মাদ্রাসার শিশুকে নির্যাতনের অভিযোগ, ৫ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০: ০৩

নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে এক মাদ্রাসার ছাত্রকে (১১) নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ উঠেছে, বলাৎকারে ব্যর্থ হয়ে ওই শিশু শিক্ষার্থীকে মারধর করেন অভিযুক্তরা। এ ঘটনায় অভিযুক্তদের বহিষ্কারের জন্য প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান মাদ্রাসার অধ্যক্ষ।

এদিকে ঘটনার পর থেকেই বিষয়টি মীমাংসার জন্য জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীরা চাপ দিচ্ছে বলে জানায় ভুক্তভোগী শিশুর পরিবার।

গত বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাতে এই ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তরা সকলেই কলাগাছিয়া হযরত আবুবকর সিদ্দিক (রা.) মাদ্রাসা ও এতিমখানার ছাত্র। অভিযুক্তরা হলেন—মাদ্রাসার বাবুর্চি এনায়েত (২২), হেফজ বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরান (১৮), রিয়াদ (২১), হাসান (২২), জাবের (১৮), আনিস (২২)। ঘটনার পর থেকেই পলাতক রয়েছে অভিযুক্তরা।

এ নিয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর পরিবারের সঙ্গে কথা হলে তারা জানায়, গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে অভিযুক্ত পাঁচ শিক্ষার্থী ভুক্তভোগী শিশুসহ আরও দুজনকে তুলে নিয়ে মাদ্রাসার নির্জন স্থানে নিয়ে যান। সেখানেই তাদের বলাৎকারের চেষ্টা চালানো হয়। একপর্যায়ে ভুক্তভোগী শিশু ধস্তাধস্তি করে সেখান থেকে পালিয়ে আসে। এ সময় মাদ্রাসার বাবুর্চি এনায়েত (২২) বিষয়টি দেখতে পান। রাতেই এনায়েত শিশুটির কাছে জানতে চাইলে সে সব খুলে বলে। ঘটনার বিবরণ শুনে বিষয়টি নিয়ে চুপ থাকার নির্দেশ দিয়ে চলে যান এনায়েত।

পরের দিন শুক্রবার বেলা ১১ টায় মাদ্রাসার সবাই গোসলে ব্যস্ত হয়ে পড়লে ফাঁকা হয়ে যায় মাদ্রাসা। এ সময় ভুক্তভোগী শিশুকে এনায়েতসহ বাকি পাঁচ শিক্ষার্থী মিলে রুমের ভেতর আটক করেন। এরপর তাকে বেধড়ক মারধর শুরু করেন। একপর্যায়ে এনায়েত, ইমরান ও হাসান খুন্তি গরম করে দেহের বিভিন্ন স্থানে ছ্যাঁকা দেন। এই ঘটনা কাউকে বললে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে চলে যান তাঁরা।

শিশুটির মা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার ছেলেরে এত মারার পরেও ভয়ে কাউরে কিছু কয় নাই। শনিবার বিকেলে আমি মাদ্রাসায় গিয়া দেখি সব বাচ্চারা খেলে কিন্তু আমার বাচ্চা নাই। জিগাইলে এক বাচ্চা আমারে কইলো আমার ছেলেরে নাকি বড়রা মারছে। এরপর ওর রুমে গিয়া দেখি পোলারে মাইরা শ্যাষ কইরা ফালাইসে। পড়ে ওয় (ছেলে) আমারে সব খুইলা কইলো। হুজুরগো কাছে বিচার দিলাম, উনারা কয় আমরা কিছু জানি না। পরে বাসায় আইনা চিকিৎসা করাইসি। রোববার দুপুরে ওর আব্বা থানায় গিয়া অভিযোগ দিয়া আসছে।’

এই ঘটনার পর ছেলেকে আর মাদ্রাসায় পাঠাবেন না দাবি করে বলেন, ‘বাচ্চা পোলাগো লগে এমন অমানুষের মতো কাজ করলে মাদ্রাসায় পড়াই কেমনে? মাদ্রাসায় দিছি যাতে পোলাটায় নামাজ কালাম পইড়া ভালো হয়। এগুলো দেখতে হইবো জানলে জীবনেও মাদ্রাসায় দিতাম না। এখন আবার এলাকার সাখাওয়াত মেম্বার কইতাছে মামলা না কইরা আপস কইরা ফালাইতে। আমরা কি করমু বুঝতাছি না।’

মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হাফেজ জাহাঙ্গীর ইকবাল বলেন, ‘ঘটনা শুক্রবার হওয়ায় আমাদের শিক্ষকেরা বিষয়টি অবগত ছিল না। মূলত মাদ্রাসার ভেতরে গ্রুপিংয়ের কারণে এই ঘটনা ঘটেছে। আমাদের বাবুর্চিও এই মাদ্রাসার সাবেক ছাত্র। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি সোমবার রাতেই ম্যানেজিং কমিটির সঙ্গে বসে এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। যারা মারধর করেছে তাদের শাস্তি এবং বহিষ্কারের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত আমাদের নেওয়া হয়েছে।’

মীমাংসার জন্য চাপ প্রদান করা হাইজদী ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার সাখাওয়াত আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ছেলেরা ছেলেরা ভুল বোঝাবুঝিতে মারামারি করছে তাই বলছিলাম মীমাংসা করতে। যে অপরাধ করছে আমরা তারে সঠিক শাস্তিই দিতে চাই। যদি তারা মামলায় যাইতে চায় তাহলে যাইতে পারে।’

অভিযোগের বিষয়ে আড়াইহাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিজুল হক হাওলাদার বলেন, ‘এই ঘটনায় বাদী পক্ষ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। আমরা বলেছি তাদের আরেকবার থানায় এসে মামলা করে যেতে। তারা থানায় আসলেই আমরা মামলা গ্রহণ করব।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত