সাভারের আশুলিয়ার নয়ারহাট বাজারে চাঞ্চল্যকর ডাকাতির ঘটনায় জড়িত ৯ ডাকাতকে গ্রেপ্তার করেছে নরসিংদী জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এই ডাকাতদল নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানার গোপালদী বাজারে স্বর্ণের দোকানে ডাকাতির সঙ্গেও জড়িত ছিল। 

শুক্রবার (১০ সেপ্টেম্বর) ভোররাতে নরসিংদী সদর থানার বেড়িবাঁধ এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে তাঁদের গ্রেপ্তার করে জেলা ডিবি পুলিশ। আজকের পত্রিকাকে শনিবার রাত ১২টায় এ তথ্য নিশ্চিত করেন নরসিংদী ডিবি পুলিশের ওসি আবুল বাসার। 

নরসিংদী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম বলেন, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযানে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে একটি সীবোট নিয়ে ১৪ থেকে ১৫ জন ডাকাত গুলি করতে করতে পালিয়ে যায়। আমরাও তাঁদের দিকে ৪ রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়ি। পরে ধাওয়া করে ৯ জন ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়। বাকিরা পালিয়ে গেছে। 

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-শরীয়তপুর জেলার জাজিরা থানার কুন্ডেরচর গ্রামের মোহাম্মদ দেওয়ানের ছেলে মো. আনোয়ার হোসেন দেওয়ান (৪০), মাদারীপুর সদর থানার বলাইচর গ্রামের মোতালেব খাঁর ছেলে কামাল খাঁ (৩৯), শরীয়তপুরের জাজিরার দাইমুদ্দিন খলিফার কান্দি গ্রামের মৃত সিরাজ খলিফার ছেলে দেলোয়ার হোসেন খলিফা (৩৬), মাদারীপুর কালকীনি থানার নতুন চর দৌলতখান গ্রামের নুরুল ইসলাম হাওলাদারের ছেলে খালেক হাওলাদার (৩৭), বরিশাল জেলার বানারীপাড়া থানার ব্রাম্মণকাঠি গ্রামের মৃত হারুন গাজীর ছেলে আল মিরাজ ওরফে মিন্টু (৩৮), মাদারীপুর সদর থানার বলাইচর গ্রামের মৃত আব্দুল মান্নান হাওলাদারের ছেলে খবির হাওলাদার (৪০), টাংগাইল জেলার মির্জাপুর থানার বন্দকাউলজানি গ্রামের মৃত আব্দুল মালেকের ছেলে রহিম মিয়া (৩১), নারায়ণগঞ্জ আড়াইহাজার থানার লক্ষীপুর গ্রামের মৃত আব্দুল করিমের ছেলে কবির হোসেন (৩৮), একই থানার ঝাউকান্দি (নিরাতকান্দা) গ্রামের সামসু মিয়ার ছেলে রহিম মিয়া (৩৯)। 

তাঁদের কাছ থেকে ২টি বিদেশি পিস্তল, গুলি, কাটার, দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র ও একটি প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়েছে। এ সময় স্বর্ণ বিক্রির নগদ ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। 

নরসিংদী জেলা ডিবি পুলিশ জানায়, আমাদের মামলার তদন্ত বা রিমান্ড মঞ্জুর হলে রিমান্ড কার্যক্রম সমাপ্ত হলে আশুলিয়া থানা-পুলিশ আদালতের মাধ্যমে সমন জারি করে পরবর্তী তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে। এর আগের ডাকাতিতেও তাঁরা পরিবহন হিসেবে নৌযান ব্যবহার করেছে। 

এর আগে ৫ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে নৌযান যোগে এসে আশুলিয়ার নয়ারহাটে ১৭টি স্বর্ণের দোকানে লুটপাট চালায় ডাকাতদল। গত ৩১ আগস্ট দিবাগত রাতে গোপালদী বাজারে ৩টি স্বর্ণের দোকানে ডাকাতি করে। সেসময় ডাকাতদের ছোড়া গুলিতে এক পুলিশ সদস্য গুরুতর আহতও হন। তারপর থেকে ডাকাতদের আইনের আওতায় আনতে বিভিন্ন প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা বাহিনী। কোন ক্লু না থাকায় বেগ পোহাতে হচ্ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। 

গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় মাদক, ডাকাতিসহ একাধিক মামলা রয়েছে। ডাকাত দেলোয়ারের বিরুদ্ধে শরীয়তপুরের নড়িয়া ও জাজিরা থানায়, ডাকাত আনোয়ারের বিরুদ্ধে ঢাকার দোহার থানায়, শরীয়তপুরের গোসাইরহাট থানায়, ডিএমপির শ্যামপুর ও বাড্ডা থানায়, শরীয়তপুরের জাজিরা ও নড়িয়া থানায়, মানিকগঞ্জের হরিরামপুর থানায়, আসামী কামাল খার বিরুদ্ধে মাদারীপুর সদর থানায়, ডাকাত খালেক হাওলাদারের বিরুদ্ধে ঢাকার দোহার থানায়, শরীয়তপুরের নড়িয়া, জাজিরা ও গোসাইরহাট থানায়, ডিএমপির শ্যামপুর থানায়, মাদারীপুরের কালকিনী ও শিবচর থানায়, মুন্সিগঞ্জ সদর থানায়, কুমিল্লার মেঘনা থানায়, ডাকাত মো. আল মিরাজ ওরফে মিন্টুর বিরুদ্ধে ডিএমপির যাত্রাবাড়ী থানায়, বরিশালের বানারীপাড়া থানায়, ডাকাত আ. রহিমের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার, ফতুল্লা ও রূপগঞ্জ থানায়, নরসিংদী মডেল থানায়, বগুড়ার শেরপুর থানায় মামলা রয়েছে। 

নরসিংদী ডিবি পুলিশের ওসি আবুল বাসার আজকের পত্রিকাকে বলেন, আসামিদের আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদকালে তাঁরা নয়ারহাট ও গোপালদী বাজারে স্বর্ণ ডাকাতির কথা স্বীকার করে। নয়ারহাটে এই ডাকাতদলের ২৫ থেকে ৩০ জন সদস্য ছিল। এই দলের সদস্যরা মূলত মাদারীপুর ও শরীয়তপুর এলাকার বাসিন্দা। তাঁদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও ডাকাতির প্রস্তুতি মামলা দায়ের করে তিন দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।