বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কামরান টি রহমান, যিনি দ্য কাপনা টি কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মর্যাদাপূর্ণ ব্যবসায়ী সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি এবং বাংলাদেশ চা সংসদের চেয়ারম্যান। দেশের অর্থনীতি ও ব্যবসায়িক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি আজকের পত্রিকার সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেন। তাঁর সঙ্গে কথা বলেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক আসাদুজ্জামান নূর
আসাদুজ্জামান নূর
আজকের পত্রিকা: বর্তমান অর্থনীতি ও ব্যবসায় যে চ্যালেঞ্জগুলো বিদ্যমান, সেগুলো কীভাবে মূল্যায়ন করছেন?
কামরান টি রহমান: বর্তমানে কয়েকটি বড় ইস্যু রয়েছে, যার মধ্যে প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। এখনো এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি যে সাধারণ মানুষ পুরোপুরি আত্মবিশ্বাসী হতে পারে। আমরা এখনো শুনছি এবং সংবাদমাধ্যমে দেখতে পাচ্ছি যে অনেক থানায় একসময় ৭০ জন কর্মী ছিলেন, এখন সেখানে কাজ করছেন মাত্র ২০ জন। এ অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থায় ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে, যা আমাদের অবশ্যই সমাধান করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, ব্যাংকিং খাতের অবস্থা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। যে পরিমাণ লুটপাট ও অনিয়মের চিত্র সামনে এসেছে, তা অত্যন্ত ভয়াবহ। প্রকাশিত শ্বেতপত্রে এর ভয়ানক পরিণতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। অনেক ব্যাংক ইতিমধ্যে ধসে পড়েছে এবং যেগুলো এখনো টিকে আছে, তাদের ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা নেই। খেলাপি ঋণের পরিমাণ যেভাবে বাড়ছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ পরিস্থিতি দ্রুত সমাধান না হলে পুরো ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা সংকটে পড়বে।
বর্তমানে ব্যাংকগুলোর সুদের হার বেড়ে ১৩-১৪ শতাংশে পৌঁছেছে এবং কার্যকর হার ১৫-১৬ শতাংশে চলে গেছে। এই উচ্চ সুদের হারে ব্যবসা করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। ঋণের খরচ যেমন বেড়েছে, তেমনি কাঁচামাল আমদানি ও এনার্জির খরচও বেড়েছে। তবে অতিরিক্ত খরচগুলো ভোক্তা পর্যায়ে ঠেলে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে আমাদের ব্যবসায় টিকে থাকার সক্ষমতা কমে যাচ্ছে।
ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে ২০ বিলিয়ন ডলারে এসে দাঁড়িয়েছে, কখনো এর নিচে নেমেছে। পাশাপাশি মুদ্রার অবমূল্যায়ন ঘটেছে; ৮৬ টাকা প্রতি ডলার ছিল, যা এখন অফিশিয়ালি ১২২ টাকায় উঠে গেছে। এলসি খোলার ডলারের দাম আরও বেড়েছে। মূল্যস্ফীতি এত বেড়েছে যে চাল, ডাল, আদা, রসুন, মরিচ, তেল, লবণ—সব পণ্যে তার উত্তাপ লেগেছে। প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) দেশে এ অঞ্চলে সবচেয়ে কম। এটি কখন বাড়বে, সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। বর্তমানে নতুন বিনিয়োগের কোনো সাড়া নেই, সবাই ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’ অবস্থায় রয়েছে। সবাই অপেক্ষা করছে, দেখে নেবে অর্থনীতি কীভাবে ঘুরে দাঁড়ায়, তারপর হয়তো বিনিয়োগ শুরু হবে।
অন্তর্বর্তী সরকার যত দ্রুত রাজনৈতিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারে, ততই ভালো। বাকি সংস্কারের বিষয়গুলো পরবর্তী সরকার বিবেচনা করবে এবং তারা তা বাস্তবায়ন করবে কি না, তা তাদের ওপর নির্ভর করবে।
গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট ব্যবসায় মারাত্মক প্রভাব ফেলছে, যার ফলে খরচ বাড়ছে। যদি এই বাড়তি খরচ ভোক্তার ওপর চাপানো যেত, তাহলে ব্যবসা তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হতো না। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা খরচের পরিমাণ ভোক্তার কাছে পৌঁছাতে পারছি না। ফলে ব্যবসা অনেক খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছে।
আজকের পত্রিকা: তাহলে সমস্যা তো অনেক, উত্তরণের উপায় কী হতে পারে?
কামরান টি রহমান: আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, এটি না হলে পরিস্থিতি আরও কঠিন হবে। ব্যবসা চালিয়ে যেতে প্রয়োজন ব্যাংকিং সহায়তা, বিশেষ করে কম সুদে ঋণ। যদি এই সহায়তা পাওয়া না যায়, অনেক ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। বর্তমানে অনেকে ব্যবসা চালাতে পারছে না এবং তারা এক্সিট পলিসি চায়, যা এখনো নেই। এলসিতে নমনীয়তা থাকা জরুরি, পাশাপাশি গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য প্রথমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সাধারণত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা পরখ করেই বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। বর্তমানে দেশের পরিস্থিতি এমন যে সবাই অপেক্ষা করছে, রাজনৈতিক সরকার স্থিতিশীল হলে তারপর বিনিয়োগের জন্য এগিয়ে আসবে।
আজকের পত্রিকা: এর জন্য কি একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক সরকার অপরিহার্য?
কামরান টি রহমান: রাজনৈতিক সরকার আসা অবশ্যই প্রয়োজন। কারণ, সবাই সেটা দেখতে চায়। অন্তর্বর্তী সরকার দীর্ঘকাল টিকে থাকতে পারে না, তাই যত দ্রুত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে, ততই দেশের জন্য ভালো, বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্যের দিক থেকে। এটি সবার প্রত্যাশা।
আজকের পত্রিকা: এ পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আপনারা কী ধরনের প্রত্যাশা করছেন?
কামরান টি রহমান: অন্তর্বর্তী সরকার বেশ কিছু কমিশন গঠন করেছে এবং তাদের সুপারিশ থাকবে, তবে প্রশ্ন হচ্ছে—এই সরকার সবগুলো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারবে কি না। আমার মনে হয়, অন্তর্বর্তী সরকার যত তাড়াতাড়ি রাজনৈতিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারে, ততই ভালো। বাকি সংস্কারের বিষয়গুলো পরবর্তী সরকার বিবেচনা করবে এবং তারা তা বাস্তবায়ন করবে কি না, তা তাদের ওপর নির্ভর করবে। সার্বিক অর্থনীতির জন্য একটি রাজনৈতিক সরকার অপরিহার্য। অন্তর্বর্তী সরকার সবকিছু করতে পারবে না; তাই যত দ্রুত সম্ভব ক্ষমতা হস্তান্তর করা দেশের স্বার্থে সবচেয়ে ভালো।
আজকের পত্রিকা: এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে কী ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হতে পারে?
কামরান টি রহমান: ব্যবসায়ীরা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁদের সুবিধা-অসুবিধা তুলে ধরছেন। তবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সরকারকেই। যদি সরকারের মনে হয়, কোনো বিকল্প পথ রয়েছে, তবে সেটি বিবেচনা করে পদক্ষেপ নেবে।
আজকের পত্রিকা: ভ্যাট বৃদ্ধির ফলে মূল্যস্ফীতি ও ব্যবসায় কী ধরনের প্রভাব পড়ছে?
কামরান টি রহমান: মূল্যস্ফীতির কারণে জনগণের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে এবং তার ওপর ভ্যাট বৃদ্ধির ফলে ভোক্তার ওপর আরও চাপ বাড়ছে। এর ফলে ভোগ কমে যাচ্ছে এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা হ্রাস পাচ্ছে। বড় কোম্পানিগুলো জানাচ্ছে, আগে যে বড় প্যাকেজ বিক্রি হতো, তা এখন মানুষের পক্ষ থেকে কেনা সম্ভব হচ্ছে না। এখন তারা ছোট প্যাকেজ বিক্রি করছে।
টাকার অবমূল্যায়নের কারণে কাঁচামাল আমদানিতে খরচ বেড়েছে। যে পণ্য আগে ৮৫ টাকা দিয়ে কিনতাম, এখন তা ১২২ বা ১২৫ টাকায় আসছে। এর ওপর কাস্টমস ডিউটি ও ভ্যাট যোগ হচ্ছে। ফলে সব ধরনের শিল্পে ভ্যাট বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
আজকের পত্রিকা: তাহলে সরকার কোন পথে আয় করবে?
কামরান টি রহমান: আমাদের কর-জিডিপির অনুপাত ৭ থেকে ৮ শতাংশের মধ্যে, যা বৈশ্বিকভাবে কম। এ অনুপাত বাড়ানোর জন্য করজাল সম্প্রসারণ জরুরি। এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, ১ কোটির বেশি টিন নম্বর থাকলেও মাত্র ৪০ লাখ মানুষ রিটার্ন দেয়। ফলে করদাতার সংখ্যা বাড়াতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে যদি অতিরিক্ত চাপ দেওয়া হয়, তবে বর্তমান করদাতারা নিরুৎসাহিত হতে পারেন। সরকার করজাল বাড়াতে পারছে না, তাই ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। রাজস্ব সংগ্রহ জরুরি, কিন্তু শুধু ভ্যাটে নির্ভর করা যাবে না। করজাল বাড়াতে হবে এবং সরকারকে খরচ কমাতে হবে। আমরা যদি কর দিই আর সরকার খরচ বাড়াতে থাকে, তবে সেটা টেকসই হবে না।
আজকের পত্রিকা: পুঁজিবাজারে ব্যবসায়ীরা পুঁজি সংগ্রহে আগ্রহ দেখান কেন? তাঁদের জন্য শেয়ারবাজার কেন এতটা অনির্ভরযোগ্য হয়ে উঠেছে?
কামরান টি রহমান: অনেক ব্যবসায়ী পুঁজিবাজারে যেতে চান না। কারণ, সেখানে নানা বাধ্যবাধকতা রয়েছে এবং পুরো প্রক্রিয়া জটিল। অনেকের কাছে এসব চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। বড় ব্যবসাগুলো কিছুটা সক্ষম হলেও ছোট ব্যবসাগুলোর তালিকাভুক্ত হওয়া কঠিন।
আজকের পত্রিকা: বর্তমান অর্থনীতি ও ব্যবসায় যে চ্যালেঞ্জগুলো বিদ্যমান, সেগুলো কীভাবে মূল্যায়ন করছেন?
কামরান টি রহমান: বর্তমানে কয়েকটি বড় ইস্যু রয়েছে, যার মধ্যে প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। এখনো এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি যে সাধারণ মানুষ পুরোপুরি আত্মবিশ্বাসী হতে পারে। আমরা এখনো শুনছি এবং সংবাদমাধ্যমে দেখতে পাচ্ছি যে অনেক থানায় একসময় ৭০ জন কর্মী ছিলেন, এখন সেখানে কাজ করছেন মাত্র ২০ জন। এ অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থায় ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে, যা আমাদের অবশ্যই সমাধান করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, ব্যাংকিং খাতের অবস্থা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। যে পরিমাণ লুটপাট ও অনিয়মের চিত্র সামনে এসেছে, তা অত্যন্ত ভয়াবহ। প্রকাশিত শ্বেতপত্রে এর ভয়ানক পরিণতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। অনেক ব্যাংক ইতিমধ্যে ধসে পড়েছে এবং যেগুলো এখনো টিকে আছে, তাদের ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা নেই। খেলাপি ঋণের পরিমাণ যেভাবে বাড়ছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ পরিস্থিতি দ্রুত সমাধান না হলে পুরো ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা সংকটে পড়বে।
বর্তমানে ব্যাংকগুলোর সুদের হার বেড়ে ১৩-১৪ শতাংশে পৌঁছেছে এবং কার্যকর হার ১৫-১৬ শতাংশে চলে গেছে। এই উচ্চ সুদের হারে ব্যবসা করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। ঋণের খরচ যেমন বেড়েছে, তেমনি কাঁচামাল আমদানি ও এনার্জির খরচও বেড়েছে। তবে অতিরিক্ত খরচগুলো ভোক্তা পর্যায়ে ঠেলে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে আমাদের ব্যবসায় টিকে থাকার সক্ষমতা কমে যাচ্ছে।
ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ প্রায় ৪০ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে ২০ বিলিয়ন ডলারে এসে দাঁড়িয়েছে, কখনো এর নিচে নেমেছে। পাশাপাশি মুদ্রার অবমূল্যায়ন ঘটেছে; ৮৬ টাকা প্রতি ডলার ছিল, যা এখন অফিশিয়ালি ১২২ টাকায় উঠে গেছে। এলসি খোলার ডলারের দাম আরও বেড়েছে। মূল্যস্ফীতি এত বেড়েছে যে চাল, ডাল, আদা, রসুন, মরিচ, তেল, লবণ—সব পণ্যে তার উত্তাপ লেগেছে। প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) দেশে এ অঞ্চলে সবচেয়ে কম। এটি কখন বাড়বে, সে বিষয়ে অনিশ্চয়তা রয়েছে। বর্তমানে নতুন বিনিয়োগের কোনো সাড়া নেই, সবাই ‘ওয়েট অ্যান্ড সি’ অবস্থায় রয়েছে। সবাই অপেক্ষা করছে, দেখে নেবে অর্থনীতি কীভাবে ঘুরে দাঁড়ায়, তারপর হয়তো বিনিয়োগ শুরু হবে।
অন্তর্বর্তী সরকার যত দ্রুত রাজনৈতিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারে, ততই ভালো। বাকি সংস্কারের বিষয়গুলো পরবর্তী সরকার বিবেচনা করবে এবং তারা তা বাস্তবায়ন করবে কি না, তা তাদের ওপর নির্ভর করবে।
গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট ব্যবসায় মারাত্মক প্রভাব ফেলছে, যার ফলে খরচ বাড়ছে। যদি এই বাড়তি খরচ ভোক্তার ওপর চাপানো যেত, তাহলে ব্যবসা তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হতো না। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা খরচের পরিমাণ ভোক্তার কাছে পৌঁছাতে পারছি না। ফলে ব্যবসা অনেক খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছে।
আজকের পত্রিকা: তাহলে সমস্যা তো অনেক, উত্তরণের উপায় কী হতে পারে?
কামরান টি রহমান: আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, এটি না হলে পরিস্থিতি আরও কঠিন হবে। ব্যবসা চালিয়ে যেতে প্রয়োজন ব্যাংকিং সহায়তা, বিশেষ করে কম সুদে ঋণ। যদি এই সহায়তা পাওয়া না যায়, অনেক ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। বর্তমানে অনেকে ব্যবসা চালাতে পারছে না এবং তারা এক্সিট পলিসি চায়, যা এখনো নেই। এলসিতে নমনীয়তা থাকা জরুরি, পাশাপাশি গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য প্রথমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সাধারণত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা পরখ করেই বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেন। বর্তমানে দেশের পরিস্থিতি এমন যে সবাই অপেক্ষা করছে, রাজনৈতিক সরকার স্থিতিশীল হলে তারপর বিনিয়োগের জন্য এগিয়ে আসবে।
আজকের পত্রিকা: এর জন্য কি একটি স্থিতিশীল রাজনৈতিক সরকার অপরিহার্য?
কামরান টি রহমান: রাজনৈতিক সরকার আসা অবশ্যই প্রয়োজন। কারণ, সবাই সেটা দেখতে চায়। অন্তর্বর্তী সরকার দীর্ঘকাল টিকে থাকতে পারে না, তাই যত দ্রুত রাজনৈতিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে, ততই দেশের জন্য ভালো, বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্যের দিক থেকে। এটি সবার প্রত্যাশা।
আজকের পত্রিকা: এ পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আপনারা কী ধরনের প্রত্যাশা করছেন?
কামরান টি রহমান: অন্তর্বর্তী সরকার বেশ কিছু কমিশন গঠন করেছে এবং তাদের সুপারিশ থাকবে, তবে প্রশ্ন হচ্ছে—এই সরকার সবগুলো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারবে কি না। আমার মনে হয়, অন্তর্বর্তী সরকার যত তাড়াতাড়ি রাজনৈতিক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারে, ততই ভালো। বাকি সংস্কারের বিষয়গুলো পরবর্তী সরকার বিবেচনা করবে এবং তারা তা বাস্তবায়ন করবে কি না, তা তাদের ওপর নির্ভর করবে। সার্বিক অর্থনীতির জন্য একটি রাজনৈতিক সরকার অপরিহার্য। অন্তর্বর্তী সরকার সবকিছু করতে পারবে না; তাই যত দ্রুত সম্ভব ক্ষমতা হস্তান্তর করা দেশের স্বার্থে সবচেয়ে ভালো।
আজকের পত্রিকা: এ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে কী ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হতে পারে?
কামরান টি রহমান: ব্যবসায়ীরা সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁদের সুবিধা-অসুবিধা তুলে ধরছেন। তবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সরকারকেই। যদি সরকারের মনে হয়, কোনো বিকল্প পথ রয়েছে, তবে সেটি বিবেচনা করে পদক্ষেপ নেবে।
আজকের পত্রিকা: ভ্যাট বৃদ্ধির ফলে মূল্যস্ফীতি ও ব্যবসায় কী ধরনের প্রভাব পড়ছে?
কামরান টি রহমান: মূল্যস্ফীতির কারণে জনগণের ক্রয়ক্ষমতা কমেছে এবং তার ওপর ভ্যাট বৃদ্ধির ফলে ভোক্তার ওপর আরও চাপ বাড়ছে। এর ফলে ভোগ কমে যাচ্ছে এবং অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা হ্রাস পাচ্ছে। বড় কোম্পানিগুলো জানাচ্ছে, আগে যে বড় প্যাকেজ বিক্রি হতো, তা এখন মানুষের পক্ষ থেকে কেনা সম্ভব হচ্ছে না। এখন তারা ছোট প্যাকেজ বিক্রি করছে।
টাকার অবমূল্যায়নের কারণে কাঁচামাল আমদানিতে খরচ বেড়েছে। যে পণ্য আগে ৮৫ টাকা দিয়ে কিনতাম, এখন তা ১২২ বা ১২৫ টাকায় আসছে। এর ওপর কাস্টমস ডিউটি ও ভ্যাট যোগ হচ্ছে। ফলে সব ধরনের শিল্পে ভ্যাট বৃদ্ধির নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
আজকের পত্রিকা: তাহলে সরকার কোন পথে আয় করবে?
কামরান টি রহমান: আমাদের কর-জিডিপির অনুপাত ৭ থেকে ৮ শতাংশের মধ্যে, যা বৈশ্বিকভাবে কম। এ অনুপাত বাড়ানোর জন্য করজাল সম্প্রসারণ জরুরি। এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, ১ কোটির বেশি টিন নম্বর থাকলেও মাত্র ৪০ লাখ মানুষ রিটার্ন দেয়। ফলে করদাতার সংখ্যা বাড়াতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে যদি অতিরিক্ত চাপ দেওয়া হয়, তবে বর্তমান করদাতারা নিরুৎসাহিত হতে পারেন। সরকার করজাল বাড়াতে পারছে না, তাই ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে। রাজস্ব সংগ্রহ জরুরি, কিন্তু শুধু ভ্যাটে নির্ভর করা যাবে না। করজাল বাড়াতে হবে এবং সরকারকে খরচ কমাতে হবে। আমরা যদি কর দিই আর সরকার খরচ বাড়াতে থাকে, তবে সেটা টেকসই হবে না।
আজকের পত্রিকা: পুঁজিবাজারে ব্যবসায়ীরা পুঁজি সংগ্রহে আগ্রহ দেখান কেন? তাঁদের জন্য শেয়ারবাজার কেন এতটা অনির্ভরযোগ্য হয়ে উঠেছে?
কামরান টি রহমান: অনেক ব্যবসায়ী পুঁজিবাজারে যেতে চান না। কারণ, সেখানে নানা বাধ্যবাধকতা রয়েছে এবং পুরো প্রক্রিয়া জটিল। অনেকের কাছে এসব চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। বড় ব্যবসাগুলো কিছুটা সক্ষম হলেও ছোট ব্যবসাগুলোর তালিকাভুক্ত হওয়া কঠিন।
খেলাপি ঋণ নিয়ে নানা হুঙ্কারের পর ফের পিছুটান নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সে জন্য ঋণের মেয়াদ ৯০ দিন পার হলে তা খেলাপি করা হবে, এমন সিদ্ধান্ত আগামী এপ্রিলে কার্যকর না করে জুলাই মাস থেকে কার্যকরের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। আর নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
২ ঘণ্টা আগেরাজস্ব সংগ্রহের গতি একটি দেশের অর্থনৈতিক স্বাস্থ্যের মূল সূচক হিসেবে কাজ করে। এই গতি, যা সরাসরি সরকারের অর্থনৈতিক সক্ষমতা এবং পরিকল্পনাগুলোর বাস্তবায়ন ক্ষমতার সঙ্গে সম্পর্কিত। বিদ্যমান অর্থনীতিতে যদি প্রত্যাশিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন না করতে পারে, তবে তা একদিকে যেমন আর্থিক ব্যবস্থার অস্থিতিশীলতার সংকেত
৩ ঘণ্টা আগেপ্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের ওপর আরোপিত বর্ধিত ভ্যাট ও শুল্ক কমানোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন (বাপা)। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ দাবি জানান সংগঠনের নেতারা। বিষয়টি বিবেচনার করার আশ্বাস দিয়েছে...
৪ ঘণ্টা আগেশেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি) এবং ডিএআই (ডেভেলপমেন্ট অলটারনেটিভস ইনকরপোরেটেড) গ্লোবাল, এলএলসির (লিমিটেড অ্যাবিলিটি কোম্পানি) মধ্যে আজ বৃহস্পতিবার সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শেকৃবির উপাচার্য মো. আব্দুল লতিফ।
৪ ঘণ্টা আগে