অনলাইন ডেস্ক
বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের আন্দোলনের অস্থিরতার কারণে কারখানা বন্ধ হওয়ার নেতিবাচক প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসতে না আসতেই গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার যুদ্ধের কারণে নতুন করে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত।
লোহিতসাগরে ইসরায়েল-সংশ্লিষ্ট জাহাজে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে সংঘাত চলছে। সহজ ও সাশ্রয়ী লোহিতসাগর-সুয়েজ খাল নৌপথ পাল্টাতে বাধ্য হয়েছে পণ্য পরিবহন সংস্থাগুলো। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে; বেড়েছে পণ্য পরিবহনের ব্যয় ও সময়।
জাপানের সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এশিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের কয়েক বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানির ৬৫ শতাংশেরও বেশি যায় ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে। এসব গন্তব্যের জন্য লোহিতসাগর-সুয়েজ খালের নৌপথ ব্যবহৃত হয়। কিন্তু নভেম্বর থেকে ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত হুতি বাহিনী লোহিতসাগরে পণ্যবাহী জাহাজে আক্রমণ করছে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য পাল্টা পদক্ষেপ নিলেও নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি। তাই বিশ্বের বৃহত্তম মালবাহী জাহাজগুলো তাদের বাণিজ্য রুট পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছে।
এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খল। তবে দুটি কারণে বাংলাদেশের ক্ষতি কিছুটা ভিন্ন। বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি পোশাকশিল্প। গত বছরের ৫ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের রপ্তানি আয়ের মধ্যে প্রায় ৪ হাজার ৭০০ কোটি ডলার পোশাক খাত থেকে এসেছে। কোনো ধরনের ভূ-রাজনৈতিক বাধা না থাকলেও বাংলাদেশের প্রধান বন্দরটি অগভীর হওয়ায় অর্ডার সরবরাহ করতে বাড়তি সময় লেগে যায়।
শিপিং কোম্পানিগুলো ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ ও আমেরিকায় কনটেইনারের পরিবহন খরচ ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বাড়িয়েছে। কিন্তু শিগগিরই সেই খরচ আরও ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বাড়তে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে নিক্কেই এশিয়া। বিশ্বের তিনটি বৃহত্তম শিপিং কোম্পানির এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে।
চলতি মাসে মজুরি ৫৬ শতাংশ বাড়ানোর পর ন্যূনতম লাভের আশায় কাজ করছেন বাংলাদেশের পোশাক নির্মাতারা। এখন পণ্য পরিবহনের খরচ বেড়ে যাওয়ার ধাক্কাও সামলাতে হচ্ছে তাঁদের। ব্যানানা রিপাবলিক, জে ক্রু এবং মার্কস অ্যান্ড স্পেনসারের মতো শীর্ষ ফ্যাশন ব্র্যান্ডের পোশাক তৈরি করে শোভন ইসলামের স্প্যারো গ্রুপ। গত সপ্তাহে এই ব্যবসায়ী এক শীর্ষ মার্কিন ক্রেতার কাছ থেকে কয়েক মিলিয়ন ডলার মূল্যের দেড় লাখ পোশাকের অর্ডার হারিয়েছেন।
শোভন ইসলাম বলেন, ‘এমন একটি জাহাজও খুঁজে পাইনি যা সময়মতো পণ্য সরবরাহ করতে পারে। প্রায় সব প্রধান শিপিং লাইনই আফ্রিকার কাছ দিয়ে যায়, কেপ অব গুড হোপ অতিক্রম করে। এতে শিপিংয়ের সময় বেড়ে যায় কমপক্ষে ১০ দিন এবং খরচ বাড়ে প্রায় ৫০ শতাংশ।’
শেষ পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়ার এক প্রতিযোগীর কাছে অর্ডারটি হারাতে হয় তাঁকে। ইন্দোনেশিয়ার ব্যবসায়ী ক্রেতাকে আরও কম সময়ের মধ্যে পণ্য পরিবহনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। শোভন বলেন, ‘পশ্চিমা ক্রেতাদের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে কেবল পণ্য সরবরাহের বাড়তি সময়ের কারণেই আমরা সব সময় পিছিয়ে থাকি।’
তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বিশ্বে চীনের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। তবে বাংলাদেশের মূল সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দর যথেষ্ট গভীর না হওয়ায় এখানে কনটেইনারবাহী বড় জাহাজগুলো ভিড়তে পারে না। তাই দ্রুত পণ্য সরবরাহে পিছিয়ে থাকেন ব্যবসায়ীরা।
সাধারণত চট্টগ্রাম থেকে মাঝারি জাহাজে করে কলম্বো, সিঙ্গাপুর, কেলাং বা তানজুং পেলেপাস বন্দরে পাঠান বাংলাদেশি পোশাক রপ্তানিকারকেরা। সেখানে থাকা বড় জাহাজে কনটেইনারগুলো তোলা হয়। এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানিতে অন্তত বাড়তি ১৫ দিন লেগে যায়।
চীন ও মিসর থেকে সুতা আমদানিও করা হয় একই পদ্ধতিতে। এ কারণে রপ্তানির প্রক্রিয়ায় আরও ১০ দিন দেরি হয় এবং সেটা পোশাক তৈরির কাজ শুরুর আগেই। অর্থাৎ ছোট জাহাজ থেকে বড় জাহাজে স্থানান্তরের কারণে ২৫ দিন দেরি হয়।
শোভন ইসলাম বলেন, ‘পোশাক রপ্তানিকারক অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের ১৫-২০ দিন বাড়তি লেগে যায় বলে ক্রেতারা আমাদের সবচেয়ে সস্তা রেট দিয়ে থাকে। পণ্য সরবরাহের ইস্যুতে আমরা সব সময়ই একদম শেষ সময়ে গিয়ে কাজ সম্পন্ন করতে পারি। আর সরবরাহ শৃঙ্খলে সামান্যতম ব্যাঘাত ঘটলেও তাতে আমাদের বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। লোহিতসাগরের এই সংঘাত হয়তো বাংলাদেশের কাছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের চেয়েও বড় ধাক্কা হিসেবেই এসেছে।’
শোভন ইসলামের মতো অনেক বড় পোশাক প্রস্তুতকারকই এখন অর্ডার হারাচ্ছেন বা ক্ষতির মুখে আছেন। বছরের শুরুতে পশ্চিমে পোশাকের বাড়তি চাহিদা থাকে। সেই চাহিদা মেটাতে ইউরোপের এক ক্রেতা আরডিএম গ্রুপকে আকাশপথে পণ্য পাঠাতে বলেছিলেন।
এই গ্রুপের কর্ণধার ও বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) ভাইস প্রেসিডেন্ট রকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘আকাশপথে পণ্য পাঠাতে গেলে নৌপথের চেয়ে খরচ বেড়ে যায় ১০-১২ গুণ। সে ক্ষেত্রে আমরা অবধারিতভাবেই ক্ষতির সম্মুখীন হই। কিন্তু যথাসময়ে পণ্য সরবরাহ করতে গেলে আমাদের আর কোনো উপায়ও নেই। আর তা করতে ব্যর্থ হলে সেই ক্রেতার কাছ থেকে ভবিষ্যতের অর্ডারও হারাতে হবে।’
তাছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরে উপযুক্ত কনটেইনারেরও অভাব দেখা দিয়েছে। এ কারণে পোশাক রপ্তানিকারকদের অনেকের পণ্য পাঠাতে বাড়তি দেরি হয়।
বাংলাদেশ ইন্টারনাল কনটেইনার ডিপোস অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইসিডিএ) তথ্য অনুসারে, ৭৫ শতাংশেরও বেশি রপ্তানিকারক পণ্য পরিবহনে ৪০ ফুট কনটেইনার ব্যবহার করেন। কিন্তু দেশের বৃহত্তম বন্দর নগরীর অধিকাংশ ডিপোতে এখন এ ধরনের কনটেইনারের তীব্র সংকট চলছে।
বিআইসিডিএর মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, সুয়েজ খালের পরিবর্তে কেপ অব গুড হোপের নৌপথ ব্যবহারের কারণে কনটেইনারসহ জাহাজগুলো অতিরিক্ত অন্তত ২৫ দিন সাগরে থাকবে। এই দেরির কারণেই কনটেইনারের সংকট সৃষ্টি হয়। রপ্তানিকারকরা চাইলে ২০ ফুট কনটেইনারে করে পণ্য পাঠাতে পারেন। কিন্তু সে ক্ষেত্রে খরচ আরও ৩০ শতাংশ বেড়ে যায়। তাই এই কনটেইনার ব্যবহারে পোশাক প্রস্তুতকারকরা আগ্রহী নন।’
লোহিতসাগরে হামলা-সংঘাতের আগেও আরও কিছু সমস্যা ছিল। বিজিএমইএ থেকে পাওয়া তথ্য দেখায় যে, ২০২৩ সালের প্রথম ১১ মাসে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বৃহত্তম ক্রেতা যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি ২৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছিল ৬৭৯ কোটি ডলারে। আগের বছরের একই সময় রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৯০৪ কোটি ডলার।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বিজিএমইএর প্রাক্তন সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ গত বছর পোশাক খাত থেকে কমপক্ষে ৫০০০ কোটি ডলার আয় করতে চেয়েছিল। রপ্তানির অর্ডার এবং আয় প্রবৃদ্ধি স্থবির হওয়ার আগে আয়ের সিংহভাগ আসে বছরের প্রথমার্ধে।
তিনি বলেন, ‘সুতার দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের উৎপাদন খরচও অনেক বেড়েছে। সুতরাং, প্রকৃত আয় খুব বেশি বাড়েনি।’
বিজিএমইএর বর্তমান সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে কিছু বড় সংকট মোকাবিলা করেছি। কিন্তু লোহিতসাগর পরিস্থিতি একটি বড় সমস্যা তৈরি করবে কারণ, পণ্য পরিবহনের সময় বেড়ে যাওয়ায় আমাদের খুবই আঁটোসাঁটো সূচির মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে।’
বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকদের আন্দোলনের অস্থিরতার কারণে কারখানা বন্ধ হওয়ার নেতিবাচক প্রভাব থেকে বেরিয়ে আসতে না আসতেই গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার যুদ্ধের কারণে নতুন করে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাত।
লোহিতসাগরে ইসরায়েল-সংশ্লিষ্ট জাহাজে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন জোটের সঙ্গে সংঘাত চলছে। সহজ ও সাশ্রয়ী লোহিতসাগর-সুয়েজ খাল নৌপথ পাল্টাতে বাধ্য হয়েছে পণ্য পরিবহন সংস্থাগুলো। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে; বেড়েছে পণ্য পরিবহনের ব্যয় ও সময়।
জাপানের সংবাদমাধ্যম নিক্কেই এশিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের কয়েক বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানির ৬৫ শতাংশেরও বেশি যায় ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে। এসব গন্তব্যের জন্য লোহিতসাগর-সুয়েজ খালের নৌপথ ব্যবহৃত হয়। কিন্তু নভেম্বর থেকে ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত হুতি বাহিনী লোহিতসাগরে পণ্যবাহী জাহাজে আক্রমণ করছে। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য পাল্টা পদক্ষেপ নিলেও নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়নি। তাই বিশ্বের বৃহত্তম মালবাহী জাহাজগুলো তাদের বাণিজ্য রুট পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছে।
এ অবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খল। তবে দুটি কারণে বাংলাদেশের ক্ষতি কিছুটা ভিন্ন। বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি পোশাকশিল্প। গত বছরের ৫ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের রপ্তানি আয়ের মধ্যে প্রায় ৪ হাজার ৭০০ কোটি ডলার পোশাক খাত থেকে এসেছে। কোনো ধরনের ভূ-রাজনৈতিক বাধা না থাকলেও বাংলাদেশের প্রধান বন্দরটি অগভীর হওয়ায় অর্ডার সরবরাহ করতে বাড়তি সময় লেগে যায়।
শিপিং কোম্পানিগুলো ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ থেকে ইউরোপ ও আমেরিকায় কনটেইনারের পরিবহন খরচ ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ বাড়িয়েছে। কিন্তু শিগগিরই সেই খরচ আরও ২০ থেকে ২৫ শতাংশ বাড়তে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে নিক্কেই এশিয়া। বিশ্বের তিনটি বৃহত্তম শিপিং কোম্পানির এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে।
চলতি মাসে মজুরি ৫৬ শতাংশ বাড়ানোর পর ন্যূনতম লাভের আশায় কাজ করছেন বাংলাদেশের পোশাক নির্মাতারা। এখন পণ্য পরিবহনের খরচ বেড়ে যাওয়ার ধাক্কাও সামলাতে হচ্ছে তাঁদের। ব্যানানা রিপাবলিক, জে ক্রু এবং মার্কস অ্যান্ড স্পেনসারের মতো শীর্ষ ফ্যাশন ব্র্যান্ডের পোশাক তৈরি করে শোভন ইসলামের স্প্যারো গ্রুপ। গত সপ্তাহে এই ব্যবসায়ী এক শীর্ষ মার্কিন ক্রেতার কাছ থেকে কয়েক মিলিয়ন ডলার মূল্যের দেড় লাখ পোশাকের অর্ডার হারিয়েছেন।
শোভন ইসলাম বলেন, ‘এমন একটি জাহাজও খুঁজে পাইনি যা সময়মতো পণ্য সরবরাহ করতে পারে। প্রায় সব প্রধান শিপিং লাইনই আফ্রিকার কাছ দিয়ে যায়, কেপ অব গুড হোপ অতিক্রম করে। এতে শিপিংয়ের সময় বেড়ে যায় কমপক্ষে ১০ দিন এবং খরচ বাড়ে প্রায় ৫০ শতাংশ।’
শেষ পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়ার এক প্রতিযোগীর কাছে অর্ডারটি হারাতে হয় তাঁকে। ইন্দোনেশিয়ার ব্যবসায়ী ক্রেতাকে আরও কম সময়ের মধ্যে পণ্য পরিবহনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। শোভন বলেন, ‘পশ্চিমা ক্রেতাদের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে কেবল পণ্য সরবরাহের বাড়তি সময়ের কারণেই আমরা সব সময় পিছিয়ে থাকি।’
তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে বিশ্বে চীনের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান। তবে বাংলাদেশের মূল সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দর যথেষ্ট গভীর না হওয়ায় এখানে কনটেইনারবাহী বড় জাহাজগুলো ভিড়তে পারে না। তাই দ্রুত পণ্য সরবরাহে পিছিয়ে থাকেন ব্যবসায়ীরা।
সাধারণত চট্টগ্রাম থেকে মাঝারি জাহাজে করে কলম্বো, সিঙ্গাপুর, কেলাং বা তানজুং পেলেপাস বন্দরে পাঠান বাংলাদেশি পোশাক রপ্তানিকারকেরা। সেখানে থাকা বড় জাহাজে কনটেইনারগুলো তোলা হয়। এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানিতে অন্তত বাড়তি ১৫ দিন লেগে যায়।
চীন ও মিসর থেকে সুতা আমদানিও করা হয় একই পদ্ধতিতে। এ কারণে রপ্তানির প্রক্রিয়ায় আরও ১০ দিন দেরি হয় এবং সেটা পোশাক তৈরির কাজ শুরুর আগেই। অর্থাৎ ছোট জাহাজ থেকে বড় জাহাজে স্থানান্তরের কারণে ২৫ দিন দেরি হয়।
শোভন ইসলাম বলেন, ‘পোশাক রপ্তানিকারক অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের ১৫-২০ দিন বাড়তি লেগে যায় বলে ক্রেতারা আমাদের সবচেয়ে সস্তা রেট দিয়ে থাকে। পণ্য সরবরাহের ইস্যুতে আমরা সব সময়ই একদম শেষ সময়ে গিয়ে কাজ সম্পন্ন করতে পারি। আর সরবরাহ শৃঙ্খলে সামান্যতম ব্যাঘাত ঘটলেও তাতে আমাদের বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। লোহিতসাগরের এই সংঘাত হয়তো বাংলাদেশের কাছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের চেয়েও বড় ধাক্কা হিসেবেই এসেছে।’
শোভন ইসলামের মতো অনেক বড় পোশাক প্রস্তুতকারকই এখন অর্ডার হারাচ্ছেন বা ক্ষতির মুখে আছেন। বছরের শুরুতে পশ্চিমে পোশাকের বাড়তি চাহিদা থাকে। সেই চাহিদা মেটাতে ইউরোপের এক ক্রেতা আরডিএম গ্রুপকে আকাশপথে পণ্য পাঠাতে বলেছিলেন।
এই গ্রুপের কর্ণধার ও বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) ভাইস প্রেসিডেন্ট রকিবুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘আকাশপথে পণ্য পাঠাতে গেলে নৌপথের চেয়ে খরচ বেড়ে যায় ১০-১২ গুণ। সে ক্ষেত্রে আমরা অবধারিতভাবেই ক্ষতির সম্মুখীন হই। কিন্তু যথাসময়ে পণ্য সরবরাহ করতে গেলে আমাদের আর কোনো উপায়ও নেই। আর তা করতে ব্যর্থ হলে সেই ক্রেতার কাছ থেকে ভবিষ্যতের অর্ডারও হারাতে হবে।’
তাছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরে উপযুক্ত কনটেইনারেরও অভাব দেখা দিয়েছে। এ কারণে পোশাক রপ্তানিকারকদের অনেকের পণ্য পাঠাতে বাড়তি দেরি হয়।
বাংলাদেশ ইন্টারনাল কনটেইনার ডিপোস অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইসিডিএ) তথ্য অনুসারে, ৭৫ শতাংশেরও বেশি রপ্তানিকারক পণ্য পরিবহনে ৪০ ফুট কনটেইনার ব্যবহার করেন। কিন্তু দেশের বৃহত্তম বন্দর নগরীর অধিকাংশ ডিপোতে এখন এ ধরনের কনটেইনারের তীব্র সংকট চলছে।
বিআইসিডিএর মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, সুয়েজ খালের পরিবর্তে কেপ অব গুড হোপের নৌপথ ব্যবহারের কারণে কনটেইনারসহ জাহাজগুলো অতিরিক্ত অন্তত ২৫ দিন সাগরে থাকবে। এই দেরির কারণেই কনটেইনারের সংকট সৃষ্টি হয়। রপ্তানিকারকরা চাইলে ২০ ফুট কনটেইনারে করে পণ্য পাঠাতে পারেন। কিন্তু সে ক্ষেত্রে খরচ আরও ৩০ শতাংশ বেড়ে যায়। তাই এই কনটেইনার ব্যবহারে পোশাক প্রস্তুতকারকরা আগ্রহী নন।’
লোহিতসাগরে হামলা-সংঘাতের আগেও আরও কিছু সমস্যা ছিল। বিজিএমইএ থেকে পাওয়া তথ্য দেখায় যে, ২০২৩ সালের প্রথম ১১ মাসে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের বৃহত্তম ক্রেতা যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি ২৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছিল ৬৭৯ কোটি ডলারে। আগের বছরের একই সময় রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৯০৪ কোটি ডলার।
বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বিজিএমইএর প্রাক্তন সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ গত বছর পোশাক খাত থেকে কমপক্ষে ৫০০০ কোটি ডলার আয় করতে চেয়েছিল। রপ্তানির অর্ডার এবং আয় প্রবৃদ্ধি স্থবির হওয়ার আগে আয়ের সিংহভাগ আসে বছরের প্রথমার্ধে।
তিনি বলেন, ‘সুতার দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের উৎপাদন খরচও অনেক বেড়েছে। সুতরাং, প্রকৃত আয় খুব বেশি বাড়েনি।’
বিজিএমইএর বর্তমান সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে কিছু বড় সংকট মোকাবিলা করেছি। কিন্তু লোহিতসাগর পরিস্থিতি একটি বড় সমস্যা তৈরি করবে কারণ, পণ্য পরিবহনের সময় বেড়ে যাওয়ায় আমাদের খুবই আঁটোসাঁটো সূচির মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে।’
অর্থনীতিবিদ ড. সেলিম রায়হান বলেছেন, এস আলম গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ সাইফুল আলমের আন্তর্জাতিক সালিসে যাওয়ার হুমকিতে ভয় পাওয়ার কারণ নেই। দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে শ্বেতপত্র প্রকাশের মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
৮ ঘণ্টা আগেবেশ কিছু দিন ধরেই কেনিয়াতে ছাত্র–জনতা আদানির সঙ্গে সরকারের ‘গোপন’ চুক্তির প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। পরে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করে। অবশেষে আদানি শিল্পগোষ্ঠীর সঙ্গে ২৫০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি অর্থমূল্যের দুটি চুক্তি বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছে আফ্রিকার দেশ কেনিয়া।
১৩ ঘণ্টা আগেঘুষের নোটে সাগর আদানি ঘুষের পরিমাণ, কাকে ঘুষ দেওয়া হয়েছে এবং কত মেগাওয়াট বিদ্যুতের বিনিময়ে এটি হয়েছে—তার বিবরণ উল্লেখ করেছেন। তিনি মেগাওয়াট প্রতি ঘুষের হারও উল্লেখ করেছেন। ২০২০ সালে একটি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে সাগর আদানি বলেন, ‘হ্যাঁ...কিন্তু বিষয়টা দৃশ্যমান হওয়ার ঠেকানো বেশ কঠিন।’
১৪ ঘণ্টা আগেগৌতম আদানি, ভারতীয় কনগ্লোমারেট আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তিদের একজন, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বহু-বিলিয়ন ডলারের জালিয়াতি এবং ঘুষ কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, ভারত সরকারের কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়ার মাধ্যমে দেশের বৃহত্তম সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের চুক্তি বাগিয়েছে
১৫ ঘণ্টা আগে