শিক্ষিকা এশা ত্রিপুরার মৃত্যু স্বাভাবিক নয়: ধারণা পুলিশের

রাঙামাটি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৫ জুলাই ২০২৩, ১৮: ২৪
আপডেট : ২৫ জুলাই ২০২৩, ১৮: ৩৭

খাগড়াছড়ি শহরের পশ্চিম মহাজন পাড়ায় সরকারি প্রাথমিক স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা এশা ত্রিপুরা নবিনার মৃত্যু স্বাভাবিক নয়। তাঁকে খুন করা হয়েছে। শরীরের একাধিক জখমের চিহ্ন বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বলে জানায় পুলিশ। 

খাগড়াছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে আমরা নিশ্চিত হয়েছি এটি হত্যাকাণ্ড এবং এশা ত্রিপুরার স্বামী উদ্দীপন ত্রিপুরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন আমরা ধারণা করছি। কারণ, ঘটনার সময় তাঁদের বাড়িতে উদ্দীপন ছাড়া কেউ ছিল না। আমরা তাঁকে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের কাছে পাঁচ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছি।’ 

এর আগে শুক্রবার ভোরে গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিয়ে যান স্বামী ও প্রতিবেশীরা। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক অনেক আগে রোগীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানান। 

পরদিন সদর থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করে এশা ত্রিপুরার ভাই খোকা রঞ্জন ত্রিপুরা। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ‘আমার বোনের মাথায় আঘাতের চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। কে বা কাহারা পরিকল্পিতভাবে আমার বোনকে হত্যা করেছে।’ 

স্বজনদের অভিযোগ, ‘এশার স্বামী উদ্দীপন ত্রিপুরা শুরুতেই এটি স্ট্রোক বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। লাশ হাসপাতালে না নিয়ে তার বাড়ি জেলার পানছড়ির কুড়াদিয়া ছড়ায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে প্রতিবেশীদের চাপে উদ্দীপন লাশ হাসপাতালে নিতে বাধ্য হয়।’ 

একটি সূত্র জানায়, হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকেরা এটিকে স্ট্রোকে মৃত্যু নয় বলে জানিয়ে দেন। এরপর পুলিশ লাশটি ময়নাতদন্তের প্রস্তুতি গ্রহণ করে। এতে বাধা হয়ে দাঁড়ান স্বামী উদ্দীপন ত্রিপুরা। এ সময় উদ্দীপন লাশের ময়নাতদন্ত না করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করেন। জেলার ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষ সারির নেতা দিয়ে ময়নাতদন্ত না করতে পুলিশকে অনুরোধ করা হয়। 

খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের এক সদস্য এ ঘটনাকে ধামাচাপা দিতে শুরু থেকে তৎপর ছিলেন। ফলে ময়নাতদন্ত কাজ করতে দেরি হয়। 

সূত্র আরও জানায়, এশার লাশ পাওয়া যায় বাথরুমে। রক্তে পুরো বাথরুম ভেসে গিয়েছিল। এশার কোমরের ওপরে, পিঠে, মাথায় একাধিক জখম ছিল। ঘটনা নিয়ে এশার স্বামী উদ্দীপন ত্রিপুরা শুরু থেকে অসংলগ্ন কথাবার্তা বলতে থাকেন। তাঁর কথাগুলোর একটির সঙ্গে আরেকটি মিল নেই। 

খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক রিপল বাপ্পি চাকমা বলেন, ‘হাসপাতালে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। এ রিপোর্ট পেতে দেড় মাস সময় লাগবে।’ 

খাগড়াছড়ি সদর থানার তদন্ত কর্মকর্তা উৎপল বিশ্বাস বলেন, হাসপাতালের চিকিৎসকেরা পুলিশকে লিখিতভাবে এশা ত্রিপুরার লাশের বিষয়ে অবগত করেন এটি স্ট্রোকজনিত মৃত্যু নয় জানান। লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। তবে এখনো ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। হত্যাকাণ্ডের রাতে এশা ত্রিপুরা স্বামী ও শিশু সন্তানরা ছাড়া বাসায় আর কেউ ছিল না।

জানা যায়, উদ্দীপন ত্রিপুরার সঙ্গে এশা ত্রিপুরার ১৫ বছরের দাম্পত্য জীবন। তাঁদের দুটি সন্তান রয়েছে। উদ্দীপন ত্রিপুরা বেকার। এশা ত্রিপুরারা যখন মাটিরাঙায় ছিলেন, তখন তাঁদের ঘরের গৃহকর্তীর সঙ্গে উদ্দীপনের পরকীয়া ছিল। এ নিয়ে পরিবারে অশান্তি ছিল। এ ছাড়া উদ্দীপন স্ত্রীকে সব সময় সন্দেহ করতেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত