সাক্ষাৎকার

বিসিএস ছেড়ে করপোরেটে সফল

Thumbnail Image

সফট স্কিল ট্রেনিংবিষয়ক প্রতিষ্ঠান শার্পনারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নজর-ই-জ্বিলানী তিনটি ভিন্ন ভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেছেন। তিনি করপোরেট ট্রেইনার হিসেবেও বেশ পরিচিত। সম্প্রতি তিনি আজকের পত্রিকাকে তাঁর করপোরেট জীবনের অভিজ্ঞতার গল্প শুনিয়েছেন। সে গল্প তুলে ধরেছেন মো. খশরু আহসান।

প্রশ্ন: আপনার ক্যারিয়ারের শুরুর গল্পটা কেমন ছিল?

উত্তর: আমি পড়ালেখা শেষ করে ১৯৮৫ সালে বিসিএসে কোয়ালিফাই করি, তবে জয়েন করিনি। বিসিএস ছেড়ে মাল্টিন্যাশনাল করপোরেশন ফাইজারে যোগ দিয়েছিলাম। যেটা ছিল বাধাহীন ক্যারিয়ার গড়ার একটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। দীর্ঘ ২৫ বছর আমি ফার্মাসিউটিক্যালস কোম্পানিতে কাজ করেছি। চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে যেহেতু আমার ভালো লাগে, সেহেতু এরপর জয়েন করলাম অটোমোবাইল খাত রানার মটরসের জিএম (মার্কেটিং অ্যান্ড সেলসে) হিসেবে। তিন বছর পর প্রমোশন পেয়ে প্রতিষ্ঠানটির মার্কেটিং অ্যান্ড সেলসের ডিরেক্টর হই।

পেশাগত জীবনে কোম্পানি চেঞ্জ করাটা বেশ স্বাভাবিক এখন। কিন্তু পুরো ইন্ডাস্ট্রি থেকে ডাইভার্ট হয়ে যাওয়া খানিকটা চ্যালেঞ্জিং। আমি ইচ্ছে করেই সেটি করেছিলাম। কারণ, আমি দেখতে চেয়েছিলাম, আমি পারি কি না। তারপর জয়েন করলাম আকিজ ফুড অ্যান্ড ব্রেভারেজের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর হিসেবে। ক্যারিয়ারে এই তিন ধরনের ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেছি। আমার আজীবনেরই ইচ্ছে ছিল, নিজের একটা কোম্পানি প্রতিষ্ঠান করা। এখন সেটি করতে সক্ষম হয়েছি, নাম শার্পনার। ২০১৮ সাল থেকে শার্পনার নিয়ে আছি।

প্রশ্ন: সেলসে আসার জন্য কী ধরনের প্রস্তুতি নিতে হয়?

উত্তর: তার আগে বলি, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে বেশি সুযোগ হলো সেলসে। কারণ এটি এমন একটি জায়গা, যেখানে ১২ মাসের ফলনের মতো। মানে ১২ মাসই চাকরি পাওয়া যায়। সেলসে ভালো করলে তাকে কেউ আটকে রাখতে পারে না। সে সফল হবেই। অতএব বাংলাদেশ এবং সারা পৃথিবীতেই ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্টের সবচেয়ে বেশি সুযোগ হলো সেলসে। এমনকি সেটি নন টেকনিক্যাল মানুষের জন্যও। যেকোনো বিষয় থেকে পড়েও সেলসে কাজের সুযোগ পাওয়া যায়। একবার এই অবস্থানে ভালো করতে পারলে ‘পয়সা’ এবং ‘পজিশন’—দুটির সর্বোচ্চ স্থানে যাওয়া সম্ভব।

তাহলে প্রস্তুতিটা কী? প্রস্তুতির প্রথম ধাপ হলো, নিজের ইগোকে গিলে খেয়ে ফেলতে হবে। সেলসে কাস্টমারের কাছে যেতে হবে এবং প্রচুর ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হবে। সততা থাকতেই হবে। আমার এক সিনিয়র বলতেন, হোয়েন আ সেলসম্যান লাইজ, হি ডাইজ। মিথ্যে বললেই সে মারা যাবে। যে ইন্ডাস্ট্রিতে সে থাকবে, সে ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে জানতে হবে। দেশীয় অর্থনীতি, বৈশ্বিক অর্থনীতি সম্পর্কে তাকে জানতে হবে এবং তাকে সেলসের পাশাপাশি ধীরে ধীরে ফিন্যান্স, অ্যাডমিন, অ্যাকাউন্টস সম্পর্কেও জ্ঞানার্জন করতে হবে।

প্রশ্ন: আপনার লেখা বই সম্পর্কে বলুন।

উত্তর: বই দুটোর পেছনে গল্প একটাই। করোনার পূর্বে আমাদের এখানে একটা আলোচনা ছিল ‘ফোর্থ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভল্যুশন’। আরেকটা হলো, আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা ক্যারিয়ারে ওপরের দিকে যেতে পারছে না। এই দুটো আইডিয়াকে মাথায় রেখে আমি প্রথম লিখলাম ‘এক্সিকিউটিভ ট্যু এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর’। সোজা কথা যেটা আমার ডেজিগনেশন। কারণ আমার নিজের প্রফেশনাল লাইফ শুরু এক্সিকিউটিভ হিসেবে। শেষ হলো, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর দিয়ে। আপনাদের কথায় আমি সফল। অতএব সফল হতে গেলে কী প্রয়োজন হয়, সেটিই এখানে লেখা আছে।

প্রথম বইতে ১২ মাসের ১২টি নাম দিয়ে টপিক করা হয়েছে। আবার জানুয়ারি মাসের ৩০ দিনের জন্য ৩০টি লেখা আছে। ফেব্রুয়ারি মাসের ২৮ দিন হলে, ২৮টি লেখা আছে একই বিষয়ের ওপরে। যেমন: গোল সেটিং, হার্ড ওয়ার্ক ইত্যাদি। ১২টি ফুল দিয়ে মালাটা গাঁথা। বইটি উপন্যাসের না। প্রতিদিনের অংশ প্রতিদিন পড়ে উপলব্ধি করতে হবে। বইটিতে অনেক কিছুর মিশ্রণ যেমন: ইতিহাস, ধর্ম, ভূগোল, সাহিত্য—সবকিছু মিলিয়ে আছে।

সেকেন্ড বই হলো, রোড ট্যু বিকামিং আ সিইও। আমরা দেখলাম আমাদের পাশের দেশের অনেকেই বড় বড় অবস্থানে বসে সিইও হয়ে আমাদের সুযোগগুলো নিয়ে যাচ্ছে। তাহলে আমাদের ছেলেমেয়েরা কেন পারছে না? আমি ভারত-শ্রীলঙ্কার কর্মীদের সঙ্গে কাজ করেছি। অতএব আমাদের সঙ্গে তাদের পার্থক্যটা আমি জানি।

প্রশ্ন: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আপনার লেখালেখি নিয়ে বলুন।

উত্তর: আমার বোধ থেকে আমি লিখেছি। আমার ছেলেমেয়েরা মানুষ হয়ে যাওয়া মানেই আমার দায়িত্ব শেষ না। দেশের আরও অনেক মা-বাবার ছেলেমেয়ে আছে। তাদের মা-বাবাও পরিশ্রম করে, কষ্ট করে পড়ালেখা করাচ্ছেন। আমার দক্ষতার জায়গা থেকে তাদের গাউডলাইনের জন্য লিখেছি। সবার আগ্রহের জায়গা দেখে আমার ভালো লাগে। সবার ফিডব্যাক শুনে আমি উৎসাহ পাই। আমার জীবনের সময় থেকে যে সময় দিয়ে আমি লিখি, তা সবার ভালো লাগবে, এমন না। তবে যে কজনের ভালো লাগে, সেটিই আমাকে আনন্দিত করে।

প্রশ্ন: শার্পনারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কী ভাবছেন?

উত্তর: শার্পনারের পরিকল্পনা অতীতে যা ছিল, এখন যেমন, ভবিষ্যতেও তাই। শুধু শর্ট টার্মকে লং টার্মে লিংকাপ করতে চাই। শার্পনার তরুণ প্রজন্মের দুটো জায়গা নিয়ে কাজ করে। এক, সফট স্কিল। দুই, এথিক এবং ম্যুরাল জায়গায়। অবজেকটিভ যদি জানতে চান, তবে বলব আমি আরও বেশি পরিমাণ তরুণ প্রজন্মের কাছে পৌঁছাতে চাই।

আমাদের দেশের অধিকাংশ ছেলেমেয়েরা জানে না, তাদের জীবনের গোল কী। জীবনে গোল এবং পারপাস ঠিক করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ দুটির মধ্যে পার্থক্য আছে। আমাদের সামাজিক অবক্ষয়ের অন্যতম কারণ হলো, আমাদের মাঝে নীতিনৈতিকতা আর মূল্যবোধ নেই। এই দুটি জায়গা নিয়েই আমি কাজ করতে চাই। শুধু দেশে না, দেশের বাইরেও। নীতিনৈতিকতার সঙ্গে কোনোভাবেই কম্প্রোমাইজ করা যাবে না। এই সম্পর্কে আমি একটু সচেতন করতে চাই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কারা পরিদর্শক হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক

ট্রাম্পের অভিষেক: সি আমন্ত্রণ পেলেও পাননি মোদি, থাকছেন আরও যাঁরা

ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিকে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে: সলিমুল্লাহ খান

সংস্কারের কিছু প্রস্তাবে মনঃক্ষুণ্ন বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত