সাভারে পানি-বালুতে গ্যাস রিফিল

রিফাত মেহেদী, সাভার (ঢাকা)
প্রকাশ : ০৮ মে ২০২৩, ০০: ৪৮

রান্নার কাজে ব্যবহৃত তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) খালি সিলিন্ডারে ভরে বিক্রি করছেন সাভারের আশুলিয়ার বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী। আবাসিক এলাকায় এ ধরনের কাজ চলায় বিস্ফোরণের আতঙ্কে আছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এ ছাড়া রিফিল করা সিলিন্ডার কিনে প্রতারিতও হচ্ছেন গ্রাহকেরা। ওজন বাড়াতে সিলিন্ডারে মেশানো হয় পানি ও বালু।  

স্থানীয় বেশ কয়েকজন বাসিন্দার অভিযোগ, আশুলিয়ায় এরই মধ্যে এমন অন্তত ৪০টি জায়গায় অবৈধভাবে সিলিন্ডারে গ্যাস ভরা হয়। সাধারণত, ব্যবহারের জন্য ভোক্তারা স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানের ডিলারদের কাছে থেকে নির্দিষ্ট ওজনের সিলিন্ডার কেনেন। সে গ্যাস ফুরিয়ে গেলে নতুন করে সিলিন্ডার কিনতে হয়। স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানগুলো কারখানায় খালি সিলিন্ডার রিফিল করে। কিন্তু আশুলিয়ার এই ব্যবসায়ীরা উন্মুক্ত স্থানে বড় আকারের সিলিন্ডার থেকে পাইপের মাধ্যমে ছোট সিলিন্ডারে গ্যাস ভর্তি করেন। এ কাজ করতে গিয়ে ৪ মে কাঠগড়া সিকদারবাড়ি এলাকায় বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় আশপাশের অন্তত ২০টি পরিবারের ঘরবাড়ি।

সম্প্রতি আশুলিয়ার তাজপুরে সরেজমিন দেখা যায়, বাসাবাড়ির পাশের একটি জায়গায় ছোট সিলিন্ডার গ্যাস রিফিলের কাজ করছেন শ্রমিকেরা। নূরনবী নামে এক ব্যক্তির তত্ত্বাবধানে তাঁরা এ কাজ করেন। সেখানে ছোট সিলিন্ডার ছিল অর্ধশতাধিক। পাশের নয়াপাড়া এলাকায় শতাধিক সিলিন্ডারে গ্যাস রিফিল করতে দেখা যায়। এখানে কাজ তত্ত্বাবধান করেন কালাম মিয়া নামে এক ব্যক্তি।

নয়াপাড়ার বাসিন্দা কালাম মিয়া বলেন, নূরনবীর হাত ধরে তিনি এ ব্যবসা শুরু করেন। আশুলিয়ায় লালন, করিমসহ আরও অনেকে এ কাজ করেন। স্বীকৃত প্রতিষ্ঠানের ডিলার ও থানাও এসব জানে। ডিলারদের কাছে থেকে বড় সিলিন্ডার নিলে বিক্রি বাড়ে। তাঁদের টার্গেটও পূরণ হয়।  

আরেক ব্যবসায়ী নূরনবী বলেন, ‘লালনের কাছে সব আছে। লালন সব জানে।’ ৪ মে কাঠগড়া সিকদারবাড়ি এলাকার যেখানে বিস্ফোরণ ঘটে, সেখানে গ্যাস রিফিলের কাজ তত্ত্বাবধান করতেন লালন। ঘটনার পর থেকে তিনি পলাতক। তাঁর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ।

আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকার আব্দুল্লাহ এন্টারপ্রাইজের মালিক ফজলুল করিম। খুচরা বিক্রেতাদের কাছে তিনি পাইকারিতে সিলিন্ডার বিক্রি করেন। তিনি বলেন,একসময় তিনিও রিফিল করা সিলিন্ডার বিক্রি করতেন। বিস্ফোরণের ঘটনার পর এখন আর করেন না।

সিলিন্ডার রিফিল করার প্রক্রিয়া সম্পর্কে ফজলুল বলেন, লালনের কাছে মেশিন আছে। মোটরসাইকেল বা গাড়ি ধোয়ার জন্য যে পানির পাম্প ব্যবহার করা হয়, সে মেশিন বড় সিলিন্ডারে লাগিয়ে অন্য পাশে রাইজার লাগানো হয়। ওজন বোঝার জন্য ওয়েট স্কেলের ওপর সিলিন্ডার বসিয়ে গ্যাস রিফিল করা হয়। ১২ কেজির একটি সিলিন্ডার রিফিল হতে সময় লাগে ২-৩ মিনিট।

ফজলুল আরও বলেন, রিফিলের সময় প্রথমে সিলিন্ডারের মুখের নজেল খুলে ফেলা হয়। পরে বালু ঢোকানো হয়। এরপর গ্যাস। ১২ কেজির সিলিন্ডারে ৫-৬ কেজি বালু ও পানি পাওয়ার ঘটনা আছে।

রিফিল করা সিলিন্ডার কিনে প্রতারণার শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতার কথা বলেন আশুলিয়ার কাঠগড়া এলাকার বাসিন্দা মাহিদুল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, বাসায় রান্নার জন্য একটি দোকান থেকে সিলিন্ডার কিনেছিলেন। সাধারণত ১২ কেজির একটি সিলিন্ডার দিয়ে মাসখানেক রান্না করা যায়। কিন্তু সেবার মাত্র সাত দিনেই সিলিন্ডারের গ্যাস ফুরিয়ে যায়। তখনই মনে হয়েছে এ সিলিন্ডার রিফিল করতে কোনো কারসাজি হয়েছে। জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, অবৈধভাবে রিফিলের কথা জানা নেই। তবে তথ্য পেলে অবশ্যই অভিযান চালানো হবে।

আশুলিয়া থানাধীন আশুলিয়া ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আরাফাত উদ্দিন বলেন, ভুক্তভোগী কেউ অভিযোগ দেননি। তাই কারও বিরুদ্ধেও মামলা হয়নি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত