লক্ষ্মীপুরের জনেশ্বরদিঘিতে পরিযায়ী পাখির বিচরণ

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ২১: ৪৬
Thumbnail image
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের জনেশ্বরদিঘিতে পরিযায়ী পাখি। ছবি: আজকের পত্রিকা

শীতের মধ্যে পরিযায়ী পাখিদের বিচরণ লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের জনেশ্বরদিঘিতে। দিনভর পাখির কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত এই এলাকা। পাখি দেখতে ভিড় করছেন স্থানীয়রা। ১২ বছর ধরে শীতের শুরুতে ভোরে পাখিগুলো অবস্থান নেয় দিঘিতে। আর সন্ধ্যায় উড়াল দিয়ে চলে যায় অন্যত্র। শীত চলে গেলে পাখিগুলো আর দেখা যায় না।

স্থানীয়দের দাবি, কেউ যাতে পাখি শিকার করতে না পারে সেজন্য তাঁরা কাজ করছেন। তবে জেলা প্রশাসক বলছে, এই দুর্গম এলাকায় মনোরম পরিবেশে এইভাবে পাখিদের বিচরণ থাকবে তা চিন্তাই করা যায় না। তাই পাখি সংরক্ষণ ও পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা যায় কিনা সে বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, সদর উপজেলা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে উত্তর জয়পুর ইউনিয়নের জনেশ্বরদিঘি। আর এই দিঘিতে এখন বিচরণ করছে অগণিত পরিযায়ী পাখি। এসব পাখি হাজার মাইল দূর থেকে এসে মোহনীয় করে তুলছে প্রকৃতি ও পরিবেশ। দিঘিরপাড়ের আশ-পাশে এখন পরিযায়ী পাখির নির্ভয় বিচরণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। শীতের শুরুতেই দিঘিতে পরিযায়ী পাখির দল বেঁধে ওড়াউড়ি, ছোটাছুটি আর ডুব সাঁতারের সুন্দর মুহূর্ত দেখে মুগ্ধ মাঝি, কৃষাণ-কৃষাণী ও স্থানীয়রা। ঝাঁকে ঝাঁকে পরিযায়ী পাখির উড়ন্ত দৃশ্য উপভোগ করতে পিছিয়ে নেই দর্শনার্থী। প্রতি বছর ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পরিযায়ী পাখির কলতানে মুখর হয়ে ওঠে দিঘি ও এর আশপাশ।

স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম ও ইউসুফ হোসেন বলেন, গত ১২ বছর ধরে এই দিঘিতে ভোরবেলায় ঝাঁকে ঝাঁকে পাখিগুলো আসে। আর সন্ধ্যায় চলে যায়। তবে পাখিগুলো যেন কেউ শিকার করতে না পারে বা বিরক্ত করতে না পারে, সে জন্য স্থানীয়রা পাহারার কাজও করছেন। অনেক সুন্দর লাগছে পাখিগুলোকে। দূরদূরান্ত থেকে লোকজন আসছেন পাখি দেখতে। দিঘিতে পাখিগুলো বিচরণ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছে। এর মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির দুর্লভ হাঁস, ছোট কান প্যাঁচা, জিরিয়া, টিটি, মনকাণ্ড, চখাচখিসহ কয়েক প্রজাতির পাখির দেখা মিলেছে দিঘিতে। তাই দিঘিকে যেন পাখির নির্ভয় বিচরণ ক্ষেত্রে পরিণত করা যায় এ জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগের দায়িত্বশীলদের এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করছেন তাঁরা।

পাখিপ্রেমী মো. ইছমাইল হোসেন ও সফিকুল ইসলাম বলেন, আগে ভোর থেকেই পাখির কলকাকলিতে আমাদের ঘুম ভাঙত। কিন্তু নদী, প্রকৃতি ও পরিবেশ প্রতিনিয়ত ধ্বংস হচ্ছে। পাখির বাসযোগ্য স্থানগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে উড়ে আসা পরিযায়ী পাখিদের জন্য আমাদের নদীমাতৃক এ দেশের সৌন্দর্য যেমন মন কাড়ে, তেমনি কষ্টও লাগে যখন দেখি শিকারির হাতে বন্দী পাখি। তাই দিঘিতে নিরাপদ ভেবে পাখিরা আশ্রয় নেয়। পাখিদের যেন কেউ শিকার করতে না পারে, সে জন্য প্রতিনিয়ত স্থানীয়রা কাজ করে যাচ্ছে। আর কেউ পাখিদের শিকার বা ক্ষতি করছে না।

মো. রেজাউল করিম নামের এক বাসিন্দা বলেন, প্রতি বছর ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দিঘিতে কমবেশি পরিযায়ী পাখি আসে। প্রতি বছরের মতো এবারও আসছে। তবে এবার বেশ কিছু নতুন পরিযায়ী পাখির দেখা পাওয়া যাচ্ছে। দিঘির পরিবেশ-প্রকৃতি পাখিদের অনুকূলে থাকায় নিরাপদ আশ্রয়স্থল মনে করছে এই পাখিগুলো। তাই সংরক্ষণ ও রক্ষায় দলবদ্ধভাবে স্থানীয়রা কাজ করে যাচ্ছে। যেন এটি সব সময় থাকে, সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। পাখির বিচরণ দেখে মুগ্ধ হয় স্থানীয় এলাকাবাসীসহ দর্শনার্থীরা।

দিঘিতে আসা পরিযায়ী পাখি যেন কেউই মারতে না পারে সে জন্য প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন জেলা প্রশাসক রাজিব কুমার সরকার। তিনি বলেন, প্রকৃতি ও পরিবেশ প্রতিনিয়ত ধ্বংস হচ্ছে। পাখির বাসযোগ্য স্থানগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এই দিঘিতে পাখিদের বিচরণে সত্যি মুগ্ধ হই। এইভাবে পাখিদের বিচরণ থাকবে তা চিন্তাই করা যায় না। তাই পাখি সংরক্ষণ ও পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা যায় কিনা, সে বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত