ভবন ভাঙচুর ও মারধরের অভিযোগ শুনে যুবলীগ নেতা বললেন, ‘হামলার নাটক’

পটিয়া (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৮ ডিসেম্বর ২০২২, ১৬: ০১

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের অর্থ সম্পাদক হাবিবুল হক চৌধুরীর বিরুদ্ধে নির্মাণাধীন ভবন ভাঙচুর ও ওই ভবনে কর্মরত শ্রমিক, প্রকৌশলী ও ব্যবসায়ীদের মারধরের অভিযোগ উঠছে। ওই অভিযোগ থানা গ্রহণ করেনি বলেও ভুক্তভোগীরা দাবি করেছেন। তবে এ ঘটনাকে ‘হামলার নাটক’ হিসেবে বর্ণনা করে অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন ওই যুবলীগ নেতা এবং এ বিষয়ে থানায় কোনো অভিযোগ নিয়ে কেউ যায়নি পুলিশ দাবি করেছে। 

অভিযোগকারীরা জানান, ২৫ ডিসেম্বর রোববার বেলা ১১টার দিকে পটিয়া থানা মোড়ে কেপিডিএল ক্রাউন সেন্টার নামে নির্মাণাধীন আট তলা ভবনের চার তলায় প্রায় ১২ জন লাঠিসোঁটা নিয়ে সেখানকার শ্রমিকদের বেধড়ক পেটায়। তাঁরা কয়েকটি কাঁচা দেয়ালের গাঁথুনি ও অন্যান্য নির্মাণসামগ্রী ভেঙে ফেলে। পরে নিচতলায় অবস্থিত কেপিডিএল ক্রাউন সেন্টারের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালায়। 

এ সময় এই সেন্টারের প্রকৌশলী মো. মহসিনকেও মারধর করে। পরিস্থিতি দেখে নির্যাতনের শিকার প্রকৌশলীকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে ভবনটির নিচতলার মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। এ সময় ব্যবসায়ীদেরও মারধর করে ভবন ছেড়ে দিতে হুমকি দেওয়া হয়। 

ওই দিনই দুপুরে পটিয়া থানায় অভিযোগ করতে যান বলে দাবি করেছেন কেপিডিএল ক্রাউন সেন্টারের হেড অব মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস কর্মকর্তা মাহমুদুল হাসান (৩৪)। সেখানে হাবিবুল হক চৌধুরীর লোকজন তাঁর ওপর আবার হামলা চালায় এবং পুলিশ তাঁকে রক্ষা করলেও থানায় অভিযোগ নিতে চায়নি বলে তার দাবি। 

মাহমুদুল হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘হামলা চালিয়ে তাঁরা আমাদের অফিসের ১২ লাখ টাকার আসবাবপত্র ও নির্মাণসামগ্রী ভেঙে ফেলে। অফিসের ড্রয়ারে রক্ষিত ২২ লাখ ১৫ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায়। ঘটনার রেকর্ড যেন না থাকে সে জন্য ভবনে লাগানো ছয়টি সিসি টিভি ক্যামেরা নষ্ট করে ফেলেন। এমনকি ক্যামেরার হার্ড ডিস্কও নিয়ে যান। যাওয়ার সময় তাঁরা প্রজেক্ট চালাতে হলে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে বলেও হুমকি দেন।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘পরদিন ২৬ ডিসেম্বর সোমবার বিকেলে আবারও কেপিডিএল ক্রাউন সেন্টারে হামলা চালান। এদিন মার্কেটের ব্যবসায়ী, কর্মরত প্রকৌশলী মো. মহসিনকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ভবনটি থেকে তাড়িয়ে দিন। ভবনের মূল ফটকে তালা লাগিয়ে দখলে নেওয়া হয়। এরপর থেকে ওই ভবনের অর্ধ শতাধিক ব্যবসায়ী তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলতে পারছেন না।’ 

কেপিডিএল ক্রাউন সেন্টারে ভাঙচুর চালায় দুর্বৃত্তরা। ছবি: আজকের পত্রিকামারধরের শিকার রাজমিস্ত্রি মো. মাসুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাকে এলোপাতাড়ি আঘাত করা হয়েছে। আমাদের সব শ্রমিককে মারধর করা হয়েছে। তাঁরা এখনো চিকিৎসাধীন।’ 

আর প্রকৌশলী মো. মহসিন বলেন, ‘ওপর তলা থেকে হামলা চালিয়ে তাঁরা নিচতলার অফিসে হামলা চালায়। প্রতিবাদ করলে তাঁরা আমাকে মারধর করে শার্ট ছিঁড়ে ফেলে। মেরে অফিস থেকে তাড়িয়ে দেয়।’ 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যবসায়ী জানান, ভবনের মূল ফটকে তালা লাগিয়ে দেওয়ায় গত তিন দিন ধরে তাঁরা দোকান খুলতে পারছেন না। এ জন্য তাঁদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। 
 
ভাঙচুর ও মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের অর্থ সম্পাদক হাবিবুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কোনো ধরনের হামলার সঙ্গে জড়িত নই। যে অফিস ভাঙা হয়েছে বলা হচ্ছে, সেটি আমার কোম্পানির অফিস। 

‘কেপিডিএল বিল্ডার্সের মালিক কবির হোসেনের কাছে আমরা চার কোটি টাকা পাব। তিনি দীর্ঘ দিন টাকাগুলো পরিশোধ না করার পাঁয়তারা চালাচ্ছেন। এবারও টাকা পরিশোধ না করতে ভবনে হামলার নাটক সাজিয়েছেন।’ 

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবলীগের অর্থ সম্পাদক হাবিবুল হক চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীতভাঙচুর ও হামলার অভিযোগ নিতে অস্বীকার করার অভিযোগের জবাবে পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম মজুমদার বলেন, ‘এটা সত্য নয়। এ বিষয়ে কেউ আমার কাছে অভিযোগ করেনি। থানায় হামলার ঘটনাও ঘটেনি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’ 

ভবনের ব্যবসায়ী ও কেপিডিএল ক্রাউন সেন্টারের সংশ্লিষ্টরা জানান, জেলা যুবলীগের কমিটির অর্থ সম্পাদক হাবিবুল হক চৌধুরী ও তাঁর ভাই দিদারুল হক চৌধুরী পটিয়া থানার মোড়ের এক জায়গায় মার্কেট ও আবাসিক ভবন নির্মাণের জন্য জায়গাটির মালিক আবুল কাশেম গংয়ের সঙ্গে ২০১২ সালে চুক্তিবদ্ধ হন। তাঁদের পরিচালিত ডিউ ডেভেলপার কোম্পানি দোকান ও প্লট বিক্রির নামে বহু মানুষের কাছ থেকে তাঁরা লাখ লাখ টাকা নিলেও প্লট বুঝিয়ে না দিয়ে প্রতারণা করেন বলে তাঁদের অভিযোগ। 

তাঁরা আরও জানান, জনরোষে পড়ে শাহ আমানত মার্কেটে অবস্থিত ডিউ ডেভেলপার কোম্পানির লোকজন অফিস বন্ধ করে পালিয়ে যান। ওই চুক্তির ১০ বছর পার হলেও পুরো ভবনটি নির্মাণ করতে ব্যর্থ হয় ডিউ ডেভেলপার। বাধ্য হয়ে জায়গাটির মালিক আবুল কাশেম গং কেপিডিএল বিল্ডার্স কোম্পানির সঙ্গে বহুতল ভবন নির্মাণের চুক্তি করেন। পরে প্রতিষ্ঠানটি কাজ শুরু করে এখন ভবনটির সাত তলার নির্মাণকাজ করছে। আর এর মধ্যেই সেখানে গড়ে উঠেছে অর্ধ শতাধিক দোকান। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

চট্টগ্রামে নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে নিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে গুজব

ববির ট্রেজারার সাবেক সেনা কর্মকর্তাকে যোগদানে বাধা

বিগত সরকারে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের ক্ষতিপূরণ দিতেই যাবে শতকোটি টাকা

দুই দিনে ৭ ব্যাংককে ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা দিল বাংলাদেশ ব্যাংক

কোনো পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেননি রয়টার্সের প্রতিবেদক: সিএমপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত