ফারুক মেহেদী, ঢাকা
মাস দেড়েক পর জাতীয় নির্বাচন। সরকারি দল আওয়ামী লীগ ব্যস্ত নির্বাচন নিয়ে, বিএনপিসহ অন্য বিরোধীরা আছে আন্দোলনে। একদিকে হরতাল-অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও; অন্যদিকে নির্বাচনী ডামাডোল। প্রার্থী মনোনয়ন, ধরপাকড়, হামলা-মামলা যখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’, তখন নীতিনির্ধারকদের মনোযোগের বাইরে চলে যাচ্ছে অর্থনীতির সংকটগুলো।
ডলার-সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে রিজার্ভে অশনি সংকেত জানান দিচ্ছে, কিন্তু রিজার্ভ বাড়াতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। কমছে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি, গতি ফিরছে না রেমিট্যান্সে, বাড়ছে হুন্ডির দৌরাত্ম্য। এসব ইস্যু অনেকটাই চাপা পড়ে যাচ্ছে রাজনীতির ডামাডোলে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সব অর্থনৈতিক ইস্যু একসঙ্গে সামাল দেওয়ার পরিস্থিতি নেই বলেই হয়তো রাজনীতিটা গুরুত্ব পাচ্ছে। আর অজুহাত তো আছেই। যেমন ধরুন ডলার নেই, এলসি খোলা যাচ্ছে না, বিনিময় হারের সংস্কার, নিত্যপণ্যের দামে মানুষ অতিষ্ঠ–এসব তো ভোটের জন্য রেখে দেওয়ার বিষয় নয়। চাইলেই করা যায়, কিন্তু করা হচ্ছে না। মনোযোগ নেই; কারণ, সুবিধা নেওয়ার বিষয় আছে।’
অর্থনীতির যে বিষয় এই সময়ে জনজীবনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে, তা হলো দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি। সংসারে চাল-ডাল-নুন-তেল জোগাতে স্বল্প আয়ের মানুষের পকেট প্রায় ফাঁকা। মাছ-মাংসের বাজার থেকে অনেক আগেই মুখ ফিরিয়ে নেওয়া এসব মানুষ এখন ডিম, সবজি কিনতেই হিমশিম খাচ্ছে। প্রতিটি পণ্যের আকাশ-ছোঁয়া দামে হু হু করে বেড়ে ওপরে উঠছে মূল্যস্ফীতির গ্রাফ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে চলতি বছরের অক্টোবরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
বর্তমানে একটি পরিবারে যে খরচ হয়, তার প্রায় ৪৮ শতাংশই যায় খাবার কিনতে। সম্প্রতি এশিয়া ফাউন্ডেশন ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) ১০ হাজার মানুষের ওপর একটি জরিপ চালিয়েছে। জরিপের অংশ নেওয়া ৮৪ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি তাঁদের জীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। বাজার পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার স্বল্প আয়ের একটি শ্রেণিকে লক্ষ্য করে টিসিবির মাধ্যমে সুলভ মূল্যে নিত্যপণ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু বাজার বিশ্লেষকেরা মনে করেন, বিভিন্ন অজুহাতে যে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে প্রায় প্রতিটি পণ্যে অতিমুনাফা করছেন, তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া বা বাজারকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।
ডলার-সংকট তীব্র
ডলার-সংকটের শুরুটা হয়েছে প্রায় দুই বছর আগে। এখন এই সংকট তীব্র। একসময় ৪৮ বিলিয়নে উঠে যাওয়া রিজার্ভ এসে ঠেকেছে সরকারি হিসাবে ১৯ বিলিয়ন আর আইএমএফের হিসাবে ১৫ বিলিয়ন ডলারের ঘরে।
বিশ্লেষকেরা মনে করেন, অর্থনীতিকে প্রাণসঞ্চারকারী এই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন যে স্তরে এসে ঠেকেছে, তা রীতিমতো ভয়ের। কারণ, ১৫ বিলিয়নের নিচে নামলেই তা চরম ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। তখন জ্বালানি তেল, নিত্যপণ্য, জরুরি শিল্পের কাঁচামাল আমদানির দায় শোধ করা কঠিন হয়ে পড়বে। অথচ গত দুই বছর অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন, ডলারের দর ধরে না রেখে বাজারের চাহিদা ও সরবরাহের ওপর ছেড়ে দিতে এবং হুন্ডি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়াতে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
আমদানি-রপ্তানি শ্লথ
ডলার সাশ্রয়ে আমদানি কড়াকড়ির কারণে অত্যাবশ্যক পণ্যের এলসি বা ঋণপত্র খুলতে গিয়েও হোঁচট খাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বড় বড় শিল্পগ্রুপের উদ্যোক্তারাও এখন এলসি খুলতে হিমশিম খাচ্ছেন। এলসি খুলতে বিভিন্ন শর্ত দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। এই অবস্থায় কমে এসেছে সার্বিক আমদানি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য, বিভিন্ন ব্যাংকের নির্বাহী ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে, আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে আমদানি কমেছে ১৮ শতাংশ। কিন্তু খাতভিত্তিক ঋণপত্র খোলার হার কমেছে আরও বেশি। ভোগ্যপণ্যে ৩৯ শতাংশ, শিল্পের কাঁচামালে ২৮ শতাংশ, মূলধনি যন্ত্রপাতি ২২ শতাংশ আর জ্বালানি পণ্যে ২২ শতাংশ কমেছে এলসি।
বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে রপ্তানি আয়ের ওপর অনেকাংশেই নির্ভরতা রয়েছে। অথচ তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই রপ্তানি প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরের মধ্যে ইউরোপের একক বৃহত্তম বাজার জার্মানিতে প্রায় সাড়ে ১১ শতাংশ রপ্তানি কমেছে। শীর্ষ বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৩-২৪ সালের জুলাই-অক্টোবরে পোশাক রপ্তানি কমেছে ৩ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ।
বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যে বড় বাজার ইউরোপ ও আমেরিকা। বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি, অর্থনৈতিক মন্দার আভাসে সেখানকার মানুষ খরচ কমিয়ে এনেছে।
বাংলাদেশের রপ্তানি কমে যাওয়ার এটি একটি বড় কারণ। পাশাপাশি মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশনের হুমকিও রপ্তানিতে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। এই অবস্থায় রপ্তানি বাজারের প্রসার বা বিকল্প বাজার তৈরি করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না।
প্রবাসী আয়ে সুখবর নেই
রিজার্ভ বাড়াতে প্রবাসী আয় বাড়ানোর ক্ষেত্রেও গতানুগতিক পদক্ষেপ ছাড়া অভিনব বা কার্যকর কোনো উদ্যোগের কথা জানা যায়নি। তথ্য বলছে, গত তিন বছরে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে শ্রমিকের অভিবাসন প্রায় চার গুণ বেড়েছে। কিন্তু সৌদি থেকে রেমিট্যান্স কমেছে ১৭ শতাংশের বেশি। রেমিট্যান্সের প্রবাহ গত আগস্ট মাসে জুলাইয়ের চেয়ে ২১ শতাংশ কম এবং সেপ্টেম্বরে ১৫ শতাংশ কমে যাওয়ার চিত্র উদ্বেগের বিষয়। অক্টোবরে সামান্য বাড়লেও তা শিগগির অনেক বেড়ে যাবে—এমনটি মনে করছেন না বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রণোদনা বাড়ানো আর ব্যাংকগুলোকে সুপরামর্শ দেওয়া ছাড়া সৃজনশীল বা কঠোর আইনি উদ্যোগ নিতে পারেনি।
পুঁজিবাজারে পতন
সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আশার স্থল পুঁজিবাজার এখন বেদনার কারণ হয়ে উঠেছে। কয়েক মাস ধরে কেবল পতনের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে বাজারটি। ফ্লোর প্রাইসের কৃত্রিম নিয়ন্ত্রণে কিছু শেয়ারের দর ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা হচ্ছে ঠিকই, তবে বাস্তবে পুঁজিবাজার এখন নীরবে প্রায় ডুবছে বলে মনে করেন বাজার বিশ্লেষকেরা। একসময় সাড়ে ৭ হাজার পয়েন্টে উঠে যাওয়া সূচক এখন ৬ হাজার ২০০ পয়েন্টের ঘরে। লেনদেন প্রায় ৩ হাজার কোটির ঘর ছুঁই ছুঁই অবস্থা থেকে নেমে এসে ঠেকেছে ৩৫০ কোটির ঘরে। বিএসইসি সূত্র থেকে জানা যায়, নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির রুটিন তদারকি ছাড়া বাজারে তহবিল জোগান দেওয়া, আস্থা ফেরানোসহ একে টেকসই করার তেমন কার্যকর পদক্ষেপ নেই।
বাড়ছে রাজস্ব ঘাটতি
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর ) তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জানা যায়, অর্থবছরের গত চার মাসে রাজস্ব আয়ে ঘাটতি পড়েছে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের চেয়ারম্যান সম্প্রতি বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে নির্বাচন ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিদ্যমান সময়ে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আয় নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন। রাজস্ব আয় ঠিকমতো না হওয়ার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে। চলতি অর্থবছরের গত চার মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার গত আট বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, সরকারের তহবিল-সংকটের কারণেই মূলত এডিপি বাস্তবায়নের হার বাড়ানো যাচ্ছে না।
সার্বিক বিষয়ে সাবেক আমলা ও ট্যারিফ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আজিজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখন সবাই ঢিলেমি দিয়েছে। নির্বাচনী ডামাডোলে প্রশাসনে কিছুটা গা-ছাড়া ভাব থাকা অস্বাভাবিক নয়। এ সময়ে রাজস্ব আয়, রেমিট্যান্স বা উন্নয়নকাজ নিয়ে সরকারের ভেতরে যতটা উদ্বেগ থাকার কথা, তার চেয়ে নজর বেশি ভোটের দিকে। মাত্র দেড় মাস তো। এরপর নতুন সরকার এসে ওই বিষয়ে নজর দেবে বলে আমার ধারণা।’
মাস দেড়েক পর জাতীয় নির্বাচন। সরকারি দল আওয়ামী লীগ ব্যস্ত নির্বাচন নিয়ে, বিএনপিসহ অন্য বিরোধীরা আছে আন্দোলনে। একদিকে হরতাল-অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও; অন্যদিকে নির্বাচনী ডামাডোল। প্রার্থী মনোনয়ন, ধরপাকড়, হামলা-মামলা যখন ‘টক অব দ্য কান্ট্রি’, তখন নীতিনির্ধারকদের মনোযোগের বাইরে চলে যাচ্ছে অর্থনীতির সংকটগুলো।
ডলার-সংকট তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে রিজার্ভে অশনি সংকেত জানান দিচ্ছে, কিন্তু রিজার্ভ বাড়াতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। কমছে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি, গতি ফিরছে না রেমিট্যান্সে, বাড়ছে হুন্ডির দৌরাত্ম্য। এসব ইস্যু অনেকটাই চাপা পড়ে যাচ্ছে রাজনীতির ডামাডোলে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সব অর্থনৈতিক ইস্যু একসঙ্গে সামাল দেওয়ার পরিস্থিতি নেই বলেই হয়তো রাজনীতিটা গুরুত্ব পাচ্ছে। আর অজুহাত তো আছেই। যেমন ধরুন ডলার নেই, এলসি খোলা যাচ্ছে না, বিনিময় হারের সংস্কার, নিত্যপণ্যের দামে মানুষ অতিষ্ঠ–এসব তো ভোটের জন্য রেখে দেওয়ার বিষয় নয়। চাইলেই করা যায়, কিন্তু করা হচ্ছে না। মনোযোগ নেই; কারণ, সুবিধা নেওয়ার বিষয় আছে।’
অর্থনীতির যে বিষয় এই সময়ে জনজীবনে সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছে, তা হলো দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি। সংসারে চাল-ডাল-নুন-তেল জোগাতে স্বল্প আয়ের মানুষের পকেট প্রায় ফাঁকা। মাছ-মাংসের বাজার থেকে অনেক আগেই মুখ ফিরিয়ে নেওয়া এসব মানুষ এখন ডিম, সবজি কিনতেই হিমশিম খাচ্ছে। প্রতিটি পণ্যের আকাশ-ছোঁয়া দামে হু হু করে বেড়ে ওপরে উঠছে মূল্যস্ফীতির গ্রাফ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে চলতি বছরের অক্টোবরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ।
বর্তমানে একটি পরিবারে যে খরচ হয়, তার প্রায় ৪৮ শতাংশই যায় খাবার কিনতে। সম্প্রতি এশিয়া ফাউন্ডেশন ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) ১০ হাজার মানুষের ওপর একটি জরিপ চালিয়েছে। জরিপের অংশ নেওয়া ৮৪ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি তাঁদের জীবনে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। বাজার পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার স্বল্প আয়ের একটি শ্রেণিকে লক্ষ্য করে টিসিবির মাধ্যমে সুলভ মূল্যে নিত্যপণ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু বাজার বিশ্লেষকেরা মনে করেন, বিভিন্ন অজুহাতে যে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে প্রায় প্রতিটি পণ্যে অতিমুনাফা করছেন, তাঁদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া বা বাজারকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।
ডলার-সংকট তীব্র
ডলার-সংকটের শুরুটা হয়েছে প্রায় দুই বছর আগে। এখন এই সংকট তীব্র। একসময় ৪৮ বিলিয়নে উঠে যাওয়া রিজার্ভ এসে ঠেকেছে সরকারি হিসাবে ১৯ বিলিয়ন আর আইএমএফের হিসাবে ১৫ বিলিয়ন ডলারের ঘরে।
বিশ্লেষকেরা মনে করেন, অর্থনীতিকে প্রাণসঞ্চারকারী এই বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন যে স্তরে এসে ঠেকেছে, তা রীতিমতো ভয়ের। কারণ, ১৫ বিলিয়নের নিচে নামলেই তা চরম ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। তখন জ্বালানি তেল, নিত্যপণ্য, জরুরি শিল্পের কাঁচামাল আমদানির দায় শোধ করা কঠিন হয়ে পড়বে। অথচ গত দুই বছর অর্থনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞরা বলে আসছেন, ডলারের দর ধরে না রেখে বাজারের চাহিদা ও সরবরাহের ওপর ছেড়ে দিতে এবং হুন্ডি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়াতে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক এখনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
আমদানি-রপ্তানি শ্লথ
ডলার সাশ্রয়ে আমদানি কড়াকড়ির কারণে অত্যাবশ্যক পণ্যের এলসি বা ঋণপত্র খুলতে গিয়েও হোঁচট খাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। বড় বড় শিল্পগ্রুপের উদ্যোক্তারাও এখন এলসি খুলতে হিমশিম খাচ্ছেন। এলসি খুলতে বিভিন্ন শর্ত দিচ্ছে ব্যাংকগুলো। এই অবস্থায় কমে এসেছে সার্বিক আমদানি। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য, বিভিন্ন ব্যাংকের নির্বাহী ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে, আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে আমদানি কমেছে ১৮ শতাংশ। কিন্তু খাতভিত্তিক ঋণপত্র খোলার হার কমেছে আরও বেশি। ভোগ্যপণ্যে ৩৯ শতাংশ, শিল্পের কাঁচামালে ২৮ শতাংশ, মূলধনি যন্ত্রপাতি ২২ শতাংশ আর জ্বালানি পণ্যে ২২ শতাংশ কমেছে এলসি।
বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে রপ্তানি আয়ের ওপর অনেকাংশেই নির্ভরতা রয়েছে। অথচ তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই রপ্তানি প্রবৃদ্ধির গতি শ্লথ। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-অক্টোবরের মধ্যে ইউরোপের একক বৃহত্তম বাজার জার্মানিতে প্রায় সাড়ে ১১ শতাংশ রপ্তানি কমেছে। শীর্ষ বাজার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২০২৩-২৪ সালের জুলাই-অক্টোবরে পোশাক রপ্তানি কমেছে ৩ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ।
বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যে বড় বাজার ইউরোপ ও আমেরিকা। বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি, অর্থনৈতিক মন্দার আভাসে সেখানকার মানুষ খরচ কমিয়ে এনেছে।
বাংলাদেশের রপ্তানি কমে যাওয়ার এটি একটি বড় কারণ। পাশাপাশি মানবাধিকার ও শ্রম অধিকার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের স্যাংশনের হুমকিও রপ্তানিতে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। এই অবস্থায় রপ্তানি বাজারের প্রসার বা বিকল্প বাজার তৈরি করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কার্যকর পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না।
প্রবাসী আয়ে সুখবর নেই
রিজার্ভ বাড়াতে প্রবাসী আয় বাড়ানোর ক্ষেত্রেও গতানুগতিক পদক্ষেপ ছাড়া অভিনব বা কার্যকর কোনো উদ্যোগের কথা জানা যায়নি। তথ্য বলছে, গত তিন বছরে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে শ্রমিকের অভিবাসন প্রায় চার গুণ বেড়েছে। কিন্তু সৌদি থেকে রেমিট্যান্স কমেছে ১৭ শতাংশের বেশি। রেমিট্যান্সের প্রবাহ গত আগস্ট মাসে জুলাইয়ের চেয়ে ২১ শতাংশ কম এবং সেপ্টেম্বরে ১৫ শতাংশ কমে যাওয়ার চিত্র উদ্বেগের বিষয়। অক্টোবরে সামান্য বাড়লেও তা শিগগির অনেক বেড়ে যাবে—এমনটি মনে করছেন না বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক প্রণোদনা বাড়ানো আর ব্যাংকগুলোকে সুপরামর্শ দেওয়া ছাড়া সৃজনশীল বা কঠোর আইনি উদ্যোগ নিতে পারেনি।
পুঁজিবাজারে পতন
সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আশার স্থল পুঁজিবাজার এখন বেদনার কারণ হয়ে উঠেছে। কয়েক মাস ধরে কেবল পতনের বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে বাজারটি। ফ্লোর প্রাইসের কৃত্রিম নিয়ন্ত্রণে কিছু শেয়ারের দর ঠেকিয়ে রাখার চেষ্টা হচ্ছে ঠিকই, তবে বাস্তবে পুঁজিবাজার এখন নীরবে প্রায় ডুবছে বলে মনে করেন বাজার বিশ্লেষকেরা। একসময় সাড়ে ৭ হাজার পয়েন্টে উঠে যাওয়া সূচক এখন ৬ হাজার ২০০ পয়েন্টের ঘরে। লেনদেন প্রায় ৩ হাজার কোটির ঘর ছুঁই ছুঁই অবস্থা থেকে নেমে এসে ঠেকেছে ৩৫০ কোটির ঘরে। বিএসইসি সূত্র থেকে জানা যায়, নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির রুটিন তদারকি ছাড়া বাজারে তহবিল জোগান দেওয়া, আস্থা ফেরানোসহ একে টেকসই করার তেমন কার্যকর পদক্ষেপ নেই।
বাড়ছে রাজস্ব ঘাটতি
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর ) তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে জানা যায়, অর্থবছরের গত চার মাসে রাজস্ব আয়ে ঘাটতি পড়েছে প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের চেয়ারম্যান সম্প্রতি বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে নির্বাচন ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিদ্যমান সময়ে কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আয় নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন। রাজস্ব আয় ঠিকমতো না হওয়ার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে। চলতি অর্থবছরের গত চার মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার গত আট বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, সরকারের তহবিল-সংকটের কারণেই মূলত এডিপি বাস্তবায়নের হার বাড়ানো যাচ্ছে না।
সার্বিক বিষয়ে সাবেক আমলা ও ট্যারিফ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আজিজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখন সবাই ঢিলেমি দিয়েছে। নির্বাচনী ডামাডোলে প্রশাসনে কিছুটা গা-ছাড়া ভাব থাকা অস্বাভাবিক নয়। এ সময়ে রাজস্ব আয়, রেমিট্যান্স বা উন্নয়নকাজ নিয়ে সরকারের ভেতরে যতটা উদ্বেগ থাকার কথা, তার চেয়ে নজর বেশি ভোটের দিকে। মাত্র দেড় মাস তো। এরপর নতুন সরকার এসে ওই বিষয়ে নজর দেবে বলে আমার ধারণা।’
অর্থনীতিবিদ ড. সেলিম রায়হান বলেছেন, এস আলম গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ সাইফুল আলমের আন্তর্জাতিক সালিসে যাওয়ার হুমকিতে ভয় পাওয়ার কারণ নেই। দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে শ্বেতপত্র প্রকাশের মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
১৩ ঘণ্টা আগেবেশ কিছু দিন ধরেই কেনিয়াতে ছাত্র–জনতা আদানির সঙ্গে সরকারের ‘গোপন’ চুক্তির প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। পরে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করে। অবশেষে আদানি শিল্পগোষ্ঠীর সঙ্গে ২৫০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি অর্থমূল্যের দুটি চুক্তি বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছে আফ্রিকার দেশ কেনিয়া।
১৯ ঘণ্টা আগেঘুষের নোটে সাগর আদানি ঘুষের পরিমাণ, কাকে ঘুষ দেওয়া হয়েছে এবং কত মেগাওয়াট বিদ্যুতের বিনিময়ে এটি হয়েছে—তার বিবরণ উল্লেখ করেছেন। তিনি মেগাওয়াট প্রতি ঘুষের হারও উল্লেখ করেছেন। ২০২০ সালে একটি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে সাগর আদানি বলেন, ‘হ্যাঁ...কিন্তু বিষয়টা দৃশ্যমান হওয়ার ঠেকানো বেশ কঠিন।’
১৯ ঘণ্টা আগেগৌতম আদানি, ভারতীয় কনগ্লোমারেট আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তিদের একজন, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বহু-বিলিয়ন ডলারের জালিয়াতি এবং ঘুষ কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, ভারত সরকারের কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়ার মাধ্যমে দেশের বৃহত্তম সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের চুক্তি বাগিয়েছে
২০ ঘণ্টা আগে