কুম্ভমেলার ভাইরাল সাধুরা: আইআইটি বাবা থেকে অ্যাম্বাসেডর বাবা

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৬ জানুয়ারি ২০২৫, ২৩: ৪৭
Thumbnail image
কুম্ভমেলার সাধুরা। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজে অনুষ্ঠিত হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মানব সমাবেশ মহাকুম্ভ মেলা। এটি শুধু আধ্যাত্মিকতার নয়, বরং এটি বিভিন্ন জীবনধারার এক বিশাল মেলবন্ধন। এবার মহাকুম্ভ মেলায় এমন কিছু সাধু বিশেষ নজর কেড়েছেন, যারা তাঁদের অভিনব জীবনধারা ও গল্পের জন্য শিরোনাম হয়েছেন। ভাইরাল হওয়া এমন কয়েকজন সাধুর বিষয়ে জেনে নেওয়া যাক—

আইআইটি বাবা। ছবি: সংগৃহীত
আইআইটি বাবা। ছবি: সংগৃহীত

আইআইটি বাবা

একসময় বিমানের নকশা করতেন তিনি। আর এখন মহাবিশ্বের সত্য অনুসন্ধান করছেন। আইআইটি বোম্বের সাবেক এই ছাত্র এবং হরিয়ানার বাসিন্দা অভয় সিং একসময় অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। ভারত ছাড়াও কাজ করেছেন কানাডায়। কিন্তু সব ছেড়ে জীবনের সত্য খুঁজতে বেরিয়ে পড়েন তিনি। উত্তর খুঁজে পান শিবের মধ্যে।

অভয় সিং বলেন, ‘সবকিছু শিব। সত্য শিব, আর শিব সুন্দর।’

তাঁর জীবনের বাঁকগুলো দিল্লির ট্রাফিকের চেয়েও জটিল। একাধারে তিনি ইঞ্জিনিয়ার, ফটোগ্রাফার, পদার্থবিদ্যার শিক্ষক এবং সবশেষে পুরোদস্তুর সাধু। তিনি বলেন, ‘আমি বুঝতে চেয়েছিলাম মনের কার্যপদ্ধতি এবং কীভাবে অপ্রয়োজনীয় চিন্তাগুলো থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।’

চা বাবা। ছবি: সংগৃহীত
চা বাবা। ছবি: সংগৃহীত

চা সাধু

দিনেশ স্বরূপ ব্রহ্মচারী বা চা-ওয়ালে বাবা। ৪০ বছর ধরে তিনি বিনামূল্যে ইউপিএসসি পরীক্ষার্থীদের পড়াচ্ছেন। তাঁর খাবারের ধরনও অদ্ভুত। আসলে তিনি কোনো খাবার নয়, শুধু দিনে ১০ কাপ চা পান করেন এবং তিনি কথা বলেন শুধু ইশারা বা হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজের মাধ্যমে।

ভক্তরা দাবি করেন, কোনো কথা না বলেও এই শিক্ষক অসংখ্য সফল সরকারি কর্মকর্তা তৈরি করেছেন। পাশাপাশি তিনি প্রমাণ করেছেন, চা শুধু পানীয় নয়, এটি একটি জীবনযাপন।

শিবলিঙ্গ ওয়ালে বাবা

শিবলিঙ্গ ওয়ালে বাবা। ছবি: সংগৃহীত
শিবলিঙ্গ ওয়ালে বাবা। ছবি: সংগৃহীত

মহাকুম্ভের সব সাধুদের মধ্যে শিবলিঙ্গ ওয়ালে বাবার ভক্তি অন্য এক উচ্চতায়। মেলার পুরো সময়জুড়ে তিনি তাঁর জটাজুটায় শিবলিঙ্গ বহন করছেন। এটি তাঁর সহিষ্ণুতা, আধ্যাত্মিকতা এবং অবিশ্বাস্য ঘাড়ের শক্তির এক নজির। বিষয়টি নেটিজেনদেরও দৃষ্টি কেড়েছে।

নো-ব্রাশিং বাবা

নো-ব্রাশিং বাবা। ছবি: সংগৃহীত
নো-ব্রাশিং বাবা। ছবি: সংগৃহীত

জীবনযাপনের জন্য সবচেয়ে চমকপ্রদ পুরস্কার যদি থাকত, তবে নো-ব্রাশিং বাবা সেটি জিততেন। গর্ব করে তিনি বলেন, ‘টাট্টি খাই, মূত্র পান করি। আট মাস হয়ে গেছে ব্রাশ করি না।’

অ্যাম্বাসেডর বাবা। ছবি: সংগৃহীত
অ্যাম্বাসেডর বাবা। ছবি: সংগৃহীত

অ্যাম্বাসেডর বাবা

এই বাবার বিশেষত্ব হলো, তাঁর ১৯৭৩ সালের গেরুয়া রঙের অ্যাম্বাসেডর গাড়ি। মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরের বাসিন্দা অ্যাম্বাসেডর বাবা ওরফে রাজগিরি গত ৩৫ বছর ধরে এই গাড়িটি নিয়ে মেলার আকর্ষণ হয়ে উঠেছেন।

গাড়ির ছাদে সেট করা হয়েছে এক্সস্ট ফ্যান, যা গরমে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। এ ছাড়া একটি ব্যাটারি-চালিত সেটআপ যা বরফের টুকরো থেকে এসির মতো আবহ তৈরি করে।

তিনি বলেন, ‘গাড়ি যদি নষ্ট হয়, আমি নিজেই মেরামত করি।’ আত্মনির্ভরতার এটাই প্রকৃত উদাহরণ।

আনাজ ওয়ালে বাবা। ছবি: সংগৃহীত
আনাজ ওয়ালে বাবা। ছবি: সংগৃহীত

আনাজ ওয়ালে বাবা

মহাকুম্ভের অনন্য সাধুদের মধ্যে আনাজ ওয়ালে বাবার কথা না বললেই নয়। তাঁর মাথায় একটি ছোট খামার রয়েছে, যেখানে তিনি গম, বাজরা, ছোলা এবং মটরশুঁটির চাষ করেন।

উত্তরপ্রদেশের সোনভদ্রার বাসিন্দা অমরজিৎ বাবা পাঁচ বছর ধরে পরিবেশ সচেতনতার প্রতীক হয়ে উঠেছেন। ফসল সতেজ রাখতে তিনি তাঁর মাথায় নিয়মিত পানিও ঢালেন।

কবুতর ওয়ালে বাবা। ছবি: সংগৃহীত
কবুতর ওয়ালে বাবা। ছবি: সংগৃহীত

কবুতর ওয়ালে বাবা

জুনা আখড়ার মহন্ত রাজপুরী জি মহারাজ। তিনি কবুতর ওয়ালে বাবা নামে পরিচিত। তাঁর সঙ্গী একটি কবুতর, যা তাঁর মাথায় বসে থাকে এবং মানুষের ভিড়েও শান্ত থাকে।

বাবা বলেন, ‘আট-নয় বছর ধরে আমরা একসঙ্গে আছি।’

মহাকুম্ভের এই সাধুরা শুধুই আধ্যাত্মিকতার নয়, বরং তাঁরা মানব জীবনের বিভিন্ন রূপেরও প্রতিফলন। তাঁদের গল্প প্রমাণ করে, ভক্তি এবং জীবনযাপনের পদ্ধতিতে কোনো সীমানা নেই।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত