অটোমেশন প্রক্রিয়া চালুর দাবিতে প্রশাসনিক ভবনের সামনে জাবি শিক্ষার্থীদের অবস্থান

জাবি প্রতিনিধি 
Thumbnail image
অটোমেশন প্রক্রিয়া চালুর দাবিতে প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের অবস্থান। ছবি: আজকের পত্রিকা

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, রেজিস্ট্রার অফিস ও পরিবহন অফিসের যাবতীয় কার্যক্রমে অটোমেশন প্রক্রিয়া চালুর দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। আজ সোমবার (২০ জানুয়ারি) দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ব্যানারে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে অবস্থান নেন।

এতে জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট, জাহাঙ্গীরনগর সংস্কার আন্দোলন ও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা সংহতি জানিয়ে অংশগ্রহণ করেন। বেলা ২টা ৩০ মিনিটে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন তাঁরা।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো—বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসে পরীক্ষার ফরম পূরণ, ফলাফল প্রকাশ করা এবং সব ফি অনলাইনে গ্রহণ করে পরীক্ষার সময়সূচি, প্রবেশপত্র ও সাময়িক সনদপত্র অনলাইনে প্রদান করতে হবে; রেজিস্ট্রার অফিসে সব শিক্ষার্থীর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে ডেটাবেজ তৈরি করে প্রয়োজনীয় তথ্যের প্রবেশাধিকার দিতে হবে; কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের বই ও জার্নালের অনলাইন প্রবেশাধিকার প্রদান করতে হবে এবং গ্রন্থাগারের যাবতীয় কার্যক্রম অনলাইনভিত্তিক করতে হবে; পরিবহন অফিসে বাস ও পরিবহন–সংক্রান্ত সব দরকারি তথ্য অনলাইনে সহজলভ্য করতে হবে এবং অটোমেটেড বাস ট্রাকিং সিস্টেম চালু করতে হবে।

অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে সেখানে সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার সদস্যসচিব তৌহিদ সিয়াম। সমাবেশে বক্তারা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে অটোমেশনের রোডম্যাপ প্রকাশ না করা হলে কাঠোরতর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন।

অটোমেশন প্রক্রিয়া চালুর দাবিতে প্রশাসনিক ভবনের সামনে জাবির শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়েছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা
অটোমেশন প্রক্রিয়া চালুর দাবিতে প্রশাসনিক ভবনের সামনে জাবির শিক্ষার্থীরা অবস্থান নিয়েছেন। ছবি: আজকের পত্রিকা

এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক ফারহানা বিনতে জিগার ফারিনা বলেন, ‘কোনো চূড়ান্ত পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে হলে প্রথমে হল অফিসে যেতে হয়, তারপর বিভাগীয় প্রধানের কাছে, তারপর আবার হল অফিসে, তারপর ব্যাংকে টাকা জমা দেওয়া, তারপর রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের শিক্ষা শাখায়, তারপর পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিসে গিয়ে ফরম জমা দিতে হয়। এতগুলো জায়গায় আমাদের ঘুরতে হয়। এই প্রশাসনের উচিত ছিল দায়িত্বে আসার পরেই সমস্যাগুলো সমাধানের কাজ শুরু করা। কিন্তু আমারা দেখতে পাই, এই বিষয়গুলো নিয়ে না তারা কোনো প্রক্রিয়া শুরু করেছে না। প্রশাসন এমন কোন কাজে ব্যস্ত যে অটোমেশন চালুর জন্য কোনো কাজ শুরু করত পারছে না?’

জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক মাহফুজ ইসলাম মেঘ বলেন, ‘শিক্ষা সনদে বা পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো কাগজে কোনো নামের বানান ভুল হলে বা কোনো সনদ তুলতে গেলে বা পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে গেলে দিনের পর দিন অপেক্ষা করতে হয় এবং পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিসে দৌড়াতে হয়। এর ওপর টাকাও গুনতে হয়। এত সব ভোগান্তি পোহাতে হয় শিক্ষার্থীদের।’

মাহফুজ ইসলাম মেঘ বলেন, ‘ভুল করবেন তাঁরা, ভোগান্তি পোহাতে হবে আমাদের। অফিসে ঘুমাবেন তাঁরা, ভোগান্তি হবে আমাদের। দুপুরের খাবার খাবেন তাঁরা, ভোগান্তি আমাদের। এসব ভোগান্তি নিরসন করতে চাইলে অটোমেশন ছাড়া কোনো রাস্তা নাই। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে গ্রন্থাগার কার্ড নেওয়ার জন্য ভোগান্তি সহ্য করতে হয়। গ্রন্থাগারে কোন বইগুলো কোথায় আছে তা–ও জানেন না শিক্ষার্থীরা। প্রয়োজনের সময় প্রয়োজনীয় বই খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয় আমাদের। এ জন্য দরকার অটোমেশন। যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে গেলে অবশ্যই অটোমেশন চালু করতে হবে। মান্ধাতার আমলে পড়ে থাকার কোনো মানে হয় না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আজকের এই কর্মসূচির সঙ্গে আমরা সংহতি জানাচ্ছি।’

জাহাঙ্গীরনগর সংস্কার আন্দোলনের মুখপাত্র নাজিবুল ইসলাম বলেন, ‘৫ আগস্টের ধারাবাহিকতায় আমাদের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও নতুন প্রশাসন এসেছে। আমরা ধারণা করেছিলাম, এই নতুন প্রশাসন আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কাঠামোকে ডিজিটালাইজেশনের মধ্যে নিয়ে আসবে, কিন্তু আমরা দেখতে পাই প্রায় ৬ মাস পার হয়ে গেলেও আগের থেকে দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন দেখি নাই।’

নাজিবুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আমাদের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীদের একটি প্রাণের দাবি ছিল যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আমাদের যেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস আর রেজিস্ট্রার ভবনে দৌড়াদৌড়ি করে আমাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করতে না হয়। কিন্তু এই জায়গাগুলোতে এখনো কোনো পরিবর্তন আসেনি। আমরা আশা রাখব, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অতি দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করবেন।’

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান আহসান বলেন, ‘আমরা অটোমেশন নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছি। আজকে অটোমেশন নিয়ে মিটিং চলছে। কয়েকজন শিক্ষকের ওপর অটোমেশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা কাজ করছে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পর্যাপ্ত টাকা নেই। হিট নামক একটি প্রজেক্ট বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও অটোমেশন নিয়ে কাজ করে। ওই প্রজেক্টটি পেলে আমরা কাজ শুরু করতে পারি। আর অটোমেশন নিয়ে যারা মিটিং করছে তাদের মিটিং শেষ হলে রোডম্যাপ ঘোষণার বিষয়ে কথা বলতে পারব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত