মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যার দায়ে ৬ জেএমবি সদস্যের মৃত্যুদণ্ড 

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৩ জুন ২০২২, ১৬: ৪২
আপডেট : ২৩ জুন ২০২২, ১৬: ৪৯

কুড়িগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলী হত্যা মামলায় ছয় জেএমবি সদস্যকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই হত্যাকাণ্ডে দায়েরকৃত বিস্ফোরক মামলায় তিন জেএমবি সদস্যকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। 

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কুড়িগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মো. আব্দুল মান্নান এ রায় ঘোষণা করেন। ২০১৬ সালে সংঘটিত এ হত্যাকাণ্ডে একটি হত্যা মামলা এ রায় ঘোষণা করেন বিচারক। পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এসএম আব্রাহাম লিংকন এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

দণ্ডপ্রাপ্ত জেএমবি সদস্যরা হলেন, রিয়াজুল ইসলাম ওরফে মেহেদী, জাহাঙ্গীর ওরফে রাজীব গান্ধী, গোলাম রব্বানী, হাসান ফিরোজ ওরফে মোখলেছ, মাহাবুব হাসান মিলন ওরফে হাসান এবং আবু নাসের ওরফে রুবেল। এদের মধ্যে রিয়াজুল ইসলাম ওরফে মেহেদী পলাতক রয়েছেন। বাকি পাঁচ আসামির উপস্থিতিতে আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। পলাতক রিয়াজুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের পর হতে সাজা কার্যকরের আদেশ দেন আদালত। 

মামলা সূত্রে জানা গেছে, মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলী হত্যা মামলায় ১০ জেএমবি সদস্যকে আসামি করা হয়েছিল। কিন্তু চার্জশিট দাখিলের আগেই পুলিশের গুলিতে তিন আসামি এবং চার্জশিট দাখিলের পর আরও এক আসামি নিহত হলে তাঁদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বাকি ছয়জনের বিরুদ্ধে এবং জাহাঙ্গীর ওরফে রাজীব গান্ধী, মো. রিয়াজুল ইসলাম ওরফে মেহেদী এবং গোলাম রব্বানী নামে তিন আসামির বিরুদ্ধে বিস্ফোরক আইনে পৃথক দুটি অভিযোগ গঠন করে আদালত। 

এদিকে রায় ঘোষণায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন নিহত বীর মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলীর একমাত্র ছেলে ও মামলার বাদী রুহুল আমিন আজাদ। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ কয়েক বছর পর হলেও মামলার রায় ঘোষণায় আমরা খুশি। আমরা চাই দ্রুত এ রায় কার্যকর করা হোক।' 

রায় ঘোষণার পর কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে আসামিদের কারাগারে নিয়ে যাচ্ছে পুলিশ। ছবি: আজকের পত্রিকাপিপি এসএম আব্রাহাম লিংকন বলেন, ‘রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করার উদ্দেশে সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রাষ্ট্রকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা অপপ্রয়াসে এই খুন করা হয়েছে। এটা কোনো সাধারণ খুন নয়। একটা রাজনৈতিক উদ্দেশে এ খুন করা হয়েছে। আসামিরা আদালতে দেওয়া তাঁদের জবানবন্দিতে সেটা স্বীকারও করেছে।’ 

এদিকে রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আদালত প্রাঙ্গণে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। রায় ঘোষণার পরপরই কঠোর নিরাপত্তায় দণ্ডপ্রাপ্ত জেএমবি সদস্যদের কারাগারে পাঠানো হয়। 

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২২ মার্চ কুড়িগ্রাম শহরের কৃষ্ণপুর গাড়িয়াল পাড়ার কাছে গড়ের পার এলাকায় প্রাত ভ্রমণে বের হন ওই এলাকার বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলী। সকাল পৌনে ৭টার দিকে ওই এলাকার আশরাফিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের উত্তরে পাকা রাস্তার ওপর হোসেন আলীকে কুপিয়ে হত্যা করে জেএমবি সদস্যরা। স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি তাঁদের আটকের চেষ্টা করলে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে হত্যাকারীরা। ওই দিনই অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারীদের আসামি করে কুড়িগ্রাম সদর থানায় মামলা করেন নিহত মুক্তিযোদ্ধার একমাত্র ছেলে রুহুল আমিন আজাদ।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত