গরিবের ঘর নির্মাণে অনিয়ম

বড়াইগ্রাম (নাটোর) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৭: ১৬
আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১২: ৫৯

বাপ-দাদার আমল থেকে খাসজমিতে কোনোরকম ছাপরাঘর তুলে জীবন যাপন করতেন উপজেলার উপল শহর মধ্যপাড়ার বাসিন্দা আবু বক্কর (৬০)। কিছুদিন আগে সেই জমিতে সরকারি ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে মর্মে জাতীয় পরিচয়পত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র চাওয়া হয়। কিন্তু এগোচ্ছে না সেই ঘর নির্মাণকাজ। এ ছাড়া ঘর নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

আবু বক্করের মতো খাসজমিতে বসবাসকারী ৪৯টি পরিবারের জন্য সরকারি এই ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এসব পরিবারের লোকজন প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে ওঠার জন্য অধীর আগ্রহে দিন পার করছেন।

সুবিধাভোগী আবু বক্কর বলেন, ‘সরকারি লোকজন এসে কাগজপত্র নিয়ে ঘর দেওয়া হবে বলে জানায়। সেই লক্ষ্যে নির্মাণসামগ্রী রাখা হয় বাড়ির সামনে। এক মাস আগে বসবাস করার ঘর ভেঙে ফেলা হয়। কিন্তু নতুন ঘর নির্মাণকাজ সবে শুরু হয়েছে। শীতের মধ্যে কষ্ট করে এক মাস পার করছি। ঠিকাদার মাঝে মাঝে আসে। দ্রুত ঘর করা হবে বলে জানায়, কিন্তু ঘর আর হয় না।’

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার বড়াইগ্রাম উপজেলায় ‘ক’ শ্রেণির ভূমিহীনের জন্য ৪৯টি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। কমিটির মাধ্যমে যথাযথ তত্ত্বাবধান করে কাজ করা হচ্ছে।

সম্প্রতি নির্মাণাধীন ঘর ঘুরে এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপল শহর গ্রামে আবু বক্কর ও তাঁর দুই ছেলের নামে তিনটি ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়। একটি ঘরের ধারি পর্যন্ত কাজ করা হয়েছে। আরেকটির লে-আউট কাটা হয়েছে। একটি বাতিল করা হয়েছে। ঘর নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। তাঁদের অভিযোগ, ২-৩ নম্বর গ্রেডের ইট ও ইটের খোয়া ব্যবহার করা হচ্ছে। সিমেন্ট-বালুর অনুপাতও ঠিকভাবে মানা হচ্ছে না। নিম্নমানের প্লেনশিট দিয়ে দরজা ও জানালা তৈরি করা হয়েছে। ১৬ মিলির স্থলে ১২ মিলি পুরুত্বের রড ব্যবহার করা হচ্ছে।

স্থানীয় যুবক নাসির উদ্দিন বলেন, ‘এলাকার অনেক উপকারভোগীর কাছ থেকে ঘর নির্মাণ বাবদ টাকাও নেওয়া হয়েছে। অনেকেই ঘরের আশায় ঋণ করে টাকা দিয়েছেন। গরিবের উপকার করতে এসে ঋণের বোঝা মাথায় চাপিয়ে দেওয়া ঠিক না।’

ঘর নির্মাণকাজের মিস্ত্রি মোজাম্মেল হক বলেন, ‘আমাকে যেভাবে মালামাল সরবরাহ করা হচ্ছে আমি সেভাবেই কাজ করছি।’

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল কুদ্দুস মিয়াজী বলেন, ‘আমিও সরেজমিন ঘর নির্মাণের সামগ্রী পরিদর্শন করে দেখেছি শিডিউলের চেয়ে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে।’

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা বলেন, ‘আমাকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছিল। আমি পরিদর্শন শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর প্রতিবেদন দিয়েছি।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মারিয়াম খাতুন বলেন, ‘এর আগে ইটের মান খারাপ হওয়ায় ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা মতো রড ও নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। তার পরও বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত