Ajker Patrika

চট্টগ্রাম মহানগর ও কক্সবাজারকে ‘মাদকপ্রবণ’ এলাকা ঘোষণার রূপরেখা হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২২: ৪৯
চট্টগ্রাম মহানগর ও কক্সবাজারকে ‘মাদকপ্রবণ’ এলাকা ঘোষণার রূপরেখা হচ্ছে

চট্টগ্রাম মহানগর ও কক্সবাজার জেলাকে ‘মাদকপ্রবণ’ এলাকা ঘোষণা করতে যাচ্ছে সরকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে দেশে মাদক প্রবেশের সবচেয়ে বড় এই রুটকে এভাবে চিহ্নিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 

এ সংক্রান্ত রূপরেখা তৈরির কাজও এরই মধ্যে শুরু হয়েছে বলে আজ রোববার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। 

বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে, গত ১৫ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে কমিটির কমিটির ২৬ তম বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। সেখানে চট্টগ্রাম মহানগর এলাকা এবং কক্সবাজারকে ‘মাদকপ্রবণ এলাকা’ ঘোষণা করার বিষয়টি পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। আজকের বৈঠকে ওই সুপারিশের অগ্রগতি প্রতিবেদন তুলে ধরে সুরক্ষা সেবা বিভাগ। 

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সমন্বয় সভায় গুরুত্বপূর্ণ আলোচ্যসূচি হিসেবে বিষয়টি নিয়ে বিশদ আলোচনা করা হয় বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। সভায় সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করে চট্টগ্রাম মহানগর এলাকা এবং কক্সবাজার জেলাকে ‘মাদকপ্রবণ এলাকা’ ঘোষণা করার বিষয়ে একটি রূপরেখা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে পরবর্তী কার্যক্রম চলমান বলেও জানায় সুরক্ষা বিভাগ। 

আজকের বৈঠক শেষে জানতে চাইলে কমিটির সদস্য নূর মোহাম্মদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আজকাল যে মাদক নিয়ে সবাই আলোচনা করে, সেটি ওই রুট দিয়ে আসে। ওই অঞ্চলকে মাদকপ্রবণ এলাকা ঘোষণা করা হলে বিষয়টি গুরুত্ব পায়। তবে এটা এখন আলোচনার মধ্যেই আছে।’

এদিকে মাদক পাচারকারী, অবৈধ মাদক ব্যবসায়ী, আশ্রিত সব রোহিঙ্গা এবং মাদকের সঙ্গে জড়িত বাংলাদেশিদের তালিকা তৈরির বিষয়ে অন্যান্য আইন-প্রয়োগকারী সংস্থার সমন্বয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের একটি সমন্বিত তালিকা তৈরির কার্যক্রম চলমান বলে বৈঠকে অগ্রগতি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। 

 ২৬ তম বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে, বৈঠকে সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল্লাহ্ আল মাসুদ চৌধুরী প্রসঙ্গটি তোলেন। মাদক উৎপাদনকারী দেশগুলোর কাছাকাছি অবস্থান এবং ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশ মাদকে আক্রান্ত উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার থেকে ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মেথ, ভারত থেকে হেরোইন, গাঁজা, ফেনসিডিল ও ইনজেকশন ড্রাগের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঘটে।’ তিনি সীমান্তবর্তী এলাকায় মাদক চোরাচালান রোধে নিশ্ছিদ্র সীমান্ত নিশ্চিতকরণ, স্যাটেলাইট ইমেজারি প্রযুক্তি স্থাপন এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন, চট্টগ্রাম জেলা ও কক্সবাজার এলাকাকে ‘মাদকপ্রবণ অঞ্চল’ ঘোষণা করার প্রয়োজনীয়তার কথা জানান। 

বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করছে বলে ওই বৈঠকে অভিযোগ করেন ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল মো. ফখরুল আহসান। তিনি বলেন, ‘এরা রাতে ওপারে যায় এবং সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে মাদক পাচার করে। এ এলাকাটি মাদকের অভয়ারণ্য। এটিকে কঠোরভাবে দমন না করলে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে যাবে। সেখানে মসজিদের ইমামও মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত। এই এলাকার দিনের বেলায় এক চিত্র, রাতে তা সম্পূর্ণ পাল্টে যায়। এ অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে স্থানীয় লোকও সম্পৃক্ত হয়ে যাচ্ছে।’ 

রোহিঙ্গারা আলাদা জনগোষ্ঠী, তাদের সংস্কৃতিও আলাদা উল্লেখ করে রোহিঙ্গাদের অপরাধের বিচার দেশের প্রচলিত আইনে না করে আলাদা আইনি ব্যবস্থা রাখার পরামর্শ দেন মেজর জেনারেল ফখরুল আহসান। মাদকের বিচার কাজে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়ার কথা বলেন তিনি। 

রোহিঙ্গা সমস্যা জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে একটি বড় হুমকি হয়ে উঠেছে মন্তব্য করে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) মহাপরিচালক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসান বলেন, ‘বর্তমানে ডেটাবেইস না থাকায় আইন প্রয়োগকারী, গোয়েন্দা ও তদন্তকারী সংস্থাগুলো বিভিন্ন তদন্তের স্বার্থে রোহিঙ্গাদের হালনাগাদ তথ্য সংগ্রহ করতে পারছে না। এতে তদন্ত কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।’ 

এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের এখানে বাস করতে হলে রাষ্ট্রের ক্ষতি হয় এমন কর্মকাণ্ড থেকে তাদের বিরত থাকতে হবে। এসব বন্ধ না করলে হয় তারা দেশে ফেরত যাবে, না হয় অবৈধ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। তাদের ভাসানচরে পর্যায়ক্রমে স্থানান্তর করা হবে।’ 

এ সময় ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীর নির্বিচারে গুলি চালানোর প্রবণতা উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘বিএসএফ কাঁটাতারের বেড়া কাটলেই গুলি চালায়। এখানে তারের বেড়া কাটলে আমাদেরও কঠোর হতে হবে।’ কক্সবাজার অঞ্চল ‘মাদকপ্রবণ এলাকা’ বলেই এখানে সংসদীয় কমিটির বৈঠক আয়োজন করা হয়েছে বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। 

কমিটির সদস্য পীর ফজলুর রহমান বলেন, ‘২০২০ সালে একশর বেশি তালিকাভুক্ত মাদক পাচারকারী আত্মসমর্পণ করেছিল। তারা আবার এই পাচার কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়ে যাচ্ছে।’ 

বৈঠকে কমিটির সভাপতি বেনজীর আহমদ জিরো পয়েন্টে আশ্রয়গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘মাদক পাচারের বড় রুট হিসেবে এ পয়েন্টটি চিহ্নিত হয়ে আছে।’ 

 ১৫ জানুয়ারির বৈঠকে মিয়ানমার সীমান্ত সংলগ্ন সমুদ্রসীমায় চলাচলকারী জেলে এবং ট্রলারের তালিকা করে জিপিএস সংযোগ বাধ্যতামূলক করতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, নৌ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। আজকের বৈঠকে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দেয় জননিরাপত্তা বিভাগ। প্রতিবেদনে জানানো হয়, বাংলাদেশের সামুদ্রিক জলসীমায় মাছ ধরায় নিয়োজিত আর্টিসানাল নৌযানে পরীক্ষামূলকভাবে ৮ হাজার ১০০ জিএসএম ডিভাইস স্থাপন করা হয়েছে। 

এদিকে সংসদ সচিবালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আজকের বৈঠক থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ ক্যাম্পগুলোর বিদ্যুৎ বিল এবং নিরাপত্তার দায়িত্বে মানবিক সেবায় নিয়োজিত সব স্তরের পুলিশ, আনসার, র‍্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে জাতিসংঘের ইউএনএইচসিআর থেকে ঝুঁকিভাতা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। 

কমিটির সভাপতি বেনজীর আহমদের সভাপতিত্বে বৈঠকে আরও অংশ নেন—কমিটির সদস্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন, সামছুল আলম দুদু, কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা, পীর ফজলুর রহমান, নূর মোহাম্মদ এবং রুমানা আলী। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত