মন্টি বৈষ্ণব
তাহমিনা আহমেদের ‘মিনার ক্ষেতখামার’ নাম শুনলেই সবার হয়তো মিনা কার্টুনের কথা মনে পড়বে। কিন্তু তা নয়। ‘মিনার ক্ষেতখামার’ একটি উদ্যোগের নাম, যার স্বত্বাধিকারী তাহমিনা।
করোনা অনেকের জীবনের মতো তাহমিনার জীবনেও সংকট হিসেবেই এসেছিল। কিন্তু তাহমিনা হচ্ছেন সেই প্রাণময় ব্যক্তিদের একজন, যিনি সংকটকেই সম্ভাবনায় রূপান্তরিত করেছেন। ‘মিনার ক্ষেতখামার’ কাজ করছে বিভিন্ন অরগানিক খাদ্যপণ্য নিয়ে। এটি নিরাপদ খাদ্য বিপণনের একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম।
কৃষি তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠার অনুষঙ্গ হলেও এই উদ্যোগ গ্রহণের আগে তিনি কখনো এমন কিছু নিয়ে কাজ করার কথা ভাবেনওনি। তবে, একজন সচেতন মানুষ হিসেবে সব সময়ই ভেজাল ও বিষক্রিয়া এবং পরিবেশ দূষণ নিয়ে সজাগ থাকার চেষ্টা করেছেন। কৃষক পরিবারে বেড়ে ওঠা তাহমিনার এই সচেতনতা শেষ পর্যন্ত তাঁকে নিয়ে গেছে এই উদ্যোগের দিকে।
তাহমিনার জন্ম টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ীতে। বেড়ে উঠেছেন কৃষিনির্ভর একটি যৌথ পরিবারে। যেখানে প্রতিদিন ৫০-৬০ জনের রান্না হতো এক হাঁড়িতে। এসএসসি পাস করেছেন ধনবাড়ী নওয়াব ইনস্টিটিউশন থেকে। কলেজ—ঢাকার বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ। এর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। পড়াশোনায় বরাবরই ভালো ছিলেন। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে পেয়েছিলেন ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি। এসএসসি পরীক্ষায় তাঁর ফলাফল ছিল নিজ উপজেলায় বেশ আলোচিত।
পেশাজীবনে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়েছেন। কিন্তু এই করোনাকাল মিনার জীবনকে বলা যায় একেবারে পাল্টে দিয়েছে। একমাত্র সন্তানের জন্য তাঁর প্রতিনিয়ত চিন্তা তাঁকে ভয়াবহ সংকটের মধ্যে ফেলেছিল। তাই করোনাকালেই শুরু করেন ক্ষেতখামার নামে একটি নিরাপদ খাদ্যের অনলাইন বিপণন কার্যক্রম। পরে এর নাম দেওয়া হয় ‘মিনার ক্ষেতখামার।
তাহমিনা আহমেদের কাছ থেকেই শোনা যাক ‘মিনার ক্ষেতখামার’ শুরুর গল্পটা—‘পড়াশোনা শেষে আমি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকে ৫ বছর চাকরি করেছি। গর্ভকালীন জটিলতার কারণে চাকরিটা ছেড়ে দিই। এরই মধ্যে সংসার ও সন্তানের দেখভাল করে কেটে যায় লম্বা সময়। চাকরির সুযোগ ছিল। কিন্তু মন থেকে চাকরির প্রতি অতটা আগ্রহ বোধ করিনি। তাই প্রথমে উদ্যোক্তা হিসেবে ২০১৭ সালে টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি নিয়ে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কাজ শুরু করি। নানা কারণে সেটা বেশি দূর এগোয়নি। এর পর ভাবছিলাম কী করা যায়। কিছু একটা করার তাড়না সব সময় অনুভব করতাম। তার পর এই করোনাকালে নানা সংকটের কারণে একদিন সিদ্ধান্ত নিলাম নিরাপদ খাদ্য নিয়ে কাজ করার। খাবারে ভেজাল জিনিসটা মন থেকে কখনোই মানতে পারিনি। ভেজালমুক্ত খাবার মানুষের কাছে পৌঁছানো সবচেয়ে ভালো উদ্যোগ বলে মনে হয়েছে আমার কাছে।’
তাহমিনা ব্যবসা শুরুর প্রথম থেকেই ভেবেছেন, দেশের প্রান্তিক অঞ্চলের নিরাপদ খাদ্য উৎপাদকদের সঙ্গে ভোক্তাদের সরাসরি সম্পর্ক তৈরি করবেন। আর তাই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভেজালমুক্ত খাদ্য সংগ্রহ করে তা মানুষের কাছে পৌঁছানোই ছিল মিনার ক্ষেতখামারের মূল লক্ষ্য।
শুরুতে তাহমিনা ব্যবসা শুরু করেন খাঁটি ঘি আর মধু নিয়ে। এর পর যুক্ত হয় রোদে শুকানো দেশি মাছের শুঁটকি, গুঁড়া মসলা, দেশি মুরগি, প্রক্রিয়াজাত দেশি হাঁস, ঘানি ভাঙা সরিষার তেল, টাঙ্গাইলে উৎপাদিত তিন ধরনের চাল (লাল গাঞ্জিয়া, চিকন পাইজাম, সুগন্ধি ক্ষিরষাপদ), দেশি গরুর দুধ, ডালের বড়ি, কিশোরগঞ্জের চ্যাপা শুঁটকি, কালিগঞ্জ-ঝিনাইদহের খেজুর গুড়, রাজশাহীর আম, আতপ চালের গুঁড়া। এ তালিকায় প্রতিনিয়তই তিনি যুক্ত করছেন নতুন নতুন পণ্য।
অর্থনীতির শিক্ষার্থী হিসেবে তাহমিনা স্বপ্ন দেখেন উদ্যোক্তা হয়ে দেশ গঠনে ভূমিকা রাখার। সে স্বপ্নের পথে তিনি অনেকটাই এগিয়েছেন। প্রথম পদক্ষেপটি নেওয়া হয়ে গেছে। এখন তাঁর ইচ্ছা—মিনার ক্ষেতখামারকে অনেক মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়ার। তিনি বিশ্বাস করেন—সকলে মিলেই ভালো থাকতে হয়। তাঁর এই ছোট উদ্যোগের সঙ্গে এরই মধ্যে অনেক মানুষ যুক্ত হয়েছেন। তাঁদের আয়ের কিছু পথ তৈরি হচ্ছে। কিন্তু আরও অসংখ্য মানুষকে তিনি তাঁর স্বপ্নযাত্রার সঙ্গী করতে চান।
তাহমিনা কৃষক পরিবারের সন্তান। এই বৃহৎ পরিবারের কেউ কেউ এখনো কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত। মিনার বাবা এখনো আংশিকভাবে কৃষিনির্ভর। চাচাতো ভাইয়েরা কৃষিকাজ ও নিরাপদ খাদ্য আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। মিনার ক্ষেতখামারের পণ্যাদির একটা বড় অংশও আসে সেখান থেকে।
গতানুগতিক ধারার বাইরে এসে এ ধরনের কাজ করতে কেমন লাগছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমি যেহেতু খুব স্বাধীনচেতা ছিলাম, তাই বরাবরই ভাবতাম নিজে কিছু করব। আর একজন নারী হিসেবে নিজে স্বাধীনভাবে কিছু একটা করার মধ্যে একটা বড় আনন্দ লুকিয়ে আছে। আমার এই কাজ শুরুর পর থেকে অনেকভাবে মানুষের সহযোগিতা পেয়েছি। তেমন কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি এখন পর্যন্ত হইনি। তবে প্রতিটি কাজই খুব চ্যালেঞ্জের। আমি “পাছে লোকে কিছু বলবে” জেনেই কাজ শুরু করেছি। কৃষির সঙ্গে যুক্ত কাজে শিক্ষিত নারীদের অংশগ্রহণ এখনো অনেক কম। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আমার কাছে মনে হয় মানুষের আস্থা অর্জনের জায়গাটা। সেই লক্ষ্যে আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
মিনা ভবিষ্যতে তাঁর প্রতিষ্ঠানকে আরও বৃহৎ পরিসরে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন গ্রামীণ নারী ও পরিবারকে হাঁস-মুরগি, গরু পালনে সম্পৃক্ত করেছেন। ভবিষ্যতে আরও প্রান্তিক পর্যায়ে নারীদের নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা আছে বলেও জানালেন, যাতে তাঁরা আত্মনির্ভরশীল হয়ে নিজেরা সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করতে পারেন। তাহমিনা বিশ্বাস করেন এ দেশের নারীরা নিরাপদ খাদ্য আন্দোলনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
কৃষির প্রতি তাহমিনার এই যে আগ্রহ, তার মূলে রয়েছেন আরেক নারী। তিনি তাঁর মা। বললেন, ‘আমার বাবা স্থানীয় একটি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন; আর মা গৃহিণী। কিন্তু মায়ের কথা আলাদা করে বলতে হয়। আমাদের মা একজন সফল কৃষক। কারণ, আমার মায়ের হাতেই প্রতি বছর ফলে অসংখ্য শাক, সবজি ও ফল। আমরা চার ভাইবোন। বড় বোন চিকিৎসক। ছোট এক ভাই ঢাকায় পরিবেশ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত, যার সহযোগিতা বরাবরই আমার কাজকে এগিয়ে নিতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। আরেক ভাই ওমানের একটি স্কুলে শিক্ষকতায় যুক্ত।’
বিয়ে করেছেন। আছে একটি ছেলে সন্তানও। স্বামী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত; কবিতাও লেখেন। উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে বরাবরই পরিবারের সহযোগিতা পেয়েছেন বলে জানালেন। বললেন, ‘প্রথম সহযোগিতা পরিবার থেকে পেয়েছি। এ ছাড়া আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, পরিচিতজন সবার কাছ থেকেই সহযোগিতা, পরামর্শ, অনুপ্রেরণা পেয়েছি। এখনো পাচ্ছি। এ ছাড়া আমার সকল গ্রাহক, তাঁরাও আমার আরেকটি পরিবার। সবার প্রতি আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা, ভালোবাসা। শুরুতে আমি নিজেও ভাবিনি এতটা সাড়া পাব।’
যারা উদ্যোক্তা হতে চান, তাঁদের প্রতি তাহমিনার একটাই কথা—শুরুটা করতে হবে। সততা আর নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করলে সাফল্য আসবে বলেই আমার বিশ্বাস। বললেন, ‘জীবনের অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আত্মবিশ্বাস শব্দটা জীবন থেকে মুছেই গিয়েছিল প্রায়। কতটুকু কী করতে পেরেছি বা পারছি, তা জানি না। শুধু এটুকু জানি, আমি নিজেকে ফিরে পেয়েছি। এখন মনে হয় আমি পারব, আমাকে পারতেই হবে।’
তাহমিনার এই প্রত্যয় মনে করিয়ে দেয়, এ দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে নারীদের বঞ্চনার কথা। আর এ সঙ্গে সঙ্গে মাথায় আসে একজন নারীর জন্য এই প্রেক্ষাপটে টিকে থাকতে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা কতটা জরুরি। তাহমিনা সেই জরুরি কাজটি করেছেন। যত সময় যাচ্ছে তাঁর পাশে থাকা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এর সঙ্গে বাড়ছে সম্ভাবনাও। তিনি শুধু নিজে নন, পথ দেখাচ্ছেন আরও অনেক নারীকে। তাহমিনারা ছড়িয়ে যাক সারা দেশে, সবখানে।
তাহমিনা আহমেদের ‘মিনার ক্ষেতখামার’ নাম শুনলেই সবার হয়তো মিনা কার্টুনের কথা মনে পড়বে। কিন্তু তা নয়। ‘মিনার ক্ষেতখামার’ একটি উদ্যোগের নাম, যার স্বত্বাধিকারী তাহমিনা।
করোনা অনেকের জীবনের মতো তাহমিনার জীবনেও সংকট হিসেবেই এসেছিল। কিন্তু তাহমিনা হচ্ছেন সেই প্রাণময় ব্যক্তিদের একজন, যিনি সংকটকেই সম্ভাবনায় রূপান্তরিত করেছেন। ‘মিনার ক্ষেতখামার’ কাজ করছে বিভিন্ন অরগানিক খাদ্যপণ্য নিয়ে। এটি নিরাপদ খাদ্য বিপণনের একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম।
কৃষি তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠার অনুষঙ্গ হলেও এই উদ্যোগ গ্রহণের আগে তিনি কখনো এমন কিছু নিয়ে কাজ করার কথা ভাবেনওনি। তবে, একজন সচেতন মানুষ হিসেবে সব সময়ই ভেজাল ও বিষক্রিয়া এবং পরিবেশ দূষণ নিয়ে সজাগ থাকার চেষ্টা করেছেন। কৃষক পরিবারে বেড়ে ওঠা তাহমিনার এই সচেতনতা শেষ পর্যন্ত তাঁকে নিয়ে গেছে এই উদ্যোগের দিকে।
তাহমিনার জন্ম টাঙ্গাইল জেলার ধনবাড়ীতে। বেড়ে উঠেছেন কৃষিনির্ভর একটি যৌথ পরিবারে। যেখানে প্রতিদিন ৫০-৬০ জনের রান্না হতো এক হাঁড়িতে। এসএসসি পাস করেছেন ধনবাড়ী নওয়াব ইনস্টিটিউশন থেকে। কলেজ—ঢাকার বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ। এর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন। পড়াশোনায় বরাবরই ভালো ছিলেন। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে পেয়েছিলেন ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি। এসএসসি পরীক্ষায় তাঁর ফলাফল ছিল নিজ উপজেলায় বেশ আলোচিত।
পেশাজীবনে নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়েছেন। কিন্তু এই করোনাকাল মিনার জীবনকে বলা যায় একেবারে পাল্টে দিয়েছে। একমাত্র সন্তানের জন্য তাঁর প্রতিনিয়ত চিন্তা তাঁকে ভয়াবহ সংকটের মধ্যে ফেলেছিল। তাই করোনাকালেই শুরু করেন ক্ষেতখামার নামে একটি নিরাপদ খাদ্যের অনলাইন বিপণন কার্যক্রম। পরে এর নাম দেওয়া হয় ‘মিনার ক্ষেতখামার।
তাহমিনা আহমেদের কাছ থেকেই শোনা যাক ‘মিনার ক্ষেতখামার’ শুরুর গল্পটা—‘পড়াশোনা শেষে আমি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকে ৫ বছর চাকরি করেছি। গর্ভকালীন জটিলতার কারণে চাকরিটা ছেড়ে দিই। এরই মধ্যে সংসার ও সন্তানের দেখভাল করে কেটে যায় লম্বা সময়। চাকরির সুযোগ ছিল। কিন্তু মন থেকে চাকরির প্রতি অতটা আগ্রহ বোধ করিনি। তাই প্রথমে উদ্যোক্তা হিসেবে ২০১৭ সালে টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি নিয়ে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কাজ শুরু করি। নানা কারণে সেটা বেশি দূর এগোয়নি। এর পর ভাবছিলাম কী করা যায়। কিছু একটা করার তাড়না সব সময় অনুভব করতাম। তার পর এই করোনাকালে নানা সংকটের কারণে একদিন সিদ্ধান্ত নিলাম নিরাপদ খাদ্য নিয়ে কাজ করার। খাবারে ভেজাল জিনিসটা মন থেকে কখনোই মানতে পারিনি। ভেজালমুক্ত খাবার মানুষের কাছে পৌঁছানো সবচেয়ে ভালো উদ্যোগ বলে মনে হয়েছে আমার কাছে।’
তাহমিনা ব্যবসা শুরুর প্রথম থেকেই ভেবেছেন, দেশের প্রান্তিক অঞ্চলের নিরাপদ খাদ্য উৎপাদকদের সঙ্গে ভোক্তাদের সরাসরি সম্পর্ক তৈরি করবেন। আর তাই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভেজালমুক্ত খাদ্য সংগ্রহ করে তা মানুষের কাছে পৌঁছানোই ছিল মিনার ক্ষেতখামারের মূল লক্ষ্য।
শুরুতে তাহমিনা ব্যবসা শুরু করেন খাঁটি ঘি আর মধু নিয়ে। এর পর যুক্ত হয় রোদে শুকানো দেশি মাছের শুঁটকি, গুঁড়া মসলা, দেশি মুরগি, প্রক্রিয়াজাত দেশি হাঁস, ঘানি ভাঙা সরিষার তেল, টাঙ্গাইলে উৎপাদিত তিন ধরনের চাল (লাল গাঞ্জিয়া, চিকন পাইজাম, সুগন্ধি ক্ষিরষাপদ), দেশি গরুর দুধ, ডালের বড়ি, কিশোরগঞ্জের চ্যাপা শুঁটকি, কালিগঞ্জ-ঝিনাইদহের খেজুর গুড়, রাজশাহীর আম, আতপ চালের গুঁড়া। এ তালিকায় প্রতিনিয়তই তিনি যুক্ত করছেন নতুন নতুন পণ্য।
অর্থনীতির শিক্ষার্থী হিসেবে তাহমিনা স্বপ্ন দেখেন উদ্যোক্তা হয়ে দেশ গঠনে ভূমিকা রাখার। সে স্বপ্নের পথে তিনি অনেকটাই এগিয়েছেন। প্রথম পদক্ষেপটি নেওয়া হয়ে গেছে। এখন তাঁর ইচ্ছা—মিনার ক্ষেতখামারকে অনেক মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়ার। তিনি বিশ্বাস করেন—সকলে মিলেই ভালো থাকতে হয়। তাঁর এই ছোট উদ্যোগের সঙ্গে এরই মধ্যে অনেক মানুষ যুক্ত হয়েছেন। তাঁদের আয়ের কিছু পথ তৈরি হচ্ছে। কিন্তু আরও অসংখ্য মানুষকে তিনি তাঁর স্বপ্নযাত্রার সঙ্গী করতে চান।
তাহমিনা কৃষক পরিবারের সন্তান। এই বৃহৎ পরিবারের কেউ কেউ এখনো কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত। মিনার বাবা এখনো আংশিকভাবে কৃষিনির্ভর। চাচাতো ভাইয়েরা কৃষিকাজ ও নিরাপদ খাদ্য আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। মিনার ক্ষেতখামারের পণ্যাদির একটা বড় অংশও আসে সেখান থেকে।
গতানুগতিক ধারার বাইরে এসে এ ধরনের কাজ করতে কেমন লাগছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে আমি যেহেতু খুব স্বাধীনচেতা ছিলাম, তাই বরাবরই ভাবতাম নিজে কিছু করব। আর একজন নারী হিসেবে নিজে স্বাধীনভাবে কিছু একটা করার মধ্যে একটা বড় আনন্দ লুকিয়ে আছে। আমার এই কাজ শুরুর পর থেকে অনেকভাবে মানুষের সহযোগিতা পেয়েছি। তেমন কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি এখন পর্যন্ত হইনি। তবে প্রতিটি কাজই খুব চ্যালেঞ্জের। আমি “পাছে লোকে কিছু বলবে” জেনেই কাজ শুরু করেছি। কৃষির সঙ্গে যুক্ত কাজে শিক্ষিত নারীদের অংশগ্রহণ এখনো অনেক কম। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আমার কাছে মনে হয় মানুষের আস্থা অর্জনের জায়গাটা। সেই লক্ষ্যে আমি আমার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
মিনা ভবিষ্যতে তাঁর প্রতিষ্ঠানকে আরও বৃহৎ পরিসরে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন গ্রামীণ নারী ও পরিবারকে হাঁস-মুরগি, গরু পালনে সম্পৃক্ত করেছেন। ভবিষ্যতে আরও প্রান্তিক পর্যায়ে নারীদের নিয়ে কাজ করার পরিকল্পনা আছে বলেও জানালেন, যাতে তাঁরা আত্মনির্ভরশীল হয়ে নিজেরা সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করতে পারেন। তাহমিনা বিশ্বাস করেন এ দেশের নারীরা নিরাপদ খাদ্য আন্দোলনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে।
কৃষির প্রতি তাহমিনার এই যে আগ্রহ, তার মূলে রয়েছেন আরেক নারী। তিনি তাঁর মা। বললেন, ‘আমার বাবা স্থানীয় একটি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন; আর মা গৃহিণী। কিন্তু মায়ের কথা আলাদা করে বলতে হয়। আমাদের মা একজন সফল কৃষক। কারণ, আমার মায়ের হাতেই প্রতি বছর ফলে অসংখ্য শাক, সবজি ও ফল। আমরা চার ভাইবোন। বড় বোন চিকিৎসক। ছোট এক ভাই ঢাকায় পরিবেশ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত, যার সহযোগিতা বরাবরই আমার কাজকে এগিয়ে নিতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। আরেক ভাই ওমানের একটি স্কুলে শিক্ষকতায় যুক্ত।’
বিয়ে করেছেন। আছে একটি ছেলে সন্তানও। স্বামী একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত; কবিতাও লেখেন। উদ্যোক্তা হওয়ার পেছনে বরাবরই পরিবারের সহযোগিতা পেয়েছেন বলে জানালেন। বললেন, ‘প্রথম সহযোগিতা পরিবার থেকে পেয়েছি। এ ছাড়া আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, পরিচিতজন সবার কাছ থেকেই সহযোগিতা, পরামর্শ, অনুপ্রেরণা পেয়েছি। এখনো পাচ্ছি। এ ছাড়া আমার সকল গ্রাহক, তাঁরাও আমার আরেকটি পরিবার। সবার প্রতি আমার অশেষ কৃতজ্ঞতা, ভালোবাসা। শুরুতে আমি নিজেও ভাবিনি এতটা সাড়া পাব।’
যারা উদ্যোক্তা হতে চান, তাঁদের প্রতি তাহমিনার একটাই কথা—শুরুটা করতে হবে। সততা আর নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করলে সাফল্য আসবে বলেই আমার বিশ্বাস। বললেন, ‘জীবনের অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আত্মবিশ্বাস শব্দটা জীবন থেকে মুছেই গিয়েছিল প্রায়। কতটুকু কী করতে পেরেছি বা পারছি, তা জানি না। শুধু এটুকু জানি, আমি নিজেকে ফিরে পেয়েছি। এখন মনে হয় আমি পারব, আমাকে পারতেই হবে।’
তাহমিনার এই প্রত্যয় মনে করিয়ে দেয়, এ দেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটে নারীদের বঞ্চনার কথা। আর এ সঙ্গে সঙ্গে মাথায় আসে একজন নারীর জন্য এই প্রেক্ষাপটে টিকে থাকতে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা কতটা জরুরি। তাহমিনা সেই জরুরি কাজটি করেছেন। যত সময় যাচ্ছে তাঁর পাশে থাকা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এর সঙ্গে বাড়ছে সম্ভাবনাও। তিনি শুধু নিজে নন, পথ দেখাচ্ছেন আরও অনেক নারীকে। তাহমিনারা ছড়িয়ে যাক সারা দেশে, সবখানে।
২ বছর পূর্ণ করে বাংলাদেশে তৃতীয় বছরে পা দিল তাইওয়ানভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ‘কই তে’। এ উপলক্ষে প্রতিষ্ঠানটির গুলশান আউটলেটে এক বিশেষ আয়োজন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন ‘কই তে’র সিইও এবং প্রতিষ্ঠাতা কোয়ে মা, চিফ বিজনেস অফিসার মি লাউ ইয়ং কিয়ং, কই তে বাংলাদেশের এবং ট্যাড গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক...
২১ ঘণ্টা আগেইআইবি ও ফ্রাঙ্কফুর্ট স্কুল অব ফাইন্যান্স অ্যান্ড ম্যানেজমেন্টের সহযোগিতায় সার্কুলার ইকোনমি নিয়ে তিন দিনব্যাপী বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করেছে ব্র্যাক ব্যাংক। ঢাকায় ব্র্যাক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
২১ ঘণ্টা আগেদেশজুড়ে উদীয়মান উদ্যোক্তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে নেওয়া ফ্ল্যাগশিপ কর্মসূচি জিপি অ্যাক্সিলারেটরের ‘জেলায় জেলায় স্মার্ট উদ্যোক্তার’ সাফল্য উদ্যাপন করেছে গ্রামীণফোন। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর একটি হোটেলে গালা নাইট আয়োজনের মাধ্যমে অনুপ্রেরণামূলক এই উদ্যোগ উদ্যাপন করে
২১ ঘণ্টা আগেঈদ উৎসবকে আরও জমজমাট করে তুলতে চলে এসেছে শীর্ষ ফুটওয়্যার ব্র্যান্ড বাটার নতুন কালেকশন ‘স্টারলাইট’। অনন্য এই কালেকশন আপনার বাহ্যিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি ঈদের আনন্দকেও বহুগুণ বাড়িয়ে তুলবে। আপনার রুচি ক্ল্যাসিক বা আধুনিক—যেমনই হোক না কেন, বাটার নতুন এই কালেকশন আপনার প্রতিটি মুহূর্তকে আরও বেশি আনন্দদায়ক
১ দিন আগে