জব্দ মোটরসাইকেল আত্মসাৎ: পরিদর্শক থেকে এসআই হলেন সিদ্দিকুর

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
প্রকাশ : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৬: ০৮
আপডেট : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৬: ২৩

মাদক মামলার আসামির মোটরসাইকেল বিক্রির অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় রাজশাহী নগরীর রাজপাড়া থানার পরিদর্শক (ওসি) এএসএম সিদ্দিকুর রহমানকে একধাপ নিচে পদাবনতি দিয়ে উপপরিদর্শক (এসআই) হিসেবে পদায়ন করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। 

গত ২৯ জানুয়ারি বিভাগীয় মামলার বিচারক আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) প্রধান ও পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক হাসানুল হায়দার এ রায় দিয়েছেন। রায়ের কপি পরদিন ৩০ জানুয়ারি রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার আনিসুর রহমানের কাছে পাঠানো হয়েছে। 

তবে আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত সিদ্দিকুর রহমান ওসি হিসেবেই দায়িত্ব পালন করেছেন। 

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সিদ্দিকুর রহমান ২০১৮ সালে নওগাঁর রাণীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব (ওসি) পালন করেন। ২০১৮ সালের ৩ মার্চ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তরিকুল ইসলাম নগরব্রীজ এলাকায় অভিযান চালিয়ে, কুজাইল গ্রামের আবদুস সালামের ছেলে কেফায়েত উল্লাহ রাহুলকে (২৯) হেরোইনসহ গ্রেপ্তার করেন। এ সময় কেফায়েতের আরটিআর এ্যাপাচি ব্র্যান্ডের মোটরসাইকেলটিও থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। এ নিয়ে পুলিশ মামলা করে পরদিন কেফায়েতকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। কিন্তু পুলিশ তাঁর মোটরসাইকেলটি জব্দ তালিকার বাইরে রাখে। এ ঘটনার পর ৬ মার্চ ওসি এএসএম সিদ্দিকুর রহমান ও মামলার বাদী এসআই তরিকুল ইসলাম মোটরসাইকেলটি এক লাখ ২০ হাজার টাকায় বেলাল হোসেন নামে এক নিকাহ রেজিস্ট্রারের কাছে গোপনে বিক্রি করে দেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। 

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, মোটরসাইকেল গোপনে বিক্রির বিষয়টি জানাজানি হলে কেফায়েতের বাবা আবদুস সালামকে থানায় ডেকে এনে ৭০ হাজার টাকা ধরিয়ে দেওয়া হয়। কেফায়েতের বাবাকে বলা হয়, ‘মোটরসাইকেল বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। এই ৭০ হাজার টাকা দিলাম। কোথাও অভিযোগ করলে ছেলের সঙ্গে তোমাকেও জেলে থাকতে হবে’ বলেও হুমকি দেওয়া হয়। 

এ দিকে মামলার জব্দ তালিকায় মোটরসাইকেল না দেখিয়ে বিক্রির করে দেওয়ায় ওসি সিদ্দিক ও এসআই তরিকুলের বিরুদ্ধে কেফায়েতের বাবা আবদুস সালাম পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। 

অভিযোগে তিনি জানান, তাঁর ছেলের মোটরসাইকেলটির বৈধ কাগজপত্র ছিল। তিনি মোটরসাইকেলটি জিম্মায় চেয়েছিলেন আদালতের কাছে। কিন্তু আদালত থেকে জানতে পারেন, মামলার সঙ্গে কোনো মোটরসাইকেল জব্দ দেখানো হয়নি। খোঁজ নিতে গিয়ে জানতে পারেন, মোটরসাইকেলটি নিকাহ রেজিস্ট্রার বেলালের কাছে এক লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। সে সময় মোটরসাইকেলটির বাজার দাম ছিল সাড়ে তিন লাখ টাকা। এ বিষয়ে তিনি প্রতিকার চেয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে অভিযোগ করেন। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অভিযোগ পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তর থেকে নওগাঁর পুলিশ সুপারকে ঘটনা তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। তারপর প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওসি সিদ্দিকুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়। পরে ওসি সিদ্দিক বদলি হয়ে আরএমপিতে আসেন। পরে বিভাগীয় মামলাটি তদন্ত করেন আরএমপির মতিহার জোনের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার একরামুল হক। দ্বিতীয়বার তদন্তেও অভিযোগের সত্যতা মেলায় বিভাগীয় মামলার বিচারক আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের প্রধান হাসানুল হায়দার ২৯ জানুয়ারি এ রায় দেন। রায়ে ওসি সিদ্দিকুর রহমানকে পরিদর্শক পদ থেকে পদাবনতি (র‍্যাঙ্ক রিভারসন) দিয়ে উপপরিদর্শক (এসআই) করার আদেশ দেন। এই আদেশ সাময়িক বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এই রায়ের বিরুদ্ধে সিদ্দিকুর রহমান আপিল করতে পারবেন বলেও জানা গেছে। 

এ বিষয়ে বিভাগীয় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আরএমপির মতিহার জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার একরামুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এসব ব্যাপার তো অফিসের গোপনীয় ব্যাপার। আমি কিছু বলতে পারব না। মাস দু-এক আগে আমি তদন্ত করে প্রতিবেদন দিয়ে দিয়েছি। শাস্তি হয়েছে কি না তা বলতে পারব না। এ সংক্রান্ত কোনো কাগজ আমি পাইনি। কাগজপত্র আমার কাছে আসার কথাও নয়।’ 

এ বিষয়ে আরএমপির মুখপাত্র রফিকুল আলমও দাবি করেন এসব বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। 

তবে রায়ের বিষয়টি শুনেছেন জানিয়ে ওসি সিদ্দিকুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি মুলা চিনলাম না, অথচ মুলা চুরি করার শাস্তি পেয়ে গেলাম। এটা কোনো ব্যাপার না। আমি বিষয়টা দেখছি।’ 

এর আগে পুলিশের দায়ের করা মামলার আসামি কেফায়েত উল্লাহ জানান, তিনি মসজিদে ইমামতি করেন। ২০১৮ সালে মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার হয়েছিল। সে সময় খুতবায় মাদকবিরোধী কথা বলার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকেই মসজিদে মসজিদে চিঠি এসেছিল। সে মোতাবেক তিনি মাদকবিরোধী বয়ান করেন। মাদক কারবারিদের নাম ধরে ধরে তিনি সতর্ক করেন। এ নিয়ে এলাকার একটি মাদক চক্র তাঁর ওপর ক্ষিপ্ত হয়। এরপর তাদেরই একজন কৌশলে কেফায়েতের মোটরসাইকেলে উঠে পেছন থেকে কোটের পকেটে হেরোইন ঢুকিয়ে দেয়। পরে মোটরসাইকেল থেকে নামার আগেই পুলিশ তাঁকে আটক করে। মাদক কারবারিদের সঙ্গে যোগসাজশ করে পুলিশ তাঁকে ফাঁসিয়েছিল। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত