সভ্য সমাজে এভাবে চলতে পারে না

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৭: ২৮
আপডেট : ০১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৮: ১২

চিত্রনায়িকা শামসুন্নাহার স্মৃতি ওরফে পরীমণিকে তিন দফায় রিমান্ডে নেওয়ার বিষয়টিকে ‘সভ্য সমাজে এভাবে চলতে পারে না’ বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। এদিকে পরীমণির জামিন প্রশ্নে জারি করা রুল অকার্যকর বলে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আজ বুধবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ মন্তব্য করেন ও জামিন প্রশ্নে রুলের ওপর আদেশ দেন। 

পরীমণিকে রিমান্ডে নেওয়ার বৈধতা প্রশ্নে হাইকোর্টের হস্তক্ষেপ চেয়ে আসকের (আইন ও সালিস কেন্দ্র) করা এক আবেদনের ওপর শুনানিকালে আদালত এ মন্তব্য করেন। আসকের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, মো. মুজিবুর রহমান, ড. সৈয়দা নাসরিন ও অ্যাডভোকেট মো. শাহীনুজ্জামান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবু ইয়াহহিয়া দুলাল ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মিজানুর রহমান। 

অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না শুনানিতে আদালতকে বলেন, রিমান্ড প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টের যেসব নির্দেশনা নিম্ন আদালতকে মেনে চলতে বলা হয়েছিল, যুদ্ধাপরাধীদের মামলা ব্যতীত সাধারণ নাগরিকদের ক্ষেত্রে এসব নির্দেশনা মেনে চলা হয় না। 

এ সময় আদালত বলেন, আবেদনকারীর তো জামিন হয়ে গেছে। তাই রুলটি শুনানির জন্য অকার্যকর (ইমফ্রাকচুয়াস) হয়ে গেছে। আর রিমান্ড নিয়ে যা বলছে, সে বিষয়ে তো আপিল বিভাগের গাইডলাইন আছেই। কিন্তু কেউ মানছে না। 

অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না বলেন, রিমান্ড প্রশ্নে সুপ্রিম কোর্টের গাইডলাইন যাতে অনুসরণ করা হয়, সে জন্য একটি আদেশ চাইছি। 

এর পর পরীমণিকে তিন দফায় কত দিন করে রিমান্ড নেওয়া হয়, সে বিষয়ে আদালতকে জানান অ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৭ ধারায় যে বিধান আছে এবং আমাদের আপিল বিভাগের যে দিকনির্দেশনা (গাইডলাইন) আছে, এগুলো পরীমণির রিমান্ডের ক্ষেত্রে অনুসরণ না করেই তাঁকে তিন দফায় সাত দিন রিমান্ডে নিয়েছে। 

শুনানির একপর্যায়ে আদালত বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৩৫ ও ৪৩৯ ধারা অনুযায়ী জামিনের রুল বিচারাধীন থাকাবস্থায় রিমান্ডের প্রশ্নটি পরীক্ষা করতে পারি। নথি তলব করতে পারি। প্রয়োজন হলে বিচারককে তলব করতে পারি। হাইকোর্ট বিভাগ সবকিছু করতে পারে। কোন ম্যাজিস্ট্রেট পরীমণিকে তৃতীয় দফায় রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দিয়েছেন, তাঁকেও আমরা ডাকতে পারি।’ এ সময় আদালত আইনজীবীদের কাছে ম্যাজিস্ট্রেটের নাম জানতে চান। এ সময় সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মিজানুর রহমান বলেন, ‘কিন্তু সে (পরীমণি) তো এখন রিমান্ডে নেই। তাঁর জামিন হয়ে গেছে। এখন জামিন প্রশ্নে রুল অকার্যকর হয়ে গেছে।’ 

আদালত বলেন, ‘তদন্ত কর্মকর্তা কী তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে রিমান্ডের আবেদন করল, আর বিচারিক আদালত তা মঞ্জুর করে দিলেন। এগুলো পরীক্ষা করা দরকার।’ আদালত বলেন, ‘এগুলো তো কোনো সভ্য সমাজে হতে পারে না, ঘটতে পারে না। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৩৯ ধারার আলোকে মহানগর দায়রা জজ আদালত জামিন আবেদন (৪৯৮ ধারায়) কত দিনের মধ্যে শুনবেন, সে বিষয়ে আমরা একটি দিকনির্দেশনা (গাইডলাইন) দেব।’ 

এ পর্যায়ে আদালত দুপুর ২টায় পরবর্তী শুনানির জন্য সময় নির্ধারণ করেন। তবে ২টার সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ইয়াহিয়া দুলাল সময়ের আবেদন জানিয়ে বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানি করবেন। এ জন্য সময় দরকার। এ আবেদনে আদালত ‘নট টু ডে’ বলে আদেশ দেন। 

পরীমণিকে তিন দফায় সাত দিন রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ অবৈধ ও বেআইনি ঘোষণা চেয়ে গত ২৯ আগস্ট আবেদন করে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিস কেন্দ্র (আসক)। আবেদনে এই রিমান্ড মঞ্জুর করা ও রিমান্ডের আবেদন করার কারণে সংশ্লিষ্ট মহানগর ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশ ও র‍্যাবের প্রতি কারণ দর্শাতে রুল জারির আরজি জানানো হয়। 

গত ২৬ আগস্ট একই হাইকোর্ট বেঞ্চ পরীমণির জামিন প্রশ্নে রুল জারি করে আদেশ দেন। আজ ১ সেপ্টেম্বর রুলের ওপর শুনানির দিন ধার্য করা হয়। এই রুল বিচারাধীন থাকাবস্থায় ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত শুনানির তারিখ এগিয়ে ৩১ আগস্ট পরীমণির জামিন মঞ্জুর করে আদেশ দেন। 

প্রসঙ্গত, গত ৪ আগস্ট পরীমণিকে রাজধানীর বনানীর বাসা থেকে আটক করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সঙ্গে আশরাফুল ইসলাম দিপুকেও আটক করে। তাঁর বাসা থেকে ১৯ বোতল বিদেশি মদ, ৪ গ্রাম আইস মাদক ও একটি এলএসডি ব্লট ও একটি পাইপ উদ্ধার করা হয়। ৫ আগস্ট এ ঘটনায় বনানী থানায় মামলা হয়। ওই দিন আদালতে হাজির করে চার দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয় পরীমণিকে। ১০ আগস্ট আবার দুদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। ১৩ আগস্ট আবার রিমান্ড চায় পুলিশ। রিমান্ড বাতিল করে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়। কারাগারে থাকা অবস্থায় আবারও পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়। ১৯ আগস্ট একদিনের রিমান্ডে পাঠানো হয় তাঁদের। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত