মন্টি বৈষ্ণব
‘কাজটা যখন শুরু করি তখন উদ্যোক্তা শব্দটার সঙ্গে অপরিচিত ছিলাম।’ এভাবেই নিজের উদ্যোক্তা জীবন শুরুর গল্পটা বললেন সোনিয়া মান্নান। অনলাইনভিত্তিক শপিং প্ল্যাটফর্ম Monipuri Handicrafts-এর যাত্রা হয়েছিল ২০১২ সালে। সোনিয়া যখন দুরুদুরু বুকে এই যাত্রা করেন, তখনো তিনি আসলে নিজের কাজের অভিমুখটা বুঝতে পারেননি। শুধু বুঝেছিলেন নিজে কিছু একটা করতে চান।
নারী উদ্যোক্তা সোনিয়া। জীবনে একটা পর্যায়ে এসে তিনি নিজের একটা আলাদা পরিচয় তৈরি করতে চান। অনেক চিন্তার পর একপর্যায়ে অনলাইনভিত্তিক শপিং প্ল্যাটফর্ম ‘Monipuri Handicrafts’-এর যাত্রা শুরু করেন। সোনিয়া মূলত মণিপুরী হ্যান্ডলুম শাড়ি, মণিপুরী হ্যান্ডউইভেন লেডিস শাল, ওড়না নিয়েই কাজ করেন।
সোনিয়ার জন্ম ও বেড়ে ওঠা মৌলভীবাজারেই। এইচএসসি পাস করেন মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ থেকে। সিলেটের এমসি কলেজে উদ্ভিদ বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর পড়ার পর হঠাৎ করেই তাঁর সুযোগ আসে নরওয়ে সরকারের পিসকোর হিসেবে কাজ করার। এর জন্য তিনি চলে যান ফিলিপাইনে। সেখানে তেলাপিয়া মাছের ওপর দুটি ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন। দেশে এসে আমেরিকান-বাংলাদেশ জয়েন্ট ভেঞ্চার প্রতিষ্ঠানের চাকরিতে যুক্ত হন। পর্যায়ক্রমে সেখানে প্রধান হিসাব কর্মকর্তা পদে উন্নীত হন। কিন্তু বিয়ের পর পারিবারিক কারণে চাকরিটা ছেড়ে দেন। এরপরই ফিরে আসে সেই নিজে কিছু করার স্বপ্নটি।
সোনিয়া মান্নান বলেন, ‘নিজে কিছু একটা করতে চাই—এমন একটা ভাবনা থেকেই আমার ব্যবসার যাত্রা শুরু। নিজের এলাকার একটি অনন্য পণ্য নিয়ে ব্যবসা করার চিন্তা থেকেই মণিপুরী পণ্যকে বেছে নেওয়া। এর রয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্য ও ইতিহাস। তা ছাড়া সে সময় মণিপুরী পণ্যের দেশজুড়ে চাহিদা থাকলেও তা সহজলভ্য ছিল না। তবে, কাজটা যখন শুরু করি, তখন উদ্যোক্তা শব্দটির সঙ্গে অপরিচিত ছিলাম। একপর্যায়ে শাড়ি বুনন প্রক্রিয়া শিখি। ডিজাইন করা, মোটিফ করাও শিখলাম। অনলাইনে বিভিন্ন কোর্সও করেছি। পাশাপাশি বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) পরিচালিত উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্পে (ইএসডিপি) প্রশিক্ষণ নিই।’
২০১২ সালের জুলাই মাসে একদিন সাহস করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পেজ তৈরি করেন সোনিয়া মান্নান। সেই শুরু। বললেন, ‘সে সময় এমন একটা নাম খুঁজি, যা আমার কাজের প্রতিনিধিত্ব করবে। এ কথা, সে কথা ভেবে শেষ পর্যন্ত নাম ঠিক করলাম ‘Monipuri Handicrafts’। প্রথমে নিজের মণিপুরী শাড়ির ছবি তুলে পেজে আপলোড দিতাম। সেখানে এক-দুটি লাইক আসতে থাকে। একপর্যায়ে ক্রেতারা মণিপুরী শাড়ির জন্য অর্ডার করেন। আমি পুরো মণিপুরী পাড়া ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন কম্বিনেশনের শাড়ি কিনে ক্রেতাদের পাঠাতে থাকি। তখন আসলে আমার লাভ কিছুই থাকত না। কারণ, প্রোডাক্ট সোর্সিং করতেই বেশি খরচ পড়ত। কিন্তু একটা অর্ডারের কাজ শেষ করতে পারলে অন্যরকম এক ভালো লাগা কাজ করত। এর পর আমি ভালো কোয়ালিটি, পছন্দসই ডিজাইনের শাড়ি খুঁজে খুঁজে প্রোডাক্ট স্টক করা শুরু করি।’
পণ্যের গুণগত মান, আর ক্রেতাদের পছন্দকেই বেশি অগ্রাধিকার দেন সোনিয়া। তিনি মাত্র দেড় হাজার টাকা পুঁজিতে কাজ শুরু করেন। মজার বিষয় হলো তাঁর বিক্রি করা প্রথম শাড়ির দামও ছিল দেড় হাজার টাকা। অর্থাৎ, মুনাফা শূন্য। এমন পরিস্থিতিতে নিজের আত্মবিশ্বাস ধরে রাখাটা অনেক কঠিন। সেই কঠিন কাজটিই করেছেন সোনিয়া। ফলও পেয়েছেন। বর্তমানে সোনিয়ার কাছে প্রায় ২ লাখ টাকা মূল্যমানের কাপড়ের মজুত থাকে সব সময়। এখন প্রতি মাসে কমবেশি ১৫ হাজার টাকার মুনাফা আসে। তাঁর প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ১৪ জন শ্রমিক কাজ করছেন।
দেশের অন্য সব প্রতিষ্ঠানের মতো করোনাকালে কঠিন পরিস্থিতি পার হতে হয়েছে সোনিয়াকেও। প্রায় তিন মাস বন্ধ ছিল ‘Monipuri Handicrafts’-এর কাজ। অনেক শ্রমিকের কর্মসংস্থানের পথ বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সোনিয়া বসে থাকেননি। শ্রমিকদের কথা চিন্তা করেই কুরিয়ার সার্ভিস চালুর সঙ্গে সঙ্গেই আবার সচল করেন প্রতিষ্ঠানকে। এই সময় তিনি পাইকারিভাবে পণ্য বিক্রি করেছেন।
এখন আবার কিছুটা স্থিতিশীলতা এসেছে। কিন্তু শুরু থেকে এখন পর্যন্ত নানা বাধা-বিপত্তি তাঁর সঙ্গী হয়ে গেছে বলা যায়। নারী উদ্যোক্তা হিসেবে চলার পথে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছেন। মণিপুরী তাঁতি, শাড়ির কম্বিনেশন, উৎপাদন, বাজারে চাহিদা, পণ্যের সহজলভ্যতা—প্রতিটি ক্ষেত্রেই নানা বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। কাজ করতে গিয়ে যেমনটা ভেবেছিলেন, বাস্তব কাজের পরিস্থিতি তেমনটা পাননি। শুনতে হয়েছে অনেক কটু কথা। সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল মণিপুরী সমাজ। তাদের ভাষা ভিন্ন। তাদের সঙ্গে সোনিয়া যেভাবে কাজ করতে চাইতেন, সেটা ঠিকঠাক পারতেন না। তা ছাড়া তাদের জীবনমান অনেক অনগ্রসর। এখনো বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুৎ নেই। নেই তাদের পর্যাপ্ত কাঁচামালের সরবরাহ।
ছিল পারিবারিক নানা সংকটও। বিয়ের ১০ বছর পর বিচ্ছেদ হয় সোনিয়ার। অনেক ভেঙে পড়েন। ভাবেন, জীবনসংগ্রামের লড়াইয়ে হেরে যাবেন কিনা। কিন্তু আবার উঠে দাঁড়িয়েছেন। এই কঠিন সময়ে পরিবার ও বন্ধুদের সমর্থন পেয়েছেন। বললেন, ‘যে মণিপুরী দাদা, বৌদিদের সঙ্গে কাজ করতাম, তাঁরাও আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। বর্তমানে তিনি নিজের যোগ্যতা আর শ্রম দিয়েই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চান।
হাল না ছাড়ার মানসিকতাকেই উদ্যোক্তার সবচেয়ে বড় গুণ বলে মনে করেন সোনিয়া। এ দেশের নারী উদ্যোক্তাদের জন্য তাঁর বক্তব্য—‘কখনোই হাল ছাড়ব না—এমন একটি গুণ একজন উদ্যোক্তার থাকতে হবে। সফল উদ্যোক্তারা লক্ষ্যে অর্জনকারী। ব্যবসায় ব্যর্থতার প্রধান কারণ হলো খুব তাড়াতাড়ি হাল ছেড়ে দেওয়া। যদি আপনি অধ্যবসায়ী না হন, অনুসন্ধান, গবেষণা না করেন, তাহলে আপনি ব্যবসায় সফল নাও হতে পারেন। তবে আপনি যদি অবিচল থাকেন। তাহলে আপনার সফল হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। উদ্যোক্তার ক্ষেত্রে, অধ্যবসায় এবং দৃঢ়তা, পণ্যের গুণগত মান ধরে রাখা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
নিজের পরিবার সম্পর্কে জানতে চাইলে সোনিয়া বলেন, ‘অনলাইনে ব্যবসা করব—এই কথা পরিবারের কাউকে শুরুতে বোঝাতে পারিনি। কিন্তু এখন বাবা, মা, ভাই, বোনসহ আত্মীয়রা আমাকে সহযোগিতা করেন। আমরা দুই বোন, দুই ভাই। বর্তমানে আমি বাবা-মায়ের সঙ্গে মৌলভীবাজার শহরেই থাকি। বাবা ব্যবসায়ী; কিন্তু বর্তমানে অবসরে আছেন। মা গৃহিণী। বোন ব্যাংককে জাতিসংঘে চাকরি করে। এর পরের ভাই একটা এনজিও তে আর ছোট ভাই একটা সফটওয়্যার ফার্মে আছে।’
যে স্বপ্নের পথে হাঁটছেন, স্বপ্নের সেই জায়গা থেকে পিছপা হতে চান না সোনিয়া। এখন তাঁর পরবর্তী লক্ষ্য একটা কারখানা তৈরি করা, যেখানে তাঁর নিজের মতো করে নতুন কিছু তৈরি করার সুযোগ থাকবে। ভবিষ্যতে কী করতে চান জানতে চাইলে বললেন, ‘আমি ভালো ব্যবসায়ী হতে চাই। আমার একটা ব্র্যান্ড হবে। এই শিল্পের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে আমার মনে হয়েছে, আমার সফল ব্যবসায়ী হওয়ার চেয়ে এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পটা টিকিয়ে রাখা অনেক বেশি দরকারি। নিজের পাশাপাশি অন্যদেরও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা যদি করতে পারি, আর যদি মণিপুরী পণ্যের ঐতিহ্যের একটা দীর্ঘমেয়াদি জায়গা তৈরি করতে পারি—সেটাই হবে আমার আসল সফলতার জায়গা। এর মাধ্যমে মণিপুরী পণ্যের ঐতিহ্য দেশব্যাপী এবং দেশের বাইরেও ছড়িয়ে দিতে চাই।’
‘কাজটা যখন শুরু করি তখন উদ্যোক্তা শব্দটার সঙ্গে অপরিচিত ছিলাম।’ এভাবেই নিজের উদ্যোক্তা জীবন শুরুর গল্পটা বললেন সোনিয়া মান্নান। অনলাইনভিত্তিক শপিং প্ল্যাটফর্ম Monipuri Handicrafts-এর যাত্রা হয়েছিল ২০১২ সালে। সোনিয়া যখন দুরুদুরু বুকে এই যাত্রা করেন, তখনো তিনি আসলে নিজের কাজের অভিমুখটা বুঝতে পারেননি। শুধু বুঝেছিলেন নিজে কিছু একটা করতে চান।
নারী উদ্যোক্তা সোনিয়া। জীবনে একটা পর্যায়ে এসে তিনি নিজের একটা আলাদা পরিচয় তৈরি করতে চান। অনেক চিন্তার পর একপর্যায়ে অনলাইনভিত্তিক শপিং প্ল্যাটফর্ম ‘Monipuri Handicrafts’-এর যাত্রা শুরু করেন। সোনিয়া মূলত মণিপুরী হ্যান্ডলুম শাড়ি, মণিপুরী হ্যান্ডউইভেন লেডিস শাল, ওড়না নিয়েই কাজ করেন।
সোনিয়ার জন্ম ও বেড়ে ওঠা মৌলভীবাজারেই। এইচএসসি পাস করেন মৌলভীবাজার সরকারি কলেজ থেকে। সিলেটের এমসি কলেজে উদ্ভিদ বিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর পড়ার পর হঠাৎ করেই তাঁর সুযোগ আসে নরওয়ে সরকারের পিসকোর হিসেবে কাজ করার। এর জন্য তিনি চলে যান ফিলিপাইনে। সেখানে তেলাপিয়া মাছের ওপর দুটি ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন। দেশে এসে আমেরিকান-বাংলাদেশ জয়েন্ট ভেঞ্চার প্রতিষ্ঠানের চাকরিতে যুক্ত হন। পর্যায়ক্রমে সেখানে প্রধান হিসাব কর্মকর্তা পদে উন্নীত হন। কিন্তু বিয়ের পর পারিবারিক কারণে চাকরিটা ছেড়ে দেন। এরপরই ফিরে আসে সেই নিজে কিছু করার স্বপ্নটি।
সোনিয়া মান্নান বলেন, ‘নিজে কিছু একটা করতে চাই—এমন একটা ভাবনা থেকেই আমার ব্যবসার যাত্রা শুরু। নিজের এলাকার একটি অনন্য পণ্য নিয়ে ব্যবসা করার চিন্তা থেকেই মণিপুরী পণ্যকে বেছে নেওয়া। এর রয়েছে নিজস্ব ঐতিহ্য ও ইতিহাস। তা ছাড়া সে সময় মণিপুরী পণ্যের দেশজুড়ে চাহিদা থাকলেও তা সহজলভ্য ছিল না। তবে, কাজটা যখন শুরু করি, তখন উদ্যোক্তা শব্দটির সঙ্গে অপরিচিত ছিলাম। একপর্যায়ে শাড়ি বুনন প্রক্রিয়া শিখি। ডিজাইন করা, মোটিফ করাও শিখলাম। অনলাইনে বিভিন্ন কোর্সও করেছি। পাশাপাশি বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) পরিচালিত উদ্যোক্তা সৃষ্টি ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রকল্পে (ইএসডিপি) প্রশিক্ষণ নিই।’
২০১২ সালের জুলাই মাসে একদিন সাহস করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পেজ তৈরি করেন সোনিয়া মান্নান। সেই শুরু। বললেন, ‘সে সময় এমন একটা নাম খুঁজি, যা আমার কাজের প্রতিনিধিত্ব করবে। এ কথা, সে কথা ভেবে শেষ পর্যন্ত নাম ঠিক করলাম ‘Monipuri Handicrafts’। প্রথমে নিজের মণিপুরী শাড়ির ছবি তুলে পেজে আপলোড দিতাম। সেখানে এক-দুটি লাইক আসতে থাকে। একপর্যায়ে ক্রেতারা মণিপুরী শাড়ির জন্য অর্ডার করেন। আমি পুরো মণিপুরী পাড়া ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন কম্বিনেশনের শাড়ি কিনে ক্রেতাদের পাঠাতে থাকি। তখন আসলে আমার লাভ কিছুই থাকত না। কারণ, প্রোডাক্ট সোর্সিং করতেই বেশি খরচ পড়ত। কিন্তু একটা অর্ডারের কাজ শেষ করতে পারলে অন্যরকম এক ভালো লাগা কাজ করত। এর পর আমি ভালো কোয়ালিটি, পছন্দসই ডিজাইনের শাড়ি খুঁজে খুঁজে প্রোডাক্ট স্টক করা শুরু করি।’
পণ্যের গুণগত মান, আর ক্রেতাদের পছন্দকেই বেশি অগ্রাধিকার দেন সোনিয়া। তিনি মাত্র দেড় হাজার টাকা পুঁজিতে কাজ শুরু করেন। মজার বিষয় হলো তাঁর বিক্রি করা প্রথম শাড়ির দামও ছিল দেড় হাজার টাকা। অর্থাৎ, মুনাফা শূন্য। এমন পরিস্থিতিতে নিজের আত্মবিশ্বাস ধরে রাখাটা অনেক কঠিন। সেই কঠিন কাজটিই করেছেন সোনিয়া। ফলও পেয়েছেন। বর্তমানে সোনিয়ার কাছে প্রায় ২ লাখ টাকা মূল্যমানের কাপড়ের মজুত থাকে সব সময়। এখন প্রতি মাসে কমবেশি ১৫ হাজার টাকার মুনাফা আসে। তাঁর প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ১৪ জন শ্রমিক কাজ করছেন।
দেশের অন্য সব প্রতিষ্ঠানের মতো করোনাকালে কঠিন পরিস্থিতি পার হতে হয়েছে সোনিয়াকেও। প্রায় তিন মাস বন্ধ ছিল ‘Monipuri Handicrafts’-এর কাজ। অনেক শ্রমিকের কর্মসংস্থানের পথ বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সোনিয়া বসে থাকেননি। শ্রমিকদের কথা চিন্তা করেই কুরিয়ার সার্ভিস চালুর সঙ্গে সঙ্গেই আবার সচল করেন প্রতিষ্ঠানকে। এই সময় তিনি পাইকারিভাবে পণ্য বিক্রি করেছেন।
এখন আবার কিছুটা স্থিতিশীলতা এসেছে। কিন্তু শুরু থেকে এখন পর্যন্ত নানা বাধা-বিপত্তি তাঁর সঙ্গী হয়ে গেছে বলা যায়। নারী উদ্যোক্তা হিসেবে চলার পথে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হয়েছেন। মণিপুরী তাঁতি, শাড়ির কম্বিনেশন, উৎপাদন, বাজারে চাহিদা, পণ্যের সহজলভ্যতা—প্রতিটি ক্ষেত্রেই নানা বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। কাজ করতে গিয়ে যেমনটা ভেবেছিলেন, বাস্তব কাজের পরিস্থিতি তেমনটা পাননি। শুনতে হয়েছে অনেক কটু কথা। সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল মণিপুরী সমাজ। তাদের ভাষা ভিন্ন। তাদের সঙ্গে সোনিয়া যেভাবে কাজ করতে চাইতেন, সেটা ঠিকঠাক পারতেন না। তা ছাড়া তাদের জীবনমান অনেক অনগ্রসর। এখনো বিভিন্ন জায়গায় বিদ্যুৎ নেই। নেই তাদের পর্যাপ্ত কাঁচামালের সরবরাহ।
ছিল পারিবারিক নানা সংকটও। বিয়ের ১০ বছর পর বিচ্ছেদ হয় সোনিয়ার। অনেক ভেঙে পড়েন। ভাবেন, জীবনসংগ্রামের লড়াইয়ে হেরে যাবেন কিনা। কিন্তু আবার উঠে দাঁড়িয়েছেন। এই কঠিন সময়ে পরিবার ও বন্ধুদের সমর্থন পেয়েছেন। বললেন, ‘যে মণিপুরী দাদা, বৌদিদের সঙ্গে কাজ করতাম, তাঁরাও আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন। বর্তমানে তিনি নিজের যোগ্যতা আর শ্রম দিয়েই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চান।
হাল না ছাড়ার মানসিকতাকেই উদ্যোক্তার সবচেয়ে বড় গুণ বলে মনে করেন সোনিয়া। এ দেশের নারী উদ্যোক্তাদের জন্য তাঁর বক্তব্য—‘কখনোই হাল ছাড়ব না—এমন একটি গুণ একজন উদ্যোক্তার থাকতে হবে। সফল উদ্যোক্তারা লক্ষ্যে অর্জনকারী। ব্যবসায় ব্যর্থতার প্রধান কারণ হলো খুব তাড়াতাড়ি হাল ছেড়ে দেওয়া। যদি আপনি অধ্যবসায়ী না হন, অনুসন্ধান, গবেষণা না করেন, তাহলে আপনি ব্যবসায় সফল নাও হতে পারেন। তবে আপনি যদি অবিচল থাকেন। তাহলে আপনার সফল হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। উদ্যোক্তার ক্ষেত্রে, অধ্যবসায় এবং দৃঢ়তা, পণ্যের গুণগত মান ধরে রাখা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
নিজের পরিবার সম্পর্কে জানতে চাইলে সোনিয়া বলেন, ‘অনলাইনে ব্যবসা করব—এই কথা পরিবারের কাউকে শুরুতে বোঝাতে পারিনি। কিন্তু এখন বাবা, মা, ভাই, বোনসহ আত্মীয়রা আমাকে সহযোগিতা করেন। আমরা দুই বোন, দুই ভাই। বর্তমানে আমি বাবা-মায়ের সঙ্গে মৌলভীবাজার শহরেই থাকি। বাবা ব্যবসায়ী; কিন্তু বর্তমানে অবসরে আছেন। মা গৃহিণী। বোন ব্যাংককে জাতিসংঘে চাকরি করে। এর পরের ভাই একটা এনজিও তে আর ছোট ভাই একটা সফটওয়্যার ফার্মে আছে।’
যে স্বপ্নের পথে হাঁটছেন, স্বপ্নের সেই জায়গা থেকে পিছপা হতে চান না সোনিয়া। এখন তাঁর পরবর্তী লক্ষ্য একটা কারখানা তৈরি করা, যেখানে তাঁর নিজের মতো করে নতুন কিছু তৈরি করার সুযোগ থাকবে। ভবিষ্যতে কী করতে চান জানতে চাইলে বললেন, ‘আমি ভালো ব্যবসায়ী হতে চাই। আমার একটা ব্র্যান্ড হবে। এই শিল্পের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে আমার মনে হয়েছে, আমার সফল ব্যবসায়ী হওয়ার চেয়ে এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পটা টিকিয়ে রাখা অনেক বেশি দরকারি। নিজের পাশাপাশি অন্যদেরও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা যদি করতে পারি, আর যদি মণিপুরী পণ্যের ঐতিহ্যের একটা দীর্ঘমেয়াদি জায়গা তৈরি করতে পারি—সেটাই হবে আমার আসল সফলতার জায়গা। এর মাধ্যমে মণিপুরী পণ্যের ঐতিহ্য দেশব্যাপী এবং দেশের বাইরেও ছড়িয়ে দিতে চাই।’
অর্থনীতিবিদ ড. সেলিম রায়হান বলেছেন, এস আলম গ্রুপের কর্ণধার মোহাম্মদ সাইফুল আলমের আন্তর্জাতিক সালিসে যাওয়ার হুমকিতে ভয় পাওয়ার কারণ নেই। দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে শ্বেতপত্র প্রকাশের মাধ্যমে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
৫ ঘণ্টা আগেবেশ কিছু দিন ধরেই কেনিয়াতে ছাত্র–জনতা আদানির সঙ্গে সরকারের ‘গোপন’ চুক্তির প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে। পরে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করে। অবশেষে আদানি শিল্পগোষ্ঠীর সঙ্গে ২৫০ কোটি মার্কিন ডলারের বেশি অর্থমূল্যের দুটি চুক্তি বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছে আফ্রিকার দেশ কেনিয়া।
১১ ঘণ্টা আগেঘুষের নোটে সাগর আদানি ঘুষের পরিমাণ, কাকে ঘুষ দেওয়া হয়েছে এবং কত মেগাওয়াট বিদ্যুতের বিনিময়ে এটি হয়েছে—তার বিবরণ উল্লেখ করেছেন। তিনি মেগাওয়াট প্রতি ঘুষের হারও উল্লেখ করেছেন। ২০২০ সালে একটি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে সাগর আদানি বলেন, ‘হ্যাঁ...কিন্তু বিষয়টা দৃশ্যমান হওয়ার ঠেকানো বেশ কঠিন।’
১১ ঘণ্টা আগেগৌতম আদানি, ভারতীয় কনগ্লোমারেট আদানি গ্রুপের চেয়ারম্যান এবং বিশ্বের অন্যতম ধনী ব্যক্তিদের একজন, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে বহু-বিলিয়ন ডলারের জালিয়াতি এবং ঘুষ কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, ভারত সরকারের কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়ার মাধ্যমে দেশের বৃহত্তম সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের চুক্তি বাগিয়েছে
১২ ঘণ্টা আগে