্রকল্পের অধীনে আধুনিক অবকাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে, যেমন—একটি ৪০০ কেভি গ্রিড, ২টি ২৩০ কেভি গ্রিড ও ৭টি ১৩২ কেভি গ্রিড উপকেন্দ্র, ১৬৩.৩০ কিলোমিটার নতুন সঞ্চালন লাইন, ৭৫ কিলোমিটার পুরোনো লাইন উন্নত কন্ডাক্টরে রূপান্তর এবং ৪১ একর জমি অধিগ্রহণ। এ ছাড়া বিদ্যুৎ লোড সেন্টারগুলো জেনারেশন সেন্টারের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে। এই পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে সঞ্চালনব্যবস্থায় বড় উন্নয়ন আসবে।

বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে পাওয়ার গ্রিড বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আবদুর রসিদ খান কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে প্রকল্প সম্পর্কে অবহিত বলে জানিয়েছেন তিনি।

সঞ্চালনব্যবস্থার বর্তমান অবস্থা

বর্তমানে দেশের অনেক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ৩৩ কেভি লাইন ব্যবহার করা হয়, যা মানসম্পন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে অক্ষম। জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ নেটওয়ার্ক (বিতরণ এবং সঞ্চালন লাইন) স্থাপনের মাধ্যমে এই সীমাবদ্ধতা দূর করা হবে। এতে লোড সেন্টারগুলোকে কাছাকাছি জেনারেশন সেন্টারের সঙ্গে সংযুক্ত করার সুযোগ তৈরি হবে।

চ্যালেঞ্জ এবং সুপারিশ

প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় কিছু চ্যালেঞ্জ দেখা দিতে পারে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) সুপারিশ করেছে, ক্রয়সংক্রান্ত বিষয়গুলো সুনির্দিষ্ট করতে হবে। প্রয়োজনীয় পদ ও জনবলের ধরন এবং সংখ্যা নির্ধারণে অর্থ বিভাগের জনবল কমিটির সুপারিশ কার্যকর করতে হবে। দৈনিক ভাতা, প্রশিক্ষণ ব্যয়, ল্যান্ডস্কেপিং ইত্যাদি খাতে বরাদ্দ পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত