পেঁয়াজের বাজার লাগামহীন

অর্চি হক, ঢাকা
প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০৯: ২৫
ছবি: সংগৃহীত

দিনাজপুরের হাকিমপুরে মোকামগুলোয় পচতে শুরু করেছে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজ। পচন ধরা এসব পেঁয়াজ মানভেদে ৪ থেকে ৮০ টাকা কেজি বিক্রি করতে হচ্ছে আড়তদারদের। কোনো কোনো আড়তদার আবার বিক্রি করতে না পেরে ফেলে দেন। দেশের এক প্রান্তে পেঁয়াজের মোকামে যখন এই হাল, তখন রাজধানীতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৬০ টাকায়।

এই অবস্থায় দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেঁয়াজের আমদানি শুল্ক সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন। গত বৃহস্পতিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে লেখা এক চিঠিতে এ সুপারিশ করা হয়। বর্তমানে পেঁয়াজ আমদানিতে ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক রয়েছে। এটি নির্দিষ্ট একটি সময়ের জন্য প্রত্যাহার চায় ট্যারিফ কমিশন।

দেশে পেঁয়াজের দামে এই ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে সপ্তাহ তিনেক ধরে। রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণনপ্রতিষ্ঠান টিসিবির বাজার মনিটরিং প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক মাস আগে রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ১১০ টাকায়, আর আমদানি করা ভারতীয় পেঁয়াজের দাম ছিল ওই সময় সর্বোচ্চ ১০০ টাকা। কিন্তু গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মোহাম্মদপুর, রামপুরা ও বনশ্রী এলাকার বাজার ঘুরে দেখা যায়, খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকায়। আর ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৩০ টাকায়।

কারওয়ান বাজারে বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সকালে নিউজে দেখলাম, হিলিতে পেঁয়াজ পচে যাচ্ছে। ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে ৫০ কেজির বস্তা। তাহলে হিলি থেকে ঢাকার বাজারে পৌঁছাতে কত খরচ হয়, যে কেজি ১৩০ এ চলে যাচ্ছে?’

কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা সেলিম মিয়া বলেন, ‘নতুন পেঁয়াজ ওঠার আগপর্যন্ত দাম বাড়তে থাকবে। এইখানে আমাদের কোনো হাত নাই।’

পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আলুর দাম

বাজারে পেঁয়াজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে আলুর দাম। বাজার ও মানভেদে প্রতি কেজি আলু ৬৫-৭৫ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। পেঁয়াজের মতো আলুর বিষয়ে ব্যবসায়ীরা একই কথা বলছেন। কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী সানাউল্লাহ বলেন, নতুন আলু পুরোদমে বাজারে এলে দাম কমবে। এর আগপর্যন্ত দাম বাড়তে থাকবে।

সবজির দাম কমলেও মুরগি চড়া

বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে অনেকটা কমেছে সবজির দাম। তবে বাজারভেদে বিভিন্ন ধরনের সবজির দামে বড় পার্থক্য দেখা গেছে। কারওয়ান বাজারে যে বেগুন কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, রামপুরায় তা ১৬০ টাকা।

গতকাল রামপুরা, বনশ্রী এলাকায় প্রতি কেজি মুলা ৯০ টাকা, শিম ১৬০ টাকা, ঝিঙে ৮০ টাকা, পটোল ৭০ টাকা, করলা ১০০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৮০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। এ ছাড়া কাঁকরোল ১০০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৭৫, চিচিঙ্গা ৮০, পেঁপে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। প্রতিটি লাউ ৬০-৭০ টাকা, ফুলকপি ও বাঁধাকপি ৭০, আড়াই শ গ্রাম কাঁচা মরিচ ৬০, কাঁচা কলার হালি ৬০ টাকা বিক্রি হতে দেখা গেছে। অথচ কারওয়ান বাজারে প্রতিটি সবজির দাম কেজিতে ৫-৪০ টাকা পর্যন্ত কম।

দামের মধ্যে বড় ধরনের পার্থক্যের কারণ জানতে চাইলে বনশ্রী কাঁচাবাজারের সবজি বিক্রেতা মোহাম্মদ আসিফ বলেন, ‘আমরা কারওয়ান বাজার অথবা যাত্রাবাড়ী থেকে মাল আনি। ক্যারিং ছাড়াও আরও অনেক খরচ যোগ করতে হয়। তাই দামটা বেশি পড়ে।’

বাজারভেদে দামের বড় পার্থক্য সম্পর্কে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘আমাদের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর পরিকল্পনা ও সমন্বয়ের মারাত্মক খামতি রয়েছে। পর্যাপ্ত মনিটরিং না থাকায় বাজারে যে যেভাবে ইচ্ছা, সেভাবে দাম রাখে। কঠোর মনিটরিং এবং শাস্তির ব্যবস্থা ছাড়া এই অবস্থার পরিবর্তন হবে না।’

বাজারে আগের মতোই চড়া দামে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হতে দেখা গেছে। গতকাল প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ২০০-২১০ টাকায়। ফার্মের মুরগির বাদামি ডিম প্রতি ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৫৫ টাকায়, আর গরুর মাংস ৭৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত