অনলাইন ডেস্ক
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পা রেখেই ১৮ বছর বয়সে বাবার কাছ থেকে মাত্র ৩০ হাজার টাকা নিয়ে এক বন্ধুর সঙ্গে প্লাস্টিক আমদানির ব্যবসা শুরু করেছিলেন তিনি। তখনই প্রথম সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন তিনি। এখন তিনি সেখানকার ৫০ শীর্ষ ধনীর একজন, সম্পদের পরিমাণ ১২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। যার কথা বলছি, তিনি বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে ‘কুইক রেন্টাল’ নামে পরিচিত বহুল বিতর্কিত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী শিল্পগোষ্ঠীর কর্ণধার সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খান।
যুক্তরাষ্ট্রের সাময়িকী ‘ফোর্বসে’র তৈরি সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ৫০ ধনীর তালিকায় এক ধাপ এগিয়ে তাঁর অবস্থান এখন ৪১তম। এখন তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ১১২ কোটি ডলার, যা গতবছর ছিল ১০০ কোটি ডলার। বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ বৃহত্তম শিল্পগোষ্ঠী সামিট গ্রুপের বিদ্যুৎ, বন্দর, ফাইবার অপটিক ও অবকাঠামো খাতের ব্যবসা রয়েছে।
প্লাস্টিক ব্যবসায়ী থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদক
ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী, ৬৮ বছর বয়সী আজিজ খান বাংলাদেশের নাগরিক হলেও সিঙ্গাপুরে আবাসিক। বিশ্বের বিলিয়নেয়ারের তালিকায় তাঁর অবস্থান ২৫৪০তম অবস্থানে। আজিজ খানের বাবা ছিলেন সেনা কর্মকর্তা। অবসরের পর তিনি নির্মাণ ব্যবসায় নামেন। আজিজ খান ব্যবসা দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করলেও পরে বাবার পথ অনুসরণ করে অবকাঠামো খাতে চলে যান। আজিজ খানের তিন সন্তান। তাঁর মেয়ে আয়েশা খানও বিদ্যুৎ খাতে; সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল দেখভাল করেন তিনি।
২০১৯ সালে জাপানি প্রতিষ্ঠান জেরার কাছে সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালের ২২ শতাংশ শেয়ার ৩৩ কোটি মার্কিন ডলারে বিক্রি করেন আজিজ খান। সেই বিক্রয়মূল্যের ওপর ভিত্তি করে তখন সামিট পাওয়ারের বাজারমূল্য ১৫০ কোটি মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছিল।
সামিটের কর্ণধার আজিজ খানের বিলিয়নেয়ার হয়ে ওঠার গল্প তুলে ধরেছে সিঙ্গাপুর ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনএ। এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা প্রশাসন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি ব্যবসা শুরু করেন। এক বন্ধুর সঙ্গে প্লাস্টিক আমদানির পাইকারি ব্যবসা করার সময় প্রথমবার সিঙ্গাপুরে ভ্রমণ করেন। পরে তিনি সার রপ্তানির ব্যবসাও করেন। পিভিসি (পলি ভিনাইল ক্লোরাইড) জুতা তৈরির জন্য প্ল্যান্ট কেনেন।
ব্যবসা পরিচালনা করতে গিয়ে আজিজ খানকে মাঝে মাঝেই বন্দরে বিদ্যুৎ সংকটের কারণে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হতো। ফলে তাঁকে বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য তিনি বাংলাদেশ সরকারের কাছে বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনের আবেদন জানান। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষবকে বলেন, ‘আমাকে আপনার জন্য একটি পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করতে দিন। যেন জাহাজগুলোকে বন্দরে বেশি সময় থাকতে না হয়।’
একাধিক ব্যবসা থাকলেও মূলত বিদ্যুতের ব্যবসাই তাঁর সমৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখে। আজিজ খান ১৯৮৮ সাল থেকে সিঙ্গাপুরের স্থায়ী বাসিন্দা এবং ২০১৬ সালে তিনি তাঁর কোম্পানির সদর দপ্তর এখানে স্থানান্তর করেন।
বিদ্যুৎ খাতে সামিট গ্রুপের আধিপত্য
১৯৯৭ সালে দেশের বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী (আইপিপি) প্রতিষ্ঠান সামিট পাওয়ার লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এটি এখন দেশের বৃহৎ বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১৯ শতাংশই উৎপাদন করে তাঁর প্রতিষ্ঠান। প্রায় পাঁচ দশকের ব্যবসায়ী জীবনে আজিজ খানের সম্পদের উল্লম্ফন হলেও এর বড় অংশই তৈরি হয়েছে গত এক দশকে।
সামিট পাওয়ারের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সামিট গ্রুপের তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র ২০০১ সালে প্রথম উৎপাদনে আসে। কোম্পানিটির বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ছিল ৩৩ মেগাওয়াট। ২০০৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০৫ মেগাওয়াটে উঠে। ২০০৯ সালের পর থেকেই বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সঙ্গে একের পর এক বিদ্যুৎ বিক্রির চুক্তিতে আবদ্ধ হতে থাকে কোম্পানিটি।
প্রথমে কুইক রেন্টাল পরে আইপিপি স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে থাকে সামিট পাওয়ার। গত এক দশকে বেসরকারি খাত থেকে বিদ্যুৎ কেনার দৌড়ে সামিটই সবচেয়ে এগিয়ে। তাই পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কোম্পানির মুনাফা ও সম্পদের পরিমাণ। বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রায় অর্ধেক সক্ষমতা অব্যবহৃত থাকলেও ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে প্রতিবছর সরকারের বিপুল অর্থ ব্যয় নিয়ে সমালোচনা চলছে প্রায় দুই দশক ধরে।
চলতি বছরের জুলাইয়ে বিদ্যুৎ খাতের প্রকল্প বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের আইএমইডি বিভাগের এক গবেষণায় বলা হয়, দেশে স্থাপিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মোট সক্ষমতার মাত্র ৫৬ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে জনগণের যে টাকা সরকার খরচে তার ৪৪ শতাংশই বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর পকেটে যাচ্ছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, প্রকল্প গ্রহণের আগে সঠিকভাবে ফিজিবিলিটি স্টাডি বা নির্মিত প্ল্যান্টসমূহে জ্বালানি সরবরাহের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে প্রকল্প গ্রহণ করা হলে ওইসব কেন্দ্র বসিয়ে রেখে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দেয়ার প্রয়োজন হতো না।
সরকার যখন বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সাথে চুক্তি করে তখন সে চুক্তিতে ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়ার শর্তটি জুড়ে দেয়া থাকে। এই চার্জ অনেক সময় ডলারে পরিশোধ করা বা ডলারের বিনিময় হার অনুযায়ী পরিশোধের শর্ত থাকে। ফলে তা পরিশোধে আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
পিক আওয়ারে বাড়তি বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর কথা বলে মূলত বিদ্যুৎ খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কাছ থেকে কেনার জন্য এধরনের আইনি কাঠামো তৈরি করা হয়। ২০১০ সালে দ্রুততম সময়ে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য করা ওই আইন অনুযায়ী, বিদ্যুৎ খাতের ইউনিট প্রতি দাম ও খরচের মডেল জবাবদিহিতার উর্ধ্বে ছিল। একইসাথে দীর্ঘমেয়াদে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি স্বল্পসময়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে এমন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনেও গুরুত্ব দেয়া হয়, যাকে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বলা হয়।
গত মঙ্গলবার সংসদে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আওয়ামী লীগের তিন মেয়াদে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ বা ভাড়া বাবদ সরকার জনগণের ১ লাখ ৪ হাজার ৯২৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে একক গ্রুপ হিসেবে সবচেয়ে পেয়েছে সামিট গ্রুপ।
এক দশকে সামিটের সম্পদ ২১২৩ থেকে ১০৩০৯ কোটি টাকা
সংসদে যে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে, সেটি কেন্দ্রভিত্তিক। কিন্তু বিদেশি ও বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর কোনো কোনোটির একাধিক কেন্দ্র রয়েছে। জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য ধরে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, শিল্পগোষ্ঠী হিসেবে দেশের বিদ্যুৎ খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান সামিট গ্রুপের ৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্র ভাড়াবাবদ সর্বোচ্চ প্রায় ১৭ হাজার ৬১০ কোটি টাকা পেয়েছে। এছাড়া সামিট ও ইউনাইটেডের যৌথ মালিকানাধীন খুলনা পাওয়ার কোম্পানি (কেপিসিএল) তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে পেয়েছে ৩ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা।
আজিজ খানের সম্পদের বড় অংশের অবদান রাখছে সামিট পাওয়ার। গত ২০ বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০০৩ থেকে ২০০৮ হিসাব বছর পর্যন্ত কোম্পানির সম্পদ ও নিট মুনাফায় যে হারে প্রবৃদ্ধি হয়, পরের হিসাব বছরগুলোতে তা ছিল অনেক বেশি। ২০০৩ সালে কোম্পানিটির সম্পদ ছিল ১০০ কোটি ৮২ লাখ এবং নিট মুনাফা হয় ১১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
২০০৮ সালে তা বেড়ে সম্পদ ৬৭০ কোটি ৭১ লাখ ও নিট মুনাফা হয় ৪৬ কোটি ২ লাখ টাকা। পরের বছরই তা বেড়ে যথাক্রমে ১ হাজার ১২ কোটি ১১ লাখ এবং ৭০ কোটি ৮ লাখ টাকা হয়। ২০১২ সালে সামিট পাওয়ারের সম্পদ হয় ২ হাজার ১২৩ কোটি ৬ লাখ এবং নিট মুনাফা ২৪৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এক দশকের ব্যবধানে ২০২২ সালে সম্পদ বেড়ে ১০ হাজার ৩০৯ কোটি ১০ লাখ টাকায় এবং নিট মুনাফা ৬৭৩ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে পা রেখেই ১৮ বছর বয়সে বাবার কাছ থেকে মাত্র ৩০ হাজার টাকা নিয়ে এক বন্ধুর সঙ্গে প্লাস্টিক আমদানির ব্যবসা শুরু করেছিলেন তিনি। তখনই প্রথম সিঙ্গাপুরে গিয়েছিলেন তিনি। এখন তিনি সেখানকার ৫০ শীর্ষ ধনীর একজন, সম্পদের পরিমাণ ১২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। যার কথা বলছি, তিনি বাংলাদেশের জ্বালানি খাতে ‘কুইক রেন্টাল’ নামে পরিচিত বহুল বিতর্কিত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের সবচেয়ে বড় সুবিধাভোগী শিল্পগোষ্ঠীর কর্ণধার সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান আজিজ খান।
যুক্তরাষ্ট্রের সাময়িকী ‘ফোর্বসে’র তৈরি সিঙ্গাপুরের শীর্ষ ৫০ ধনীর তালিকায় এক ধাপ এগিয়ে তাঁর অবস্থান এখন ৪১তম। এখন তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ১১২ কোটি ডলার, যা গতবছর ছিল ১০০ কোটি ডলার। বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ বৃহত্তম শিল্পগোষ্ঠী সামিট গ্রুপের বিদ্যুৎ, বন্দর, ফাইবার অপটিক ও অবকাঠামো খাতের ব্যবসা রয়েছে।
প্লাস্টিক ব্যবসায়ী থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদক
ফোর্বসের তথ্য অনুযায়ী, ৬৮ বছর বয়সী আজিজ খান বাংলাদেশের নাগরিক হলেও সিঙ্গাপুরে আবাসিক। বিশ্বের বিলিয়নেয়ারের তালিকায় তাঁর অবস্থান ২৫৪০তম অবস্থানে। আজিজ খানের বাবা ছিলেন সেনা কর্মকর্তা। অবসরের পর তিনি নির্মাণ ব্যবসায় নামেন। আজিজ খান ব্যবসা দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করলেও পরে বাবার পথ অনুসরণ করে অবকাঠামো খাতে চলে যান। আজিজ খানের তিন সন্তান। তাঁর মেয়ে আয়েশা খানও বিদ্যুৎ খাতে; সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনাল দেখভাল করেন তিনি।
২০১৯ সালে জাপানি প্রতিষ্ঠান জেরার কাছে সামিট পাওয়ার ইন্টারন্যাশনালের ২২ শতাংশ শেয়ার ৩৩ কোটি মার্কিন ডলারে বিক্রি করেন আজিজ খান। সেই বিক্রয়মূল্যের ওপর ভিত্তি করে তখন সামিট পাওয়ারের বাজারমূল্য ১৫০ কোটি মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছিল।
সামিটের কর্ণধার আজিজ খানের বিলিয়নেয়ার হয়ে ওঠার গল্প তুলে ধরেছে সিঙ্গাপুর ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম সিএনএ। এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসা প্রশাসন বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। মাত্র ১৮ বছর বয়সে তিনি ব্যবসা শুরু করেন। এক বন্ধুর সঙ্গে প্লাস্টিক আমদানির পাইকারি ব্যবসা করার সময় প্রথমবার সিঙ্গাপুরে ভ্রমণ করেন। পরে তিনি সার রপ্তানির ব্যবসাও করেন। পিভিসি (পলি ভিনাইল ক্লোরাইড) জুতা তৈরির জন্য প্ল্যান্ট কেনেন।
ব্যবসা পরিচালনা করতে গিয়ে আজিজ খানকে মাঝে মাঝেই বন্দরে বিদ্যুৎ সংকটের কারণে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হতো। ফলে তাঁকে বিপুল ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য তিনি বাংলাদেশ সরকারের কাছে বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদনের আবেদন জানান। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষবকে বলেন, ‘আমাকে আপনার জন্য একটি পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করতে দিন। যেন জাহাজগুলোকে বন্দরে বেশি সময় থাকতে না হয়।’
একাধিক ব্যবসা থাকলেও মূলত বিদ্যুতের ব্যবসাই তাঁর সমৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখে। আজিজ খান ১৯৮৮ সাল থেকে সিঙ্গাপুরের স্থায়ী বাসিন্দা এবং ২০১৬ সালে তিনি তাঁর কোম্পানির সদর দপ্তর এখানে স্থানান্তর করেন।
বিদ্যুৎ খাতে সামিট গ্রুপের আধিপত্য
১৯৯৭ সালে দেশের বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী (আইপিপি) প্রতিষ্ঠান সামিট পাওয়ার লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। এটি এখন দেশের বৃহৎ বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনের ১৯ শতাংশই উৎপাদন করে তাঁর প্রতিষ্ঠান। প্রায় পাঁচ দশকের ব্যবসায়ী জীবনে আজিজ খানের সম্পদের উল্লম্ফন হলেও এর বড় অংশই তৈরি হয়েছে গত এক দশকে।
সামিট পাওয়ারের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সামিট গ্রুপের তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্র ২০০১ সালে প্রথম উৎপাদনে আসে। কোম্পানিটির বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা ছিল ৩৩ মেগাওয়াট। ২০০৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০৫ মেগাওয়াটে উঠে। ২০০৯ সালের পর থেকেই বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) সঙ্গে একের পর এক বিদ্যুৎ বিক্রির চুক্তিতে আবদ্ধ হতে থাকে কোম্পানিটি।
প্রথমে কুইক রেন্টাল পরে আইপিপি স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে থাকে সামিট পাওয়ার। গত এক দশকে বেসরকারি খাত থেকে বিদ্যুৎ কেনার দৌড়ে সামিটই সবচেয়ে এগিয়ে। তাই পাল্লা দিয়ে বেড়েছে কোম্পানির মুনাফা ও সম্পদের পরিমাণ। বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রায় অর্ধেক সক্ষমতা অব্যবহৃত থাকলেও ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে প্রতিবছর সরকারের বিপুল অর্থ ব্যয় নিয়ে সমালোচনা চলছে প্রায় দুই দশক ধরে।
চলতি বছরের জুলাইয়ে বিদ্যুৎ খাতের প্রকল্প বাস্তবায়ন ও অগ্রগতি বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের আইএমইডি বিভাগের এক গবেষণায় বলা হয়, দেশে স্থাপিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মোট সক্ষমতার মাত্র ৫৬ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহার করা হয়। অর্থাৎ ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে জনগণের যে টাকা সরকার খরচে তার ৪৪ শতাংশই বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর পকেটে যাচ্ছে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, প্রকল্প গ্রহণের আগে সঠিকভাবে ফিজিবিলিটি স্টাডি বা নির্মিত প্ল্যান্টসমূহে জ্বালানি সরবরাহের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে প্রকল্প গ্রহণ করা হলে ওইসব কেন্দ্র বসিয়ে রেখে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দেয়ার প্রয়োজন হতো না।
সরকার যখন বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর সাথে চুক্তি করে তখন সে চুক্তিতে ক্যাপাসিটি চার্জ দেয়ার শর্তটি জুড়ে দেয়া থাকে। এই চার্জ অনেক সময় ডলারে পরিশোধ করা বা ডলারের বিনিময় হার অনুযায়ী পরিশোধের শর্ত থাকে। ফলে তা পরিশোধে আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
পিক আওয়ারে বাড়তি বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর কথা বলে মূলত বিদ্যুৎ খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ আকর্ষণের লক্ষ্যে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কাছ থেকে কেনার জন্য এধরনের আইনি কাঠামো তৈরি করা হয়। ২০১০ সালে দ্রুততম সময়ে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য করা ওই আইন অনুযায়ী, বিদ্যুৎ খাতের ইউনিট প্রতি দাম ও খরচের মডেল জবাবদিহিতার উর্ধ্বে ছিল। একইসাথে দীর্ঘমেয়াদে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি স্বল্পসময়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে এমন বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনেও গুরুত্ব দেয়া হয়, যাকে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বলা হয়।
গত মঙ্গলবার সংসদে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, আওয়ামী লীগের তিন মেয়াদে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য ক্যাপাসিটি চার্জ বা ভাড়া বাবদ সরকার জনগণের ১ লাখ ৪ হাজার ৯২৬ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। এর মধ্যে একক গ্রুপ হিসেবে সবচেয়ে পেয়েছে সামিট গ্রুপ।
এক দশকে সামিটের সম্পদ ২১২৩ থেকে ১০৩০৯ কোটি টাকা
সংসদে যে তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে, সেটি কেন্দ্রভিত্তিক। কিন্তু বিদেশি ও বেসরকারি বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোর কোনো কোনোটির একাধিক কেন্দ্র রয়েছে। জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর দেওয়া তথ্য ধরে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, শিল্পগোষ্ঠী হিসেবে দেশের বিদ্যুৎ খাতের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান সামিট গ্রুপের ৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্র ভাড়াবাবদ সর্বোচ্চ প্রায় ১৭ হাজার ৬১০ কোটি টাকা পেয়েছে। এছাড়া সামিট ও ইউনাইটেডের যৌথ মালিকানাধীন খুলনা পাওয়ার কোম্পানি (কেপিসিএল) তিনটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে পেয়েছে ৩ হাজার ৭৪৪ কোটি টাকা।
আজিজ খানের সম্পদের বড় অংশের অবদান রাখছে সামিট পাওয়ার। গত ২০ বছরের আর্থিক প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০০৩ থেকে ২০০৮ হিসাব বছর পর্যন্ত কোম্পানির সম্পদ ও নিট মুনাফায় যে হারে প্রবৃদ্ধি হয়, পরের হিসাব বছরগুলোতে তা ছিল অনেক বেশি। ২০০৩ সালে কোম্পানিটির সম্পদ ছিল ১০০ কোটি ৮২ লাখ এবং নিট মুনাফা হয় ১১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
২০০৮ সালে তা বেড়ে সম্পদ ৬৭০ কোটি ৭১ লাখ ও নিট মুনাফা হয় ৪৬ কোটি ২ লাখ টাকা। পরের বছরই তা বেড়ে যথাক্রমে ১ হাজার ১২ কোটি ১১ লাখ এবং ৭০ কোটি ৮ লাখ টাকা হয়। ২০১২ সালে সামিট পাওয়ারের সম্পদ হয় ২ হাজার ১২৩ কোটি ৬ লাখ এবং নিট মুনাফা ২৪৮ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। এক দশকের ব্যবধানে ২০২২ সালে সম্পদ বেড়ে ১০ হাজার ৩০৯ কোটি ১০ লাখ টাকায় এবং নিট মুনাফা ৬৭৩ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে।
ঘুষের নোটে সাগর আদানি ঘুষের পরিমাণ, কাকে ঘুষ দেওয়া হয়েছে এবং কত মেগাওয়াট বিদ্যুতের বিনিময়ে এটি হয়েছে—তার বিবরণ উল্লেখ করেছেন। তিনি মেগাওয়াট প্রতি ঘুষের হারও উল্লেখ করেছেন। ২০২০ সালে একটি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে সাগর আদানি বলেন, ‘হ্যাঁ...কিন্তু বিষয়টা দৃশ্যমান হওয়ার ঠেকানো বেশ কঠিন।’
২৮ মিনিট আগেগৌতম আদানি, ভারতীয় কনগ্লোমারেট আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তিদের একজন, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বহু-বিলিয়ন ডলারের জালিয়াতি এবং ঘুষ কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, ভারত সরকারের কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়ার মাধ্যমে দেশের বৃহত্তম সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের চুক্তি বাগিয়েছে
১ ঘণ্টা আগেব্যাংকিং খাতে যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পদোন্নতি দীর্ঘদিনের প্রথা। তবে এবার নতুন নীতিমালায় আরোপিত কঠোর শর্ত—ব্যাংকিং ডিপ্লোমা, মাস্টার্স ডিগ্রি ও গবেষণাপত্র প্রকাশের বাধ্যবাধকতা—সরকারি ব্যাংকের ২৫৮ কর্মকর্তার জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) পদে পদোন্নতি নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে।
১ ঘণ্টা আগেস্থানীয় বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলো রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানির প্রস্তাবিত মূল্য পরিশোধে আগ্রহী ছিল না। এতে চুক্তিটির বাস্তবায়ন হুমকির মধ্যে পড়ে। মার্কিন কর্তৃপক্ষের অভিযোগ অনুযায়ী, চুক্তি রক্ষার জন্য আদানি স্থানীয় কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে তাঁদের এই বিদ্যুৎ কিনতে রাজি করানোর সিদ্ধান্ত নেন।
২ ঘণ্টা আগে