ফারুক মেহেদী, ঢাকা
টানা লকডাউনে স্থবির হয়ে পড়ছে অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য। আমদানি, রপ্তানিতে দীর্ঘ হচ্ছে অচলাবস্থা। অর্থনীতির প্রাণ তৈরি পোশাকসহ প্রায় সব ধরনের কারখানা বন্ধের ফলে পুরো সাপ্লাই চেইন বা সরবরাহব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তার কারণে নাজুক হয়ে পড়েছে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান পরিস্থিতি। প্রায় মরে যাচ্ছে পর্যটন খাত। ক্ষুদ্র শিল্প থেকে শাকসবজি; কৃষি থেকে বড় শিল্প কিংবা সেবা খাত-সর্বত্র শুধুই অনিশ্চয়তা আর অজানা আতঙ্ক।
সরকারের অর্থনীতির রক্তপ্রবাহ বলে পরিচিত রাজস্ব আয়ও থমকে যাচ্ছে। মাঠপর্যায়ে ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত রাজস্ব আদায় কম হচ্ছে। সব মিলিয়ে কমছে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের আয়। গরিব হচ্ছে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। করোনার উচ্চ সংক্রমণে লকডাউন অবধারিত হলেও সার্বিকভাবে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় অর্থনীতি এখন ক্ষতির চক্রে ঘুরপাক খাচ্ছে। বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তা ও বিশ্লেষকেরা মনে করেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি কঠিন সময় পার করছে। এভাবে চলত থাকলে অনেক প্রতিষ্ঠানই বন্ধ হয়ে যাবে।
চলতি অর্থবছর শুরু প্রথম মাস প্রায় শেষের পথে। বিদায়ী অর্থবছরের করোনার কালো থাবার রেশ নতুন অর্থবছরকেও আক্রান্ত করেছে। দফায় দফায় লকডাউনে বিপর্যস্ত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। চলতি অর্থবছরে সরকার ৬ লাখ ২ হাজার কোটি টাকার বাজেটে শুধু কর রাজস্ব আদায় করার কথা ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। সেই হিসাবে গড়ে প্রতি কর্মদিবসে আদায় করার কথা ১ হাজার ২৬৪ কোটি টাকা। এর হেরফের হলেই ঘাটতি বাড়তে থাকবে। তবে এনবিআরের বিভিন্ন কর, ভ্যাট ও শুল্ক কমিশনারেটে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজস্ব আয়েও করোনার শক্ত থাবা পড়েছে। জরুরি সেবার আওতায় বলে রাজস্ব অফিস খুলে বসে থাকছেন কর্মকর্তারা।
কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আসছে না। মাস শেষ না হওয়ায় এ মাসে কত রাজস্ব আয় হলো, তা জানার এখনই সুযোগ নেই।
চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার এম ফখরুল আলম আজকের পত্রিকাকে জানান, লকডাউনের কারণে আমদানি-রপ্তানি কমেছে। কমার প্রভাব বেশি ধরা পড়বে আগামী মাসে। কারণ, এখন যা আসছে আগের পণ্য। শিল্পকারখানা বন্ধের কারণে পণ্য খালাস কমে গেছে। রাজস্ব আয় কমে গেছে প্রায় ৬০ শতাংশ পর্যন্ত। কুমিল্লার ভ্যাট কমিশনার বেলাল হোসেইন চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, শিল্পকারখানা প্রায় সব বন্ধ। তাই রাজস্ব ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কম আদায় হচ্ছে। আয়কর অফিসেও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নামমাত্র রাজস্ব জমা হচ্ছে। কোম্পানি ও ব্যক্তির আয় কমছে বলে, সামনে এর নেতিবাচক প্রভাব দেখা যাবে।
অন্য সময় রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাত চালু থাকে। এবার তা–ও বন্ধ। শুধু রপ্তানিমুখী নয়; স্থানীয় চাহিদা মেটানোর জন্য যত ধরনের ছোট, বড়, মাঝারি শিল্পকারখানা রয়েছে, সবই বন্ধ। জিডিপির ৫৪ শতাংশ অবদান রাখছে যে সেবা খাত, সেটিও বন্ধ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সবশেষ ২০১৩ সালের অর্থনৈতিক শুমারির তথ্য বলছে, দেশে মোট অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৭৮ লাখ ১৮ হাজার ৫৬৫টি। এর মধ্যে স্থায়ী ৪৫ লাখ ১৪ হাজার ৯১টি। আর অস্থায়ী ৪ লাখ ৮২ হাজার ৯০৩টি। আর সরাসরি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত পরিবারের সংখ্যা ২৮ লাখ ২১ হাজার ৫৭১টি। এর মধ্যে পুরুষনিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান ৭২ লাখ ৫৫ হাজার ১৯৭টি আর নারীদের নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান ৫ লাখ ৬৩ হাজার ৩৬৮টি। লকডাউনে যেহেতু প্রায় সবই বন্ধ রয়েছে, তাতে ধরে নেওয়া যায় যে এই বিশাল পরিমাণ অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানও এখন বন্ধ রয়েছে।
বিবিএসের অর্থনৈতিক জরিপের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের একজন জানান, ২০১৩ সালের পর অর্থনীতিতে আরও বিনিয়োগ হয়েছে। এর মধ্যে মানুষের মাথাপিছু আয় আরও বেড়েছে। যেহেতু সবকিছু বেড়েছে, সুতরাং অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও আরও বেড়েছে–এসবের হিসাব যোগ হয়নি। যেটুকুর হিসাব আছে, তা ধরলেও অর্থনীতিতে কী ক্ষতি হচ্ছে, তা সহজেই বোঝা যাবে।
তবে এর হিসাব না থাকায়, তা জানতে উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান আজকের পত্রিকাকে বলেছেন, ‘করোনার প্রভাব আমাদের অর্থনীতির কী ক্ষতি হচ্ছে, তা দেখার জন্য আমরা একটা ধারণা জরিপ করতে চাই। শিগগিরই আমি সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দেব। এর আগেও আমরা এ রকম একটা জরিপ করেছিলাম। এর ফলে আমরা বুঝতে পারব কী পদক্ষেপ নিতে হবে।’
রপ্তানি খাতের উদ্যোক্তারা জানান, রপ্তানির ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। অর্ডার আসছে বিপুল হারে। কিন্তু ঠিকমতো জাহাজীকরণ করা যাচ্ছে না। ফলে কনটেইনার জট বন্দরে। রপ্তানিবাহী কনটেইনার পাঠাতে বিলম্বের কারণে দীর্ঘ মেয়াদে অর্ডার বাতিল এবং নতুন অর্ডার না পাওয়ার ঝুঁকিও তৈরি হচ্ছে। এর ফলে লাভ দূরের কথা বিপুল অঙ্কের লোকসানের আতঙ্কে আছেন উদ্যোক্তারা। এ বিষয়ে পোশাক, টেক্সটাইল ও খাদ্যপণ্য খাতের উদ্যোক্তা, ওয়েল গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ নুরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি মনে করি ২০২১ সাল পুরোটাই বন্ধ। এখন টিকে থাকার জন্য একমাত্র আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছি। এর বেশি কিছু আসলে বলার নাই। আমার ধারণা, এ বছর বেশির ভাগ কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে যাবে।’
অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা ও লকডাউনের কারণে বিনিয়োগেও স্থবিরতা চলছে। চলমান শিল্পকারখানাই যেখানে চালু রাখা যাচ্ছে না, সেখানে নতুন বিনিয়োগের কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছেন না উদ্যোক্তারা। ফলে নতুন নতুন শিল্পকারখানা স্থাপন থমকে আছে। আসছে না যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ। এতে সংকুচিত হবে নতুন চাকরির সুযোগ। এ বিষয়ে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তা সিরাজগঞ্জ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের পরিচালক শেখ মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এখন বিনিয়োগ একদম থমকে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সবাই অপেক্ষা করছে। সামনে ভালো সময় আসবে, এ জন্য অপেক্ষায় অনেকে।’
বিনিয়োগ যে হচ্ছে না, তা ব্যাংকের ঋণপ্রবাহের তথ্যের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। বিদায়ী অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত ১১ মাসে ঋণের প্রবৃদ্ধি মাত্র ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি অনুযায়ী তার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। বারবার সুযোগ দেওয়ার পরও উদ্যোক্তারা পুরোনো ঋণই পরিশোধ করতে পারছেন না। নতুন ঋণ নেবেন কীভাবে? তাদের কেউ কেউ মনে করেন, যে লোকসানে পড়েছেন, অধিকাংশ মালিকই ঋণ খেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে। এ ব্যাপারে, বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তা ও বিসিআইয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট প্রীতি চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা দেড় বছরের বেশি সময় ধরে একটা কঠিন অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করছি। আমাদের একটু একটু করে সহায়তা দিয়ে এগিয়ে নিতে হবে। না হলে আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে ৯০ শতাংশ উদ্যোক্তা ঋণের কিস্তি দিতে পারবে না। এতে অর্থনীতির মূল ভিত্তি বড় রকমের ঝাঁকুনি খাবে বলে মনে করছি।’
অর্থনীতির একটি বড় খাত পর্যটন। প্রায় ৪৫ লাখ লোক এ খাতের সঙ্গে নানাভাবে জড়িত। করোনার সবচেয়ে বড় আঘাত পড়েছে এ খাতে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সিইও জাবেদ আহমেদ বলেন, ‘ইনবাউন্ড, আউটবাউন্ড পর্যটনের মতো দেশীয় পর্যটনের অবস্থাও খারাপ। হোটেল, মোটেল, রিসোর্টে কোনো বুকিং নেই, একেবারেই শূন্য। এর দিকে কেউ তাকাচ্ছে না। এটি মরে যাচ্ছে।’
আমদানি হলে সরকার রাজস্ব পায়। রপ্তানি হলে উদ্যোক্তাদের আয় হয়, তাতে সরকারেরও আয় হয়। সেবা খাত সচল থাকলে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের আয় বাড়ে, এতে সরকার কর পায়। সবকিছু সচল থাকলে সরকার কোথাও শুল্ক, কোথাও ভ্যাট আবার কোথাও থেকে আয়কর পায়। আর এসবই রাজস্ব খাতে জমা হয়।
অর্থনীতি চলে এ আয় দিয়ে। সবকিছু বন্ধ মানে, আমদানিকারক, রপ্তানিকারক, ব্যবসায়ী, কর্মকর্তা–কর্মচারী, কোম্পানি, সরকার সবার আয় বন্ধ।
এ বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ ধরনের লকডাউন আমাদের মতো দেশের অর্থনীতির চাকা একদম বন্ধ করে দেয়। সরাসরি এর নেতিবাচক প্রভাব জিডিপিতে পড়ে। বিভিন্ন জরিপ অনুযায়ী, লকডাউনের ক্ষতির মাত্রাটা ওঠানামা করে। এর ফলে গড়ে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশের মতো আয় কমে যায়। আর এসএমইর ক্ষতিও ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত হয়। দেশের বিনিয়োগের অবস্থা এমনিতেই ভালো না। লকডাউন একে আরও নাজুক করে তুলতে পারে।’
টানা লকডাউনে স্থবির হয়ে পড়ছে অর্থনীতি, ব্যবসা-বাণিজ্য। আমদানি, রপ্তানিতে দীর্ঘ হচ্ছে অচলাবস্থা। অর্থনীতির প্রাণ তৈরি পোশাকসহ প্রায় সব ধরনের কারখানা বন্ধের ফলে পুরো সাপ্লাই চেইন বা সরবরাহব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তার কারণে নাজুক হয়ে পড়েছে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান পরিস্থিতি। প্রায় মরে যাচ্ছে পর্যটন খাত। ক্ষুদ্র শিল্প থেকে শাকসবজি; কৃষি থেকে বড় শিল্প কিংবা সেবা খাত-সর্বত্র শুধুই অনিশ্চয়তা আর অজানা আতঙ্ক।
সরকারের অর্থনীতির রক্তপ্রবাহ বলে পরিচিত রাজস্ব আয়ও থমকে যাচ্ছে। মাঠপর্যায়ে ৫০ থেকে ৯০ শতাংশ পর্যন্ত রাজস্ব আদায় কম হচ্ছে। সব মিলিয়ে কমছে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের আয়। গরিব হচ্ছে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। করোনার উচ্চ সংক্রমণে লকডাউন অবধারিত হলেও সার্বিকভাবে বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় অর্থনীতি এখন ক্ষতির চক্রে ঘুরপাক খাচ্ছে। বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তা ও বিশ্লেষকেরা মনে করেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি কঠিন সময় পার করছে। এভাবে চলত থাকলে অনেক প্রতিষ্ঠানই বন্ধ হয়ে যাবে।
চলতি অর্থবছর শুরু প্রথম মাস প্রায় শেষের পথে। বিদায়ী অর্থবছরের করোনার কালো থাবার রেশ নতুন অর্থবছরকেও আক্রান্ত করেছে। দফায় দফায় লকডাউনে বিপর্যস্ত অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। চলতি অর্থবছরে সরকার ৬ লাখ ২ হাজার কোটি টাকার বাজেটে শুধু কর রাজস্ব আদায় করার কথা ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। সেই হিসাবে গড়ে প্রতি কর্মদিবসে আদায় করার কথা ১ হাজার ২৬৪ কোটি টাকা। এর হেরফের হলেই ঘাটতি বাড়তে থাকবে। তবে এনবিআরের বিভিন্ন কর, ভ্যাট ও শুল্ক কমিশনারেটে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজস্ব আয়েও করোনার শক্ত থাবা পড়েছে। জরুরি সেবার আওতায় বলে রাজস্ব অফিস খুলে বসে থাকছেন কর্মকর্তারা।
কাঙ্ক্ষিত রাজস্ব আসছে না। মাস শেষ না হওয়ায় এ মাসে কত রাজস্ব আয় হলো, তা জানার এখনই সুযোগ নেই।
চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার এম ফখরুল আলম আজকের পত্রিকাকে জানান, লকডাউনের কারণে আমদানি-রপ্তানি কমেছে। কমার প্রভাব বেশি ধরা পড়বে আগামী মাসে। কারণ, এখন যা আসছে আগের পণ্য। শিল্পকারখানা বন্ধের কারণে পণ্য খালাস কমে গেছে। রাজস্ব আয় কমে গেছে প্রায় ৬০ শতাংশ পর্যন্ত। কুমিল্লার ভ্যাট কমিশনার বেলাল হোসেইন চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, শিল্পকারখানা প্রায় সব বন্ধ। তাই রাজস্ব ৯০ শতাংশ পর্যন্ত কম আদায় হচ্ছে। আয়কর অফিসেও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নামমাত্র রাজস্ব জমা হচ্ছে। কোম্পানি ও ব্যক্তির আয় কমছে বলে, সামনে এর নেতিবাচক প্রভাব দেখা যাবে।
অন্য সময় রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাত চালু থাকে। এবার তা–ও বন্ধ। শুধু রপ্তানিমুখী নয়; স্থানীয় চাহিদা মেটানোর জন্য যত ধরনের ছোট, বড়, মাঝারি শিল্পকারখানা রয়েছে, সবই বন্ধ। জিডিপির ৫৪ শতাংশ অবদান রাখছে যে সেবা খাত, সেটিও বন্ধ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর সবশেষ ২০১৩ সালের অর্থনৈতিক শুমারির তথ্য বলছে, দেশে মোট অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৭৮ লাখ ১৮ হাজার ৫৬৫টি। এর মধ্যে স্থায়ী ৪৫ লাখ ১৪ হাজার ৯১টি। আর অস্থায়ী ৪ লাখ ৮২ হাজার ৯০৩টি। আর সরাসরি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত পরিবারের সংখ্যা ২৮ লাখ ২১ হাজার ৫৭১টি। এর মধ্যে পুরুষনিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান ৭২ লাখ ৫৫ হাজার ১৯৭টি আর নারীদের নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠান ৫ লাখ ৬৩ হাজার ৩৬৮টি। লকডাউনে যেহেতু প্রায় সবই বন্ধ রয়েছে, তাতে ধরে নেওয়া যায় যে এই বিশাল পরিমাণ অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানও এখন বন্ধ রয়েছে।
বিবিএসের অর্থনৈতিক জরিপের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের একজন জানান, ২০১৩ সালের পর অর্থনীতিতে আরও বিনিয়োগ হয়েছে। এর মধ্যে মানুষের মাথাপিছু আয় আরও বেড়েছে। যেহেতু সবকিছু বেড়েছে, সুতরাং অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও আরও বেড়েছে–এসবের হিসাব যোগ হয়নি। যেটুকুর হিসাব আছে, তা ধরলেও অর্থনীতিতে কী ক্ষতি হচ্ছে, তা সহজেই বোঝা যাবে।
তবে এর হিসাব না থাকায়, তা জানতে উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান আজকের পত্রিকাকে বলেছেন, ‘করোনার প্রভাব আমাদের অর্থনীতির কী ক্ষতি হচ্ছে, তা দেখার জন্য আমরা একটা ধারণা জরিপ করতে চাই। শিগগিরই আমি সংশ্লিষ্টদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দেব। এর আগেও আমরা এ রকম একটা জরিপ করেছিলাম। এর ফলে আমরা বুঝতে পারব কী পদক্ষেপ নিতে হবে।’
রপ্তানি খাতের উদ্যোক্তারা জানান, রপ্তানির ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। অর্ডার আসছে বিপুল হারে। কিন্তু ঠিকমতো জাহাজীকরণ করা যাচ্ছে না। ফলে কনটেইনার জট বন্দরে। রপ্তানিবাহী কনটেইনার পাঠাতে বিলম্বের কারণে দীর্ঘ মেয়াদে অর্ডার বাতিল এবং নতুন অর্ডার না পাওয়ার ঝুঁকিও তৈরি হচ্ছে। এর ফলে লাভ দূরের কথা বিপুল অঙ্কের লোকসানের আতঙ্কে আছেন উদ্যোক্তারা। এ বিষয়ে পোশাক, টেক্সটাইল ও খাদ্যপণ্য খাতের উদ্যোক্তা, ওয়েল গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ নুরুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি মনে করি ২০২১ সাল পুরোটাই বন্ধ। এখন টিকে থাকার জন্য একমাত্র আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছি। এর বেশি কিছু আসলে বলার নাই। আমার ধারণা, এ বছর বেশির ভাগ কোম্পানি দেউলিয়া হয়ে যাবে।’
অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা ও লকডাউনের কারণে বিনিয়োগেও স্থবিরতা চলছে। চলমান শিল্পকারখানাই যেখানে চালু রাখা যাচ্ছে না, সেখানে নতুন বিনিয়োগের কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছেন না উদ্যোক্তারা। ফলে নতুন নতুন শিল্পকারখানা স্থাপন থমকে আছে। আসছে না যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ। এতে সংকুচিত হবে নতুন চাকরির সুযোগ। এ বিষয়ে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তা সিরাজগঞ্জ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের পরিচালক শেখ মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘এখন বিনিয়োগ একদম থমকে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সবাই অপেক্ষা করছে। সামনে ভালো সময় আসবে, এ জন্য অপেক্ষায় অনেকে।’
বিনিয়োগ যে হচ্ছে না, তা ব্যাংকের ঋণপ্রবাহের তথ্যের দিকে তাকালেই বোঝা যায়। বিদায়ী অর্থবছরের মে মাস পর্যন্ত ১১ মাসে ঋণের প্রবৃদ্ধি মাত্র ৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ। অথচ বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি অনুযায়ী তার লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ। বারবার সুযোগ দেওয়ার পরও উদ্যোক্তারা পুরোনো ঋণই পরিশোধ করতে পারছেন না। নতুন ঋণ নেবেন কীভাবে? তাদের কেউ কেউ মনে করেন, যে লোকসানে পড়েছেন, অধিকাংশ মালিকই ঋণ খেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে। এ ব্যাপারে, বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তা ও বিসিআইয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট প্রীতি চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা দেড় বছরের বেশি সময় ধরে একটা কঠিন অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করছি। আমাদের একটু একটু করে সহায়তা দিয়ে এগিয়ে নিতে হবে। না হলে আগামী ৩১ আগস্টের মধ্যে ৯০ শতাংশ উদ্যোক্তা ঋণের কিস্তি দিতে পারবে না। এতে অর্থনীতির মূল ভিত্তি বড় রকমের ঝাঁকুনি খাবে বলে মনে করছি।’
অর্থনীতির একটি বড় খাত পর্যটন। প্রায় ৪৫ লাখ লোক এ খাতের সঙ্গে নানাভাবে জড়িত। করোনার সবচেয়ে বড় আঘাত পড়েছে এ খাতে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের সিইও জাবেদ আহমেদ বলেন, ‘ইনবাউন্ড, আউটবাউন্ড পর্যটনের মতো দেশীয় পর্যটনের অবস্থাও খারাপ। হোটেল, মোটেল, রিসোর্টে কোনো বুকিং নেই, একেবারেই শূন্য। এর দিকে কেউ তাকাচ্ছে না। এটি মরে যাচ্ছে।’
আমদানি হলে সরকার রাজস্ব পায়। রপ্তানি হলে উদ্যোক্তাদের আয় হয়, তাতে সরকারেরও আয় হয়। সেবা খাত সচল থাকলে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের আয় বাড়ে, এতে সরকার কর পায়। সবকিছু সচল থাকলে সরকার কোথাও শুল্ক, কোথাও ভ্যাট আবার কোথাও থেকে আয়কর পায়। আর এসবই রাজস্ব খাতে জমা হয়।
অর্থনীতি চলে এ আয় দিয়ে। সবকিছু বন্ধ মানে, আমদানিকারক, রপ্তানিকারক, ব্যবসায়ী, কর্মকর্তা–কর্মচারী, কোম্পানি, সরকার সবার আয় বন্ধ।
এ বিষয়ে বিশ্ব ব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ ধরনের লকডাউন আমাদের মতো দেশের অর্থনীতির চাকা একদম বন্ধ করে দেয়। সরাসরি এর নেতিবাচক প্রভাব জিডিপিতে পড়ে। বিভিন্ন জরিপ অনুযায়ী, লকডাউনের ক্ষতির মাত্রাটা ওঠানামা করে। এর ফলে গড়ে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশের মতো আয় কমে যায়। আর এসএমইর ক্ষতিও ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত হয়। দেশের বিনিয়োগের অবস্থা এমনিতেই ভালো না। লকডাউন একে আরও নাজুক করে তুলতে পারে।’
ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারণায় প্রয়োজনে মেক্সিকো ও চীনের ওপর শতভাগ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিলেন। এ ছাড়া তিনি বলেছিলেন, শুল্ক ও অন্যান্য বিধিনিষেধের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সর্বাধিক সুবিধাপ্রাপ্ত দেশ (মোস্ট–ফেভারড নেশন) চীন। চীনের এই বিশেষ সুবিধা তিনি রাখবেন না।
৩ ঘণ্টা আগেআদানির ঘুষ দুর্নীতি নিয়ে ভারতের পার্লামেন্টেও উত্তেজনা ছড়িয়েছে। গতকাল সোমবার আইনপ্রণেতারা আদানির বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে আলোচনার দাবি তুললে হট্টগোল শুরু হয়, পরে অধিবেশন স্থগিত করা হয়।
৩ ঘণ্টা আগেদেশে ডলার-সংকট কাটাতে পণ্য আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলায় (এলসি) কড়াকড়ি শর্ত আরোপ করা হয়। এতে অন্যান্য পণ্যের মতো প্রসাধনসামগ্রী আমদানিতেও মারাত্মক ভাটা পড়ে। গত অর্থবছরে নির্ধারিত এইচএস
৩ ঘণ্টা আগেজিনিসপত্রের দাম ঊর্ধ্বমুখী, ব্যাংকঋণের সুদ বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে আগ্রহ কম, বলা যায় বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ স্থবির বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
৩ ঘণ্টা আগে