ঋণের ফাঁদে গরিব কাঁদে

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২: ৫৭

ঠাকুরগাঁওয়ে অগ্রণী ই-কমার্স নামের একটি কথিত কোম্পানির ফাঁদে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন দরিদ্র মানুষ। সাদা চেকে বড় অঙ্কের টাকা বসিয়ে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। এসব কারণে অনেকে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন।

জেলার সদর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের বাকুন্দা গ্রামের দিনমজুর তফিজুল ইসলাম দুই শিশুসন্তান ও স্ত্রীকে বাড়িতে ফেলে উধাও হয়েছেন। ১৫ দিন হলো তাঁর খোঁজ নেই। কোথায় আছেন, কেমন আছেন তা জানেন না পরিবারের সদস্যরা। তিনি ও তাঁর পরিবার অন্যের জমিতে বাঁশ আর টিনের ছাউনির ঘরে বসবাস করেন।
এদিকে বাড়িতে স্বামী না থাকায় দুই শিশুসন্তানকে নিয়ে কষ্টে দিন অতিবাহিত করছেন তফিজুলের স্ত্রী মিনা আক্তার। প্রতিবেশীরা দু-এক প্লেট করে ভাত দেন। ‘এভাবে কত দিন ভাত দেবেন তাঁরা?’

মিনা আক্তার জানান, হাঁসের খামার করে সংসারের বাড়তি আয়ের জন্য অগ্রণী ই-কমার্স থেকে সুদের ওপর ২০ হাজার টাকা নেন তাঁর স্বামী। ওই সময় একটি ব্যাংকে তাঁর নামে সঞ্চয়ী হিসাব খোলা হয়। সাদা চেকে সই নিয়ে ব্যাংকের কাগজ হাতিয়ে নেন সমিতির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি)।

ঋণ নেওয়ার পর কিস্তি দিচ্ছিলেন তিনি। এর মধ্যে তাঁর বিরুদ্ধে পাঁচ লাখ ৫০ হাজার টাকা দাবি করে চেক প্রতারণার অভিযোগে আদালতে মামলা করেন অগ্রণী ই-কমার্সের এমডি ওমর আলী। আদালতের সমন ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ভয়ে বাড়ি ছেড়েছেন তফিজুল।

বাকুন্দা গ্রামের মিল-চাতালশ্রমিক বাতাসী খাতুনের বিরুদ্ধে বড় অঙ্কের টাকা দাবি করে মামলা দেওয়া হয়েছে। হতদরিদ্র বাতাসীও ভেঙে পড়েছেন। কারাগারে গেলে কী হবে বাতাসীর ছেলে-মেয়ের—এমন চিন্তা তাঁর। পাঁচ বছর আগে স্বামী চৈতু মোহাম্মদের মৃত্যুর হয়। তখন থেকে সংসারের হাল ধরেছেন বাতাসী। ছাগল পালনের জন্য সুদের বিনিময়ে পাঁচ হাজার টাকা নেন বাতাসী। তাঁর কাছে ওই কোম্পানির এমডি ওমর আলী ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা দাবি করছেন। শুধু বাতাসী আর তফিজুল নন; দাদন কারবারির রোষানলে পড়ে ওই এলাকার অনেক মানুষ এখন সর্বস্বান্ত।

জানা গেছে, অগ্রণী ই-কমার্সের এমডি ওমর আলীর বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ভানোর ইউনিয়নের নিয়ামতপুর গ্রামে। সদর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের ভগদগাজী বাজারে কার্যালয় খুলে দাদন কারবার চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। তবে এখন সেখানে কার্যালয় নেই।

প্রতারণার বিষয়ে জানতে চাইলে এমডি ওমর আলী বলেন, ‘সুদের বিনিময়ে টাকা দেওয়া হয়। গ্রহীতারা টাকা দিচ্ছেন না, তাই মামলা করছি।’ জামালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম মুস্তাক আজকের পত্রিকাকে বলেন, এলাকার প্রান্তিক নারী-পুরুষের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা দিয়ে রাতের আঁধারে কোম্পানিটি বাড়ির মালিকের ঘরভাড়া না দিয়ে উধাও হয়েছে।

সমবায়ভিত্তিক কার্যক্রমের নিবন্ধন নিয়ে চড়া সুদের কারবারিদের তদন্ত করে তালিকা বাতিলের আশ্বাস দিয়েছেন জেলা সমবায় কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এ কে এম জাহাঙ্গীর আলম। অসাধু কারবারিদের তালিকা তৈরি করে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত