Ajker Patrika

বিজ্ঞান গবেষকদের পুরস্কৃত করল বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্স

বিজ্ঞান গবেষকদের পুরস্কৃত করল বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্স। ছবি: সংগৃহীত
বিজ্ঞান গবেষকদের পুরস্কৃত করল বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্স। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সের উদ্যোগে বিজ্ঞান গবেষকদের মাঝে বিএএস-ইমেরিটাস অধ্যাপক সুলতান আহমেদ চৌধুরী সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি গোল্ড মেডেল অ্যাওয়ার্ড বিতরণ করা হয়েছে। গত ৯ নভেম্বর রাজধানীর জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কমপ্লেক্স মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নির্বাচিত গবেষকদের মাঝে গোল্ড মেডেল ও সার্টিফিকেট বিতরণ করা হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এম. জাহিদ হাসান, ট্রাস্টি রিপ্রেজেনটেটিভ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুলতান আহমেদ চৌধুরীর মেয়ে র‍্যাংগস্ গ্রুপের এক্সিকিউটিভ ভাইস চেয়ারপারসন জাকিয়া রউফ চৌধুরী। বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সের সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক এ. কে. আজাদ চৌধুরী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সের সেক্রেটারি অধ্যাপক হাছিনা খান প্রমুখ।

ইমেরিটাস অধ্যাপক সুলতান আহমেদ চৌধুরী ছিলেন বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত শিশু বিশেষজ্ঞ এবং বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাইলট হওয়ার স্বপ্ন পূরণে পাশে ইউএস-বাংলা

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১৪: ৩৭
পাইলট হওয়ার স্বপ্ন পূরণে পাশে ইউএস-বাংলা

অনেক মেধাবী শিক্ষার্থী ছোটবেলা থেকেই পাইলট হওয়ার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু এই স্বপ্ন পূরণে প্রয়োজন শুধু মেধা নয়—আর্থিক সামর্থ্য, সুযোগ এবং সঠিক দিকনির্দেশনা। ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার ক্ষেত্রে যেমন সুযোগ তুলনামূলক বেশি, পাইলট হতে গেলে বিশেষ প্রশিক্ষণ ও উচ্চ ব্যয়ের কারণে অনেক মেধাবীর স্বপ্ন দুঃস্বপ্ন হয়ে থাকে। এই বাস্তবতা পরিবর্তনে উদ্যোগী হয়েছে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস। দেশের অন্যতম শীর্ষ বেসরকারি এয়ারলাইনসটি মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে নিজস্ব অর্থায়নে পাইলট তৈরির উদ্যোগ নিয়ে তরুণদের স্বপ্ন পূরণের নতুন দরজা খুলে দিয়েছে।

২০১৪ সালের ১৭ জুলাই দুটি ড্যাশ-৮ কিউ-৪০০ নিয়ে যাত্রা শুরু করা ইউএস-বাংলা আজ প্রায় ১২ বছরের যাত্রায় দেশের অন্যতম বৃহৎ বেসরকারি এয়ারলাইনসে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে তাদের বহরে রয়েছে তিনটি ৪৩৬ আসনের এয়ারবাস এ৩৩০-৩০০ ও ৯টি বোয়িং ৭৩৭-৮০০সহ মোট ২৫টি এয়ারক্র্যাফট। শিগগির বহরে যুক্ত হতে যাচ্ছে আরও কয়েকটি অত্যাধুনিক এয়ারক্র্যাফট। বিমানবহর বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে পাইলটের প্রয়োজনীয়তাও, যা স্বল্প সময়ে পূরণ করা কঠিন। তাই আগেই নিজেদের পাইলট হিসেবে প্রস্তুত করতে ২০২২ সাল থেকে স্টুডেন্ট পাইলট নিয়োগের পরিকল্পনা নেয় প্রতিষ্ঠানটি।

নিয়োগের জন্য কঠোর বাছাই প্রক্রিয়ায় আইকিউ টেস্ট, ইংরেজি-গণিত-ফিজিকসে লিখিত পরীক্ষা, পাইলট অ্যাপটিটিউড টেস্ট, সাইকোমেট্রিক, মেডিকেল ও মৌখিক পরীক্ষার সমন্বয়ে বাছাই করা হয় যোগ্য তরুণদের। ইতিমধ্যে ২২ জন প্রশিক্ষণার্থী যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা এপিক ফ্লাইট একাডেমিতে প্রশিক্ষণ নিয়ে ইউএস-বাংলায় ফার্স্ট অফিসার হিসেবে যোগ দিয়েছেন। আরও পাঁচজন প্রশিক্ষণ শেষের পথে, সাতজন অপেক্ষমাণ। প্রশিক্ষণ শেষে সবাই ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (FAA) কমার্শিয়াল পাইলট লাইসেন্স (CPL) অর্জন করেছেন।

নতুন ব্যাচের জন্য আবেদনপ্রক্রিয়া এখন চলমান। আবেদন করতে হলে এসএসসি ও এইচএসসি বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫সহ গণিত ও পদার্থবিজ্ঞানে উচ্চ ফল থাকতে হবে। ইংরেজিতে ন্যূনতম জিপিএ-৪ প্রয়োজন। ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেলের শিক্ষার্থীদেরও নির্দিষ্ট গ্রেডের শর্ত রয়েছে। তবে জিইডি গ্রহণযোগ্য নয় এবং ইংরেজিতে দক্ষতা বাধ্যতামূলক। বয়স হতে হবে ১৭ থেকে ২২ বছর, পুরুষদের উচ্চতা ন্যূনতম ১৬৮ সেমি এবং নারীদের ১৬৪ সেমি। দৃষ্টিশক্তি ৬/৬ হতে হবে, বিএমআই অনুযায়ী ওজন, অবিবাহিত, অধূমপায়ী ও নন-অ্যালকোহলিক হতে হবে। এ ছাড়া কোনো অপরাধমূলক সম্পৃক্ততা থাকলে আবেদন বাতিল হবে। সিভিল এভিয়েশন অথরিটি থেকে ক্লাস-১ মেডিকেল সার্টিফিকেট নিতে হবে।

সব পরীক্ষা ও যোগ্যতা যাচাইয়ে উত্তীর্ণদের ইউএস-বাংলার ব্যবস্থাপনায় বিশ্বের যেকোনো দেশে পাঠানো হবে ফ্লাইট ট্রেনিংয়ের জন্য। প্রশিক্ষণ শেষে উত্তীর্ণ ক্যাডেটরা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের ফার্স্ট অফিসার হিসেবে যোগ দেওয়ার সুযোগ পাবেন।

আবেদনের শেষ তারিখ ৩০ নভেম্বর ২০২৫। আগ্রহীরা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের ওয়েবসাইটে (usbair.com/career/student-pilot) গিয়ে আবেদন করতে পারবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বৈশ্বিক রপ্তানি কেন্দ্রে পরিণত হওয়ার বিশাল সম্ভাবনা বাংলাদেশের: সিইএএবি সভাপতি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
বৈশ্বিক রপ্তানি কেন্দ্রে পরিণত হওয়ার বিশাল সম্ভাবনা বাংলাদেশের: সিইএএবি সভাপতি

চীনা বিনিয়োগ, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা এবং শিল্প উৎপাদন শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী রপ্তানি কেন্দ্রে (গ্লোবাল এক্সপোর্ট হাব) পরিণত হওয়ার বিপুল সম্ভাবনা রাখে। বিশেষ করে অবকাঠামো, বিদ্যুৎ উৎপাদন, তৈরি পোশাক (আরএমজি) এবং অন্যান্য উৎপাদন খাতে এই সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি বলে মনে করে বাংলাদেশে চীনা এন্টারপ্রাইজেস অ্যাসোসিয়েশন (সিইএএবি)।

রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসসকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে সিইএএবির সভাপতি হান কুন বলেন, চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে, বিশেষ করে বড় অবকাঠামো ও বিদ্যুৎ প্রকল্পে।

হান কুন উল্লেখ করেন, শুধু বিদ্যুৎ খাতেই সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশে প্রায় ৮ হাজার মেগাওয়াট বেসরকারি বিনিয়োগ হয়েছে, যার প্রায় ৫৪ শতাংশই চীনা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এসেছে। তিনি আরও জানান, চীনা সংস্থাগুলোর সরাসরি ভূমিকার কারণেই বর্তমানে বাংলাদেশের মোট বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সঞ্চালন সক্ষমতা ২৭ থেকে ২৮ গিগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, চীনা কোম্পানিগুলো সাধারণত নিজেদের আড়ালে রাখতে পছন্দ করলেও, তাদের এই বিশাল বিনিয়োগ বাংলাদেশের উন্নয়ন খরচ কমাতে এবং পদ্মা বহুমুখী সেতুর মতো বৃহৎ জাতীয় প্রকল্পে চীনা দক্ষতার ব্যবহার নিশ্চিত করে অবকাঠামোগত প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে সহায়তা করছে।

হান কুন মনে করেন, বাংলাদেশ এখন আর কেবল একটি অভ্যন্তরীণ বাজারের গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়—এটি রপ্তানিমুখী শিল্পকেন্দ্র হয়ে ওঠার সব উপাদান ধারণ করে। চীনা উৎপাদকদের কাছে বাংলাদেশকে আকর্ষণীয় করার প্রধান কারণগুলো হলো: প্রতিযোগিতামূলক শ্রম ব্যয়; উন্নতমানের অবকাঠামো; আঞ্চলিক বাজারগুলোর কাছাকাছি কৌশলগত অবস্থান।

এছাড়া, বঙ্গোপসাগরে প্রবেশাধিকার এবং স্বল্পব্যয়ী শ্রমশক্তির কারণে আন্তর্জাতিক মহলেও বাংলাদেশের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্ব ক্রমশ বাড়ছে।

সিইএএবি সভাপতি প্রস্তাবিত চীন-বাংলাদেশ মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিকে (এফটিএ) এই শিল্প রূপান্তরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, শুল্ক, নীতি ও বিনিয়োগ কাঠামো সমন্বিত হলে চীনা কোম্পানিগুলো তাদের উৎপাদন চীনের বাইরে বাংলাদেশে স্থানান্তর করে বৈশ্বিক বাজারে রপ্তানি করতে পারবে।

হান কুন যুক্তি দেন, বিশ্বের মোট উৎপাদন সক্ষমতার প্রায় ৩০ শতাংশ চীনের। এর কিছু অংশ বাংলাদেশে স্থানান্তরিত হলে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো স্বল্পব্যয়ী ইনপুট ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে বিশ্ববাজারে পণ্য রপ্তানি করতে পারবে। এফটিএ কার্যকর হলে চীনা কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তিতে সহজ প্রবেশাধিকার তৈরি হবে, যা বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা এবং সাপ্লাই চেইনে অন্তর্ভুক্তিকে শক্তিশালী করবে—বিশেষ করে আরএমজি ও উৎপাদন খাতকে নতুন মাত্রা দেবে।

তবে তিনি নীতিগত স্থিতিশীলতা ও বিশ্বাসযোগ্যতার বিষয়ে কঠোর সতর্কবার্তা দেন। তাঁর মতে, ‘নীতিতে হঠাৎ পরিবর্তন এলে বিনিয়োগকারীরা শঙ্কিত হয়ে পড়েন।’ তিনি বলেন, দরপত্র প্রস্তুতকরণ, কারিগরি সমীক্ষা ও অনুমোদন প্রক্রিয়ায় যে বিপুল ব্যয় হয়, নীতি পরিবর্তনের ফলে প্রকল্প বাতিল হলে এই ব্যয় মুহূর্তেই ঝুঁকিতে পড়ে। তাই স্থিতিশীল ও অনুমানযোগ্য নীতি কাঠামো নিশ্চিত করা আবশ্যক।

২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত সিইএএবি ২০০৯ সাল থেকে একটি নিবন্ধিত সংস্থা হিসেবে অফিস ও জনবলসহ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির সদস্য সংখ্যা বেড়ে প্রায় ২৫০ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক প্রতিষ্ঠান অবকাঠামো খাতে এবং ৩০ শতাংশ আরএমজি/টেক্সটাইল খাতে সক্রিয়। এই সংস্থাগুলো দুই দেশের অর্থনীতির মধ্যে সেতুবন্ধনের ভূমিকা রাখছে এবং বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশিকে কর্মসংস্থান দিয়েছে।

ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে হান কুন অবকাঠামো ও বিদ্যুতের বাইরেও নতুন জ্বালানি, ডিজিটাল অর্থনীতি, সরবরাহ এবং উৎপাদনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্প্রসারিত হওয়ার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বিশ্বাস করেন, সঠিক নীতিগত সহায়তা পেলে বাংলাদেশ অচিরেই এশিয়ার অন্যতম রপ্তানি ও শিল্পকেন্দ্রে পরিণত হতে পারবে। বর্তমানে ডিউটি-ফ্রি ও কোটা-ফ্রি (ডিএফকিউএফ) সুবিধা সত্ত্বেও সীমিত রপ্তানি বৈচিত্র্যের কারণে বাংলাদেশ চীনে সুবিধাটি পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নির্বাচিত সরকার এলে বিমার গ্রাহক বাড়বে

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
মো. কাজিম উদ্দিন।
মো. কাজিম উদ্দিন।

দেশে দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক অস্থিরতা বিরাজ করছে। স্থিতিশীল সরকার না থাকলে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়, নতুন কর্মসংস্থানে ব্যাঘাত ঘটে। মানুষের আয় কমে বা স্থির থাকে, আর মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি ক্রয়ক্ষমতাকে সীমিত করে। এর প্রভাব পড়ে উৎপাদন ও চাহিদার ওপর, যা শেষমেশ অর্থনৈতিক প্রবাহকে ধীর করে দেয়।

সব মিলিয়ে, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সরাসরি দেশকে অর্থনৈতিক সংকটের দিকে ধাবিত করে। স্থিতিশীল ও গতিশীল অর্থনীতির সঙ্গে জীবনবিমার সম্পর্কও গভীরভাবে জড়িত। এই অনিশ্চয়তার ছায়া এখন নতুন বিমা গ্রহণে স্পষ্ট। মানুষ নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে চায়, কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতিতে অনেকে এখন আগের মতো বিমায় আগ্রহ দেখাচ্ছে না।

একদিকে বিভিন্ন ব্যাংক গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিতে পারছে না। পাশাপাশি পাঁচটি ব্যাংক একীভূত হওয়ার খবরে মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। আবার কিছু বিমা কোম্পানি নির্ধারিত সময়ে গ্রাহকের টাকা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এর ফলে মানুষের মধ্যে বিমার প্রতি আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে এবং অনেকে আগের পলিসি বাতিল করছে।

বিশেষ করে, পাঁচ-সাতটি কোম্পানির কারণে গত দুই-তিন বছর নতুন পলিসি ইস্যু হয়নি, ফলে বিমা গ্রাহকের সংখ্যা কমেছে। তবে মেটলাইফসহ বড় কোম্পানির পলিসি চলমান থাকায় প্রিমিয়াম আয় কিছুটা বেড়েছে; যা খাতের অস্থিরতার মাঝেও সামান্য সান্ত্বনা দেয়। তবে আমি বিশ্বাস করি, নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় এলে দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দাবি পরিশোধের হার বাড়বে, যা বিমা গ্রাহকের হারও পুনরায় বাড়াবে এবং এ খাতের আস্থা ফিরিয়ে আনবে। একই সঙ্গে খাতের শৃঙ্খলায়ও নজর দেওয়া জরুরি। কোম্পানিগুলোকে গ্রাহকের পাওনা দ্রুত পরিশোধ করতে হবে, প্রিমিয়াম সংগ্রহে এজেন্টের ওপর নির্ভর না করে অনলাইন ব্যাংক, নগদ, বিকাশ ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

মো. কাজিম উদ্দিন,মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) ন্যাশনাল লাইফ ইনস্যুরেন্স

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

জীবনবিমা কোম্পানি: আড়াই বছরে কমেছে সোয়া ১০ লাখ বিমা

মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা
আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১০: ৪৪
জীবনবিমা কোম্পানি: আড়াই বছরে কমেছে সোয়া ১০ লাখ বিমা

মানুষের ভবিষ্যৎ সুরক্ষার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য অবলম্বন হলো জীবনবিমা। কিন্তু দাবি নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতা ও অনিয়ম, বিনিয়োগে অস্বচ্ছতা এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএর দুর্বল তদারকি সে ভরসার ভিত্তি ক্রমেই সংকুচিত করেছে, বিশ্বাসের জায়গায় বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। গত আড়াই বছরের হিসাব স্পষ্ট করে দেখাচ্ছে—খাতটিতে আস্থাহীনতা জমেছে, অসন্তোষ সঞ্চিত হয়েছে, আর এখন তা দৃশ্যমান সংকটে রূপ নিয়েছে। এ সময়ে সক্রিয় পলিসি কমেছে ১০ লাখ ২৫ হাজার ৯২৪টি, কমার হার ১৩.১৪ শতাংশ। এই ধারাবাহিক নিম্নগতি জীবনবিমা থেকে মানুষের মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার সেই কঠিন বার্তা স্পষ্ট করে দিচ্ছে।

আইডিআরএর সর্বশেষ বার্ষিক ও অর্ধবার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, দেশে মোট ৩৬টি জীবনবিমা কোম্পানি রয়েছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এসব প্রতিষ্ঠানে সক্রিয় পলিসি ছিল ৭৮ লাখ ৯ হাজার ১২১টি। ২০২৩ সালে তা নেমে আসে ৭৩ লাখ ৭৮ হাজার ২৭৬টিতে। এরপর ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে কমে দাঁড়ায় ৭০ লাখ ৮৯ হাজার ৭৭৭টিতে, এক বছরে কমেছে ৭ লাখ ১৯ হাজার ৩৪৪টি পলিসি। চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসেই, ২০২৫ সালের জুন শেষে পলিসির সংখ্যা আরও কমে ৬৭ লাখ ৮৩ হাজার ১৯৭টিতে দাঁড়িয়েছে—অর্থাৎ এই অর্ধবছরেই কমেছে ৩ লাখ ৬ হাজার ৫৮০টি পলিসি। অর্থাৎ নতুন পলিসি নেওয়ার বদলে অনেকে পুরোনো পলিসির টাকা তুলে নিচ্ছেন, উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, নতুন করে আর বিমার জালে জড়াচ্ছেন না কেউ।

আস্থাহীনতার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক মাইন উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দাবি নিষ্পত্তিতে দেরি হচ্ছে। তাঁর ভাষায়, ‘মানুষ যখন বছরের পর বছর নিজের প্রাপ্য টাকা পায় না, তখন তাঁরা বিমা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতেই বাধ্য হন।’

আইডিআরএর তথ্যমতে, পলিসি কমার শীর্ষে রয়েছে সোনালী লাইফ ইনস্যুরেন্স। প্রতিষ্ঠানটির বিমা কমেছে ২ লাখ ৩৭ হাজার ৬৬৮টি। ডেলটা লাইফের বিমা কমেছে ১ লাখ ৯৩ হাজার ৭৬৮টি। পপুলার লাইফের বিমা কমেছে ১ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৯টি। এরপর যথাক্রমে রয়েছে ন্যাশনাল লাইফ, প্রগতি লাইফ এবং আলফা ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স লিমিটেড।

চার্টার্ড লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানির সিইও এস এম জিয়াউল হক মনে করেন, ব্যবস্থাপনা কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ায় পুরো খাতই একধরনের সংকটের মুখে। তাঁর মতে, বিনিয়োগ, দাবি নিষ্পত্তি, গ্রাহকসেবা—সবক্ষেত্রেই শক্তিশালী নীতিমালা প্রয়োগ জরুরি।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ সংশ্লিষ্টদের অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স প্রফেশনালস সোসাইটির (বিআইপিএস) সেক্রেটারি জেনারেল এ কে এম এহসানুল হক বলেন, অনেক সময় অনিয়মের তদন্তে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেলেও তা বাস্তবায়নের পর্যায়ে যথেষ্ট কঠোরতা থাকে না। এতে গ্রাহকের আস্থা আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, আইডিআরএর মানবসম্পদ, আইনগত কাঠামো ও তদারকি ক্ষমতা আরও শক্তিশালী না হলে সামগ্রিকভাবে গ্রাহক সুরক্ষা নিশ্চিত করা যাবে না।

তবে আইডিআরএর পরামর্শক সাইফুন্নাহার সুমি বলছেন ভিন্ন কথা। তাঁর মতে, খাতের বিচ্যুতি দূর করতে বিভিন্ন আইনি সংস্কার এখন প্রক্রিয়াধীন। তিনি বলেন, ‘দাবি নিষ্পত্তি দ্রুত করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, নিয়মগুলো আরও স্পষ্ট করা হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।’

তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, শুধু নির্দেশনা নয়—কার্যকর প্রয়োগই হবে মূল বিষয়। কারণ বিমা খাত টিকে থাকে মানুষের বিশ্বাসে। সে বিশ্বাস একবার নষ্ট হলে তা ফিরিয়ে আনা কঠিন। তাই দাবি নিষ্পত্তির সময়সীমা স্পষ্ট করা, বিনিয়োগের তথ্য প্রকাশ, স্বচ্ছ অডিট এবং শক্তিশালী নজরদারি—এসব ক্ষেত্রে দৃশ্যমান পরিবর্তন আনতেই হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত