ঋণখেলাপিদের ‘এক্সিট’ দেওয়ার কথা ভাবছে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ২৯ অক্টোবর ২০২২, ২১: ২৬
আপডেট : ৩০ অক্টোবর ২০২২, ১৭: ৫২

দেশের আর্থিক খাতে খেলাপি ঋণের বোঝা বেড়েই চলছে। এর নেপথ্যে রয়েছে ‘ইচ্ছাকৃত খেলাপি’ ঋণ। এ শ্রেণির খেলাপিরা নানা প্রভাব খাটিয়ে প্রচলিত আইনের ফাঁকফোকরে পার পাচ্ছেন। এতে ব্যাংকিং খাতে চাপ বেড়েছে। কয়েকটি ব্যাংক মারাত্মক দুর্বল হয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে খেলাপিদের ‘এক্সিট’ দেওয়ার কথা ভাবছে সরকার। এর জন্য আইন পরিবর্তনের বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 

রাজধানীর মতিঝিলে আজ শনিবার ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) এক সেমিনারে এ তথ্য জানান প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান। ‘দ্য রোল অব পিপিপি ইন অ্যাচিভমেন্ট ভিশন ২০৪১’ শীর্ষক এ সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন তিনি। 

এফবিসিসিআই সভাপতি সভাপতি মো. জসিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সেমিনারে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘খেলাপি ঋণের সমস্যাটা শুরু আমাদের দেশে নয়। এটা সারা বিশ্বের সমস্যা। বিশেষ করে আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও চায়না পর্যন্ত খেলাপি সমস্যায় ভুগছে। অন্যান্য দেশ এসব সমস্যার মাঝেও সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তারা উত্তরণের চেষ্টা করছে। আর ভারত ঋণ খেলাপিদের আইন অনুযায়ী সাজা দিচ্ছে। তবে কোম্পানিগুলোকে তারা বাঁচিয়ে রাখছে। আর চীনসহ অনেক দেশেও প্রকৃত ঋণ খেলাপিদের এক্সিট ওয়ের আইনি ব্যবস্থা রয়েছে। আমরাও এটা নিয়ে কাজ করছি। আমাদের আইনটি পরিবর্তন করা হবে। ব্যাংক আইনে তাদের মতো করে বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করতে যাচ্ছি।’ 

প্রধানমন্ত্রীর এ উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘ঋণখেলাপির কারণে ভারতে কয়েকটি ব্যাংক বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকগুলো ব্যাংক মার্জ (একীভূত) করা হয়েছে। চীনে কেউ ইচ্ছাকৃত খেলাপি হলে, সংশ্লিষ্ট খেলাপি কোম্পানিটির উৎপাদন চালিয়ে যাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট উদ্যোগ আইনে বহাল রেখেছে দেশটির সরকার।’ 

সালমান ফজলুর রহমানের বক্তব্য অনুযায়ী, সরকার খেলাপি ঋণ নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে। বিশেষ করে প্রকৃত খেলাপিদের সমস্যা থেকে উত্তরণে সহায়তা দিতে আইন সংশোধন করার কথা ভাবা হচ্ছে। পরবর্তীতে ব্যাংক কোম্পানি আইনে তা অন্তর্ভুক্ত করা হবে। 

দেশের আমদানি–রপ্তানি ব্যবস্থার বিবর্তন সম্পর্কে বলতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, ‘স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আমাদের ফরেন এক্সচেঞ্জ ছিল না। এটি ছিল সবচেয়ে বড় সমস্যা। তখন আমরা শূন্য রিজার্ভ দিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। সেসময় জি টু জি পদ্ধতিতে আমরা পণ্য আমদানি করতাম। তখন আমরা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করে বেসরকারি খাতে এক্সপোর্ট করার বিষয়টি বলা হলো। বঙ্গবন্ধু বললেন, এটি একটি ভালো উদ্যোগ, তবে ৬০ ভাগ ট্রেডিশনাল পণ্য এবং ৪০ শতাংশ নন-ট্রেডিশনাল পণ্য রপ্তানি করতে হবে। পাকিস্তান আমলে আমরা কোনো দিন চা রপ্তানি করিনি। তবে বঙ্গবন্ধুর পরামর্শে আমরা চা ও মধুসহ আরও অনেকগুলো নন-ট্রেডিশনাল পণ্য রপ্তানি করেছিলাম।’ 

সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব (পিপিপি) ভিত্তিক প্রকল্পে গতি আনার তাগিদ দিয়ে সালমান এফ রহমান বলেন, ‘বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট ও দেশের রিজার্ভ ও বাজেট সীমাবদ্ধতার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পিপিপি প্রকল্প গ্রহণ ছাড়া কোনো উপায় নেই। বিদ্যমান আইনে পিপিপির প্রক্রিয়া দ্রুত করা সম্ভব কি না, তা যাচাই করে দেখতে হবে। যদি দরকার হয়, আইনে পরিবর্তন আনতে হবে। কিন্তু এই পথেই যেতেই হবে।’ 

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, ‘পিপিপির উন্নয়ন ছাড়া এসডিজি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না। কেননা এসডিজি অর্জনের জন্য পিপিপির মাধ্যমে প্রায় ৬ শতাংশ অর্থায়ন করতে হবে। দেশে শক্তিশালী বেসরকারি খাত গড়ে উঠেছে। তাদেরও পিপিপির মাধ্যমেই উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট করতে হবে।’ 

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি নাসের এজাজ বিজয়। তিনি জানান, অবকাঠামো খাতে সরকারি অর্থায়নের বর্তমান প্রবণতা অনুযায়ী ২০৩৭ সাল নাগাদ এ খাতে ১৯২ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ ঘাটতি তৈরি হবে। পিপিপির মাধ্যমে ২০০ বিলিয়ন ডলার অর্থায়নের সুযোগ রয়েছে। 

এ সময় এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘২০৩১ ও ২০৪১ সাল নাগাদ বাংলাদেশের উন্নয়ন লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে হলে অবকাঠামো খাতে ব্যাপক পরিবর্তন করতে হবে। ক্ষেত্রে পিপিপি কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে।’ 

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন—এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক প্রীতি চক্রবর্তী, পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ড. এম মাসরুর রিয়াজ, পিপিপির উপদেষ্টা মোহাম্মদ হাসান ও পিপিপি কর্তৃপক্ষের সিইও মোহাম্মদ ইব্রাহীম, এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র সহসভাপতি মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত