পাঠ্যপুস্তক চুরি করে বিক্রি, দলাদলিতে হলো ফাঁস

আরিফুর রহমান মিঠু, শাজাহানপুর (বগুড়া)
প্রকাশ : ০৭ নভেম্বর ২০২২, ১২: ৫৬

বগুড়ার শাজাহানপুরে সরকারি বিনা মূল্যের পাঠ্যপুস্তক চুরি করে বিক্রি করেছেন মাঝিড়া মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক-কর্মচারী। শিক্ষকদের দলাদলির কারণে এই চুরি সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে। নিজস্ব গুদাম না থাকায় উপজেলা শিক্ষা অফিস বইগুলো এই বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে রেখেছিল।

এ ঘটনায় মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস ১ নভেম্বর মাঝিড়া মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। নোটিশ পাওয়ায় প্রধান শিক্ষক পরদিন শাজাহানপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।

প্রধান শিক্ষক বলছেন, শিক্ষা অফিস কক্ষ স্থানান্তর করতে বলায় ব্যবহার অযোগ্য কিছু বই বিক্রি করা হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, মাঝিড়া মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের একটি ঘর গুদাম হিসেবে ব্যবহার করত মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস। ২০১৩ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত সেখানে পাঠ্যপুস্তক রাখা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়ের কয়েকটি সূত্র জানায়, এসএসসি পরীক্ষার পর মোট ১২ রাতে এসব বই চুরি হয়। বইগুলো বস্তায় ভরেন নৈশপ্রহরী বাচ্চু মিয়া, পিয়ন আব্দুস সামাদ, পিয়ন ফরহাদ আলী, মালি আব্দুল জুব্বার। রাত ৩টার দিকে ভ্যানে করে সেগুলো মাঝিড়া স্ট্যান্ডে ভাঙারি ব্যবসায়ী মঞ্জুরুলের কাছে পাঠান। সেখান থেকে পিকআপ ভ্যানে অন্যত্র নেওয়া হয়।

কয়েকজন শিক্ষক বলেন, বিষয়টি তাঁরা শুরু থেকে জানলেও ভয়ে মুখ খোলেননি। পরে শিক্ষকদের দলাদলির কারণে বিষয়টি জানাজানি হয়।

বিদ্যালয়ের পিয়ন ফরহাদ আলী বলেন, ‘বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিম আমাকে বইগুলো বস্তায় করে বিদ্যালয়ের বাইরে পাঠাতে বলেন। এই কাজের জন্য প্রতিরাতে ৫শ টাকা করে পারিশ্রমিক দিয়েছেন। ভয়ের কিছু নাই বলেও আমাকে আশ্বস্ত করেন।’

বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী আব্দুস সামাদ বলেন, ‘বইগুলো আমরা বস্তায় ভরেছি। ৩০ থেকে ৪০ বস্তা হবে। বই বিক্রির বিষয়ে আমার কিছু জানা নাই। যা করার স্যারেরা করেছেন।

দপ্তরি বাবলু মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, এর সঙ্গে তিনি জড়িত নন। সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিম এবং সহকারী শিক্ষক আব্দুস সালামের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিক বার যোগাযোগ করা হলেও তাঁরা ফোন রিসিভ করেননি। তবে এই ঘটনায় তাঁরা জড়িত নন বলে সম্প্রতি সাংবাদিকদের দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে দাবি করেছেন।

 ভাঙারি ব্যবসায়ী মঞ্জুরুল হোসেন জানান, মাঝিড়া স্কুলের বই তাঁর দোকানে মাপা হলেও তিনি কিনেননি। এক সকালে পিকআপ ভ্যানে বইগুলো নেওয়া হয়েছে। কোথায় নিয়ে গেছে তা তিনি জানেন না। মাপার সময় সহকারী শিক্ষক আব্দুস সালামসহ বিদ্যালয়ের কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মাহবুবুল হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওই গুদামে কী পরিমাণ বই ছিল তার সঠিক হিসাব আমাদের কাছে নাই। তবে ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বই ওই স্কুলে রাখা ছিল। বই হারানোর ঘটনায় প্রধান শিক্ষককে সাত কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে।’

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মির্জা দিলরুবা লাকী বলেন, ‘স্কুলে কিছু পুরোনো কাগজপত্র ছিল। তার মধ্যে ২০১৫ এবং ২০১৬ সালের পুরোনো কিছু বই ছিল। এসএসসি পরীক্ষার মধ্যে আমরা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসকে জানাই যে, আমাদের কক্ষটি লাগবে। তাঁরা আমাদের স্থানান্তর করতে বলেন। আমরা সেগুলো স্থানান্তর করি এবং ব্যবহার অযোগ্য কিছু বই বিক্রি করা হয়েছে।’

শাজাহানপুর থানার ওসি আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, বই হারিয়েছে উল্লেখ করে মাঝিড়া মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মির্জা দিলরুবা লাকী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন।

জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার (ডিইও) মো. হযরত আলী বলেন, ‘বিষয়টি জানার পর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারকে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত