জমি-ফ্ল্যাটে কালোটাকা সাদা করার সুযোগে খুশি রিহ্যাব

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৯ জুন ২০২৪, ১৭: ৩৬
Thumbnail image

আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে জমি, এপার্টমেন্ট ও ফ্ল্যাট কিনে কালোটাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়াকে ‘বাস্তবসম্মত ও সময়োপযোগী’ সিদ্ধান্ত বলে সাধুবাদ জানিয়েছে আবাসন খাতের ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)। 

আজ রোববার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে এই প্রতিক্রিয়া জানায় সংগঠনটি। তবে নতুন ও পুরনো ফ্ল্যাটের নিবন্ধন ফি সমান রাখাকে অযৌক্তিক হিসেবে বর্ণনা করে পুরনো ফ্ল্যাটের নিবন্ধন ফি কমানোর দাবি জানানো হয়েছে। 

সংবাদ সম্মেলনে রিহ্যাবের সভাপতি মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘২০২০-২০২১ অর্থবছরে বিনাপ্রশ্নে অপ্রর্দশিত আয় বিনিয়োগের সুযোগ থাকায় ২০ হাজার ৬০০ কোটি টাকা অর্থনীতির মূল ধারায় এসেছে। সরকার ২ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব পেয়েছে। প্রস্তাবিত বাজেটে সুযোগটি রাখায় আমরা প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানাই। বিনাপ্রশ্নে অপ্রদর্শিত টাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া বাস্তবসম্মত ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত।’ 

বৈধ আয়ে সর্বোচ্চ ৩০ শতাংশ করহারের বিপরীতে ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালোটাকা বৈধ করার সুযোগ কতটুকু নৈতিক হবে- এমন প্রশ্নের জবাবে ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘অপ্রদর্শিত অর্থ মূলধারার অর্থনীতিতে সরকারও চাচ্ছে, আমরাও চাচ্ছি। এই অর্থ যদি অর্থনীতিতে না নিয়ে আসেন। সেটা তো পাচার হয়ে বাইরে চলে যাবে, অর্থনীতিতে সংযুক্ত হবে না। তাহলে কার ক্ষতি হবে? এভাবে অনেক টাকাই পাচার হয়ে যাচ্ছে। বরং মন্দের ভালো, এবার বাজেটে সুযোগ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’ 

নৈতিক অবস্থান থেকে ঠিক না হলেও দীর্ঘমেয়াদে কর ও করদাতা বৃদ্ধিতে এটি সহায়ক হবে বলে মনে করেন ওয়াহিদুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘নৈতিকতার প্রশ্নে বলব, জিনিসটা হয়তো সঠিক নয়। একজনকে ১৫ শতাংশ দিচ্ছেন, আরেকজনকে ২৫-৩০ শতাংশ কর দিতে হচ্ছে। তবে একবার যখন করের আওতায় আনতে পারবেন, সে করজালের আওতায় এসে যাবে। পরবর্তীতে নিয়মিত কর দেবন। আর কালোটাকা সাদা করার সংখ্যাও কমে আসবে।’ 

রিহ্যাব সভাপতি বলেন, ‘যতই বলেন, এটাকে পছন্দ করি না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে যে, এই বিষয়টা আমাদের সমাজে আছে। এই টাকাটা তো ফেলে রাখা যায় না। আমার মনে হয়, এই সুযোগ লম্বা সময়ের জন্য দেওয়া উচিত। ৫ বছর করে দেওয়া উচিত। পরবর্তী বছরগুলোতে অন্য নাগরিক যেভাবে কর দেয়, সেভাবে দিয়ে এটাকে বৈধতা দেওয়া উচিত।’ 

রিহ্যাব বলছে, ফ্ল্যাট রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধনের জন্য বর্তমানে গেইন ট্যাক্স, স্ট্যাম্প ফি, রেজিস্ট্রেশন ফি, স্থানীয় সরকার কর, এআইটি এবং মূল্য সংযোজন কর মিলিয়ে ২২ শতাংশ কর দিতে হয়। এর সঙ্গে করপোরেট কর যোগ করলে নিবন্ধন খরচ ৩০ শতাংশ হয়। 
 
সংগঠনটির ভাষ্য, কোভিড পরবর্তী বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা, ডলার সংকট, নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি, ব্যাংকের সুদের হার বৃদ্ধি এবং ঋণপ্রবাহ না থাকাসহ নানামুখী সমস্যা আবাসান খাত ও সংশ্লিষ্ট শিল্পগুলোকে সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। 

রিহ্যাব সভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘এবারের বাজেটপরবর্তী রেজিস্ট্রেশন ফি ৭ শতাংশ করার প্রস্তাব করছি। রেজিস্ট্রেশন ব্যয় কম হলে ক্রেতারা জমির সঠিক মূল্য দেখাতে উৎসাহিত হবে। ফলে অপ্রদর্শিত অর্থ তৈরি হওয়া স্বাভাবিকভাবে হ্রাস পাবে। নিবন্ধন ব্যয় কমালে রাজস্ব আয় কমবে না, বরং আরও বাড়বে।’ 

এদিকে দেশে নতুন ও পুরোনো ফ্ল্যাটের নিবন্ধন ফি একই। এটাকে অযৌক্তিক দাবি করে রিহ্যাব সভাপতি বলেন, ‘যেসব নাগরিকের সামর্থ্য কম, তাঁরা ঝোঁকে পুরাতন ফ্ল্যাটের দিকে। কিন্তু নিবন্ধন ব্যয় নতুন ফ্ল্যাটের সমান। ফলে ইচ্ছে থাকলেও অনেকে ফ্ল্যাট নিতে পারেন না। ফলে পুরাতন ফ্ল্যাট বিক্রির সেকেন্ডারি বাজার গতিশীল নয়।’

আজ রোববার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের বাজেট নিয়ে এই প্রতিক্রিয়া জানায় রিহ্যাবওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, যদি ৫ বছরের পুরোনো ফ্ল্যাট ৪ শতাংশ হারে রেজিস্ট্রেশন ব্যয় সংক্রান্ত নিয়ম চালু করা হয়, তাহলে একদিকে যেমন স্বল্পবিত্তবানেরা ফ্ল্যাট কিনতে পারবেন, তেমনি অনেক নাগরিকের কর্মসংস্থান হবে। সেকেন্ডারি বাজার গতিশলী হলে অর্থনীতিও গতিশীল হবে।’ 

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত রিহ্যাবের প্রথম সহসভাপতি ও সাবেক সাংসদ লায়ন এম এ আউয়াল, সহসভাপতি মোহাম্মদ আকতার বিশ্বাস, সহসভাপতি (অর্থ) আব্দুর রাজ্জাক, সহসভাপতি হাজী দেলোয়ার হোসেন এবং রিহ্যাবের পরিচালক এবং প্রেস ও মিডিয়া স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান লাবিব বিল্লাহ উপস্থিত ছিলেন। 

মধ্যবিত্তদের ফ্ল্যাট কিনতে সহায়তার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে এক অংকের সুদের হারে গৃহঋণ প্রদান, আবাসন ব্যবসায়ীদের আয়কর কমানো ও নির্মাণসামগ্রীর দাম কমানোর জন্য ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত