ঢাকাঃ চিত্রনায়িকা পরীমণিকে ধর্ষণচেষ্টা ও হত্যাচেষ্টার মামলায় ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ এবং তাঁর বন্ধু তুহিন সিদ্দিকী অমির পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।  আজ বুধবার ঢাকার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজিব হাসান এই রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

রাজধানীর বিমানবন্দর থানায় দায়ের করা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের মামলায় সাত দিনের রিমান্ড শেষে নাসির ও অমিকে আজ আদালতে হাজির করা হয়।   আইনজীবীরা তাঁদের পক্ষে জামিনের আবেদন করেন। মহানগর হাকিম দেবব্রত বিশ্বাস জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে নাসির ও অমিকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।অন্যদিকে সাভার থানা পুলিশ এই দুজনকে পরীমণির  মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন জানায়। একইসঙ্গে  তাঁদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়।

রিমান্ড শুনানির জন্য নাসির ও অমিকে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের এজলাসে হাজির করা হয়।  তাঁদের উপস্থিতিতে শুনানি হয়। অন্যদিকে দুজনের পক্ষেই আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন। আদালত শুনানি শেষে জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন এবং প্রত্যেকের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

গত ১৪ জুন পরীমণি  সাভার থানায় নাসির ও অমিসহ ছয়জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। এরপর ওই দিন দুপুরে উত্তরা এক নম্বর সেক্টরের একটি বাসা থেকে নাসির উদ্দিন ও অমিকে তিন নারীসহ আটক করে পুলিশ। এই বাসা থেকে বিদেশি মদ ও বিয়ার উদ্ধার করা হয়। বিমানবন্দর থানায় মাদক আইনে মামলা হয়। ১৫ জুন মাদক আইনে নাসির ও অমিকে সাত দিন এবং তাঁদের সঙ্গী তিন নারীকে তিন দিন করে রিমান্ডে নেওয়া হয়। ওই তিন নারী সঙ্গী এখন কারাগারে আছেন।

পরীমণি  তার মামলার এজাহারে বলেন, গত ৮ জুন রাত ১১টা ৩০ মিনিটে পরীমণি তাঁর বাসা হতে তাঁর কস্টিউম ডিজাইনার জিমি, জিমির বন্ধু অমি  ও পরীমণির বোন বনি  সহ দুটি গাড়ি যোগে উত্তরার উদ্দেশ্যে রওনা হন। পথিমধ্যে অমি বলেন,  বেড়িবাঁধে ঢাকা বোট ক্লাব লিমিটেডে তাঁর দুই মিনিটের কাজ আছে। অমির কথামত তারা ঢাকা বোট ক্লাবের সামনে গত ৯ জুন রাত ১২ টা ২০ মিনিটের সময় গাড়ি দাঁড় করান। কিন্তু বোট ক্লাব বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অমি কোনো এক ব্যক্তির সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন। তখন ঢাকা বোট ক্লাবের সিকিউরিটি গার্ডরা গেট খুলে দেয় তখন অমি ভেতরে যান এবং অনুরোধ করেন পরীমণিদের ভেতরে যেতে। এরই মধ্যে পরীমণির ছোট বোন বনি ঢাকা বোট ক্লাবে প্রবেশ করে বারের কাছের টয়লেট ব্যবহার করে। টয়লেট হতে বের হতেই ১ নম্বর বিবাদী নাসির উদ্দিন মাহমুদ  সবাইকে ডেকে বারের ভেতরে বসার অনুরোধ করেন এবং কফি খাওয়ার জন্য প্রস্তাব দেন। পরীমণি বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইলে অমিসহ নাসির মদ পান করার জন্য জোর করেন। পরীমণি মদ পান কর না চাইলে নাসির জোর করে পরীমণির মুখের মধ্যে মদের বোতল প্রবেশ করিয়ে মদ খাওয়ানোর চেষ্টা করে, এতে তিনি সামনের ঠোঁটে আঘাত পান। নাসির পরীমণিকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং তাঁর শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করেন।  জোর করে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। নাসির  উত্তেজিত হয়ে টেবিলে রাখা গ্লাস ও মদের বোতল ভাঙচুর করে পরীমণির গায়ে ছুড়ে মারেন। তখন কস্টিউম ডিজাইনার জিমি  বাধা  দিতে চাইলে তাকেও মারধর করে জখম করে।

মামলায় আরও বলা হয়, অমি পরিকল্পিতভাবে পরীমণিকে  বোট ক্লাবে নিয়ে নাসির উদ্দিন মাহমুদের সঙ্গে যোগসাজশ করে যৌন হয়রানিসহ ধর্ষণের চেষ্টা করেন।

ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ এবং তাঁর বন্ধু তুহিন সিদ্দিকী অমির রিমান্ড বাতিল পূর্বক জামিন আবেদন করেন ঢাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতি আব্দুল বাতেন। তাঁর সঙ্গে ছিলেন মিজানুর রহমান মামুন, আসাদুজ্জামান খান রচি সহ বেশ কয়েকজন আইনজীবী।

আদালতকে আইনজীবীরা বলেন, আসামি  নাসির উদ্দিন মাহমুদ ৬৫ বছর বয়স্ক এবং আসামি আমি একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও অসুস্থ। তাঁদেরকে মাদকের একটি মামলায় ৭দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল। তাঁদেরকে মানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এখন একটা সাজানো মিথ্যা মামলায় তাঁদেরকে আবারও রিমান্ডে পাঠালে তাদের ওপর আরও নির্যাতন করা হবে।

আইনজীবীরা আরও বলেন, পরীমণি  মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন মামলা করেছেন। এত রাতে বোট ক্লাবে তিনি কি উদ্দেশ্যে গিয়েছিলেন স্পষ্ট নয়। ইতিমধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, পরীমণি  বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে হাঙ্গামা সৃষ্টি করা তার অভ্যাস। বোট ক্লাবেও তেমন ঘটনার জন্ম দিয়েছেন তিনি। আসামিরা বিবিসি বিশিষ্ট ব্যক্তি তারা হয়রানির শিকার। তাঁরা জামিন পেলে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার লোক নয়।

এদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা জেলা পিপি শেখ হেমায়েত উদ্দিন, ঢাকা মহানগর পিপি আব্দুল্লাহ আবু, ঢাকা জেলা অতিরিক্ত পিপি আনোয়ারুল কবির  বাবুল জামিনের বিরোধিতা করেন এবং রিমান্ডে নেওয়ার যুক্তি তুলে ধরেন। তাঁরা বলেন, এটা একটি স্পর্শকাতর মামলা। বাংলাদেশের অত্যন্ত জনপ্রিয় নায়িকা পরীমণিকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছেন আসামিরা। ওই দিনের ঘটনার রহস্য উন্মোচন এবং অজ্ঞাতনামা আরও যেসব আসামি আছেন তাঁদের পরিচয় জানার জন্য এবং প্রকৃত ঘটনা জানার জন্য আসামিদের রিমান্ডে নেওয়া প্রয়োজন। শুনানি শেষে আদালত জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন এবং প্রত্যেককে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়ার নির্দেশ দেন।

 আদালতে শুনানির একপর্যায়ে নাসির উদ্দিন বলেন, তাকে একটি মিথ্যা মামলায় ৭ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। তিনি ৬৫ বছর বয়স্ক উল্লেখ করে বলেন, আমার অনেক বয়স হয়েছে। আমি অসুস্থ। আবারও আমাকে রিমান্ডে নেওয়া  হলে আমি মারা যাব।

তিনি আরও বলেন, বাদীর মামলার ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যা। এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

এদিকে সাত দিনের রিমান্ড শেষে মাদকের মামলায় ব্যবসায়ী নাসির উদ্দিন মাহমুদ এবং তাঁর বন্ধু তুহিন সিদ্দিকী অমিলে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়

গত ১৩ জুন রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি স্ট্যাটাসে ধর্ষণ-হত্যাচেষ্টার অভিযোগ তুলে বিচার চান পরীমনি। এরপর বিষয়টি নিয়ে রাতে সংবাদ সম্মেলন করেন।