মো. কাউছার আলম, পটিয়া (চট্টগ্রাম)
বহুল আলোচিত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার রায় আগামীকাল সোমবার। ঘটনার প্রায় দেড় বছর পর রায়ের দিন ধার্য করেন কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাঈল।
এ মামলার ১ নম্বর আসামি ও বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের বরখাস্ত পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ১৫ আসামির কী ধরনের সাজা হবে তা নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই। এদিকে বরখাস্ত বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের সাবেক পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও তাঁর সহযোগীদের যেন ফাঁসি হয় সে রায় চান পটিয়া'র জনসাধারণ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পটিয়ার একাধিক ব্যক্তি বলেন, মেজর সিনহা হত্যাকারী লিয়াকত আলী পটিয়ার জন্য কলঙ্ক। তিনি পুলিশের প্রভাব খাঁটিয়ে পটিয়ায় মাদক ব্যবসা করে আসছেন। তাঁর অনুসারীরা মাদক ও অন্যান্য মামলায় আটক হলেও লিয়াকতের অদৃশ্য ক্ষমতার দাপটে কয়েক দিন পরই ছাড়া পেয়ে যেত। তাই পটিয়ার জনসাধারণ লিয়াকত আলীসহ তাঁর সহযোগীদেরও যেন এ হত্যাকাণ্ডের জন্য সর্বোচ্চ বিচার ফাঁসি হয়, সেই রায় চান।
কে এই লিয়াকত আলী:
টেকনাফে চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহত হওয়ার ঘটনায় আলোচনায় উঠে আসে বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক পরিদর্শক লিয়াকত আলীর নাম। চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব হুলাইন গ্রামে লিয়াকতের বাড়ি। তিনি ওই গ্রামের মৃত মো. সাহাব মিয়ার ছেলে। ছয় ভাই ও এক বোনের মধ্যে লিয়াকত পঞ্চম। লিয়াকত আলী ২০১০ সালে পুলিশে যোগ দেন। লিয়াকত প্রথমে ডিবি, পরে সোয়াত ও অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটে কাজ করেন।
লিয়াকত আলী প্রথমে চন্দনাইশ উপজেলায় বিয়ে করেন। ওই স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পর বোয়ালখালী উপজেলায় দ্বিতীয় বিয়ে করেন। ওই ঘরে তাঁর চার বছরের এক ছেলে রয়েছে।
২০২০ সালের ১৮ জানুয়ারি টেকনাফ থানার বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রে যোগদান করেন লিয়াকত আলী। পরে ওই বছরেরই ৩১ জুলাই ঘটনার দুই বছর আগে পুলিশ পরিদর্শক পদে পদোন্নতি পান। তদন্তকেন্দ্রে যোগদানের সাত মাসের মধ্যেই তিনি এলাকায় মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে ওঠেন।
জানা যায়, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেশিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এলাকায় চেকপোস্টে সাবেক পরিদর্শক লিয়াকত আলীর সরাসরি গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা। টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) নির্দেশ পাওয়ার পরই সিনহাকে গুলি করেন তিনি। এ সময় সিনহার সহযোগী সিদ্ধান্তকে আটক করেন লিয়াকত।
এ ঘটনায় ওসি প্রদীপ ও লিয়াকতসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে সিনহার বোন আদালতে মামলা করার পরেই আলোচনায় আসে লিয়াকত আলীর নাম। এর পরেই অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসতে থাকে লিয়াকতের একের পর এক কাহিনি। বাহারছড়া এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী ও মানব পাচারের অভিযোগ তুলে অনেকের কাছ থেকেই চাঁদা আদায় করতেন তিনি।
ওই এলাকার বেশ কয়েকটি ফিশারিজ ঘাট থেকেও নিয়মিত মাসোহারা আদায় করতেন তিনি। পাশাপাশি প্রদীপের মতো টাকা নেওয়ার পরও ক্রসফায়ারে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে লিয়াকতের বিরুদ্ধেও।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৫ সালে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানাধীন ইছানগর এলাকায় এক জঙ্গি অভিযানে ১৫ বছরের এক কিশোরসহ তিনজনকে গুলি করে হত্যা করেন লিয়াকত আলী। এ ছাড়া ২০১৬ সালে সীতাকুণ্ডে এক কথিত জঙ্গি অভিযানে আরও দুজনকে গুলি করে হত্যা করেন তিনি। তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের কিলিং টিমের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবেও তিনি কাজ করতেন বলে জানা গেছে।
২০১০ সালে লিয়াকত সরাসরি পুলিশের উপপরিদর্শক পদে চাকরি পান। পুলিশের চাকরি পাওয়ার পর লিয়াকত আলী ভালো থাকলেও সিএমপিতে থাকা অবস্থায় তৎকালীন সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে তাঁর পরিচিতি ছিল। সর্বশেষ কক্সবাজারে বদলি হওয়ার পর ওসি প্রদীপ দাসের সঙ্গে মিলে নানা ঘটনার জন্ম দেন লিয়াকত। মূলত সিনহা হত্যার ঘটনাটি তারই একটি উদাহরণ।
যদিও ঘটনার পর কক্সবাজার পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, রাশেদ তাঁর পরিচয় দিয়ে ‘তল্লাশিতে বাধা দেন’। পরে ‘পিস্তল বের করলে’ চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ তাঁকে গুলি করে। তবে পুলিশের এমন ভাষ্য নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন ওঠে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহত সাবেক সেনা কর্মকর্তার এক সঙ্গীর বক্তব্যের সঙ্গে পুলিশের ভাষ্যের অমিল রয়েছে বলে একটি সূত্র জানায়। এমন প্রেক্ষাপটে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখতে উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ওসি প্রদীপের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে নিজেও এলাকায় গড়ে তোলেন শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এদিনে সিনহা রাশেদের মৃত্যুর ঘটনার পর তদন্তের স্বার্থে টেকনাফের বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ লিয়াকত হোসেনসহ ১৬ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে সিনহা ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা করে র্যাব।
গত বছরের ২৭ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে মামলাটির বিচারকাজ শুরু হয়। চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি সর্বশেষ দুই আসামির পক্ষে তাঁদের আইনজীবীদের যুক্তি উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে আগামীকাল সোমবার রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণ করেন বিচারক।
মামলার বর্ণনা:
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়ার শামলাপুরে এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি (টেকনাফে দুটি, রামুতে একটি) মামলা করেছিল। সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যাওয়া সিনহা ‘লেটস গোথ’ নামে একটি ভ্রমণবিষয়ক ডকুমেন্টারি বানানোর জন্য সে সময় প্রায় এক মাস ধরে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকায় ছিলেন। ওই কাজে তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের শিক্ষার্থী সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথ।
কক্সবাজারের সে সময়ের পুলিশ বলেছিল, সিনহা তাঁর পরিচয় দিয়ে তল্লাশিতে বাধা দেন। পরে পিস্তল বের করলে চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলী তাঁকে গুলি করেন। ঘটনার পাঁচ দিন পর, অর্থাৎ ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে র্যাবকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। তদন্ত শেষে র্যাব ১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়।
এ মামলার আসামিরা হলেন—টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বরখাস্ত পরিদর্শক লিয়াকত আলী, এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল-মামুন, মোহাম্মদ মোস্তফা, এপিবিএনের তিন সদস্য এসআই মোহাম্মদ শাহজাহান, কনস্টেবল মোহাম্মদ রাজীব ও মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, পুলিশের মামলার তিন সাক্ষী নুরুল আমিন, নেজাম উদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াজ, টেকনাফ থানার সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও সাবেক এএসআই সাগর দেব।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফরিদুল আলম বলেন, ‘সিনহা হত্যা মামলায় সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ১৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। রায়ে সব আসামির সর্বোচ্চ সাজা প্রত্যাশা করছি।’ তবে আসামিপক্ষ বলছে, রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। কাজেই তাঁরা খালাস পাবেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, সিনহা নিহতের ছয় দিন পর লিয়াকত আলী ও ওসি প্রদীপসহ সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার অভিযোগে টেকনাফ থানার পুলিশের দায়ের করা মামলার তিন সাক্ষী ও শামলাপুর চেকপোস্টে ঘটনার সময় দায়িত্ব পালনকারী এপিবিএনের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন টেকনাফ থানার সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মা।
গত বছরের ২৪ জুন মামলার অন্য পলাতক আসামি টেকনাফ থানার সাবেক এএসআই সাগর দেব আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আসামিদের মধ্যে ওসি প্রদীপ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা ছাড়া অন্য ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তদন্ত শেষে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব-১৫-এর তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
গত বছরের ২৭ জুন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল মামলার অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেওয়া হয়।
বিচারকারজের প্রথম দফায় গত ২৩ থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত তিন দিনে এ মামলায় সাক্ষ্য দেন দুজন। তাঁরা হলেন মামলার বাদী ও সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস এবং ২ নম্বর সাক্ষী ঘটনার সময় সিনহার সঙ্গে গাড়িতে থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাত।
দ্বিতীয় দফায় চার দিনে চার, তৃতীয় দফার তিন দিনে আট, চতুর্থ দফার দুই দিনে ছয়, পঞ্চম দফার তিন দিনে ১৫, ষষ্ঠ দফার তিন দিনে ২৪, সপ্তম দফার তিন দিনে পাঁচ ও অষ্টম দফায় তিন দিনে একজনের (তদন্তকারী কর্মকর্তা) সাক্ষ্য নেওয়া হয়। নবম দফায় ১৫ আসামির সাক্ষ্য নেওয়া হয়। এরপর আগামীকাল রায়ের দিন নির্ধারণ করেন বিচারক।
বহুল আলোচিত সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার রায় আগামীকাল সোমবার। ঘটনার প্রায় দেড় বছর পর রায়ের দিন ধার্য করেন কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাঈল।
এ মামলার ১ নম্বর আসামি ও বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের বরখাস্ত পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ১৫ আসামির কী ধরনের সাজা হবে তা নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই। এদিকে বরখাস্ত বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের সাবেক পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলী ও তাঁর সহযোগীদের যেন ফাঁসি হয় সে রায় চান পটিয়া'র জনসাধারণ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পটিয়ার একাধিক ব্যক্তি বলেন, মেজর সিনহা হত্যাকারী লিয়াকত আলী পটিয়ার জন্য কলঙ্ক। তিনি পুলিশের প্রভাব খাঁটিয়ে পটিয়ায় মাদক ব্যবসা করে আসছেন। তাঁর অনুসারীরা মাদক ও অন্যান্য মামলায় আটক হলেও লিয়াকতের অদৃশ্য ক্ষমতার দাপটে কয়েক দিন পরই ছাড়া পেয়ে যেত। তাই পটিয়ার জনসাধারণ লিয়াকত আলীসহ তাঁর সহযোগীদেরও যেন এ হত্যাকাণ্ডের জন্য সর্বোচ্চ বিচার ফাঁসি হয়, সেই রায় চান।
কে এই লিয়াকত আলী:
টেকনাফে চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহত হওয়ার ঘটনায় আলোচনায় উঠে আসে বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের সাবেক পরিদর্শক লিয়াকত আলীর নাম। চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার হাবিলাসদ্বীপ ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব হুলাইন গ্রামে লিয়াকতের বাড়ি। তিনি ওই গ্রামের মৃত মো. সাহাব মিয়ার ছেলে। ছয় ভাই ও এক বোনের মধ্যে লিয়াকত পঞ্চম। লিয়াকত আলী ২০১০ সালে পুলিশে যোগ দেন। লিয়াকত প্রথমে ডিবি, পরে সোয়াত ও অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটে কাজ করেন।
লিয়াকত আলী প্রথমে চন্দনাইশ উপজেলায় বিয়ে করেন। ওই স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পর বোয়ালখালী উপজেলায় দ্বিতীয় বিয়ে করেন। ওই ঘরে তাঁর চার বছরের এক ছেলে রয়েছে।
২০২০ সালের ১৮ জানুয়ারি টেকনাফ থানার বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রে যোগদান করেন লিয়াকত আলী। পরে ওই বছরেরই ৩১ জুলাই ঘটনার দুই বছর আগে পুলিশ পরিদর্শক পদে পদোন্নতি পান। তদন্তকেন্দ্রে যোগদানের সাত মাসের মধ্যেই তিনি এলাকায় মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে ওঠেন।
জানা যায়, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেশিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এলাকায় চেকপোস্টে সাবেক পরিদর্শক লিয়াকত আলীর সরাসরি গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা। টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) নির্দেশ পাওয়ার পরই সিনহাকে গুলি করেন তিনি। এ সময় সিনহার সহযোগী সিদ্ধান্তকে আটক করেন লিয়াকত।
এ ঘটনায় ওসি প্রদীপ ও লিয়াকতসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে সিনহার বোন আদালতে মামলা করার পরেই আলোচনায় আসে লিয়াকত আলীর নাম। এর পরেই অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসতে থাকে লিয়াকতের একের পর এক কাহিনি। বাহারছড়া এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী ও মানব পাচারের অভিযোগ তুলে অনেকের কাছ থেকেই চাঁদা আদায় করতেন তিনি।
ওই এলাকার বেশ কয়েকটি ফিশারিজ ঘাট থেকেও নিয়মিত মাসোহারা আদায় করতেন তিনি। পাশাপাশি প্রদীপের মতো টাকা নেওয়ার পরও ক্রসফায়ারে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে লিয়াকতের বিরুদ্ধেও।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৫ সালে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানাধীন ইছানগর এলাকায় এক জঙ্গি অভিযানে ১৫ বছরের এক কিশোরসহ তিনজনকে গুলি করে হত্যা করেন লিয়াকত আলী। এ ছাড়া ২০১৬ সালে সীতাকুণ্ডে এক কথিত জঙ্গি অভিযানে আরও দুজনকে গুলি করে হত্যা করেন তিনি। তৎকালীন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের কিলিং টিমের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবেও তিনি কাজ করতেন বলে জানা গেছে।
২০১০ সালে লিয়াকত সরাসরি পুলিশের উপপরিদর্শক পদে চাকরি পান। পুলিশের চাকরি পাওয়ার পর লিয়াকত আলী ভালো থাকলেও সিএমপিতে থাকা অবস্থায় তৎকালীন সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে তাঁর পরিচিতি ছিল। সর্বশেষ কক্সবাজারে বদলি হওয়ার পর ওসি প্রদীপ দাসের সঙ্গে মিলে নানা ঘটনার জন্ম দেন লিয়াকত। মূলত সিনহা হত্যার ঘটনাটি তারই একটি উদাহরণ।
যদিও ঘটনার পর কক্সবাজার পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, রাশেদ তাঁর পরিচয় দিয়ে ‘তল্লাশিতে বাধা দেন’। পরে ‘পিস্তল বের করলে’ চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ তাঁকে গুলি করে। তবে পুলিশের এমন ভাষ্য নিয়ে শুরু থেকেই প্রশ্ন ওঠে। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও নিহত সাবেক সেনা কর্মকর্তার এক সঙ্গীর বক্তব্যের সঙ্গে পুলিশের ভাষ্যের অমিল রয়েছে বলে একটি সূত্র জানায়। এমন প্রেক্ষাপটে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখতে উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ওসি প্রদীপের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে নিজেও এলাকায় গড়ে তোলেন শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এদিনে সিনহা রাশেদের মৃত্যুর ঘটনার পর তদন্তের স্বার্থে টেকনাফের বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ লিয়াকত হোসেনসহ ১৬ পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে সিনহা ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে পৃথক তিনটি মামলা করে র্যাব।
গত বছরের ২৭ জুন আনুষ্ঠানিকভাবে মামলাটির বিচারকাজ শুরু হয়। চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি সর্বশেষ দুই আসামির পক্ষে তাঁদের আইনজীবীদের যুক্তি উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে আগামীকাল সোমবার রায় ঘোষণার দিন নির্ধারণ করেন বিচারক।
মামলার বর্ণনা:
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়ার শামলাপুরে এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন অবসরপ্রাপ্ত মেজর। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি (টেকনাফে দুটি, রামুতে একটি) মামলা করেছিল। সেনাবাহিনী থেকে অবসরে যাওয়া সিনহা ‘লেটস গোথ’ নামে একটি ভ্রমণবিষয়ক ডকুমেন্টারি বানানোর জন্য সে সময় প্রায় এক মাস ধরে কক্সবাজারের হিমছড়ি এলাকায় ছিলেন। ওই কাজে তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের শিক্ষার্থী সাহেদুল ইসলাম সিফাত ও শিপ্রা দেবনাথ।
কক্সবাজারের সে সময়ের পুলিশ বলেছিল, সিনহা তাঁর পরিচয় দিয়ে তল্লাশিতে বাধা দেন। পরে পিস্তল বের করলে চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলী তাঁকে গুলি করেন। ঘটনার পাঁচ দিন পর, অর্থাৎ ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে র্যাবকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। তদন্ত শেষে র্যাব ১৫ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়।
এ মামলার আসামিরা হলেন—টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বরখাস্ত পরিদর্শক লিয়াকত আলী, এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুর করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল-মামুন, মোহাম্মদ মোস্তফা, এপিবিএনের তিন সদস্য এসআই মোহাম্মদ শাহজাহান, কনস্টেবল মোহাম্মদ রাজীব ও মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, পুলিশের মামলার তিন সাক্ষী নুরুল আমিন, নেজাম উদ্দিন ও মোহাম্মদ আয়াজ, টেকনাফ থানার সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও সাবেক এএসআই সাগর দেব।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ফরিদুল আলম বলেন, ‘সিনহা হত্যা মামলায় সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে ১৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি। রায়ে সব আসামির সর্বোচ্চ সাজা প্রত্যাশা করছি।’ তবে আসামিপক্ষ বলছে, রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। কাজেই তাঁরা খালাস পাবেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, সিনহা নিহতের ছয় দিন পর লিয়াকত আলী ও ওসি প্রদীপসহ সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। পরে ঘটনায় সংশ্লিষ্টতা পাওয়ার অভিযোগে টেকনাফ থানার পুলিশের দায়ের করা মামলার তিন সাক্ষী ও শামলাপুর চেকপোস্টে ঘটনার সময় দায়িত্ব পালনকারী এপিবিএনের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন টেকনাফ থানার সাবেক কনস্টেবল রুবেল শর্মা।
গত বছরের ২৪ জুন মামলার অন্য পলাতক আসামি টেকনাফ থানার সাবেক এএসআই সাগর দেব আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। আসামিদের মধ্যে ওসি প্রদীপ ও কনস্টেবল রুবেল শর্মা ছাড়া অন্য ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। তদন্ত শেষে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র্যাব-১৫-এর তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার মো. খাইরুল ইসলাম ১৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।
গত বছরের ২৭ জুন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল মামলার অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেওয়া হয়।
বিচারকারজের প্রথম দফায় গত ২৩ থেকে ২৫ আগস্ট পর্যন্ত তিন দিনে এ মামলায় সাক্ষ্য দেন দুজন। তাঁরা হলেন মামলার বাদী ও সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস এবং ২ নম্বর সাক্ষী ঘটনার সময় সিনহার সঙ্গে গাড়িতে থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাত।
দ্বিতীয় দফায় চার দিনে চার, তৃতীয় দফার তিন দিনে আট, চতুর্থ দফার দুই দিনে ছয়, পঞ্চম দফার তিন দিনে ১৫, ষষ্ঠ দফার তিন দিনে ২৪, সপ্তম দফার তিন দিনে পাঁচ ও অষ্টম দফায় তিন দিনে একজনের (তদন্তকারী কর্মকর্তা) সাক্ষ্য নেওয়া হয়। নবম দফায় ১৫ আসামির সাক্ষ্য নেওয়া হয়। এরপর আগামীকাল রায়ের দিন নির্ধারণ করেন বিচারক।
রাজধানীর বিমানবন্দরে শরীরে বিশেষ কৌশলে গাঁজা নিয়ে এসে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছে তিনজন কিশোর। তাঁরা বর্তমানে কিশোর সংশোধনাগারের রয়েছে।
১৫ দিন আগেপরিবারে আর্থিক স্বচ্ছলতা ফেরাতে সিঙ্গাপুরে যান দুই ভাই উজ্জ্বল মিয়া ও মো. ঝন্টু। সেখানে থাকা অবস্থায় মুঠোফোনে ভাবির সঙ্গে পরকীয়ায় জড়ান ছোট ভাই মো. ঝন্টু। পরে দেশে ফিরে ভাবিকে বিয়ে করার জন্য আপন বড় ভাই উজ্জ্বল মিয়াকে খুন করে ছোট ভাই।
১৫ দিন আগেরাজধানীর গেণ্ডারিয়ায় গত দুই মাসে দুই অটোরিকশা চালককে হত্যা করে রিকশা ছিনিয়ে নেওয়া ঘটনা ঘটেছে। পৃথক এই দুই ঘটনায় তদন্তে নেমে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
১৫ দিন আগেপাবনার পদ্মা নদী থেকে কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ১২ বছরের এক কিশোর এবং ২২ বছরের এক তরুণীর অর্ধগলিত দুইটি মরদেহ উদ্ধার করেছে নাজিরগঞ্জ নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি। উদ্ধারের দুইদিনেও কোনো পরিচয় পাওয়া যায়নি। রোববার সন্ধ্যায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নাজিরগঞ্জ নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাইদুর রহমান।
১৯ দিন আগে