সৎভাইয়ের সঙ্গে বেরিয়ে নিখোঁজ, পরে বেওয়ারিশ হিসেবে লাশ দাফন

নীলফামারী ও সৈয়দপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০২৩, ২১: ৪৩

আব্দুর রহিম আকাশ (১৬) আমার দ্বিতীয় স্ত্রীর ছেলে। গত ২৯ মার্চ রাতে মোটরসাইকেলের মাঝখানে বসিয়ে আমার প্রথম স্ত্রীর ছেলে ওমর ফারুক ও এলাকার মোকছেদ আলী চেন্টুর ছেলে সাজু মেলা দেখার কথা বলে নিয়ে যায়। কয়েক ঘণ্টা পর ওমর ফারুক ফিরে আসায় তাকে জিজ্ঞেস করলে সে জানায়, আকাশ কোথায় আমি জানি না, হয়তো কোনো বন্ধুর বাড়িতে গেছে। 

দুই দিন পরে জানতে পারি, ওই এলাকায় একজন ট্রেনে কাটা পড়ে মারা গেছে। পরে লোকজনের কাছ থেকে নিহতের বিবরণ ও ছবি দেখে অনেকটা নিশ্চিত হই, সে আমার ছেলে আকাশ। থানায় গিয়ে জানতে পারি, পুলিশ তাকে হাতিখানা কবরস্থানে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করেছে। 

কেঁদে কেঁদে কথাগুলো বলেন নীলফামারীর সংগলসী ইউনিয়নের কাজিরহাট বানিয়াপাড়ার বাসিন্দা সেকেন্দার আলী ও তাঁর স্ত্রী রেখা বেগম। গতকাল বুধবার রাতে স্থানীয় সংবাদকর্মীদের কাছে এভাবে নিজেদের অসহায়ত্বের কথা তুলে ধরেন এই মা-বাবা। 

তাঁরা আরও জানান, এ ঘটনার সত্যতা জানতে গিয়ে নিজেদের জীবনই এখন হুমকির মুখে। প্রাণে বাঁচতে এখন তারা বাড়ি-ঘর ছাড়া। প্রায় ছয় মাস ধরে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন, কিন্তু কোথাও সুবিচার পাচ্ছেন না। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহভাজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করতে গেলেও পুলিশ মামলা নেয়নি। 

সেকেন্দার আলী বলেন, ‘আমার বড় ছেলে ইউপি সদস্য নূর ইসলাম ও ওমর ফারুক পৌর কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে কবরস্থান থেকে মরদেহ উত্তোলন করে আমাদের না দেখিয়ে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করে। আমার ছেলে ওমর ফারুকের কথাবার্তা ও আচরণে মনে হয় সে আকাশকে হত্যা করে রেললাইনের ওপর রেখে আসে। ঘটনার পর থেকে আজ পর্যন্ত ওমর ফারুক আত্মগোপন করে আছে।’ 

রেখা বেগম বলেন, ‘সতিনের নেশাগ্রস্ত ছেলে ওমর ফারুক আমাদের ওপর নানা রকম অত্যাচার করত। আমার দুই ছেলেকে মেরে ফেলার হুমকি দিত। ঘটনার দিন ফারুক আমার ছেলেকে মোটরসাইকেলে করে নিয়ে যায়। কিন্তু এখন বলছে, আকাশ আত্মহত্যা করেছে। আকাশ যদি আত্মহত্যাই করবে, তাহলে লাশ যেখানে পাওয়া যায় সেখান থেকে অনেক দূরে কলাবাগানে তার জুতা পাওয়া গেল কীভাবে। আমাদের সন্দেহ ওমরই আকাশকে হত্যা করেছে।’ 

ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে বলে দাবি সেকেন্দার আলী দম্পতির। ছবি: আজকের পত্রিকাতবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সেকেন্দার আলীর প্রথম স্ত্রীর ছেলে ইউপি সদস্য নুর ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সৈয়দপুর রেলওয়ে থানার পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে। লাশের ময়নাতদন্ত হয়েছে। আকাশ বাবা মায়ের সঙ্গে ঝগড়া করে আত্মহত্যা করতে পারে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ফাঁসানোর চেষ্টা করছে আমার সৎমা।’ 

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সৈয়দপুর রেলওয়ে থানার পুলিশের উপ-সহকারী পরিদর্শক মনিরুজ্জামান বলেন, ‘স্বজনের খোঁজ না পাওয়ায় ৪৮ ঘণ্টা পর মরদেহ দাফন করা হয়। পরবর্তীতে খোঁজ পাওয়ায় স্থানীয় পৌর কর্তৃপক্ষের অনুমতিতে কবর থেকে মরদেহ উত্তোলন করে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ ব্যাপারে একটি হত্যা মামলা হয়েছে। যার তদন্ত চলমান।’ 

অন্যদিকে সৈয়দপুর রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাকিউল আজম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পুলিশ সুপারসহ ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করা হয়েছে। এরই মধ্যে ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে এসেছে।’ দু–এক দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে বলে জানান ওসি।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত