উত্তরার বেসরকারি হাসপাতাল: ছাত্রীকে অস্ত্রোপচারের পর যৌন হয়রানি

নুরুল আমিন হাসান, উত্তরা (ঢাকা) 
আপডেট : ২৮ আগস্ট ২০২৩, ১২: ১১
Thumbnail image

রাজধানীর উত্তরায় একটি বেসরকারি হাসপাতালে দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে অস্ত্রোপচারের পর অস্ত্রোপচার কক্ষেই (ওটি) যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে।  অভিযোগে বলা হয়েছে, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৭ আগস্ট দুপুরে ওই ছাত্রীর অস্ত্রোপচার শেষ হলে ওটি সহকারী তাকে যৌন হয়রানি করেন।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ২০ আগস্ট হাসপাতালের পরিচালক বরাবর অভিযোগ দেয়। ভুক্তভোগীর স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। তবে অভিযোগের বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মুখ খুলতে রাজি হয়নি।

ভুক্তভোগীর অভিযোগ, ১৭ আগস্ট অস্ত্রোপচার শেষ হলে চিকিৎসকেরা বেরিয়ে যান। তখন ওটিতে একজন পুরুষ ও একজন নার্স ছিলেন। পুরুষটি ওই নার্সকে কৌশলে বের করে দিয়ে তার দেহের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেন। পরে নার্স ওটিতে ফিরে বলেন, তাঁকে তো কেউ ডাকেনি।

ভুক্তভোগীর খালা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘১৭ আগস্ট বেলা ১টা ২০ মিনিটে আমার ভাগনির অপারেশন করেন ডা. শামিমা হক চৌধুরী। অপারেশনের পর ডাক্তাররা অবজারভেশনে রেখে বেরিয়ে যান। তখন সেখানে রোগী, একজন পুরুষ ও একজন নার্স ছিলেন। ওই অবস্থায় আমাদের ভাগনি সব শুনছিল, টের পাচ্ছিল। কিন্তু নড়াচড়া করতে পারছিল না। লোকটি নার্সকে চালাকি করে বের করে দিয়ে ভাগনির আপত্তিকর স্থানে হাত দেন।

‘রোগীকে রাত সাড়ে ১০টায় কেবিনে দেয়। রাত ১টার দিকে ভাগনি আমাদের এ ঘটনা জানায়। পরে সকালে ভাইয়ারা এলে তাদের জানাই। পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে হাসপাতালের পরিচালক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিই। তারা তদন্ত করেছে। যে এই কাজটি করেছে, তার ছবিও দেখিয়েছে। ছবি দেখে ভাগনি তাকে শনাক্ত করেছে।’

ওই ছাত্রীর খালা আরও বলেন, ‘২০ আগস্ট রোগীকে ছুটি দিয়ে দেয়। আমরা বলছিলাম, আপনারা বিচার না করলে আমরা যাব না। আমার ভাইয়েরা হাসপাতালের পরিচালকের রুমে গেলে তিনি জানান, ওনারা বোর্ড বসে দুদিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেবেন।

কিন্তু কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছিলেন না। বরং কৌশলে তারা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাসায় ফেরার পর হাসপাতাল থেকে নার্সিং সুপারভাইজার রোগীকে ফোন দিয়ে বারবার নানা কথা জিজ্ঞাসা করে ঘাবড়ানোর চেষ্টা করছেন।

পরে আরেকজন নার্স আমাকে কল দিয়ে বলেন, ওই লোকটা গরিব, চারটা বাচ্চা আছে। লোকটার চাকরিটা খেয়ে দিলে কীভাবে চলবে? একপর্যায়ে ওই নার্স বলেন, আমরা জরিমানা করলে উনি দিতে রাজি আছেন।’ 

ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, ‘আমি ওই লোকের কঠোর বিচার চাই, যেন এমন কাজ আর কারও সঙ্গে করতে না পারে।’ অভিযোগের সূত্র ধরে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অভিযুক্ত ব্যক্তি ওই হাসপাতালের ওটি সহকারী মো. রুহুল আমিন।

অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মো. রুহুল আমিন বলেন, ‘হাসপাতালে দুটি গ্রুপে নির্বাচন হয়। নজরুল-মন্টু প্যানেল ও রোকেয়া-শাহিদা প্যানেল। আমি নজরুল-মন্টু প্যানেলের হয়ে নির্বাচন করেছি। এর কারণে প্রতিপক্ষ গ্রুপ আমাকে ফাঁসানোর জন্য এ মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অভিযোগের পর বিভাগীয় প্রধান ওটি ইনচার্জের মাধ্যমে আমাকে ডিউটি বন্ধ রাখার কথা মৌখিকভাবে জানিয়েছেন।’

জানা যায়, অভিযোগের পরই হাসপাতালের উপপরিচালক মেজর (অব.) ডা. মো. হাফিজুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। অভিযোগের বিষয়ে ডা. মো. হাফিজুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এ বিষয়ে হাসপাতালের ডিরেক্টরের সঙ্গে কথা বলতে হবে। আমি রোগীর বাইরে কোনো কথা বলতে পারব না।’

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ডা. মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের সঙ্গে তিন দিন যোগাযোগ করেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তাঁর চেম্বারে গেলেও তিনি কিছু বলতে রাজি হননি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত