Ajker Patrika

এক বাড়ির এক গ্রাম: ছেলের শোকে স্মৃতি ফেলে গেলেন সিরাজুল

মহিউদ্দিন রানা, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ)
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার উমানাথপুর গ্রামে মো. সিরাজুল ইসলামের নতুন বাড়ি। ছবি:  আজকের পত্রিকা
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার উমানাথপুর গ্রামে মো. সিরাজুল ইসলামের নতুন বাড়ি। ছবি: আজকের পত্রিকা

মো. সিরাজুল ইসলামের (৭৫) পরিবারের চার সদস্য নিয়ে একটি গ্রাম হিসেবে আলোচিত ছিল ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার ‘উমানাথপুর’।

সিরাজুল ইসলামের একমাত্র ছেলে শরীফুল ইসলাম সরকার ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে আট মাস আগে মারা যান। এ ঘটনায় মুষড়ে পড়েন গৃহকর্তা। সেই শোকেই আলোচিত উমানাথপুর গ্রামটি ১৫ লাখ টাকায় বিক্রি করেন সিরাজুল।

একটি বাড়ি নিয়ে একটি গ্রাম উমানাথপুর উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়নে অবস্থিত। উপজেলা সদর থেকে এই গ্রামের দূরত্ব ১৪ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১২ কিলোমিটার পিচঢালা সড়ক। বাকি ২ কিলোমিটার আঁকাবাঁকা মেঠো পথ।

আজ বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়িটির চারপাশে সবুজ ধানখেত। বাতাসে দোল খাচ্ছে সবুজ ধানের শিষ। বাড়ির আঙিনায় দুটি বসতঘর, একটি গোয়ালঘর, একটি পুকুর ও একটি টয়লেট। বাড়িঘেরা বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা।

উমানাথপুর গ্রামে সিরাজুল ইসলামের বিক্রি করে দেওয়া পুরোনো বাড়ি। ছবি: আজকের পত্রিকা
উমানাথপুর গ্রামে সিরাজুল ইসলামের বিক্রি করে দেওয়া পুরোনো বাড়ি। ছবি: আজকের পত্রিকা

দীর্ঘ ৬০ বছর বসবাসের পর হঠাৎ বাড়িটি বিক্রি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিরাজুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার একমাত্র ছেলে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। আমার স্ত্রীও ক্যানসারে আক্রান্ত। এত বড় বাড়িতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলাম। তাই বাধ্য হয়ে স্থানীয় আব্দুল মন্নাছের কাছে বাড়িটি বিক্রি করে দিই। এরপর একই গ্রামে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া সড়কের পাশে ৫ শতক জমিতে ঘর তুলে স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করছি।’

আক্ষেপের সুরে সিরাজুল আরও বলেন, ‘আমার ছেলেটা বেঁচে থাকলে এই জমি কখনোই বিক্রি করতাম না।’ তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একসময় তাঁরা স্বামী-স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ে চারজন থাকতেন বাড়িটিতে। একপর্যায়ে মেয়ের বিয়ে দেন। পরে ছেলের বিয়ে হয়। ছেলের ঘরে এক নাতনির জন্ম হয়। পরে ক্যানসারে ছেলের মৃত্যু হয়। তখন নাতনিকে নিয়ে ছেলের বউ তাঁর বাবার বাড়ি চলে যান। এখন তাঁরা স্বামী-স্ত্রী দুজন বাড়িতে থাকছেন বলে জানান সিরাজুল।

আলোচিত উমানাথপুর গ্রাম। ছবি:  আজকের পত্রিকা
আলোচিত উমানাথপুর গ্রাম। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাড়িটির বর্তমান মালিক আব্দুল মন্নাছের স্ত্রী মোছা. হাজেরা খাতুন বলেন, ‘একটি গ্রাম নিয়ে যে এই বাড়ি, তা আমরা কেনার আগে জানতাম না। নিউজ হওয়ার পর বাড়িতে লোকজনের আনাগোনায় জানতে পেরেছি। বাড়িটির প্রাকৃতিক পরিবেশ খুবই ভালো। যে কারণে আমার স্বামী এটা কিনেছে। আমরা ১০ জন এই বাড়িতে বসবাস করছি।’

ষাটোর্ধ্ব স্থানীয় বাসিন্দা মো. আবুল খায়ের নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘একটি গ্রামে শুধু একটি বাড়ি হওয়ায় খুবই আলোচিত গ্রাম উমানাথপুর। আর এই বাড়ি দেখার জন্য কয়েক দিন পরপর গাড়ি দিয়ে লোকজন আসে। গতকাল (বুধবার) শুনলাম বাড়ির মালিক নাকি বাড়িটি বিক্রি করে দিয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত