অর্থনৈতিক সংস্কারের জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সংস্কার

  • সংকট মোকাবিলায় গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠায় জোর।
  • ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য ট্রেড লাইসেন্সসহ সহজ নীতিমালা করার তাগিদ।
  • পাচার হওয়া অর্থ ফিরিয়ে আনার দাবি।
  • ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ট্যাক্স ফাইল যাচাই করার পরামর্শ।
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ২২: ৫৬
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৪, ২৩: ০৪
সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ: অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রসঙ্গ’ শীর্ষক আলোচনা সভা। ছবি: আজকের পত্রিকা

অর্থনৈতিক সংস্কার টেকসই করার জন্য রাজনৈতিক সংস্কার প্রয়োজন। রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঠিক না হলে কোনো সংস্কারেই কাজে আসবে না। এর আগে সংস্কারের সুযোগ এলেও ফলপ্রসূ কিছু হয়নি। নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারের সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক সংস্কারেও মনোযোগ দিতে হবে। গণতান্ত্রিক সরকার এলে অর্থনীতিসহ অন্যান্য সংকট মোকাবিলা করা সহজ।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে আজ শনিবার সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ: অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রসঙ্গ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।

অনুষ্ঠানে জাতীয় শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রধান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘গত ১০-১৫ বছরে আমলারা কীভাবে ব্যবসায়ী হয়ে গেল, ব্যবসায়ীরা কীভাবে রাজনীতিবিদ হয়ে গেল, আর রাজনীতিবিদ কীভাবে ব্যবসায়ী হয়ে গেল? এই দুষ্টচক্রটা কীভাবে সৃষ্টি হলো এবং সেটার ভেতরে আমাদের কী অংশগ্রহণ ছিল? এটা জনমানুষের না যতখানি ব্যর্থতা, বাংলাদেশের উচ্চবর্গীয় মানুষগুলোর সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা।’

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘রাষ্ট্রযন্ত্র বিকল হয়ে গেছে। খুবলিয়ে খেয়ে রাষ্ট্রকে দেউলিয়া করে দিয়েছে। এ রকম একটি রাষ্ট্রযন্ত্র পেয়ে তিন মাসও হয়নি সরকারের। দাবি-দাওয়া শুনলে মনে হয় কোনো জগতে বাস করছি। প্রাতিষ্ঠানিক, নির্বাচনী সংস্কারের সঙ্গে সঙ্গে অর্থনৈতিক সংস্কারেও মনোযোগ দিতে হবে। দেশের মধ্যে নিশ্চয়তা ও স্থিতিশীলতা আনতে হবে। আমাদের নিজেদের ব্যর্থতা যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে না বইতে হয়, তা নিয়ে কাজ করতে হবে। প্রতিটা মুহূর্তে জবাবদিহি না থাকলে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আসবে না।’

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘প্রতিবছর ২৫-২৭ লাখ কর্মক্ষম লোক বাজারে আসে। এর মধ্যে সরকারি চাকরি করে মাত্র ৫ শতাংশ। বাকি কর্মক্ষম তরুণদের কর্মসংস্থানের জন্য প্রয়োজন বিনিয়োগ। বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য প্রয়োজন সামাজিক মূলধন, সঞ্চয়। সব সরকারই নানাভাবে সমাজকে বিভক্ত করেছে। একে অপরের শত্রুতে পরিণত করেছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঠিক না হলে কোনো সংস্কারেই কাজ হবে না।’ গণতান্ত্রিক সরকার এলে অর্থনীতিসহ অন্যান্য সংকট মোকাবিলা সহজ হবে বলে তিনি আশা ব্যক্ত করেন।

সিজিএসের চেয়ারম্যান মুনিরা খান বলেন, অর্থ পাচার করে দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। মিডিয়া যখন দেশের ব্যাংকগুলোকে দুর্বল বলে তালিকাবদ্ধ করে, তখন সেখান থেকে টাকা সরিয়ে ফেলার প্রবণতা বেড়ে যায়, টাকা পাচারের প্রবণতাও বাড়ে।

অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর বলেন, ‘পূর্বোক্ত সরকারের বাজেট এখনো চলছে কেন? বাজেট কেন নবায়ন করা হলো না? আমরা ঋণ নিচ্ছি, কিন্তু শিল্প তৈরি করছি না। ড. ইউনূসের ইমেজ ব্যবহার করে ঋণ নিতে পারছি, কিন্তু শিল্প নিয়ে আসতে পারছি না। রাজনৈতিক বিষয়ে গবেষণা হচ্ছে না, যা খুবই দুঃখজনক।’

ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক পারভেজ করিম আব্বাসী বলেন, ‘সামনের দুই বছরে অর্থনৈতিক অস্থিরতা কাটার সম্ভাবনা কম। আমরা ঋণ নিয়েই যাচ্ছি। হুহু করে বৈদেশিক ঋণ বেড়েই যাচ্ছে। এর থেকে বের হতে হবে। সামনে অনেক কঠিন দিন। প্রয়োজন রাজনৈতিক ঐক্য। পোশাকশিল্পে অস্থিরতা বন্ধে শ্রমিকদের অংশীদারত্ব নিশ্চিত করতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য এবং অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য ট্রেড লাইসেন্সসহ সহজ নীতিমালা করতে হবে। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য তথ্যপ্রবাহ বাড়ানো প্রয়োজন। এলাকাভিত্তিক কর্মক্ষেত্র তৈরি করার মাধ্যমে ঢাকামুখিতা কমাতে হবে।’

বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী বলেন, ‘উন্নয়ন নিয়ে যত কথা হয়, কর্মসংস্থান নিয়ে তা হয় না। শিল্প তৈরি হচ্ছে না বিধায় আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি।’

সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (এসডিএফ) চেয়ারম্যান ও এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, এর আগে সংস্কারের সুযোগ এলেও ফলপ্রসূ কিছু হয়নি। রাজস্ব আদায়ে স্বচ্ছতা না থাকলে দ্রব্যমূল্য বা ব্যবসার খরচ না কমে বরং বাড়বে।

বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক সভাপতি শাহেদুল ইসলাম হেলাল বলেন, ঘুষ ছাড়া আজকাল কোনো কাজ হয় না। এটা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি সবুর খান বলেন, ‘যারা ঋণ নিচ্ছে, তাদের ট্যাক্স ফাইল কেন দেখা হয় না? ঋণ দেওয়ার আগে ট্যাক্স ফাইল দেখতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের উচিত ক্রেডিট স্কোর বাস্তবায়ন করা।’

সেন্টার ফর নন-রেসিডেন্স বাংলাদেশিজের চেয়ারপারসন এম এস সেকিল চৌধুরী বলেন, ‘ডলার সংকটের জন্য দায়ী অর্থ পাচার। অর্থ পাচারকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো গভর্নর পালিয়েছেন। পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে হবে।’

আলোচনা সভায় আরও অংশ নেন—ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যাংকিং ও ইনস্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক শাহিদুল ইসলাম জাহিদ, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট মো. জসিম, বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিকেলস ইমপোর্টার্স অ্যান্ড ডিলারস অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সভাপতি আব্দুল হক, এফবিসিসিআইয়ের স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম, রাজনৈতিক বিশ্লেষক সালেহ আহমেদ, জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান ড. জামাল উদ্দিন আহমেদ, ইউএনডিপি বাংলাদেশের সাবেক সহকারী আবাসিক প্রতিনিধি প্রসেনজিৎ চাকমা, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক প্রেসিডেন্ট মীর নাসির হোসেন, অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম আবু ইউসুফ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সুপ্রভা সুবহা জামান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী সাদিক মাহবুব ইসলাম প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি চাকরিজীবীরা সম্পদের হিসাব না দিলে যেসব শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন

শেখ হাসিনাকে নিয়ে যুক্তরাজ্যে এম সাখাওয়াতের বিস্ফোরক মন্তব্য, কী বলেছেন এই উপদেষ্টা

শিক্ষকের নতুন ২০ হাজার পদ, প্রাথমিকে আসছে বড় পরিবর্তন

লক্ষ্মীপুরে জামায়াত নেতাকে অতিথি করায় মাহফিল বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ

শ্রীপুরে পিকনিকের বাস বিদ্যুতায়িত হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, আহত ৩

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত