চুরি দেখে ফেলায় মা ও ২ সন্তানকে হত্যা

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৩ অক্টোবর ২০২২, ১৭: ২৭

চুরি করতে দেখে ফেলায় সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে মা ও দুই সন্তানকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত একমাত্র ব্যক্তি আইয়ুব আলী ওরফে সাগরকে (২৮) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ সোমবার দুপুরে সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য নিশ্চিত করেন পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল। এর আগে গতকাল রোববার রাতে জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার নন্দিগাতী গ্রামে নিজ বাড়ি থেকে আইয়ুব আলীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গ্রেপ্তারকৃত আইয়ুব আলী উল্লাপাড়া উপজেলার নন্দিগাতী গ্রামের মোকসেদ মোল্লার ছেলে।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, গ্রেপ্তারকৃত আইয়ুব আলী প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তিনি একাই জড়িত। নিহত রওশনারা আসামি আইয়ুব আলীর সম্পর্কে সৎ খালা। রওশনারার স্বামী সুলতান আলী দ্বিতীয় বিয়ে করে অন্যত্র থাকেন।

পুলিশ সুপার বলেন, আসামি আইয়ুব আলী পেশায় তাঁত শ্রমিক। তাঁর পেশার আয় দিয়ে সংসার নির্বাহ না হওয়ায় চারটি এনজিও থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা ক্ষুদ্র ঋণ নেন। সংসারের খরচ মেটানো এবং এনজিওর ঋণের কিস্তি এক সঙ্গে চালানো কঠিন হয়ে পরে তাঁর। ঋণের কারণে হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। ঋণের ভয়ে পালিয়ে বেড়াতেন। ঋণ পরিশোধ করার জন্য গত ২৬ সেপ্টেম্বর তিনি রওশনারার (সৎ খালা) বাড়ি যান টাকা ধার নেওয়ার জন্য। এ সময় ঘরের মধ্যে চারটি স্টিলের বাক্স (ট্রাঙ্ক) দেখতে পান আইয়ুব আলী।

তাঁর ধারণা এই বাক্সের মধ্যে টাকা ও স্বর্ণ রয়েছে। ওই দিন বাড়িতে ফিরে ঋণের কিস্তির টাকা জোগাড় করতে না পেরে রওশনারার বাড়িতে চুরি করার সিদ্ধান্ত নেন আইয়ুব আলী। সিদ্ধান্ত মোতাবেক গত ২৮ সেপ্টেম্বর রওশনারার বাড়ি যান। রাতের খাবার খেয়ে সবাই মিলে একই ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন। এরই একপর্যায়ে রওশনারার ওড়নার আঁচল থেকে চাবি নিয়ে ঘরে থাকা স্টিলের বাক্সের (ট্রাঙ্ক) মধ্যে টাকা ও গয়না খোঁজা খুঁজি শুরু করেন আইয়ুব আলী।

একপর্যায়ে রওশনারা ঘুমের মধ্যে নড়াচড়া দেখে আইয়ুব আলী মনে করে তাঁকে চুরি করা অবস্থায় দেখে ফেলেছেন রওশনারা। এ অবস্থায় ঘরের ভেতরে থাকা মসলা গুঁড়া করার শীল পাথর দিয়ে রওশনারার বুকে আঘাত করে গুরুতর আহত করেন। পরে তাঁর গলা টিপে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। এ সময় রওশনারার ছোট ছেলে মাহিন (৩) কান্নাকাটি শুরু করলে তাকেও গলাটিপে শ্বাসরোধে হত্যা করেন।

দুজনকে হত্যার পর আবারও আইয়ুব আলী টাকা ও গয়না খুঁজতে থাকলে রওশনারার আরেক ছেলে জিহাদ (১০) ঘুমের মাঝে উঠে বসে পড়লে তাকেও গলাটিপে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। ভোরের আজান দেওয়া শুরু করলে আইয়ুব আলী ঘর থেকে বের হয়ে বাইরে থেকে শিকল দিয়ে বাড়ি চলে যান।

গত শনিবার দুপুরে ঘরের মধ্যে তিনজনের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন তাঁর বড় বোন লিলি খাতুন। খবর পেয়ে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহত রওশনারার ভাই নুরুজ্জামান বাদী হয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে বেলকুচি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর জড়িতদের ধরতে পুলিশ উচ্চ মানের প্রযুক্তি ব্যবহার করে। একপর্যায়ে আসামি আইয়ুব আলী ওরফে সাগরকে রোববার রাতে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সোমবার দুপুরে তাঁকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালতে তিনি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেবেন।

পুলিশ সুপার বলেন, আসামি আইয়ুব আলী মনে করেছিলেন হত্যা করতে তাঁকে কেউ দেখেনি। এ জন্য তিনি সন্দেহের তালিকায় নেই। এ কারণে স্বাভাবিক জীবনযাপন করছিলেন। আইয়ুব আলীকে গ্রেপ্তারের পর তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত শীল পাথর ও মোবাইল উদ্ধার করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, নিহত রওশনারা বেলকুচিতে একটি বাড়িতে সুতার কাজ করতেন। হত্যাকাণ্ডের তিন/চার আগ থেকে তিনি কাজে যাচ্ছিলেন না। কাজে না যাওয়ায় সুতার মহাজন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে তাঁর বড় বোন লিলি খাতুনকে ফোন করেন। ফোন পেয়ে গত শনিবার দুপুরে বেলকুচি উপজেলার ধুকুরিয়াবেড়া ইউনিয়নের মবুপুর নতুন পাড়া বোন রওশনারার বাড়িতে আসেন লিলি খাতুন। বাড়ি এসে ঘরের দরজার শিকল লাগানো দেখতে পান তিনি। পরে লিলি খাতুন ঘরের দরজার সিটকিনি খুললে ঘরের মেঝেতে রওশন আরা ও তাঁর দুই সন্তানের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার শুরু করেন। তাঁর চিৎকারে আশপাশের লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে এসে পুলিশকে খবর দেন। খবর পেয়ে পুলিশ নিহতদের মরদেহ উদ্ধার করে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত