বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ড: যাবজ্জীবন দণ্ড মাথায় নিয়ে প্রশ্ন ফাঁস ও হোটেল ব্যবসা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
প্রকাশ : ১৮ জুলাই ২০২২, ১৭: ২০
আপডেট : ১৮ জুলাই ২০২২, ১৯: ৫৪

ঢাকার শাঁখারীবাজারে দরজি বিশ্বজিৎ দাস হত্যা মামলার আরেক সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মো. কামরুল হাসানকে রাজধানীর চামেলীবাগ এলাকা থেকে গতকাল রোববার রাতে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-৩। আজ সোমবার র‍্যাব-৩-এর পুলিশ সুপার (এসপি) বীণা রানী দাস স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বীণা রানী দাস জানান, আসামি মো. কামরুল হাসান রাজধানীর শান্তিনগর এলাকায় আত্মগোপন করে আছেন বলে র‍্যাব-৩ জানতে পারে। এরপর গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়। রোববার (১৭ জুলাই) রাতে রাজধানীর চামেলীবাগ এলাকা থেকে কামরুল হাসানকে (৩৫) গ্রেপ্তার করা হয়। 

২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর সকালে বাহাদুর শাহ পার্কের কাছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুটি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ চলছিল। এ সময় পথচারী বিশ্বজিৎ ধাওয়া খেয়ে দৌড়ে পাশের দোতলা ভবনের একটি ডেন্টাল ক্লিনিকে আশ্রয় নেন। হামলাকারীরা ক্লিনিকের ভেতর ঢুকে বিশ্বজিতকে কোপাতে থাকে। বিশ্বজিৎ প্রাণ বাঁচাতে পাশের আরেকটি ভবনে ঢুকে পড়েন। সেখানেও তারা তাঁকে কোপায়। ১৫-২০ জন মিলে রড, চাপাতি দিয়ে আঘাত করতে থাকে। একপর্যায়ে বিশ্বজিৎ মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে মুমূর্ষু অবস্থায় এক রিকশাওয়ালা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। বিশ্বজিৎ শাঁখারীবাজারে নিউ আমন্ত্রণ টেইলার্সে দরজির কাজ করতেন। ঘটনার সময় লক্ষ্মীবাজারের বাসা থেকে শাঁখারীবাজারের কর্মস্থলে যাচ্ছিলেন তিনি। 

রোববার রাতে রাজধানীর চামেলীবাগ এলাকা থেকে আসামি কামরুল হাসানকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। ছবি: আজকের পত্রিকাআসামিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‍্যাবের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘটনার দিন বিশ্বজিৎকে প্রতিপক্ষ দলের সদস্য ভেবে তারা ধাওয়া করে। এরপর তাঁকে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে। বিশ্বজিৎ আহত হয়ে মাটিতে পড়ে গেলে তারা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে আসামি জানতে পারেন বিশ্বজিৎ মারা গেছেন। তখন প্রতিবেশী দেশে নানার আত্মীয়ের আশ্রয়ে আত্মগোপন করেন। মামলার অভিযোগপত্র দাখিলের দুই মাস পর তিনি দেশে ফেরেন।

কামরুল সম্পর্কে র‍্যাবের কর্মকর্তা বীণা রানী দাস বলেন, কামরুল ১৯৯৪ সালে বাবার মৃত্যুর আগপর্যন্ত সপরিবার ঢাকায় থাকতেন। বাবার মৃত্যুর পর গ্রামের বাড়ি চলে যান। তাঁরা তিন বোন এক ভাই। ভাইবোনদের মধ্যে কামরুল সবার ছোট। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থানার একটি স্কুল থেকে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি এবং স্থানীয় কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। ২০০৫ সালে তিনি ঢাকার একটি কলেজে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণিতে ভর্তি হন। তিনি বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোরের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। ২০১১ সালে সহপাঠীকে বিয়ে করেন। তাঁদের একটি ছেলেসন্তান রয়েছে। ২০১৩ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশে ফিরে এসে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় স্ত্রীর সঙ্গে বসবাস শুরু করেন। 

জীবিকার সন্ধানে প্রথমে ছদ্মনামে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করেন কামরুল। এরপর তাঁর সঙ্গে প্রশ্ন ফাঁসকারী চক্রের মূল হোতা খোকন ও সোহেলের পরিচয় হয়। ২০১৪ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষায় চাকরিপ্রার্থী ও তাঁদের অভিভাবকদের কাছে প্রশ্নপত্র বিক্রি করে ৫০ লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নেন। এই টাকা দিয়ে কক্সবাজারে হোটেল ব্যবসা শুরু করেন। লকডাউনের সময় লোকসানের কারণে ব্যবসা বন্ধ করে দেন। বর্তমানে দৃশ্যমান কোনো পেশা নেই। 

পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গ্রেপ্তার কামরুলকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন র‍্যাবের এই কর্মকর্তা। 

উল্লেখ্য, বিশ্বজিৎ শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার ভোজেশ্বর গ্রামের দাসপাড়া মহল্লার বাসিন্দা অনন্ত দাসের ছেলে। ২০০৬ সালে ঢাকার শাঁখারীবাজারে নিউ আমন্ত্রণ টেইলার্সে দরজির কাজ শুরু করেন। বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর সূত্রাপুর থানায় মামলা হয়। ২০১৩ সালের ৫ মার্চ অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। মামলাটি পরে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। ২০১৩ সালের ৮ ডিসেম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪-এর বিচারক ২১ আসামির মধ্যে ৮ জনকে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৩ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। আসামিরা উচ্চ আদালতে আপিল করলে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া আট আসামির মধ্যে দুজনের মৃত্যুদণ্ড বহাল, চারজনের দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন এবং অপর দুজনকে খালাস দিয়ে ২০১৭ সালের ৬ আগস্ট রায় দেন হাইকোর্ট। পরবর্তী সময়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়া ১৩ আসামির মধ্যে আপিল করলে তাঁরা খালাস পান।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত