প্রেমিকা ও তাঁর ছোট বোনকে হত্যার দায়ে যুবকের ফাঁসির রায়

রংপুর প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২০: ০৭
আপডেট : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২০: ৫০

বাড়িতে মা-বাবা কেউ না থাকায়, এক তরুণী তাঁর সঙ্গে থাকার জন্য চাচাতো বোনকে ডেকে নেন। সেই সঙ্গে গোপনে ডেকে নেন তাঁর প্রেমিককেও। পরে চাচাতো বোন ঘুমিয়ে পড়লে সেখানে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে তরুণীর গলায় ওড়না পেঁচিয়ে হত্যার পর ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে দেন তাঁর প্রেমিক। 

শুধু তা-ই নয়, মরদেহ ঝোলানোর সময় দেখে ফেলায় ওই তরুণীর চাচাতো বোনকেও হত্যা করে পালিয়ে যান ওই যুবক। 

আজ বৃহস্পতিবার অভিযুক্ত ওই যুবককে মৃত্যুদণ্ড এবং এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সেই সঙ্গে ওই যুবককে গোপনে সহযোগিতা করার অপরাধে আরেক যুবককে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। 

রংপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক মোস্তফা কামাল এ রায় ঘোষণা করেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী খন্দকার রফিক হাসনাইন। 

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যুবকের নাম মাহফুজার রহমান রিফাত (২২)। তিনি রংপুর মহানগরীর ২২ নম্বর ওয়ার্ডের বাবুখা মধ্যপাড়া এলাকার এমদাদুল হকের ছেলে। সাত বছরের সাজাপ্রাপ্ত যুবকের নাম আরিফুল ইসলাম আরিফের (২৭)। তিনি রংপুর সদর উপজেলার শাহাবাজপুর কলারখামার এলাকার মহুবুল ইসলামের ছেলে। 

নিহত তরুণীর নাম সুমাইয়া আক্তার মীম (১৭)। তিনি নগরীর মধ্য গণেশপুর এলাকার মমিনুল ইসলামের মেয়ে। মীমের চাচাতো বোনের নাম জান্নাতুল মাওয়া (১৪)। 

আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর রাতে বাড়িতে কেউ না থাকায় সুমাইয়া আক্তার মীম তাঁর চাচাতো বোন জান্নাতুল মাওয়াকে নিজের সঙ্গে শোয়ার জন্য নিয়ে আসেন। প্রেমের সম্পর্ক থাকায় ওই রাতে মীমের বাড়িতে যান মাহফুজার রহমান রিফাত। এ সময় মীমের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক হয় রিফাতের। পরে কথা-কাটাকাটির জেরে তাঁকে হত্যা করেন রিফাত। ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ঘরের সিলিং ফ্যানে ওড়না দিয়ে মরদেহ ঝুলিয়ে রেখে আত্মহত্যার নাটক সাজান তিনি। এ সময় ওই ঘরে থাকা মীমের চাচাতো বোন জান্নাতুল মাওয়া বিষয়টি বুঝতে পাড়লে পেলে তাঁকেও শ্বাসরোধে হত্যার পর মরদেহ মেঝেতে ফেলে পালিয়ে যান রিফাত। 

এ ঘটনার পরদিন ১৮ সেপ্টেম্বর ঘটনাস্থল থেকে দুই বোনের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ১৯ তারিখে কোতোয়ালি থানায় মীমের বাবা মমিনুল ইসলাম একটি হত্যা মামলা করেন। ঘটনার দুই দিন পর ২০ সেপ্টেম্বর রিফাতকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রিফাত আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে দায় স্বীকার করেন। 

তদন্ত শেষে রিফাত ও আরিফের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৩০ এপ্রিল আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন থানার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) মজনু মিয়া ও আল-আমিন। ২৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আজ আদালতের বিচারক এ রায় ঘোষণা করা হয়। 

রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি খন্দকার রফিক হাসনাইন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মামলার আসামি মাহফুজার রহমান রিফাতের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হওয়ায় মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। অপর আসামি আরিফুল ইসলাম ওরফে আরিফ মামলার আলামত নিজ দখলে রেখে ও প্রধান আসামিকে আলামত গোপনে সহযোগিতার অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায়, সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন বিচারক। এ ছাড়া আরিফের ২০ হাজার টাকা জরিমানা ও অনাদায়ে আরও ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। আমরা মনে করি, ন্যায়বিচার পেয়েছি। এ রায়ে সন্তুষ্ট প্রকাশ করছি।’

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত