মামলা করে বিপাকে নির্যাতনের শিকার নারী-শিশুর পরিবার

রাজশাহী প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০২ ডিসেম্বর ২০২১, ১৬: ০৫

রাজশাহীতে নারী ও শিশু নির্যাতন থামছেই না। এসব ঘটনায় ভুক্তভোগী পরিবারগুলো আইনের আশ্রয় নিয়ে উল্টো বিপাকে পড়ছেন। মামলা করার পর প্রায় প্রতিটি পরিবারই আসামিপক্ষের হুমকির মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। আজ বৃহস্পতিবার রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এমন চিত্র তুলে ধরেন ভুক্তভোগী কয়েকটি পরিবার। 

অ্যাসিড হামলার শিকার রাজশাহীর গোদাগাড়ীর কুমপুরপুর রানীনগর এলাকার কিশোরী মাহমুদা খাতুনের (১৯) মা সেফাল বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ে গত বছরের ২ অক্টোবর জামাই মুরাদ আলীর দ্বারা অ্যাসিড সন্ত্রাসের শিকার হয়। এখনো সে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে পারেনি। আমরা টাকার অভাবে ঠিকমতো চিকিৎসাও করাতে পারছি না। এরই মধ্যে মামলা চালাতে গেলেও প্রতিদিন আদালতের বারান্দায় টাকা খরচ হচ্ছে। আবার মামলার আসামিরা কোর্টে এসে প্রকাশ্যেই আমার পরিবারকে হুমকি দিচ্ছে। ভয়ে আমরা ঠিকমতো বাড়িতেও থাকতে পারছি না। তাহলে আমরা এখন কোথায় যাব?’ 

গত ২১ জুলাই বাড়ির পাশে আমগাছে ঝুলছিল গোদাগাড়ীর কাঁকনহাট এলাকার গৃহবধূ ফাতেমা খাতুনের লাশ। লাশ উদ্ধারের সময় তাঁর সারা শরীর কাদামাখা ছিল। কিন্তু পায়ের তালুতে কোনো কাদা ছিল না। ফাতেমার শিশু সন্তান সাক্ষী দেয় তার মাকে হত্যা করে লাশ আমগাছে ঝুলিয়ে রেখেছে তার বাবা, দাদা ও চাচা। কিন্তু ওই ঘটনার পর থানা-পুলিশ মামলা গ্রহণ করে আত্মহত্যা প্ররোচনার ঘটনায়। যদিও মামলার অন্যতম আসামি নিহত গৃহবধূ ফাতেমার স্বামী মোতালেব এখনো জেলহাজতে রয়েছেন। কিন্তু তাঁর পরিবারের সদস্যরা এখন মামলা তুলে নিতে শাপলার মা-বোনদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন। 

শাপলার বোন সুলনেহার অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার বোনকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা যেন এ নিয়ে মুখ না খুলি তার জন্য হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমরা ওই ঘটনায় হত্যা মামলা দায়ের করতে চাই। আমার বোনের হত্যাকারীর বিচার চাই। কিন্তু যেভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে, তাতে এখন বাড়িতেই টেকা দায় হয়ে যাচ্ছে।’ 

এদিকে জেলার পুঠিয়া উপজেলার সনাতন ধর্মাবলম্বীর নারী ধর্ষণের পর সেই ভিডিও সামাজিক গণমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় যুবলীগ নেতা সুমনুজ্জামান সুমনের পরিবার থেকে ওই নারীকে অব্যাহত হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও ওই সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়েছে। 

একটি বেসরকারি সংস্থার নির্বাহী পরিচালক রাশেদ ইবনে ওবায়েদ বলেন, ‘মেয়েটি এখন খুব অসহায় হয়ে আছে। এমনকি তাঁর বাড়িতেও আশ্রয় হারিয়েছে। এখন মেয়েটি যাবে কোথায়?’ রাশেদ ইবনে ওবায়েদ নগরীর লক্ষ্মীপুরে সম্প্রতি সাত বছরের এক শিশু পাশবিক নিপীড়নের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘এই ঘটনার আসামি একজন যুগ্ম-সচিব পদমর্যাদার সরকারি কর্মকর্তা। এখন তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলাটি তুলে নিতে একের পর এক হুমকি দেওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে চরম বিপাকে আছেন ওই পরিবারের সদস্যরা। 

ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বেসরকারি চারটি সংস্থা। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন রিসার্চ ইনিশিয়েটিভ বাংলাদেশের (রিইব) নির্বাহী পরিচালক মেঘনা গুহঠাকুরতা, ডাসকো ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আকরামুল হক এবং নেটজ বাংলাদেশের প্রোগ্রাম ম্যানেজার আফসানা বিনতে আমিন। 

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত