মারুফ ইসলাম
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) ক্ষমতা নিয়ে পুরোনো প্রশ্ন নতুন করে আলোচনায় এসেছে। রোম স্ট্যাটিউট নামে সংবিধির আওতায় জাতিসংঘের এই আদালত আদৌ পুতিনকে বিচারের মুখোমুখি করতে পারবেন কি না সেই প্রশ্ন যেমন উঠেছে, তেমনি বিশ্ব পরিমণ্ডলে পুতিনের বিচরণ সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে কি না, তা নিয়েও চলছে জোরালো আলোচনা।
ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধ সংঘটনের অভিযোগে গত শুক্রবার (১৭ মার্চ) পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। তাঁর শিশু অধিকার কমিশনার মারিয়া লভোভা-বেলোভার বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ আনা হয়েছে।
আইসিসির রায়কে স্বাগত জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গতকাল বলেছেন, ভ্লাদিমির পুতিন স্পষ্টতই যুদ্ধাপরাধ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার সিদ্ধান্ত খুবই ন্যায়সংগত।
জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজও আইসিসির সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘কেউ-ই আইনের ঊর্ধ্বে নয়, সেটাই এখন পরিষ্কার হলো। পুতিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ তদন্তে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতই যথাযথ প্রতিষ্ঠান।’
তবে পুতিনের বিরুদ্ধে আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানার সিদ্ধান্ত শুনে রাশিয়া স্রেফ হেসে উড়িয়ে দিয়েছে। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভ বলেন, এই পরোয়ানা টয়লেট পেপারের মতোই মূল্যহীন, কোনো কার্যকারিতা নেই। কারণ রাশিয়া আইসিসির সদস্য রাষ্ট্র নয়।
আইসিসির ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা পেশকভের মন্তব্যেই স্পষ্ট। আরেকটি বড় সীমাবদ্ধতা হলো- পরোয়ানা তামিলে আদালতের নিজস্ব কোনো পুলিশ বাহিনী নেই।
কাউকে গ্রেপ্তার বা বিচারের মুখোমুখি করতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ওপর নির্ভর করতে হয় আইসিসিকে। ১২৩টি সদস্য দেশ আইসিসির অনুরোধ ও নির্দেশনা মানতে বাধ্য।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কৌঁসুলি করিম খানও তেমনটাই বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘পুতিন যদি এই ১২৩টির যে কোনো একটিতে পা রাখেন তবে তাঁকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব।’
তবে করিম খান যত সহজে কথাটা বলেছেন, কাজটা তত সহজ নয়। রোম স্ট্যাটিউট নামে পরিচিত আইসিসির সংবিধিতে অনুস্বাক্ষর করেছে যেসব রাষ্ট্র, তারা খুব সহজে পুতিনের মতো শক্তিধর রাষ্ট্রনেতাকে গ্রেপ্তার করবে বলে মনে হয় না।
এর আগে ২০০৯ সালের ৪ মার্চ সুদানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশিরের বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন আইসিসি। তখন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়েই দক্ষিণ আফ্রিকা ও জর্ডানসহ বেশ কয়েকটি দেশ ভ্রমণ করেছিলেন তিনি। ওই দেশগুলো ওমরকে গ্রেপ্তার করেনি। ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন ওমর আল বশির। দেশটির নতুন সরকার এখনো তাঁকে আইসিসির কাছে হস্তান্তর করেনি।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং সবার আগে বিবেচনা করার মতো বিষয় হচ্ছে, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মতো ক্ষমতাধর দেশগুলো আইসিসির সদস্য নয়। এমনকি ভারতের মতো উদীয়মান শক্তির দেশও আইসিসিতে অনুস্বাক্ষর করেনি।
এসব কাঠামোগত বাধার পাশাপাশি আইসিসির ক্ষমতা খর্ব হওয়ার পেছনে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোর, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় বাধা রয়েছে। ২০২০ সালে আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তদন্ত করতে চেয়েছিল আইসিসি। একই সঙ্গে তালেবানদের বিরুদ্ধেও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তদন্ত করতে চেয়েছিল।
আইসিসির এ ঘোষণার পরপরই ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর আইসিসির কৌঁসুলি ফাতু বেনসুদা ও একজন জ্যেষ্ঠ প্রসিকিউশন কর্মকর্তা ফাকিসো মোচোচোকোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়াও তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের বিরুদ্ধে তদন্তে আইসিসির সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে ভিসা দেওয়া হবে না।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন ফিলিস্তিনে আইসিসির তদন্ত বন্ধ করতেও হুমকি দিয়েছিল। এছাড়া ২০১৯ সালে আইসিসির কৌঁসুলির ভিসা প্রত্যাহার করে নিয়েছিল মার্কিন সরকার।
এসব প্রভূত বিরোধিতা ও হুমকির কারণে আইসিসি অনেক দেশে যুদ্ধাপরাধের তদন্তকাজ এগিয়ে নিতে পারেনি।
তবে বিশ্বের ক্ষমতাধর নেতাদের বিচারের মুখোমুখি করার নজির আইসিসির ইতিহাসে নেই, এমন নয়। আইসিসির কৌঁসুলি করিম খান বলেছেন, ‘অনেক ক্ষমতাধর নেতাকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর ইতিহাস আইসিসির রয়েছে। অনেক শীর্ষ নেতা ভেবেছিলেন, তাঁরা আইনের ঊর্ধ্বে। কিন্তু আইসিসি শেষ পর্যন্ত (অনেক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও) তাঁদের বিচারের মুখোমুখি করতে পেরেছিল। উদাহরণ চান? মিলোসেভিক বা চার্লস টেলর বা কারাদজিক বা ম্লাডিকের কথা স্মরণ করুন।’
মিলোসেভিক ছিলেন সার্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট, লাইবেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ছিলেন চার্লস টেলর, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার সাবেক প্রেসিডেন্ট ছিলেন কারাদজিক ও সেনাপ্রধান ছিলেন রাতকো ম্লাডিক।
টেলরকে ২০১২ সালে যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করেছিল আইসিসি। এ ছাড়া যুগোস্লাভিয়ার যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার বিচার চলাকালে ২০০৬ সালে কারাগারে মারা গেছেন মিলোসেভিক।
কারাদজিককে ২০০৮ সালে কারাবন্দী করা হয় এবং আইসিসির আদালতে তিনি গণহত্যার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন। এ ছাড়া রাতকো ম্লাডিক ২০১১ সালে গ্রেপ্তার হন এবং তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছে আইসিসি।
আইসিসির এসব আপাত সাফল্য সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে সমালোচনার অন্ত নেই। আইসিসির বিরুদ্ধে অন্যতম সমালোচনা হচ্ছে, মিয়ানমারে জান্তা সরকারের গণহত্যার বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি আইসিসি। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত গণহত্যারও বিচার করতে পারেনি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। গত বছর আইসিসির কৌঁসুলি করিম খান অবশ্য বাংলাদেশে এসেছিলেন রোহিঙ্গাদের দেখতে।
এরপর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন ছাড়াই ২০০৩ সালের মার্চে ইরাকে অভিযান চালিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ এবং যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার। কিন্তু তাঁদের বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত কোনো অভিযোগ তোলেনি আইসিসি।
এসব কারণে বিশ্লেষকেরা মনে করেন, দ্বিমুখী আচরণ করছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। আইন সবার জন্য সমান—এই চিরন্তন বাক্য প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছে আইসিসি।
১৯৯৮ সালের ১৭ জুলাই জাতিসংঘের এক সম্মেলনে রোম সনদ অনুমোদনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং গণহত্যার মতো অপরাধের বিচার করা। ১২৩টি দেশ সনদটিতে অনুমোদন দিয়েছিল।
কিন্তু প্রতিষ্ঠার এত বছর পরেও সারা বিশ্বের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠতে পারেনি আইসিসি। নানা সময়ে এ আদালতের কার্যকারিতার সীমাবদ্ধতা প্রকাশ পেয়েছে। বিশ্লেষকেরা মনে করেন আইসিসি এসব সীমাবদ্ধতা থেকে উত্তরণ ঘটাতে না পারলে বিশ্বের গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, জাতিগত নিধন ও আগ্রাসনের মতো অপরাধের ন্যায় বিচার মিলবে না। আইসিসি একটি ‘কাগুজে বাঘ’ হয়েই ইতিহাসে থেকে যাবে।
সূত্র: এএফপি, বিবিসি, আল জাজিরা, ডয়চে ভেলে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও দ্য ইন্টারসেপ্ট
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার পর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) ক্ষমতা নিয়ে পুরোনো প্রশ্ন নতুন করে আলোচনায় এসেছে। রোম স্ট্যাটিউট নামে সংবিধির আওতায় জাতিসংঘের এই আদালত আদৌ পুতিনকে বিচারের মুখোমুখি করতে পারবেন কি না সেই প্রশ্ন যেমন উঠেছে, তেমনি বিশ্ব পরিমণ্ডলে পুতিনের বিচরণ সীমাবদ্ধ হয়ে পড়বে কি না, তা নিয়েও চলছে জোরালো আলোচনা।
ইউক্রেনে যুদ্ধাপরাধ সংঘটনের অভিযোগে গত শুক্রবার (১৭ মার্চ) পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। তাঁর শিশু অধিকার কমিশনার মারিয়া লভোভা-বেলোভার বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ আনা হয়েছে।
আইসিসির রায়কে স্বাগত জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গতকাল বলেছেন, ভ্লাদিমির পুতিন স্পষ্টতই যুদ্ধাপরাধ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করার সিদ্ধান্ত খুবই ন্যায়সংগত।
জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শুলজও আইসিসির সিদ্ধান্তের প্রশংসা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘কেউ-ই আইনের ঊর্ধ্বে নয়, সেটাই এখন পরিষ্কার হলো। পুতিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ তদন্তে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতই যথাযথ প্রতিষ্ঠান।’
তবে পুতিনের বিরুদ্ধে আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানার সিদ্ধান্ত শুনে রাশিয়া স্রেফ হেসে উড়িয়ে দিয়েছে। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেশকভ বলেন, এই পরোয়ানা টয়লেট পেপারের মতোই মূল্যহীন, কোনো কার্যকারিতা নেই। কারণ রাশিয়া আইসিসির সদস্য রাষ্ট্র নয়।
আইসিসির ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা পেশকভের মন্তব্যেই স্পষ্ট। আরেকটি বড় সীমাবদ্ধতা হলো- পরোয়ানা তামিলে আদালতের নিজস্ব কোনো পুলিশ বাহিনী নেই।
কাউকে গ্রেপ্তার বা বিচারের মুখোমুখি করতে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর ওপর নির্ভর করতে হয় আইসিসিকে। ১২৩টি সদস্য দেশ আইসিসির অনুরোধ ও নির্দেশনা মানতে বাধ্য।
আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কৌঁসুলি করিম খানও তেমনটাই বলেছেন। তিনি বলেছেন, ‘পুতিন যদি এই ১২৩টির যে কোনো একটিতে পা রাখেন তবে তাঁকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব।’
তবে করিম খান যত সহজে কথাটা বলেছেন, কাজটা তত সহজ নয়। রোম স্ট্যাটিউট নামে পরিচিত আইসিসির সংবিধিতে অনুস্বাক্ষর করেছে যেসব রাষ্ট্র, তারা খুব সহজে পুতিনের মতো শক্তিধর রাষ্ট্রনেতাকে গ্রেপ্তার করবে বলে মনে হয় না।
এর আগে ২০০৯ সালের ৪ মার্চ সুদানের সাবেক প্রেসিডেন্ট ওমর আল বশিরের বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিলেন আইসিসি। তখন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়েই দক্ষিণ আফ্রিকা ও জর্ডানসহ বেশ কয়েকটি দেশ ভ্রমণ করেছিলেন তিনি। ওই দেশগুলো ওমরকে গ্রেপ্তার করেনি। ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন ওমর আল বশির। দেশটির নতুন সরকার এখনো তাঁকে আইসিসির কাছে হস্তান্তর করেনি।
আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং সবার আগে বিবেচনা করার মতো বিষয় হচ্ছে, রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মতো ক্ষমতাধর দেশগুলো আইসিসির সদস্য নয়। এমনকি ভারতের মতো উদীয়মান শক্তির দেশও আইসিসিতে অনুস্বাক্ষর করেনি।
এসব কাঠামোগত বাধার পাশাপাশি আইসিসির ক্ষমতা খর্ব হওয়ার পেছনে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোর, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় বাধা রয়েছে। ২০২০ সালে আফগানিস্তানে মার্কিন সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তদন্ত করতে চেয়েছিল আইসিসি। একই সঙ্গে তালেবানদের বিরুদ্ধেও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ তদন্ত করতে চেয়েছিল।
আইসিসির এ ঘোষণার পরপরই ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর আইসিসির কৌঁসুলি ফাতু বেনসুদা ও একজন জ্যেষ্ঠ প্রসিকিউশন কর্মকর্তা ফাকিসো মোচোচোকোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়াও তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের বিরুদ্ধে তদন্তে আইসিসির সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে ভিসা দেওয়া হবে না।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন ফিলিস্তিনে আইসিসির তদন্ত বন্ধ করতেও হুমকি দিয়েছিল। এছাড়া ২০১৯ সালে আইসিসির কৌঁসুলির ভিসা প্রত্যাহার করে নিয়েছিল মার্কিন সরকার।
এসব প্রভূত বিরোধিতা ও হুমকির কারণে আইসিসি অনেক দেশে যুদ্ধাপরাধের তদন্তকাজ এগিয়ে নিতে পারেনি।
তবে বিশ্বের ক্ষমতাধর নেতাদের বিচারের মুখোমুখি করার নজির আইসিসির ইতিহাসে নেই, এমন নয়। আইসিসির কৌঁসুলি করিম খান বলেছেন, ‘অনেক ক্ষমতাধর নেতাকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর ইতিহাস আইসিসির রয়েছে। অনেক শীর্ষ নেতা ভেবেছিলেন, তাঁরা আইনের ঊর্ধ্বে। কিন্তু আইসিসি শেষ পর্যন্ত (অনেক প্রতিকূলতা সত্ত্বেও) তাঁদের বিচারের মুখোমুখি করতে পেরেছিল। উদাহরণ চান? মিলোসেভিক বা চার্লস টেলর বা কারাদজিক বা ম্লাডিকের কথা স্মরণ করুন।’
মিলোসেভিক ছিলেন সার্বিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট, লাইবেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ছিলেন চার্লস টেলর, বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার সাবেক প্রেসিডেন্ট ছিলেন কারাদজিক ও সেনাপ্রধান ছিলেন রাতকো ম্লাডিক।
টেলরকে ২০১২ সালে যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করেছিল আইসিসি। এ ছাড়া যুগোস্লাভিয়ার যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে গণহত্যার বিচার চলাকালে ২০০৬ সালে কারাগারে মারা গেছেন মিলোসেভিক।
কারাদজিককে ২০০৮ সালে কারাবন্দী করা হয় এবং আইসিসির আদালতে তিনি গণহত্যার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হন। এ ছাড়া রাতকো ম্লাডিক ২০১১ সালে গ্রেপ্তার হন এবং তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছে আইসিসি।
আইসিসির এসব আপাত সাফল্য সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে সমালোচনার অন্ত নেই। আইসিসির বিরুদ্ধে অন্যতম সমালোচনা হচ্ছে, মিয়ানমারে জান্তা সরকারের গণহত্যার বিরুদ্ধে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি আইসিসি। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত গণহত্যারও বিচার করতে পারেনি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। গত বছর আইসিসির কৌঁসুলি করিম খান অবশ্য বাংলাদেশে এসেছিলেন রোহিঙ্গাদের দেখতে।
এরপর জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন ছাড়াই ২০০৩ সালের মার্চে ইরাকে অভিযান চালিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ এবং যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার। কিন্তু তাঁদের বিরুদ্ধে আজ পর্যন্ত কোনো অভিযোগ তোলেনি আইসিসি।
এসব কারণে বিশ্লেষকেরা মনে করেন, দ্বিমুখী আচরণ করছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। আইন সবার জন্য সমান—এই চিরন্তন বাক্য প্রতিষ্ঠা করতে ব্যর্থ হয়েছে আইসিসি।
১৯৯৮ সালের ১৭ জুলাই জাতিসংঘের এক সম্মেলনে রোম সনদ অনুমোদনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। উদ্দেশ্য ছিল যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং গণহত্যার মতো অপরাধের বিচার করা। ১২৩টি দেশ সনদটিতে অনুমোদন দিয়েছিল।
কিন্তু প্রতিষ্ঠার এত বছর পরেও সারা বিশ্বের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠতে পারেনি আইসিসি। নানা সময়ে এ আদালতের কার্যকারিতার সীমাবদ্ধতা প্রকাশ পেয়েছে। বিশ্লেষকেরা মনে করেন আইসিসি এসব সীমাবদ্ধতা থেকে উত্তরণ ঘটাতে না পারলে বিশ্বের গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধ, জাতিগত নিধন ও আগ্রাসনের মতো অপরাধের ন্যায় বিচার মিলবে না। আইসিসি একটি ‘কাগুজে বাঘ’ হয়েই ইতিহাসে থেকে যাবে।
সূত্র: এএফপি, বিবিসি, আল জাজিরা, ডয়চে ভেলে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও দ্য ইন্টারসেপ্ট
রাজধানীর বিমানবন্দরে শরীরে বিশেষ কৌশলে গাঁজা নিয়ে এসে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে তিনজন কিশোর। তাঁরা বর্তমানে কিশোর সংশোধনাগারের রয়েছে।
১৮ দিন আগেপরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফেরাতে সিঙ্গাপুরে যান দুই ভাই উজ্জ্বল মিয়া ও মো. ঝন্টু। সেখানে থাকা অবস্থায় মুঠোফোনে ভাবির সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ান ছোট ভাই মো. ঝন্টু। পরে দেশে ফিরে ভাবিকে বিয়ে করার জন্য আপন বড় ভাই উজ্জ্বল মিয়াকে খুন করে ছোট ভাই।
১৮ দিন আগেরাজধানীর গেণ্ডারিয়ায় গত দুই মাসে দুই অটোরিকশা চালককে হত্যা করে রিকশা ছিনিয়ে নেওয়া ঘটনা ঘটেছে। পৃথক এই দুই ঘটনায় তদন্তে নেমে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
১৯ দিন আগেপাবনার পদ্মা নদী থেকে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ১২ বছরের এক কিশোর এবং ২২ বছরের এক তরুণীর অর্ধগলিত দুইটি মরদেহ উদ্ধার করেছে নাজিরগঞ্জ নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি। উদ্ধারের দুইদিনেও কোনো পরিচয় পাওয়া যায়নি। রোববার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নাজিরগঞ্জ নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাইদুর রহমান।
২২ দিন আগে