মন্টি বৈষ্ণব
ছকেবাঁধা জীবনে কাজ করতে করতে অনেকেই হাঁপিয়ে ওঠেন। তখন নিজের ইচ্ছেমতো জীবনটা সাজাতে না পারার অনুশোচনা দেখা দেয় কখনো কখনো। এতে জীবনে সাফল্য থাকলেও মন খুঁজে বেড়ায় অন্য কোনো কিছুর, যা একান্তই নিজের। যেখানে থাকবে কাজের একাগ্রতা আর ভালোবাসা। জীবনপ্রবাহের কঠিন বাস্তবতায় তেমনি এক পরিস্থিতিতে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন বাগেরহাটের ঝুমকি বসু।
নারী উদ্যোক্তা ঝুমকি বসুর গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট জেলার কার্ত্তিকদিয়া গ্রামে। সেখানেই তাঁর শৈশবের দিন কাটে। এইচএসসি পাস করার পর পড়াশোনার জন্য চলে যান কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপর স্নাতকোত্তর করেন ঢাকার ইডেন কলেজ থেকে। উদ্ভিদবিজ্ঞান বিষয়ে পড়ার পাশাপাশি আইন নিয়েও পড়ালেখা করেন। একসময় আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন ঢাকা আইনজীবী সমিতিতে। এর মধ্যে বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে চাকরি শুরু করেন। পাঁচ বছর চাকরি করার পর সন্তান ‘গদ্য’ জন্মের পর তাঁর পক্ষে চাকরি করা আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি। অন্য কোনো উপায় না পেয়ে ছেড়ে দেন চাকরি।
ঝুমকি বুঝতে পেরেছিলেন, সংসার-সন্তান সামলে বাসার বাইরে গিয়ে চাকরি করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হবে না। তখন মনে মনে একটা কিছু করার তাগিদ অনুভব করতে থাকেন। ছেলে বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজের কিছু একটা করার সুপ্ত ইচ্ছেটাও জেগে ওঠে। একদিন বাজারে কেনাকাটা করতে গিয়ে কিছু কাঠের নকশা ও রং কিনে আনেন ঝুমকি। কারণ, সামনে ছিল ছেলের জন্মদিন। নিজের জন্য তৈরি করলেন হাতে বানানো কিছু গয়না। সেদিন অনুষ্ঠানে সবাই গয়নার প্রশংসা করলেন। আর সেই প্রশংসায় ঝুমকি বসু উৎসাহিত হয়ে সিদ্ধান্ত নেন অনলাইন ব্যবসা শুরু করার।
নারী উদ্যোক্তা ঝুমকি বসুর কাছে রূপসার শুরুর গল্পের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘সত্যি বলতে কি, ব্যবসার কথা যখন পরিবারের সদস্যদের প্রথম জানাই, তখন সবাই অনেক অবাক হন। প্রথমে পরিবারের কারও খুব একটা সহযোগিতা ছিল না। এমনকি আমার মা শুনেই বললেন, এত পড়ালেখা করে শেষে তুই গয়না বানাবি? মায়ের এ কথা শুনে আমার খুব মন খারাপ হয়েছিল। কিন্তু দমে যাইনি। এরপর পূজার সময় নিজে ডিজাইন করে বাড়ির সবাইকে শাড়ি, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, ব্লাউজ ও গয়না বানিয়ে দিলাম। সেগুলো দেখে পরিবারের সবাই খুব প্রশংসা করল। আশপাশের মানুষেরও সমাদর পেলাম। এতে মনে মনে সাহস আরও বেড়ে গেল। অতি আবেগে পরদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খুলে ফেললাম একটা পেজ। সময়টা ছিল ২০১৯ সাল। সে বছরের মে মাসে শুরু করলাম অনলাইনভিত্তিক শপিং প্ল্যাটফর্ম ‘রূপসা’র যাত্রা।’
অনলাইন প্রতিষ্ঠানের জন্য কেন রূপসা নামটি পছন্দ করলেন? এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেকেই বলেন “রূপসা” কি আপনার মেয়ের নাম? আমি বলি, হ্যাঁ, রূপসা আমার মেয়ে, আমি রূপসাকে প্রতিনিয়ত গড়ে তুলছি পরম মমতায়। আবার অনেকে জানতে চান, আপনি দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ বলেই কি আপনার প্রতিষ্ঠানের নাম রূপসা? এ কথা সত্যি যে, দক্ষিণের মানুষ হিসেবে আমি রূপসার জোয়ার-ভাটা দেখে বড় হয়েছি। তাই এই নদীর ওপর আমার টান থাকবে, তা খুব স্বাভাবিক। এ ছাড়া “রূপসা” নামের এক চমৎকার তাৎপর্য আছে, যা আমার পেজের পণ্যের সঙ্গে মিলে যায়। “রূপসা” শব্দের অর্থ রূপসী।’
উদ্যোক্তার পাশাপাশি ঝুমকি বসু একজন আইনজীবী। এ ছাড়া তিনি দীর্ঘ সতেরো বছর বাংলাদেশ বেতারের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করছেন। এর পাশাপাশি তিনি টুকটাক লেখালিখিও করেন। আগামী বছর অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আসবে ঝুমকি বসুর প্রথম গল্পগ্রন্থ, এমনটাই জানা গেল।
পরিবার সম্পর্কে জানতে চাইলে ঝুমকি বলেন, ‘আমরা দুই বোন। মা অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা। বাবা একসময় ব্যবসা করতেন। এখন বয়স হয়েছে তাই অবসরেই আছেন। বোন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। আমার স্বামী একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের জয়েন্ট নিউজ এডিটর এবং লেখালিখি করেন। একমাত্র সন্তান ‘গদ্য’ দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ছে। আমার মাসহ পরিবারের সবাই এখন ‘রূপসা’র কাজে সহযোগিতা করেন। সত্যি বলতে কি, প্রথমে কেউ ব্যাপারটায় তেমন গুরুত্ব দেননি। পড়াশোনা করলেই চাকরি করতে হবে—এটাই ছিল সবার বদ্ধমূল ধারণা। কিন্তু সময় গড়ানোর পর সবার ধারণা বদলে গেল। এখন আমার বাবা-মা, বোন, শাশুড়িমা, স্বামী এমনকি আমার সাত বছরের শিশুসন্তানও আমাকে সহযোগিতা করে। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কিছু গ্রুপ আমার পরিচিতি বাড়াতে যথেষ্ট সহযোগিতা করছে।’
রূপসার শুরুটা কীভাবে হলো আর এখন কী কী পণ্য তৈরি করছেন—জানতে চাইলে ঝুমকি বলেন, ‘প্রথমে কাজ শুরু করি হাতে তৈরি বিভিন্ন গয়না দিয়ে। আমি নিজে টিপ পরতে খুব ভালোবাসি। পেজের প্রথম দিকে টিপ নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। তখন টিপ হয়ে যায় আমার পেজের সিগনেচার প্রোডাক্ট। এরপর নিজে ডিজাইন করে ব্লকপ্রিন্টের শাড়ি, পাঞ্জাবি, ব্লাউজ ও বাচ্চাদের শাড়িও করতে শুরু করলাম। এ ছাড়া জামদানি ব্লকের মাস্ক করেছি। সেগুলোও অনেকে বেশ পছন্দ করছেন। আবার কাঠের নানা পণ্য যেমন: জুয়েলারি বক্স, কয়েন বক্স, কাঠের সিঁদুর বক্স, মেডিসিন বক্স নিয়েও কাজ করছি।’
উ
দ্যোক্তা হওয়ার যাত্রা কতটা কঠিন ছিল? ঝুমকি বলেন, ‘কারও কথায় কান না দিয়ে আমার মন যা চেয়েছে তাই করেছি। এখন ব্যবসা আমার নিজের। এখানে সময়ের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। আমি আমার কাজের সবকিছু তদারকি করতে পারছি। আর ঠিকই সময় বের করে ফেলতে পারছি। সন্তানকে স্কুলে দিয়ে রূপসার বিভিন্ন পণ্য তৈরি করি, ঘুম পাড়িয়ে ব্যবসার নানা কাজ করি। মোটকথা আমি আমার মতো করে সময়টা বের করে নিচ্ছি। এই সুযোগটা চাকরিতে ছিল না।’
সংসারের কাজের পাশাপাশি কীভাবে ব্যবসার কাজে সময় দেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সময় ম্যানেজ করা আমার সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। আমার সন্তানকে সব সময় দেখভাল করতে হয়। কারণ, সে এখনো বেশ ছোট। বাসায় তার দেখাশোনা ছাড়াও তাকে স্কুলে নিয়ে যেতে হয়। অনেক সময় আমাকে বাইরে গিয়ে কারিগর দিয়ে কাজ করাতে হয়। আবার অনেক সময় বিভিন্ন প্রোডাক্ট সংগ্রহ করার জন্য বাইরে যেতে হয়। সন্তানকে বাসায় একা রেখে আমি বের হতে পারি না, আমাকে অপেক্ষা করতে হয় শুক্রবারের জন্য। আমার স্বামীর অফিস ছুটির দিনে শুধু আমি বাইরের কাজ করতে পারি। আমার পুরোটা সময় যদি আমি রূপসার পেছনে ব্যয় করতে পারতাম, তাহলে অনেক ভালো হতো। কিন্তু সংসার-সন্তান সামলে পুরোটা সময় দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না।’
এ দেশের সমাজ বাস্তবতায় নারীদের মূল্যায়নই-বা কেমন? এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঝুমকি শোনান, ‘আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে নারীর সর্বস্তরের অংশগ্রহণ এখনো সুনিশ্চিত হয়নি। সব কাজে নারীর অংশগ্রহণ সমাজ স্বাভাবিকভাবে নিতে পারে না। কিছু মানুষের একটা ধারণা যে, ব্যবসা নারীর জন্য নয়। কিন্তু এই ধারণা ভেঙে দিয়েছে আজকের নারীসমাজ। অর্থনীতিতে নারীর অবদান এখন ব্যাপকভাবে বেড়েছে, বিশেষ করে করোনাকালে। ঘরে বসে সংসার সামলে শুধু গৃহিণী না হয়ে নারীরা যে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারে, তা আজকের ই-কমার্স এবং এফ-কমার্স খাতে চোখ রাখলেই বুঝতে পারা যায়।’
সেই সঙ্গে উদ্যোক্তা হওয়ার পথের কাঁটাগুলোও মনে করিয়ে দিয়েছেন ঝুমকি। তিনি বলছিলেন, ‘উদ্যোক্তা হতে হলে অনেক কটু কথা শুনতে হয়, বিশেষ করে ব্যবসা শুরুর প্রথম দিকে। কিন্তু সেসব কথা শুনে পিছিয়ে পড়লে বা মন খারাপ করলে চলবে না। নিজের স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। মানুষের কথাকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজে কী করতে চাই, সেটা ঠিক করতে হবে। আর ধৈর্য ধরে কাজ করে যেতে পারলে সফলতা আসবেই।’
ঝুমকি বলেন, ‘আমি রূপসার কাজ শুরু করি মাত্র পাঁচ শ টাকা দিয়ে। আর এখন প্রতি মাসে গড় আয় প্রায় ৫০ হাজার টাকা। বর্তমানে সার্বক্ষণিকভাবে দুজন শ্রমিক আমার সঙ্গে কাজ করছেন। তবে আমার যখন যেমন কাজের চাপ থাকে, সেই অনুযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা বাড়াই। অনলাইনে বিক্রির পাশাপাশি বিভিন্ন মেলায় অংশ নিয়েও আমি ব্যাপক সাড়া পেয়েছি।’
ঝুমকির স্বপ্ন, ‘রূপসা’ একদিন দেশ ছাপিয়ে বিদেশেও দাপিয়ে বেড়াবে। সেই স্বপ্নপূরণের ইঙ্গিত অবশ্য মিলছে। দুই বছর ধরে ইউরোপ ও আমেরিকায় যেতে শুরু করেছে রূপসার পণ্য। ‘রূপসা’কে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত করে তুলতে চান ঝুমকি। সেই লক্ষ্যেই চলছে পথচলা।
ছকেবাঁধা জীবনে কাজ করতে করতে অনেকেই হাঁপিয়ে ওঠেন। তখন নিজের ইচ্ছেমতো জীবনটা সাজাতে না পারার অনুশোচনা দেখা দেয় কখনো কখনো। এতে জীবনে সাফল্য থাকলেও মন খুঁজে বেড়ায় অন্য কোনো কিছুর, যা একান্তই নিজের। যেখানে থাকবে কাজের একাগ্রতা আর ভালোবাসা। জীবনপ্রবাহের কঠিন বাস্তবতায় তেমনি এক পরিস্থিতিতে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন বাগেরহাটের ঝুমকি বসু।
নারী উদ্যোক্তা ঝুমকি বসুর গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট জেলার কার্ত্তিকদিয়া গ্রামে। সেখানেই তাঁর শৈশবের দিন কাটে। এইচএসসি পাস করার পর পড়াশোনার জন্য চলে যান কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। এরপর স্নাতকোত্তর করেন ঢাকার ইডেন কলেজ থেকে। উদ্ভিদবিজ্ঞান বিষয়ে পড়ার পাশাপাশি আইন নিয়েও পড়ালেখা করেন। একসময় আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন ঢাকা আইনজীবী সমিতিতে। এর মধ্যে বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হিসেবে চাকরি শুরু করেন। পাঁচ বছর চাকরি করার পর সন্তান ‘গদ্য’ জন্মের পর তাঁর পক্ষে চাকরি করা আর সম্ভব হয়ে ওঠেনি। অন্য কোনো উপায় না পেয়ে ছেড়ে দেন চাকরি।
ঝুমকি বুঝতে পেরেছিলেন, সংসার-সন্তান সামলে বাসার বাইরে গিয়ে চাকরি করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হবে না। তখন মনে মনে একটা কিছু করার তাগিদ অনুভব করতে থাকেন। ছেলে বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজের কিছু একটা করার সুপ্ত ইচ্ছেটাও জেগে ওঠে। একদিন বাজারে কেনাকাটা করতে গিয়ে কিছু কাঠের নকশা ও রং কিনে আনেন ঝুমকি। কারণ, সামনে ছিল ছেলের জন্মদিন। নিজের জন্য তৈরি করলেন হাতে বানানো কিছু গয়না। সেদিন অনুষ্ঠানে সবাই গয়নার প্রশংসা করলেন। আর সেই প্রশংসায় ঝুমকি বসু উৎসাহিত হয়ে সিদ্ধান্ত নেন অনলাইন ব্যবসা শুরু করার।
নারী উদ্যোক্তা ঝুমকি বসুর কাছে রূপসার শুরুর গল্পের বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘সত্যি বলতে কি, ব্যবসার কথা যখন পরিবারের সদস্যদের প্রথম জানাই, তখন সবাই অনেক অবাক হন। প্রথমে পরিবারের কারও খুব একটা সহযোগিতা ছিল না। এমনকি আমার মা শুনেই বললেন, এত পড়ালেখা করে শেষে তুই গয়না বানাবি? মায়ের এ কথা শুনে আমার খুব মন খারাপ হয়েছিল। কিন্তু দমে যাইনি। এরপর পূজার সময় নিজে ডিজাইন করে বাড়ির সবাইকে শাড়ি, পাঞ্জাবি, ফতুয়া, ব্লাউজ ও গয়না বানিয়ে দিলাম। সেগুলো দেখে পরিবারের সবাই খুব প্রশংসা করল। আশপাশের মানুষেরও সমাদর পেলাম। এতে মনে মনে সাহস আরও বেড়ে গেল। অতি আবেগে পরদিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খুলে ফেললাম একটা পেজ। সময়টা ছিল ২০১৯ সাল। সে বছরের মে মাসে শুরু করলাম অনলাইনভিত্তিক শপিং প্ল্যাটফর্ম ‘রূপসা’র যাত্রা।’
অনলাইন প্রতিষ্ঠানের জন্য কেন রূপসা নামটি পছন্দ করলেন? এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অনেকেই বলেন “রূপসা” কি আপনার মেয়ের নাম? আমি বলি, হ্যাঁ, রূপসা আমার মেয়ে, আমি রূপসাকে প্রতিনিয়ত গড়ে তুলছি পরম মমতায়। আবার অনেকে জানতে চান, আপনি দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ বলেই কি আপনার প্রতিষ্ঠানের নাম রূপসা? এ কথা সত্যি যে, দক্ষিণের মানুষ হিসেবে আমি রূপসার জোয়ার-ভাটা দেখে বড় হয়েছি। তাই এই নদীর ওপর আমার টান থাকবে, তা খুব স্বাভাবিক। এ ছাড়া “রূপসা” নামের এক চমৎকার তাৎপর্য আছে, যা আমার পেজের পণ্যের সঙ্গে মিলে যায়। “রূপসা” শব্দের অর্থ রূপসী।’
উদ্যোক্তার পাশাপাশি ঝুমকি বসু একজন আইনজীবী। এ ছাড়া তিনি দীর্ঘ সতেরো বছর বাংলাদেশ বেতারের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করছেন। এর পাশাপাশি তিনি টুকটাক লেখালিখিও করেন। আগামী বছর অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আসবে ঝুমকি বসুর প্রথম গল্পগ্রন্থ, এমনটাই জানা গেল।
পরিবার সম্পর্কে জানতে চাইলে ঝুমকি বলেন, ‘আমরা দুই বোন। মা অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা। বাবা একসময় ব্যবসা করতেন। এখন বয়স হয়েছে তাই অবসরেই আছেন। বোন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। আমার স্বামী একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের জয়েন্ট নিউজ এডিটর এবং লেখালিখি করেন। একমাত্র সন্তান ‘গদ্য’ দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ছে। আমার মাসহ পরিবারের সবাই এখন ‘রূপসা’র কাজে সহযোগিতা করেন। সত্যি বলতে কি, প্রথমে কেউ ব্যাপারটায় তেমন গুরুত্ব দেননি। পড়াশোনা করলেই চাকরি করতে হবে—এটাই ছিল সবার বদ্ধমূল ধারণা। কিন্তু সময় গড়ানোর পর সবার ধারণা বদলে গেল। এখন আমার বাবা-মা, বোন, শাশুড়িমা, স্বামী এমনকি আমার সাত বছরের শিশুসন্তানও আমাকে সহযোগিতা করে। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কিছু গ্রুপ আমার পরিচিতি বাড়াতে যথেষ্ট সহযোগিতা করছে।’
রূপসার শুরুটা কীভাবে হলো আর এখন কী কী পণ্য তৈরি করছেন—জানতে চাইলে ঝুমকি বলেন, ‘প্রথমে কাজ শুরু করি হাতে তৈরি বিভিন্ন গয়না দিয়ে। আমি নিজে টিপ পরতে খুব ভালোবাসি। পেজের প্রথম দিকে টিপ নিয়ে কাজ শুরু করেছিলাম। তখন টিপ হয়ে যায় আমার পেজের সিগনেচার প্রোডাক্ট। এরপর নিজে ডিজাইন করে ব্লকপ্রিন্টের শাড়ি, পাঞ্জাবি, ব্লাউজ ও বাচ্চাদের শাড়িও করতে শুরু করলাম। এ ছাড়া জামদানি ব্লকের মাস্ক করেছি। সেগুলোও অনেকে বেশ পছন্দ করছেন। আবার কাঠের নানা পণ্য যেমন: জুয়েলারি বক্স, কয়েন বক্স, কাঠের সিঁদুর বক্স, মেডিসিন বক্স নিয়েও কাজ করছি।’
উ
দ্যোক্তা হওয়ার যাত্রা কতটা কঠিন ছিল? ঝুমকি বলেন, ‘কারও কথায় কান না দিয়ে আমার মন যা চেয়েছে তাই করেছি। এখন ব্যবসা আমার নিজের। এখানে সময়ের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। আমি আমার কাজের সবকিছু তদারকি করতে পারছি। আর ঠিকই সময় বের করে ফেলতে পারছি। সন্তানকে স্কুলে দিয়ে রূপসার বিভিন্ন পণ্য তৈরি করি, ঘুম পাড়িয়ে ব্যবসার নানা কাজ করি। মোটকথা আমি আমার মতো করে সময়টা বের করে নিচ্ছি। এই সুযোগটা চাকরিতে ছিল না।’
সংসারের কাজের পাশাপাশি কীভাবে ব্যবসার কাজে সময় দেন—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সময় ম্যানেজ করা আমার সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা। আমার সন্তানকে সব সময় দেখভাল করতে হয়। কারণ, সে এখনো বেশ ছোট। বাসায় তার দেখাশোনা ছাড়াও তাকে স্কুলে নিয়ে যেতে হয়। অনেক সময় আমাকে বাইরে গিয়ে কারিগর দিয়ে কাজ করাতে হয়। আবার অনেক সময় বিভিন্ন প্রোডাক্ট সংগ্রহ করার জন্য বাইরে যেতে হয়। সন্তানকে বাসায় একা রেখে আমি বের হতে পারি না, আমাকে অপেক্ষা করতে হয় শুক্রবারের জন্য। আমার স্বামীর অফিস ছুটির দিনে শুধু আমি বাইরের কাজ করতে পারি। আমার পুরোটা সময় যদি আমি রূপসার পেছনে ব্যয় করতে পারতাম, তাহলে অনেক ভালো হতো। কিন্তু সংসার-সন্তান সামলে পুরোটা সময় দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না।’
এ দেশের সমাজ বাস্তবতায় নারীদের মূল্যায়নই-বা কেমন? এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঝুমকি শোনান, ‘আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে নারীর সর্বস্তরের অংশগ্রহণ এখনো সুনিশ্চিত হয়নি। সব কাজে নারীর অংশগ্রহণ সমাজ স্বাভাবিকভাবে নিতে পারে না। কিছু মানুষের একটা ধারণা যে, ব্যবসা নারীর জন্য নয়। কিন্তু এই ধারণা ভেঙে দিয়েছে আজকের নারীসমাজ। অর্থনীতিতে নারীর অবদান এখন ব্যাপকভাবে বেড়েছে, বিশেষ করে করোনাকালে। ঘরে বসে সংসার সামলে শুধু গৃহিণী না হয়ে নারীরা যে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারে, তা আজকের ই-কমার্স এবং এফ-কমার্স খাতে চোখ রাখলেই বুঝতে পারা যায়।’
সেই সঙ্গে উদ্যোক্তা হওয়ার পথের কাঁটাগুলোও মনে করিয়ে দিয়েছেন ঝুমকি। তিনি বলছিলেন, ‘উদ্যোক্তা হতে হলে অনেক কটু কথা শুনতে হয়, বিশেষ করে ব্যবসা শুরুর প্রথম দিকে। কিন্তু সেসব কথা শুনে পিছিয়ে পড়লে বা মন খারাপ করলে চলবে না। নিজের স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। মানুষের কথাকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজে কী করতে চাই, সেটা ঠিক করতে হবে। আর ধৈর্য ধরে কাজ করে যেতে পারলে সফলতা আসবেই।’
ঝুমকি বলেন, ‘আমি রূপসার কাজ শুরু করি মাত্র পাঁচ শ টাকা দিয়ে। আর এখন প্রতি মাসে গড় আয় প্রায় ৫০ হাজার টাকা। বর্তমানে সার্বক্ষণিকভাবে দুজন শ্রমিক আমার সঙ্গে কাজ করছেন। তবে আমার যখন যেমন কাজের চাপ থাকে, সেই অনুযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা বাড়াই। অনলাইনে বিক্রির পাশাপাশি বিভিন্ন মেলায় অংশ নিয়েও আমি ব্যাপক সাড়া পেয়েছি।’
ঝুমকির স্বপ্ন, ‘রূপসা’ একদিন দেশ ছাপিয়ে বিদেশেও দাপিয়ে বেড়াবে। সেই স্বপ্নপূরণের ইঙ্গিত অবশ্য মিলছে। দুই বছর ধরে ইউরোপ ও আমেরিকায় যেতে শুরু করেছে রূপসার পণ্য। ‘রূপসা’কে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত করে তুলতে চান ঝুমকি। সেই লক্ষ্যেই চলছে পথচলা।
বেশ কিছু দিন ধরেই কেনিয়াতে ছাত্র–জনতা আদানির সঙ্গে সরকারের ‘গোপন’ চুক্তির প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। পরে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করে। অবশেষে আদানি শিল্পগোষ্ঠীর সঙ্গে ২৫০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি অর্থমূল্যের দুটি চুক্তি বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছে আফ্রিকার দেশ কেনিয়া।
৪ ঘণ্টা আগেঘুষের নোটে সাগর আদানি ঘুষের পরিমাণ, কাকে ঘুষ দেওয়া হয়েছে এবং কত মেগাওয়াট বিদ্যুতের বিনিময়ে এটি হয়েছে—তার বিবরণ উল্লেখ করেছেন। তিনি মেগাওয়াট প্রতি ঘুষের হারও উল্লেখ করেছেন। ২০২০ সালে একটি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে সাগর আদানি বলেন, ‘হ্যাঁ...কিন্তু বিষয়টা দৃশ্যমান হওয়ার ঠেকানো বেশ কঠিন।’
৫ ঘণ্টা আগেগৌতম আদানি, ভারতীয় কনগ্লোমারেট আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তিদের একজন, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বহু-বিলিয়ন ডলারের জালিয়াতি এবং ঘুষ কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, ভারত সরকারের কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়ার মাধ্যমে দেশের বৃহত্তম সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের চুক্তি বাগিয়েছে
৬ ঘণ্টা আগেব্যাংকিং খাতে যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পদোন্নতি দীর্ঘদিনের প্রথা। তবে এবার নতুন নীতিমালায় আরোপিত কঠোর শর্ত—ব্যাংকিং ডিপ্লোমা, মাস্টার্স ডিগ্রি ও গবেষণাপত্র প্রকাশের বাধ্যবাধকতা—সরকারি ব্যাংকের ২৫৮ কর্মকর্তার জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) পদে পদোন্নতি নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে।
৬ ঘণ্টা আগে