টাকা নিয়ে পালিয়েছে এনজিও, উত্তরখানে ভুক্তভোগীদের বিক্ষোভ

উত্তরা (ঢাকা) প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০১: ১২
আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৯: ৫৫

রাজধানীর উত্তরখানে ঋণের জামানতের নামে বিপুল পরিমাণ টাকা নিয়ে পালিয়েছে একটি এনজিও। খবর পেয়ে ভুক্তভোগীরা ওই বাড়ির সামনে বিক্ষোভ করেছেন।

উত্তরখান মাজার চৌরাস্তার ৫ নম্বর বাসার সামনে শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যার পর থেকে বিক্ষোভ শুরু করেন ভুক্তভোগীরা। প্রথমে ৩০/ ৪০ জন ভুক্তভোগী সেখানে জড়ো হন। এরপর আস্তে আস্তে ভুক্তভোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। পরে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর মাধ্যমে কল পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন উত্তরখান থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রাজ্জাক।

জানা গেছে, ওই ভবনের দ্বিতীয় তলায় পয়েন্ট অ্যাবোড এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি নামের একটি এনজিও ছিল। এনজিওটির লোকজন শনিবার সকালে গোপনে মালামালসহ পালিয়ে গেছেন।

অফিসটি পরিচালনা করতেন মো. জাফরুল হাসান নামের এক ব্যক্তি। তিনি ম্যানেজার পরিচয় দিতেন। মো. জাফরুল হাসান নামের আরেকজন ছিলেন সহকারী ম্যানেজার। তাঁরাই উত্তরখান ও দক্ষিণখানের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করতেন। এই প্রতারক চক্র ঢাকার জনসন রোডের ৫০/ ১ নম্বর বাড়িতে ‘নাজমা ল হাউজ’ নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে বলে জানা গেছে।

উপস্থিত ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ১০ হাজার টাকা সঞ্চয় করলে ১ লাখ টাকার ঋণ দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে উত্তরখানের মাজার, হেলাল মার্কেট, দোবাদিয়া, সরকারবাড়ি, দক্ষিণখানের চালাবনসহ বিভিন্ন এলাকার কয়েক হাজার মানুষের কাছ থেকে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা করে নিয়েছে তারা। যাঁদের কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়েছে, তাঁদের চলতি মাসের ১৮ থেকে ২২ তারিখের মধ্যে ১ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা ছিল।

মাজার এলাকার ভুক্তভোগী নারগিস আক্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি গত বুধবার ঋণের জন্য ১০ হাজার টাকা সঞ্চয় দেওয়ার আগে বাড়ির মালিককে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, এনজিওটি কেমন? তখন বাড়িওয়ালি বলেছিলেন, আমাদের ৫ লাখ টাকা জামানত দিয়ে ১০ বছরের জন্য ভাড়া নিয়েছে। কোনো সমস্যা নাই, ওরা আমাদের খালাতো-মামাতো ভাই।’

নারগিস বলেন, ‘বাড়ির মালিকের কথা বিশ্বাস করে টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু আজ এসে দেখি অফিসে তালা। ভবনটিতে থাকা ব্যাংকের সিসি ক্যামেরায় দেখি, বাড়ির মালিক ওই প্রতারকদের মালামাল সরাতে সাহায্য করছেন।’

উত্তরখান হেলাল মার্কেট এলাকার ভুক্তভোগী এমদাদুল হক বলেন, ‘আমি ঋণের জন্য ১০ হাজার টাকা দিয়েছি। কাল (রোববার) আমাকে ১ লাখ টাকা ঋণ দেওয়ার কথা ছিল। আমার মতো হেলাল মার্কেটের আরও ২০ জনের কাছ থেকে ২ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়েছে প্রতারকেরা।’

হেলাল মার্কেটের হোটেল ব্যবসায়ী সিরাজ হাওলাদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এনজিওটির ম্যানেজার হারুন আমাদের হোটেলে খাওয়াদাওয়া করত। পরে আমাকে সমিতির টাকা দিতে দেখে অল্প টাকায় বেশি ঋণ দেওয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নেয়।’

অভিযোগের বিষয়ে বাড়ির মালিক মোশারফ হোসেন ও তাঁর স্ত্রী সেলিনা আক্তার প্রথমে তাঁদের ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়ার কথা অস্বীকার করেন। পরে অফিসটি ব্যবহারের ছবি দেখালে বলেন, ‘আপনারা যা পারেন করেন, আমরা প্রতারণার বিষয়ে কিছুই জানি না।’

এদিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত উত্তরখান থানার এসআই আব্দুর রাজ্জাক ভুক্তভোগীদের বলেন, ‘৯৯৯-এ কল পেয়ে এসেছি। এখন আমরা কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারব না। থানায় অভিযোগ দেন, তারপর আমরা ব্যবস্থা নেব।’

পুলিশের পরামর্শে ভুক্তভোগীদের মধ্যে কয়েকজন উত্তরখান থানায় যান। রাত ৯টার দিকে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী নারগিস আক্তার। এরপর রাত ১০টার দিকে ভুক্তভোগীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত