অস্তিত্বহীন প্রকল্পে টাকা লোপাট

গোলাম কবির বিলু, পীরগঞ্জ
প্রকাশ : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৭: ১৬
আপডেট : ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৩: ৫৭

পীরগঞ্জে নন-ওয়েজ খাতে নেওয়া তিন প্রকল্পের কাজ না করেই পুরো টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেই সঙ্গে কয়েকটি প্রকল্পে দায়সারাগোছের কাজ হয়েছে। এসব প্রকল্পের অর্থ উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয়ের কার্যসহকারী ইমরান হোসেন এবং প্রকল্প সভাপতিরা ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নিয়েছেন বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিভাগ ২০২০-২১ অর্থবছরে ১৫ ইউনিয়নে কর্মসংস্থান কর্মসূচির আওতায় রাস্তাঘাট সংস্কার করে। পাশাপাশি রাস্তাগুলোর নির্দিষ্ট স্থানে নালা বা ড্রেন ও রিং কালভার্ট নির্মাণের জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়, যা নন-ওয়েজ খাত নামে পরিচিত। খাতটির দ্বিতীয় পর্যায়ের অধীনে তিনটি প্রকল্পের কোনো হদিস না থাকলেও পিআইও কার্যালয়ের ব্রিজ-কালভার্ট শাখার কার্যসহকারী ইমরান প্রকল্পের কাজ সমাপ্তের কথিত ছবি দেখে চেক দিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, চৈত্রকোল ইউনিয়নের ভরট্টজানপুরে আব্বাস আলীর বাড়ির কাছে ১ লাখ ১৪ হাজার টাকায় ড্রেন, বড়আলমপুর ইউনিয়নের পত্নীচড়া গ্রামে ছাদেকের বাড়ির সামনে ১ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকায় ড্রেন ও পাঁচগাছী ইউনিয়নের পানেয়া মৌজায় রফিকুলের বাড়ির সামনে ১ লাখ ১৪ হাজার টাকায় ড্রেন নির্মাণ প্রকল্প কাগজে-কলমে সম্পন্ন দেখানো হলেও সেগুলোর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।

অপরদিকে চতরা ইউনিয়নের পারকুয়াতপুর বাংগালীপাড়া জামে মসজিদের কাছে ১ লাখ ১৫ হাজার টাকায় কালভার্ট, কুয়াতপুর বিলপাড়ায় শাহীনের বাড়ি থেকে আনিছারের বাড়ি পর্যন্ত ১ লাখ ১০ হাজার টাকায় ড্রেন ও টুকুরিয়া ইউনিয়নের টুকুরিয়া গাছুপাড়ায় বাদশার বাড়ির কাছে ৯৯ হাজার টাকায় কালভার্ট নির্মাণের কাজ দায়সারাভাবে করা হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুজন ইউপি চেয়ারম্যান দাবি করেন, প্রকল্পগুলোতে দায়সারাভাবে কাজ করে পিআইও কার্যালয়ের ইমরান এবং প্রকল্প সভাপতিরা টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারা করে নিয়েছেন। আবার কাজ না করেও পুরো টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

তবে প্রকল্প সভাপতিরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন। পত্নীচড়ায় ড্রেন নির্মাণ প্রকল্পের সভাপতি সাবেক ইউপি সদস্য শাহীনুর আলম বলেন, ‘প্রকল্পের কথা আমি জানি না। এমনকি অফিসে গিয়ে চেকেও স্বাক্ষর করিনি। ওই স্থানে দুই বছর আগে এলজিএসপি-৩ প্রকল্পের বরাদ্দে একটি ড্রেন নির্মাণ করা হয়। সম্ভবত সেই ড্রেনকেই নন-ওয়েজ খাতের কাজ দেখানো হয়েছে।’

পানেয়া মৌজায় ড্রেন নির্মাণ প্রকল্পের সভাপতি সাবেক ইউপি সদস্য সোলায়মান আলী জানান, পিআইও কার্যালয়ের ইমরান তাঁকে শুধু ২৭ হাজার টাকার একটি চেক দিয়েছেন। তিনি এখনো সেই কাজ করেননি। তাঁর কাজের জন্য যে ১ লাখ ১৪ হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছে, তাও তিনি জানেন না বলে জানান।

অন্যদিকে চৈত্রকোলের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোক্তার হোসেন বলেন, ‘আমার ওয়ার্ডের ভরট্টজানপুরে একটি ড্রেন নির্মাণের জন্য নন-ওয়েজ খাতের ১ লাখ ১৪ হাজার টাকা বরাদ্দ ছিল। সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান সবুজ প্রকল্পটির চেয়ারম্যান হলেও তিনি ড্রেনটি নির্মাণ না করেই পুরো টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেছেন। এ জন্য ওয়ার্ডবাসী আমাকে প্রতিদিনই গালমন্দ করছেন।’

যোগাযোগ করা হলে পিআইও কার্যালয়ের ব্রিজ-কালভার্ট শাখার কার্যসহকারী ইমরান বলেন, ‘পিআইও স্যার আমাকে ফাইল রেডি করতে বলেছিল। প্রকল্প সভাপতিরা আমাকে ওই সব প্রকল্পের কাজ সমাপ্তের ছবি দিলে আমি শুধু ফাইল রেডি করে দিয়েছি।’ তিনি আরও দাবি করেন, তিনি কারও স্বাক্ষর জাল করেননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিআইও মিজানুর রহমান বলেন, ‘কোনো প্রকল্পের কাজ করা না হলে তা করে নেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত