ট্রাম্পের শপথের আগেই বার্নিকাটসহ তিন কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ১৬: ০৮
Thumbnail image
পদত্যাগের নির্দেশ পাওয়া ডেরেক হোগান, মার্শা বার্নিকাট ও অ্যালাইনা টেপলিটজ। ছবি: সংগৃহীত

ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের আগেই যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মী ব্যবস্থাপনা ও অভ্যন্তরীণ তদারক অনুবিভাগের তিন সিনিয়র ক্যারিয়ার কূটনীতিককে পদত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সহকারীরা তাঁদের এই নির্দেশ দিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট দুজন মার্কিন কর্মকর্তার বরাতে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্স।

ট্রাম্প প্রশাসনের গঠনের দায়িত্বে থাকা এজেন্সি রিভিউ টিম এই নির্দেশনা দিয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট সূত্র। যাঁরা পদত্যাগের নির্দেশ পেয়েছেন, তাঁরা হলেন ডেরেক হোগান, মার্শা বার্নিকাট ও অ্যালাইনা টেপলিটজ। এই তিন কর্মকর্তাই বহু বছর ধরে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয় প্রশাসনে বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেছেন।

সাধারণত রাজনৈতিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্তরা নতুন প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা গ্রহণের সময় পদত্যাগ করলেও ক্যারিয়ার কূটনীতিকেরা এক প্রশাসন থেকে অন্য প্রশাসনে কাজ চালিয়ে যান। তবে এই তিন কর্মকর্তার বেলায় ঘটতে চলেছে ভিন্ন কিছু।

২০ জানুয়ারি শপথ নেবেন ট্রাম্প। নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি ‘ক্লিন আউট ডিপ স্টেট’ বা ছায়া রাষ্ট্র পরিষ্কারের করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এতে তিনি অবিশ্বস্ত আমলাদের বরখাস্ত করার কথা বলেন।

এ বিষয়ে অবহিত এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, এটি খারাপ পরিস্থিতির সূচনা করবে বলে উদ্বেগ রয়েছে।

এ বিষয়ে ট্রাম্পের ক্ষমতা হস্তান্তর দলের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘আমাদের জাতি ও আমেরিকার কর্মজীবী নারী-পুরুষের স্বার্থ রক্ষার লক্ষ্যে সমভাবাপন্ন কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়াটাই যৌক্তিক। আমাদের অনেক ব্যর্থতা ঘোচাতে হবে। এর জন্য একই লক্ষ্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ দল প্রয়োজন।’

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘আমাদের আপাতত কর্মী ছাঁটাই-সম্পর্কিত কোনো ঘোষণা নেই।’ হোগান, বার্নিকাট ও টেপলিটজও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।

ট্রাম্প প্রশাসন আগের চেয়ে আরও আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে বলে মনে করা হচ্ছে। ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে শান্তি স্থাপন, ইসরায়েলের প্রতি আরও সমর্থন এবং ন্যাটো মিত্রদের প্রতিরক্ষা ব্যয় বাড়াতে চাপ সৃষ্টির মতো বিষয়গুলোকে তিনি অগ্রাধিকার দেবেন।

এ ছাড়া গ্রিনল্যান্ডকে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ করার মতো অস্বাভাবিক নীতি অনুসরণের কথাও বলেছেন তিনি। বিশেষজ্ঞদের মতে, তাঁর এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য একটি অনুগত ও কার্যকর কূটনৈতিক কর্মী বাহিনী অপরিহার্য।

তিন কর্মকর্তাকে সরানোর সিদ্ধান্ত ২০১৭-২০২১ সালে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রথম মেয়াদের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ। সেই সময়ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

ট্রাম্পের পরিকল্পনার সঙ্গে পরিচিত দুটি সূত্র জানিয়েছে, নতুন প্রশাসন সহকারী সচিবের মতো পদগুলোতে রাজনৈতিক নিয়োগের সংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। এর মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরে তাঁর অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টির আশঙ্কা কমানো যাবে বলে মনে করছেন ট্রাম্পের সহকারীরা।

রয়টার্সকে দুটি সূত্র জানিয়েছে, ‘এজেন্সি রিভিউ টিম’ এরই মধ্যে এমন পদগুলোর জন্য প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছে।

স্টেট ডিপার্টমেন্টের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, হোগান স্টেট ডিপার্টমেন্টের নির্বাহী সচিব। তিনি বিভাগীয় বিভিন্ন দপ্তর এবং হোয়াইট হাউসের মধ্যে তথ্যপ্রবাহ পরিচালনা করেন।

বার্নিকাট ইউএস ফরেন সার্ভিসের মহাপরিচালক এবং গ্লোবাল ট্যালেন্টের পরিচালক। তিনি স্টেট ডিপার্টমেন্টে কর্মী নিয়োগ, নিয়োগ প্রদান এবং কর্মজীবন উন্নয়ন পরিচালনা করেন।

সহকারী সেক্রেটারি টেপলিটজ তিন দশকের বেশি সময় ধরে স্টেট ডিপার্টমেন্টে রয়েছেন এবং তিনি বিদেশে ও ওয়াশিংটনে দায়িত্ব পালন করেছেন। সম্প্রতি, তিনি ব্যবস্থাপনা স্টেট ডিপার্টমেন্টের অন্তর্বর্তী দায়িত্ব পালন করছেন, যা বাজেট থেকে শুরু করে নিয়োগ, ক্রয়, মানবসম্পদসহ বিভিন্ন দপ্তরের কার্যক্রম তদারক করে।

পেন স্টেট ইউনিভার্সিটির স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের অধ্যাপক ডেনিস জেট বলেন, ‘এগুলো নীতিনির্ধারণী পদ নয়। এগুলো আমলাতন্ত্র পরিচালনা নিয়ন্ত্রণের কাজ। কিন্তু আমলাতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে এটাই করার উপায়।’

দীর্ঘ ২৮ বছর ধরে বিভিন্ন দেশে কূটনীতিক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ওই অধ্যাপক আরও বলেন, এই তিন পদে পছন্দের ব্যক্তিদের নিয়োগ নির্বাচনের মাধ্যমে ট্রাম্পের দল স্টেট ডিপার্টমেন্টের বিভিন্ন অংশে সম্পদ স্থানান্তর করতে পারবে। বিভিন্ন দপ্তর ও দূতাবাস থেকে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে এবং কর্মীদের নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।

‘ডিপ স্টেট’ ভেঙে ফেলা

ট্রাম্পের মনোনীত পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও গত বুধবার সেক্রেটারি অব স্টেট হওয়ার জন্য সিনেট ফরেন রিলেশনস কমিটিতে শুনানি দেওয়া সময় এই তিন কর্মকর্তাকে পদত্যাগের অনুরোধ জানানো হয়।

ট্রাম্প নির্বাচনী প্রচারণার ওয়েবসাইটে ‘ডিপ স্টেট’ ভেঙে ফেলা ও পেশাদার রাজনীতিবিদদের বরখাস্ত করার ১০টি ধাপে উল্লেখ করেছেন।

এই ধাপগুলোর প্রথমটি হচ্ছে ২০২০ সালের একটি নির্বাহী আদেশ পুনঃপ্রকাশ করা। এর মাধ্যমে কিছু বেসামরিক কর্মচারীকে চাকরির সুরক্ষা অপসারণ এবং তাঁদের বরখাস্ত সহজ করা হবে।

এদিকে ‘স্কেজুল এফ’ নামে পরিচিত এই পরিকল্পনার বিরোধীরা বলছেন, ট্রাম্পের নীতিগত অ্যাজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য সরকারি কর্মচারীদের চাকরির সুরক্ষা অপসারণ ফেডারেল আমলাতন্ত্রকে রাজনৈতিকীকরণের চেষ্টা।

সাধারণত, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টরা ফেডারেল সরকারের আমলাতন্ত্রে নিজ দলের কয়েক হাজার রাজনৈতিক নিয়োগ দিতে পারেন। কিন্তু ২০ লাখের বেশি কর্মচারীর ক্যারিয়ার সিভিল সার্ভিসকে সাধারণত আলাদাই রাখা হয়। স্কেজুল এফের দাবি, ট্রাম্পকে প্রায় ৫০ হাজার কর্মচারী বরখাস্ত এবং তাঁদের স্থলে সমমনা রক্ষণশীলদের নিয়োগ দিতে যাচ্ছে।

অধ্যাপক জেট বলেন, স্টেট ডিপার্টমেন্টের কর্মীদের নিয়ন্ত্রণ নিলে ‘বিশ্বস্ত’ কর্মকর্তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুততর হবে।

ইউনিয়ন সরকার এবং সরকারি তদারকি সংস্থাগুলো বলেছে, ট্রাম্প স্কেজুল এফ পুনঃপ্রবর্তনের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করলে তাঁরা মামলা করবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত