চলতি অর্থবছরের প্রথম ৬ মাসে প্রবৃদ্ধি ১৩ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
Thumbnail image

দেশের শীর্ষ রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকশিল্পে বড় ধরনের শ্রমিক অসন্তোষের পরও রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধির ধারা নিয়েই শেষ হয়েছে ২০২৪ সাল। বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরেও রপ্তানি আয় বেড়েছে। তবে চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১৩ শতাংশ (১২ দশমিক ৮৪ শতাংশ)। আজ বৃহষ্পতিবার বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) প্রকাশিত হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

ইপিবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডিসেম্বরে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ১৮ শতাংশ (১৭ দশমিক ৭২ শতাংশ)। এ মাসে মোট রপ্তানি আয় হয়েছে ৪৬২ কোটি ডলার। গত বছর একই সময়ে এই পরিমাণ ছিল ৩৯৩ কোটি ডলার। এর আগে, নভেম্বর মাসে রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৫ দশমিক ৬৩ শতাংশ।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৮৪ শতাংশ। এ সময় আয় হয়েছে ২৪ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন ডলার। আগের বছরের একই সময়ে ছিল ২১ দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার।

এই সময়ে তৈরি পোশাক থেকে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৩ দশমিক ২৮ শতাংশ এবং আয় হয়েছে ১৯ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ডলার। গত বছরের একই সময়ে এই আয় ছিল ১৭ দশমিক ৫৫ বিলিয়ন ডলার। আর ডিসেম্বর মাসে পোশাক খাতের রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং আয় হয়েছে ৩ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন ডলার। গত বছর এই আয় ছিল ৩ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই তৈরি পোশাক খাতে শ্রমিক অসন্তোষ শুরু হয়। এতে সাভারের আশুলিয়ার বড় শিল্পগোষ্ঠীর কারখানাগুলোতে প্রায় এক মাস উৎপাদন ব্যাহত হয়। গাজীপুরের কিছু কারখানায়ও বিক্ষোভের ঘটনা ঘটে। তারপরও গত সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বরে রপ্তানি আয় বেড়েছে। সেই ধারা ডিসেম্বরেও বজায় রয়েছে।

রপ্তানিকারকেরা বলছেন, পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির জন্য খাতটির নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা প্রয়োজন। বিদেশি ক্রেতাদের আস্থা ফিরিয়ে আনতে এই স্থিতশীলতা স্থায়ী হওয়া উচিত। প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে সব ধরনের সহায়তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি আন্তরিক আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

এ প্রসঙ্গে পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএয়ের সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রপ্তানি আয় বাড়ছে, এটা অবশ্যই দেশের জন্য ভালো। তবে এই ধারা অব্যাহত রাখতে হলে গ্যাস-বিদ্যুতের যে সংকট রয়েছে তা দূর করতে হবে। সেই সাথে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতেও জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে। ব্যাংকিং খাতের সমস্যারও সমাধান করতে হবে।’

মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘ঋণের সুদহার যেভাবে বাড়ছে, আগামী দিনে খেলাপি গ্রাহকের পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে। কারণ, আমাদের অনেকেই ঋণ নিয়ে ভালো ব্যবসা করতে না পারায় খেলাপি হয়ে যাবেন। এ ছাড়া, ব্যাংকে এলসি খুলতেও অনেক ব্যবসায়ীকে বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।’

প্রতিবেদন অনুযায়ী, অন্যান্য শিল্পেও রপ্তানি আয় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর মাসে হিমায়িত এবং জীবন্ত মাছ থেকে রপ্তানি আয় ১৩ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে ২৬৪ মিলিয়ন ডলার হয়েছে। গত বছর এই পরিমাণ ছিল ২১৭ মিলিয়ন ডলার।

চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে (জুলাই-ডিসেম্বর ২০২৪) চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে রপ্তানি আয় ১০ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেড়ে ৫৭৭ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে যা গত বছর ছিল ৫২৩ মিলিয়ন ডলার।

কৃষি ও কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ৫৯৬ মিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের তুলনায় ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ বেশি। পাট ও পাটজাত পণ্যে ৮ দশমিক ১১ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে এবং আয় হয়েছে ৪১৭ মিলিয়ন ডলার। গত বছর এই খাতে আয় ছিল ৪৫৪ মিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য রপ্তানি করে ১৫৮ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। যা গত বছরের ১২২ মিলিয়নের তুলনায় ২৯ দশমিক ৭২ শতাংশ বেশি। ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য থেকে রপ্তানি আয় ১২ দশমিক ১১ শতাংশ বেড়ে ১১৪ দশমিক ৪২ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। চামড়ার জুতা রপ্তানি ৩০ দশমিক ৮০ শতাংশ বেড়েছে এবং ৩৫৩২ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে এই খাত।

কিন্তু চামড়াজাত পণ্যে ১১ দশমিক ১০ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি রেকর্ড করা হয়েছে। গত বছরের ১৮২ মিলিয়ন ডলারের বিপরীতে এ খাত আয় করেছে ১৬২ মিলিয়ন ডলার। কৃত্রিম চামড়ার জুতা থেকে রপ্তানি আয় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে; ৩৯ দশমিক ১০ শতাংশ। এই উদীয়মান খাত আয় করেছে ২৭৪ মিলিয়ন ডলার। গত বছরের একই সময়ে এই খাতে আয় ছিল ১৯৭ মিলিয়ন ডলার। হোম টেক্সটাইল খাতে আয় ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ বেড়ে ৪১১ মিলিয়নে দাঁড়িয়েছে। গত বছর একই সময়ে এই আয় ছিল ৩৮১ মিলিয়ন ডলার।

এর আগে, গত জুলাইয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক হঠাৎ করে প্রকৃত পণ্য রপ্তানির ভিত্তিতে লেনদেন ভারসাম্যের তথ্য প্রকাশ করে। ফলে পণ্য রপ্তানির হিসাবে বড় ধরনের গরমিলের তথ্য উঠে আসে। তখন বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) দীর্ঘদিন ধরে রপ্তানির হিসাব প্রকাশ করলেও সে অনুযায়ী দেশে আয় আসেনি।

এ নিয়ে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা থেকেও প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যাচ্ছে, এত রপ্তানি হয়নি। তাই আয় বেশি আসার যৌক্তিকতা নেই। ফলে প্রকৃত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রতিবেদন তৈরি করা হবে। তার পর থেকে ইপিবি পণ্য রপ্তানির হিসাব প্রকাশ অনেক দিন বন্ধ রেখেছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ৪০ দশমিক ৮১ বিলিয়ন বা ৪ হাজার ৮১ কোটি ডলার। এই রপ্তানি তার আগের বছরের তুলনায় ৫ দশমিক ৮৯ শতাংশ কম। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪ হাজার ৩৩৬ কোটি ৪০ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

দেওয়ানি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তিতে একগুচ্ছ সুপারিশ কমিশনের

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত