জাতীয় নির্বাচনের পর ইতিবাচক প্রবণতায় লেনদেন হচ্ছে পুঁজিবাজারে। অংশীজনদের একটি বড় অংশের চাওয়া—নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির বেঁধে দেওয়া শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বা ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার। দেড় বছর পর সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বিএসইসি। তবে ফ্লোর প্রত্যাহার নিয়ে এখনো দুই পক্ষে বিভক্ত পুঁজিবাজারসংশ্লিষ্টরা। 

ফ্লোর প্রত্যাহার করা না পর্যন্ত পুঁজিবাজার স্বাভাবিক গতিতে ফিরবে না বলে মনে করে একটি পক্ষ। তবে আরেকটি পক্ষের মত, আরও কয়েক শ পয়েন্ট সূচক বৃদ্ধির পর ফ্লোর প্রত্যাহার করলে ভালো হয়। তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, ফ্লোর প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গে অবস্থান নিয়ে থাকা বড় বিনিয়োগকারীরা যাতে অতিরিক্ত বিক্রির চাপ দিয়ে বাজারে নেতিবাচক প্রবণতা তৈরি না করতে পারে, সে জন্য আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আসতে হবে।

চলতি মাসেই তিন ধাপে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের বিষয়ে ভাবছে বিএসইসি। বর্তমানে যেসব কোম্পানির শেয়ারের দাম ফ্লোর প্রাইসের ওপরে রয়েছে এবং মার্জিন ঋণসুবিধা পায় না, প্রথম ধাপে ওই কোম্পানির সীমা তুলে দেওয়া হবে। দ্বিতীয়ত, যেসব কোম্পানি ফ্লোরে আছে; কিন্তু তাদের শেয়ারের দাম ওঠানামায় মূল্যসূচকে খুব বেশি প্রভাব পড়ে না, তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সর্বশেষ ধাপে যেসব কোম্পানি সূচকে প্রভাব রাখে, এ ধরনের বড় মূলধনের কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস তুলে দেওয়া হবে। 

বাজার কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। এই অবস্থায় ফ্লোর প্রত্যাহার করা হলে ক্ষতির আশঙ্কা করছেন ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা। এ বিষয়ে পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দু-চার দিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত না নিয়ে বাজারকে আরও পর্যবেক্ষণ করা উচিত। আমি শুনেছি, বড় বিনিয়োগকারীরা অনেকেই বাইরে আছেন। তাঁরা সবাই একযোগে বিনিয়োগে আসুক। আরও ৫০০ পয়েন্ট সূচক বাড়ুক। তারপর তিন ধাপে প্রত্যাহার করা ঠিক হবে। তবে এখনই নয়।’ 

বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম অবশ্য বলেছেন, ফ্লোর প্রাইস উঠিয়ে নেওয়ার পর কেউ পরিকল্পিতভাবে ফেলে দিয়ে বাড়তি সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করলে পরের দিনই আবার ফ্লোর প্রাইস দেওয়া হবে। এরপর কারা অযৌক্তিকভাবে বিক্রির আদেশ দিল, তা খুঁজে বের করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে কোনো ছাড় নেই। 

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘বাজারের স্বাভাবিক কার্যক্রম, লেনদেন করতে দিতে হবে। আমাদের একটাই কথা—বাজারকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেওয়া হোক। ফ্লোর প্রত্যাহারের সুযোগ নিয়ে যদি কেউ অনৈতিকভাবে ক্ষতির চেষ্টা করে, সেটার জন্য তো এক্সচেঞ্জ ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা রয়েছেই। যখন যা দরকার, তাঁরা তা করবে।’ 

বিভক্তি এড়াতে আলোচনার মাধ্যমে বৃহৎ স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের পরামর্শ দিয়েছেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন। তিনি বলেন, ফ্লোর প্রত্যাহার হলেই ক্রেতা আসবে বা পতন হবে—এই দুই ধারণাই পুরোপুরি ঠিক নয়। ফ্লোর প্রত্যাহার হলে অতিরিক্ত বিক্রির চাপ দিয়ে যাতে বাজারে আস্থাহীনতা তৈরি না করা হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে আলোচনার মাধ্যমে।