জাহাঙ্গীর আলম
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত বছরের শেষ নাগাদ প্রতি মাসে শুধু যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিমানবন্দর থেকে প্রায় ৫০০টি ফ্লাইট উড়েছে, যেগুলোতে কোনো যাত্রীই ছিল না বা হাতেগোনা যাত্রী ছিল। এগুলোকে অনেকে বলেন ‘ভৌতিক ফ্লাইট’।
আর চলতি বছরের জানুয়ারিতে পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিনপিসের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, এই শীতে ইউরোপের আকাশে ১ লাখেরও বেশি ‘ভৌতিক ফ্লাইট’ উড়বে। সংগঠনটির দাবি, এতে যে পরিমাণ জলবায়ুর ক্ষতি হবে তা ১৪ লাখের বেশি গাড়ি থেকে গ্রিনহাউস গ্যাসের বার্ষিক নির্গমনের সমতুল্য।
কোভিড মহামারির শুরুর দিকে যখন স্বাস্থ্যবিধি আরোপের কারণে আকাশভ্রমণের চাহিদা প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে আসে তখন এই ‘ভৌতিক ফ্লাইট’ একটি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে এ ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। করোনা সংক্রমণ প্রায় নিয়ন্ত্রণে এলেও মাথার ওপরে এমন ‘ভৌতিক ফ্লাইটের’ আনাগোনা খুব একটা কমেনি।
গ্রিনপিস ওপরের যে পরিসংখ্যানটি দিয়েছে সেটি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ উড়োজাহাজ নেটওয়ার্ক লুফথানসার সিইও কারস্টেন স্পহরের এক সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে পাওয়া তথ্যের প্রক্ষেপণ। গত ডিসেম্বরে তিনি গ্রিনপিসকে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, লুফথানসা গ্রুপকে ইউরোপীয় বিধির অধীনে বরাদ্দ পাওয়া স্লটগুলো ধরে রাখতে চাইলে ছয় মাসের শীত মৌসুমে ১৮ হাজার অতিরিক্ত ফ্লাইট চালাতে হবে।
গ্রিনপিস বলছে, ইউরোপীয় বাজারে লুফথানসার এয়ার ট্র্যাফিকের হিস্যা ১৭ শতাংশ। সে হিসাবে ইউরোপের মোট ভৌতিক ফ্লাইট ২১ লাখ টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন করবে। এ নিয়ে ক্ষোভের ঝড় উঠেছে। পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ বলেছেন, ব্রাসেলস এয়ারলাইনস (লুফথানসা গ্রুপের সাবসিডি) বিমানবন্দরের স্লট বজায় রাখতে ৩ হাজার অপ্রয়োজনীয় ফ্লাইট পরিচালনা করে।
সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, এ ধরনের ফ্লাইট পরিচালনা যেমন বিপুল ‘বাহুল্য ব্যয়’, তেমনি পরিবেশের ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। ব্যবসার স্বার্থে পরিবেশের ব্যাপারটা না হয় বাদই গেল, কিন্তু এত বিপুল ব্যয় করে যাত্রীবিহীন ফ্লাইট পরিচালনার কারণ কী?
এর পেছনে আছে উড়োজাহাজ সেবা পরিচালনার কিছু অদ্ভুত নিয়মকানুন।
এয়ারলাইনগুলো শত শত জোড়া শহরের রুট উড়োজাহাজ পরিচালনা করে। কিছু সংযোগকারী ফ্লাইটের সঙ্গে আবার সামঞ্জস্য রাখতে হয়। এর জন্য নির্দিষ্ট স্লট বরাদ্দ নিতে হয়। এটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বছরে দুবার (গ্রীষ্ম এবং শীত) সময়সূচি হালনাগাদ করার প্রয়োজন পড়ে।
দৈনিক শত শত ফ্লাইটের ব্যবস্থাপনা করাই যখন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের জন্য অত্যন্ত শ্রমসাধ্য একটি কাজ। সেখানে ছয় মাস অন্তর শিডিউল হালনাগাদ করতে গিয়ে তাদের ঘাম ছুটে যায়। এই জটিলতা এড়ানোর জন্য একটি নিয়ম রয়েছে—একটি এয়ারলাইন সফলভাবে তার স্লটটি কমপক্ষে ৮০ শতাংশ সময় ব্যবহার করতে পারলে তবেই পরবর্তী মৌসুমে তারা স্লটটির বরাদ্দ ধরে রাখতে পারবে। এটিকে বলে ‘গ্র্যান্ডফাদার রাইটস’।
এ কারণে ব্যস্ত বিমানবন্দরগুলোতে নতুন রুট চালু করতে চাইলে এয়ারলাইনসগুলোকে বেশ বেগ পেতে হয়। ফলে স্লট মানেই সোনার হরিণ!
উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাজ্যের হিথ্রো বিমানবন্দরের কথা বলা যায়। এখানকার স্লট সবচেয়ে মূল্যবান। অত্যন্ত সীমিত স্লট কিন্তু চাহিদা অত্যধিক, ফলে স্লটের দামও আকাশচুম্বী। সকালের দিকের স্লট জোড়ার মূল্য প্রায় ১ কোটি ৯০ লাখ ডলার, দুপুরেরটি ১ কোটি ৩০ লাখ এবং সন্ধ্যারটির দাম ৬০ লাখ ডলার। যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্স ব্রিফিং পেপারে এ তথ্য উল্লেখ আছে।
নথির তথ্য অনুযায়ী, স্লট কেনায় রেকর্ড ভেঙেছে ওমান এয়ার। ২০১৬ সালের প্রথম দিকে হিথ্রোতে এক জোড়া টেকঅফ এবং ল্যান্ডিং স্লটের জন্য তারা দিয়েছে ৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ২০১৭ সালের মার্চে এসএএস স্ক্যান্ডিনেভিয়ান এয়ারলাইনস হিথ্রোর দুই জোড়া স্লট আমেরিকান এয়ারলাইনসের কাছে বিক্রি করেছিল ৭ কোটি ৫০ লাখ ডলারে। তবে সাধারণত এয়ারলাইনসগুলো এই চুক্তির বিবরণ গোপন রাখে।
স্লটগুলো অন্যান্য উপায়েও লেনদেন করা যেতে পারে। যেমন ক্যারিয়ারগুলোর মধ্যে অদলবদল হতে পারে। যেমনটি ফুটবল ক্লাবগুলো ধারে খেলোয়াড় নেয়।
এই ‘গ্র্যান্ডফাদার রাইটস’ নিয়মের কারণেই এয়ারলাইনসগুলো ফ্লাইট কমালেই স্লট হারানোর ঝুঁকিতে পড়ে। মহামারিতে কার্যক্রম সংকুচিত করার চিন্তা করতে গিয়ে অনেক এয়ারলাইনস এখন স্লট হারানোর হুমকির মুখে। ঠিক এ কারণেই খুব কম বা একেবারেই যাত্রী না পেলেও তাদের ফ্লাইট পরিচালনা করতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এয়ারলাইনগুলোর এই ব্যয়বহুল ভৌতিক ফ্লাইট পরিচালনার কারণ হলো এই শিল্পের ‘স্লট গেম’। এটি এমন এক ব্যয়বহুল খেলা যা লাস ভেগাসে যা হয় তার চেয়েও বড় বাজি। অবশ্য লাভজনকও।
পৃথিবীতে ২০০টিরও বেশি ব্যস্ততম হাব পূর্ণ সক্ষমতায় চলছে। ফ্লাইটের চাহিদা টার্মিনালের ভেতরের স্থান এবং রানওয়ের প্রাপ্যতা ছাড়িয়ে গেছে। ফলে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য ব্যস্ততম বিমানবন্দরের সক্ষমতা স্লটে বিভক্ত করতেই হয়। অবতরণ, যাত্রীদের নামানো, জ্বালানি ভরা, যাত্রী তোলা এবং আবার টেক অফ করা—সবই একটি নির্দিষ্ট এবং নিয়ন্ত্রিত সময়ের মধ্যে থাকে। ফলে একটা ফ্লাইটের পেছনেই অনেক স্থান ও সময় ব্যয় হয়। হিথ্রোর মতো বিমানবন্দরের জন্য কাজটি করা কতো কঠিন তা সহজেই অনুমেয়।
তাছাড়া রাজস্ব বাড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট সময়সূচির চাহিদা রয়েছে। যেমন, ব্যবসায়িক ভ্রমণকারীরা সকালবেলা স্বল্প-দূরত্বে ভ্রমণ করেন, আবার একই দিনে ফিরে আসেন। ফলে সকালের স্লটগুলো অত্যন্ত মূল্যবান। আবার কানেকটিং ফ্লাইটের জন্য সময়ের সামঞ্জস্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন ঢাকা-যুক্তরাজ্য সরাসরি ফ্লাইট নেই। সে ক্ষেত্রে ঢাকা-দুবাই এরপর কানেকটিং ফ্লাইটে দুবাই-হিথ্রো রুটে যেতে হয়।
মহামারিতে ব্যাপক ক্ষতি এবং জলবায়ু ও পরিবেশ আন্দোলনকর্মীদের চাপে এই ‘গ্র্যান্ডফাদার রাইটস’ পরিবর্তনের দাবি উঠছে। গত অক্টোবরে ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইএটিএ) বার্ষিক সভায় উড়োজাহাজ শিল্প ২০৫০ সালের মধ্যে নেট-জিরো কার্বন নির্গমন লক্ষ্য অর্জনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
হাব-ভিত্তিক ক্যারিয়ার, সুলভ এয়ারলাইনস, নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং পরিবেশবাদী লবিস্টসহ বহু অংশীজন অপ্রয়োজনীয় ফ্লাইটের অযৌক্তিক অপচয়ের জন্য ‘গ্র্যান্ডফাদার রাইটসকে’ দোষারোপ করে আসছে।
অবশ্য মহামারির কারণে অনেকে দেশেই এ নিয়ম শিথিল করা হচ্ছে। দুবছর আগে মহামারির শুরুর দিকে তখন ৮০ শতাংশ শিথিল করা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) স্লট ব্যবহারের নিয়ম মুলতবি করেছে। এর আগে ২০০২, ২০০৩ এবং ২০০৯ সালেও বিধানটি স্থগিত করা হয়েছিল। এর আগে যথাক্রমে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর টুইনটাওয়ার হামলা, সার্সের প্রাদুর্ভাব এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দারকালে এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল।
এ ছাড়া ইউরোপে ২০২১-২০২২ শীতকালীন থ্রেসহোল্ড ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। তবে এয়ারলাইনগুলো আরও ছাড় চায়। ইউরোপীয় কমিশন আগামী ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত স্লট বিধি শিথিল করার ঘোষণা দিয়েছে। চলতি এপ্রিলে স্লটের থ্রেসহোল্ড ৬৪ শতাংশে উন্নীত করেছে তারা।
উড়োজাহাজ সম্পর্কিত পড়ুন:
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, গত বছরের শেষ নাগাদ প্রতি মাসে শুধু যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন বিমানবন্দর থেকে প্রায় ৫০০টি ফ্লাইট উড়েছে, যেগুলোতে কোনো যাত্রীই ছিল না বা হাতেগোনা যাত্রী ছিল। এগুলোকে অনেকে বলেন ‘ভৌতিক ফ্লাইট’।
আর চলতি বছরের জানুয়ারিতে পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিনপিসের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, এই শীতে ইউরোপের আকাশে ১ লাখেরও বেশি ‘ভৌতিক ফ্লাইট’ উড়বে। সংগঠনটির দাবি, এতে যে পরিমাণ জলবায়ুর ক্ষতি হবে তা ১৪ লাখের বেশি গাড়ি থেকে গ্রিনহাউস গ্যাসের বার্ষিক নির্গমনের সমতুল্য।
কোভিড মহামারির শুরুর দিকে যখন স্বাস্থ্যবিধি আরোপের কারণে আকাশভ্রমণের চাহিদা প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে আসে তখন এই ‘ভৌতিক ফ্লাইট’ একটি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে এ ঘটনা ঘটে যাচ্ছে। করোনা সংক্রমণ প্রায় নিয়ন্ত্রণে এলেও মাথার ওপরে এমন ‘ভৌতিক ফ্লাইটের’ আনাগোনা খুব একটা কমেনি।
গ্রিনপিস ওপরের যে পরিসংখ্যানটি দিয়েছে সেটি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ উড়োজাহাজ নেটওয়ার্ক লুফথানসার সিইও কারস্টেন স্পহরের এক সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে পাওয়া তথ্যের প্রক্ষেপণ। গত ডিসেম্বরে তিনি গ্রিনপিসকে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, লুফথানসা গ্রুপকে ইউরোপীয় বিধির অধীনে বরাদ্দ পাওয়া স্লটগুলো ধরে রাখতে চাইলে ছয় মাসের শীত মৌসুমে ১৮ হাজার অতিরিক্ত ফ্লাইট চালাতে হবে।
গ্রিনপিস বলছে, ইউরোপীয় বাজারে লুফথানসার এয়ার ট্র্যাফিকের হিস্যা ১৭ শতাংশ। সে হিসাবে ইউরোপের মোট ভৌতিক ফ্লাইট ২১ লাখ টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন করবে। এ নিয়ে ক্ষোভের ঝড় উঠেছে। পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ বলেছেন, ব্রাসেলস এয়ারলাইনস (লুফথানসা গ্রুপের সাবসিডি) বিমানবন্দরের স্লট বজায় রাখতে ৩ হাজার অপ্রয়োজনীয় ফ্লাইট পরিচালনা করে।
সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে, এ ধরনের ফ্লাইট পরিচালনা যেমন বিপুল ‘বাহুল্য ব্যয়’, তেমনি পরিবেশের ওপরও মারাত্মক প্রভাব ফেলছে। ব্যবসার স্বার্থে পরিবেশের ব্যাপারটা না হয় বাদই গেল, কিন্তু এত বিপুল ব্যয় করে যাত্রীবিহীন ফ্লাইট পরিচালনার কারণ কী?
এর পেছনে আছে উড়োজাহাজ সেবা পরিচালনার কিছু অদ্ভুত নিয়মকানুন।
এয়ারলাইনগুলো শত শত জোড়া শহরের রুট উড়োজাহাজ পরিচালনা করে। কিছু সংযোগকারী ফ্লাইটের সঙ্গে আবার সামঞ্জস্য রাখতে হয়। এর জন্য নির্দিষ্ট স্লট বরাদ্দ নিতে হয়। এটি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য বছরে দুবার (গ্রীষ্ম এবং শীত) সময়সূচি হালনাগাদ করার প্রয়োজন পড়ে।
দৈনিক শত শত ফ্লাইটের ব্যবস্থাপনা করাই যখন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের জন্য অত্যন্ত শ্রমসাধ্য একটি কাজ। সেখানে ছয় মাস অন্তর শিডিউল হালনাগাদ করতে গিয়ে তাদের ঘাম ছুটে যায়। এই জটিলতা এড়ানোর জন্য একটি নিয়ম রয়েছে—একটি এয়ারলাইন সফলভাবে তার স্লটটি কমপক্ষে ৮০ শতাংশ সময় ব্যবহার করতে পারলে তবেই পরবর্তী মৌসুমে তারা স্লটটির বরাদ্দ ধরে রাখতে পারবে। এটিকে বলে ‘গ্র্যান্ডফাদার রাইটস’।
এ কারণে ব্যস্ত বিমানবন্দরগুলোতে নতুন রুট চালু করতে চাইলে এয়ারলাইনসগুলোকে বেশ বেগ পেতে হয়। ফলে স্লট মানেই সোনার হরিণ!
উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাজ্যের হিথ্রো বিমানবন্দরের কথা বলা যায়। এখানকার স্লট সবচেয়ে মূল্যবান। অত্যন্ত সীমিত স্লট কিন্তু চাহিদা অত্যধিক, ফলে স্লটের দামও আকাশচুম্বী। সকালের দিকের স্লট জোড়ার মূল্য প্রায় ১ কোটি ৯০ লাখ ডলার, দুপুরেরটি ১ কোটি ৩০ লাখ এবং সন্ধ্যারটির দাম ৬০ লাখ ডলার। যুক্তরাজ্যের হাউস অব কমন্স ব্রিফিং পেপারে এ তথ্য উল্লেখ আছে।
নথির তথ্য অনুযায়ী, স্লট কেনায় রেকর্ড ভেঙেছে ওমান এয়ার। ২০১৬ সালের প্রথম দিকে হিথ্রোতে এক জোড়া টেকঅফ এবং ল্যান্ডিং স্লটের জন্য তারা দিয়েছে ৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার। ২০১৭ সালের মার্চে এসএএস স্ক্যান্ডিনেভিয়ান এয়ারলাইনস হিথ্রোর দুই জোড়া স্লট আমেরিকান এয়ারলাইনসের কাছে বিক্রি করেছিল ৭ কোটি ৫০ লাখ ডলারে। তবে সাধারণত এয়ারলাইনসগুলো এই চুক্তির বিবরণ গোপন রাখে।
স্লটগুলো অন্যান্য উপায়েও লেনদেন করা যেতে পারে। যেমন ক্যারিয়ারগুলোর মধ্যে অদলবদল হতে পারে। যেমনটি ফুটবল ক্লাবগুলো ধারে খেলোয়াড় নেয়।
এই ‘গ্র্যান্ডফাদার রাইটস’ নিয়মের কারণেই এয়ারলাইনসগুলো ফ্লাইট কমালেই স্লট হারানোর ঝুঁকিতে পড়ে। মহামারিতে কার্যক্রম সংকুচিত করার চিন্তা করতে গিয়ে অনেক এয়ারলাইনস এখন স্লট হারানোর হুমকির মুখে। ঠিক এ কারণেই খুব কম বা একেবারেই যাত্রী না পেলেও তাদের ফ্লাইট পরিচালনা করতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এয়ারলাইনগুলোর এই ব্যয়বহুল ভৌতিক ফ্লাইট পরিচালনার কারণ হলো এই শিল্পের ‘স্লট গেম’। এটি এমন এক ব্যয়বহুল খেলা যা লাস ভেগাসে যা হয় তার চেয়েও বড় বাজি। অবশ্য লাভজনকও।
পৃথিবীতে ২০০টিরও বেশি ব্যস্ততম হাব পূর্ণ সক্ষমতায় চলছে। ফ্লাইটের চাহিদা টার্মিনালের ভেতরের স্থান এবং রানওয়ের প্রাপ্যতা ছাড়িয়ে গেছে। ফলে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার জন্য ব্যস্ততম বিমানবন্দরের সক্ষমতা স্লটে বিভক্ত করতেই হয়। অবতরণ, যাত্রীদের নামানো, জ্বালানি ভরা, যাত্রী তোলা এবং আবার টেক অফ করা—সবই একটি নির্দিষ্ট এবং নিয়ন্ত্রিত সময়ের মধ্যে থাকে। ফলে একটা ফ্লাইটের পেছনেই অনেক স্থান ও সময় ব্যয় হয়। হিথ্রোর মতো বিমানবন্দরের জন্য কাজটি করা কতো কঠিন তা সহজেই অনুমেয়।
তাছাড়া রাজস্ব বাড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট সময়সূচির চাহিদা রয়েছে। যেমন, ব্যবসায়িক ভ্রমণকারীরা সকালবেলা স্বল্প-দূরত্বে ভ্রমণ করেন, আবার একই দিনে ফিরে আসেন। ফলে সকালের স্লটগুলো অত্যন্ত মূল্যবান। আবার কানেকটিং ফ্লাইটের জন্য সময়ের সামঞ্জস্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন ঢাকা-যুক্তরাজ্য সরাসরি ফ্লাইট নেই। সে ক্ষেত্রে ঢাকা-দুবাই এরপর কানেকটিং ফ্লাইটে দুবাই-হিথ্রো রুটে যেতে হয়।
মহামারিতে ব্যাপক ক্ষতি এবং জলবায়ু ও পরিবেশ আন্দোলনকর্মীদের চাপে এই ‘গ্র্যান্ডফাদার রাইটস’ পরিবর্তনের দাবি উঠছে। গত অক্টোবরে ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের (আইএটিএ) বার্ষিক সভায় উড়োজাহাজ শিল্প ২০৫০ সালের মধ্যে নেট-জিরো কার্বন নির্গমন লক্ষ্য অর্জনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
হাব-ভিত্তিক ক্যারিয়ার, সুলভ এয়ারলাইনস, নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং পরিবেশবাদী লবিস্টসহ বহু অংশীজন অপ্রয়োজনীয় ফ্লাইটের অযৌক্তিক অপচয়ের জন্য ‘গ্র্যান্ডফাদার রাইটসকে’ দোষারোপ করে আসছে।
অবশ্য মহামারির কারণে অনেকে দেশেই এ নিয়ম শিথিল করা হচ্ছে। দুবছর আগে মহামারির শুরুর দিকে তখন ৮০ শতাংশ শিথিল করা হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) স্লট ব্যবহারের নিয়ম মুলতবি করেছে। এর আগে ২০০২, ২০০৩ এবং ২০০৯ সালেও বিধানটি স্থগিত করা হয়েছিল। এর আগে যথাক্রমে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর টুইনটাওয়ার হামলা, সার্সের প্রাদুর্ভাব এবং বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দারকালে এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল।
এ ছাড়া ইউরোপে ২০২১-২০২২ শীতকালীন থ্রেসহোল্ড ৫০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। তবে এয়ারলাইনগুলো আরও ছাড় চায়। ইউরোপীয় কমিশন আগামী ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত স্লট বিধি শিথিল করার ঘোষণা দিয়েছে। চলতি এপ্রিলে স্লটের থ্রেসহোল্ড ৬৪ শতাংশে উন্নীত করেছে তারা।
উড়োজাহাজ সম্পর্কিত পড়ুন:
অর্থনীতিবিদ ড. সেলিম রায়হান বলেছেন, এস আলম গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ সাইফুল আলমের আন্তর্জাতিক সালিসে যাওয়ার হুমকিতে ভয় পাওয়ার কারণ নেই। দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে শ্বেতপত্র প্রকাশের মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
১৪ ঘণ্টা আগেবেশ কিছু দিন ধরেই কেনিয়াতে ছাত্র–জনতা আদানির সঙ্গে সরকারের ‘গোপন’ চুক্তির প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। পরে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করে। অবশেষে আদানি শিল্পগোষ্ঠীর সঙ্গে ২৫০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি অর্থমূল্যের দুটি চুক্তি বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছে আফ্রিকার দেশ কেনিয়া।
১৯ ঘণ্টা আগেঘুষের নোটে সাগর আদানি ঘুষের পরিমাণ, কাকে ঘুষ দেওয়া হয়েছে এবং কত মেগাওয়াট বিদ্যুতের বিনিময়ে এটি হয়েছে—তার বিবরণ উল্লেখ করেছেন। তিনি মেগাওয়াট প্রতি ঘুষের হারও উল্লেখ করেছেন। ২০২০ সালে একটি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে সাগর আদানি বলেন, ‘হ্যাঁ...কিন্তু বিষয়টা দৃশ্যমান হওয়ার ঠেকানো বেশ কঠিন।’
২০ ঘণ্টা আগেগৌতম আদানি, ভারতীয় কনগ্লোমারেট আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তিদের একজন, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বহু-বিলিয়ন ডলারের জালিয়াতি এবং ঘুষ কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, ভারত সরকারের কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়ার মাধ্যমে দেশের বৃহত্তম সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের চুক্তি বাগিয়েছে
২১ ঘণ্টা আগে