প্রতিবছর ৪ শতাংশ হারে বাড়ছে ভূমিধস: কর্মশালায় উদ্বেগ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮: ৪২
Thumbnail image
বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে লেকশোর হোটেলে ‘চট্টগ্রাম ও বান্দরবান জেলায় ভূমিধস মোকাবিলায় অগ্রবর্তী পদক্ষেপ’ শীর্ষক কর্মশালা। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশের অন্যান্য সব প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো ভূমিধসের পরিমাণ বাড়ছে এবং প্রতিবছর এটি চার শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। শুধু তাই নয়, অতিরিক্ত বৃষ্টির সঙ্গে পার্বত্য অঞ্চলে মানুষের অপরিকল্পিত বসবাসের কারণে মৃত্যুহারও বাড়ছে ভূমিধসে। ২০২৪ সালে সারা দেশে ভূমিধসে ৩০ জনের প্রাণহানি হয়েছে এর মধ্যে শুধুমাত্র চট্টগ্রাম অঞ্চলেই মারা গেছেন ২০ জন।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর গুলশানে লেকশোর হোটেলে সেভ দ্য চিলড্রেন-এর আয়োজনে ‘চট্টগ্রাম ও বান্দরবান জেলায় ভূমিধস মোকাবিলায় অগ্রবর্তী পদক্ষেপ’ শীর্ষক কর্মশালায় এসব তথ্য জানানো হয়। এই কর্মশালায় এ সংক্রান্ত প্রটোকল তৈরি, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় উন্নত পূর্বাভাস ব্যবস্থা স্থাপন এবং কমিউনিটির সক্ষমতা বৃদ্ধি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।

কর্মশালায় ভূমিধস নিয়ে প্রতিবেদন উপস্থাপনা করেন সেভ দ্য চিলড্রেন-এর প্রকল্পের ব্যবস্থাপক ফাতিমা মেহেরুন্নেসা ও রাইমসের জলবায়ু বিশেষজ্ঞ আসিফ বিন আনোয়ার।

মেহেরুন্নেসা বলেন, এ প্রকল্পের লক্ষ্য চট্টগ্রাম ও বান্দরবানের পাহাড় এলাকায় ভূমিধস ও আকস্মিক বন্যার মতো বহুমুখী ঝুঁকির জন্য আগাম প্রস্তুতি নিশ্চিত করা। প্রকল্পের আওতায় লামা ও নাইক্ষ্যংছড়ি (বান্দরবান), চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এবং বাঁশখালীর ৪০ হাজার ৫৪০ জন উপকারভোগীর জীবনমান উন্নত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

উপস্থাপনায় বলা হয়—বাংলাদেশে ১৫টি বড় দুর্যোগে সারা বিশ্বে ৪ কোটি ২০ লাখ মানুষ আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে ৯৪ লাখ মানুষ গৃহহীন হয়। এক হাজার ৫৩ জন মারা যান আর ক্ষতি হয় ৪ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলারের।

বাংলাদেশে ২০০০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ভূমিধসের ঘটনাগুলোর রেকর্ড অনুযায়ী, দেশে গড়ে প্রতি বছর ১৯টি উল্লেখযোগ্য ভূমিধসের দুর্যোগ ঘটে, যা প্রতিবছর গড়ে ৪ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০০৭ সালের ১১ জুনের একক বৃষ্টিপাতের ঘটনায় ১০০টি ভূমিধস ঘটে, যার ফলে ১২৭ থেকে ১৩৫ জন মানুষের মৃত্যু হয়।

২০২৪ সালের ১৮ ও ১৯ জুন ভারী মৌসুমি বৃষ্টিপাতে কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরগুলোতে ৭৭৩টি ভূমিধসের ঘটনা ঘটে, যার ফলে প্রাণহানি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। গত বছর চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে ভূমিধসে অন্তত ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২০১৭ সালে সারা দেশে ভূমিধসে ১৫৮ জন মানুষ মারা গিয়েছেন।

কর্মশালায় প্রশ্নোত্তর পর্বে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপপরিচালক আব্দুর রহমান ভূমিধস ৪ শতাংশ বাড়ার কারণ জানতে চাইলে সেভ দ্য চিলড্রেন থেকে জানানো হয়, জলবায়ু পরিবর্তন ও পাহাড়ে অপরিকল্পিত বসবাস ভূমিধস বাড়ার বড় কারণ। এ ছাড়া ২০০৭ ও ২০১৭ সালে ভূমি ধসে মৃত্যুর হার বেশি থাকার কারণ হিসেবে বলা হয়, এর আগে ওই অঞ্চলে উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে যাতে পাহাড় কাটা পড়েছে এ ছাড়া ওই সময় বৃষ্টিপাত বেশি হয়েছিল।

সেভ দ্য চিলড্রেন বলছে, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পার্বত্য এলাকা, বিশেষ করে চট্টগ্রাম, সিলটি ক্লে লোম মাটি (৬৭ শতাংশ) দ্বারা গঠিত, যা পানি ধারণক্ষমতায় দুর্বল। টানা তিন দিনের ভারী বৃষ্টিপাত ও জলবায়ু পরিবর্তন ভূমিধসের প্রধান কারণ। ঢালে বসবাসরত মানুষ ঘরবাড়ি ও জীবিকার ক্ষতির পাশাপাশি মৌলিক সেবার ব্যাঘাতে ভোগে। চট্টগ্রামে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত প্রায় ২৫০০ মিলিমিটার যা জুন-জুলাইয়ে তীব্র হয়। প্রতি ঘণ্টায় ৭০ মিলিমিটার এর বেশি বৃষ্টি ভূমিধস ঘটায়, যা বৃষ্টির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। পাহাড় কাটা ও বন উজাড় ভূমিধসের ঝুঁকি বাড়ায়। এসব কার্যক্রম মাটি ক্ষয়, প্রাকৃতিক নিষ্কাশন ব্যবস্থার ব্যাঘাত এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি ঘটায়।

কর্মশালায় জানানো হয়, ৬৫ শতাংশ মানুষ পার্বত্য অঞ্চলে খাস জমিতে বসবাস করেন। ৩৩ শতাংশ মানুষ দুই থেকে তিন বছরের মধ্যে একবার হলেও ভূমিধসের শিকার হয়েছেন। ২১ শতাংশ মানুষ ভূমিকম্প, ১৬ শতাংশ মানুষ ফ্ল্যাশ ফ্লাড ও ১৬ শতাংশ মানুষ ভূমিধস ও বন্যার একই সঙ্গে শিকার হয়েছেন।

সেভ দ্য চিলড্রেনের হিউম্যানিটারিয়েন ডিরেক্টর মো. মোশতাক হোসাইন বলেন, বাংলাদেশ দুর্যোগপ্রবণ দেশ। সাইক্লোন, খরা, বন্যা, বজ্রপাত, ভূমিধস হয় প্রতিবছর। তবে ভূমিধস ২০০৭ সালের আগে ওইভাবে লক্ষ্য করা যায়নি। ভূমিধস নিয়ে ওইভাবে কার্যক্রম কখনো নেওয়া হয়নি।

প্রধান অতিথি দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আবদুল ওয়াদুদ বলেন, যেদিন আমরা প্রকৃতির মধ্যে অনুপ্রবেশ করেছেন সেদিন থেকেই সমস্যা শুরু হয়েছে। সরকার ভূমিধসে নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। এই বিষয়ে যেন আগে থেকেই সতর্ক বার্তা জারি করা হয় সেই বিষয়ে কাজ চলছে ৷

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক নিতাই চন্দ্র দে সরকার।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভিসা জটিলতায় ভ্রমণকর হারাচ্ছে সরকার

বাংলাদেশ ঘুরে গেলেন পাকিস্তানের আইএসআই প্রধান, দাবি ভারতীয় গণমাধ্যমের

গাড়িচালককে মারধর: কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ইসি সচিবের কক্ষের সামনে হট্টগোল

খোলাবাজারে বিক্রি বিনা মূল্যের দুই ট্রাক পাঠ্যবই উদ্ধার

৭ মাস না যেতেই যুক্তরাষ্ট্রে সন্তান প্রসবের হিড়িক ভারতীয় নারীদের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত