শুরু হয়েছে বিজেএস পরীক্ষার ভাইভা। চলবে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে নমুনা ভাইভা তুলে ধরেছেন ১৫তম জুডিশিয়ারিতে সহকারী জজ হিসেবে সুপারিশ পাওয়া মো. তৌফিক। 

১ম প্রশ্নকর্তা: নাম কী? কোথায় পড়াশোনা করেছেন? 
আমি: মো. তৌফিক। পড়াশোনা করেছি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। 
১ম প্রশ্নকর্তা: বাবা কী করেন? 
আমি: বাবা কৃষিকাজ করেন। 

১ম প্রশ্নকর্তা: কবিতা পড়েন? জীবনানন্দ দাশের একটি কবিতা বলুন। 
আমি: বনলতা সেন কবিতাটি আবৃত্তি করলাম। 
১ম প্রশ্নকর্তা: মুক্তিযুদ্ধে হাজার হাজার রিফিউজি ভারতে যাচ্ছিল। ইন্দিরা গান্ধী রিফিউজির স্রোত থামানোর জন্য ভারতের সেনাপ্রধানকে পাকিস্তান আক্রমণের কথা বললেন। ভারতের তৎকালীন সেনাপ্রধান কে ছিলেন এবং তিনি কী উত্তর দিয়েছিলেন? 
আমি: স্যার, সেনাপ্রধান ছিলেন জেনারেল মানেক শ। কিন্তু তিনি কী উত্তর দিয়েছিলেন, সেটি আমার জানা নেই।

১ম প্রশ্নকর্তা: পাঠ্যপুস্তকের বাইরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক কী কী বই পড়েছেন? 
আমি: স্যার, এম আর আখতার মুকুলের ‘আমি বিজয় দেখেছি’, মহিউদ্দিন আহমেদের ‘একাত্তর: যুদ্ধদিনের কথা’, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর ‘স্বাধীনতা একাত্তর’, শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ‘একাত্তরের দিনগুলি’ ইত্যাদি বই পড়েছি। 
১ম প্রশ্নকর্তা: ভালোই পড়েছেন। আচ্ছা, বর্তমানে একজন আলোচিত ব্যক্তি কোর্ট থেকে জামিন না পেয়েও বাড়িতে আছেন। এটা কীভাবে সম্ভব হলো? 
আমি: স্যার, CRPC ৪০১ নম্বর ধারা অনুযায়ী সরকার তাঁকে এই সুযোগ দিয়েছে।

১ম প্রশ্নকর্তা: কী আছে এই ধারায়? 
আমি: স্যার, এই ধারায় আছে সরকার চাইলে যেকোনো দণ্ডিত ব্যক্তির সাজা সাসপেন্ড অথবা রেমিট করে দিতে পারে। এটি শর্তযুক্ত হতে পারে আবার শর্ত ছাড়াও হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সরকার চাইলে, দণ্ড প্রদানকারী আদালতের মতামত নিতে পারেন। শর্তভঙ্গ করলে যেকোনো সময় সেই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা যাবে। 

১ম প্রশ্নকর্তা: পেনাল কোডের ৫৭ ধারায় কী আছে? 
আমি: স্যার, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের ক্ষেত্রে যখন ফ্র্যাকশন করার দরকার হবে সেটি হবে ৩০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড। 
১ম প্রশ্নকর্তা: কখন ফ্র্যাকশন করার দরকার হয়? 
আমি: স্যার, কারাদণ্ডের সঙ্গে যখন জরিমানা করা হয় এবং ইনডিফল্ট ইমপ্রিজনমেন্ট দেওয়া হয়, তখন ফ্র্যাকশন করার দরকার হয়। 
১ম প্রশ্নকর্তা: লাইফ ইমপ্রিজনমেন্ট নিয়ে সর্বশেষ প্রভিশন কী? 
আমি: স্যার, আতাউর মৃধা কেসের রিভিউ জাজমেন্ট মতে, life imprisonment মানে হলো ৩০ বছর। যদি বলে দেওয়া হয় life imprisonment till death, সে ক্ষেত্রে দণ্ডিতের অবশিষ্ট জীবন। 

২য় প্রশ্নকর্তা: The Specific Relief Act-এর ৪২ নম্বর ধারা কী নিয়ে বলা হয়েছে? 
আমি: স্যার, ডিক্লারেটরি ডিক্রি নিয়ে। কারও Right to Property অথবা Legal Character-এ যদি হুমকি আসে বা অস্বীকার করা হয় সে ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তি ডিক্লারেটরি ডিক্রি চাইতে পারেন। 

১ম প্রশ্নকর্তা: আপনি যে সৎ সেটা প্রমাণ করুন। 
আমি: স্যার, সততা একটি দীর্ঘদিনের গড়ে তোলা জীবন অভ্যাসের পদ্ধতি। ছোটখাটো বিষয় থেকে একটা সময় বড় জিনিসের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি হয়। আমি আমার জীবনে এ রকম ছোটখাটো বিষয়গুলোতেও সৎ থাকার চেষ্টা করেছি। কারণ, ছোট মিথ্যা বলতে বলতে একটা সময় বড় মিথ্যা বলতে গায়ে লাগে না। স্যার, আমার জীবনে আমি বড় ধরনের কোনো অসৎ কাজ করিনি। 
১ম প্রশ্নকর্তা: ৩০ বছর পরে আপনাকে কোথায় দেখতে চান? 
আমি: স্যার, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হিসেবে।

৩য় প্রশ্নকর্তা: কোন হলে থাকেন? 
আমি: হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে। 
৩য় প্রশ্নকর্তা: হাজী মুহম্মদ মুহসীন কে ছিলেন?
আমি: স্যার, বিখ্যাত দানবীর। যিনি ১৭৩৩ সালে জন্মগ্রহণ এবং ১৮১২ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
৩য় প্রশ্নকর্তা: Customary international law কী? 
আমি: কোনো ধরনের ট্রিটি বা কনভেনশন ছাড়াই রাষ্ট্রগুলো যেটা পালনকে বাধ্যতামূলক মনে করে। 
৩য় প্রশ্নকর্তা: সিমলা চুক্তি কোন দুই দেশের ভেতরে স্বাক্ষরিত হয়েছে? কী নিয়ে এই চুক্তি? 
আমি: স্যার, ভারত-পাকিস্তানের ভেতরে। দুই দেশের সম্পর্ককে স্বাভাবিক করার জন্য। 
৩য় প্রশ্নকর্তা: কারা এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন? 
আমি: স্যার, ইন্দিরা গান্ধী এবং জুলফিকার আলী ভুট্টো। 

২য় প্রশ্নকর্তা: রুশো কে? 
আমি: স্যার, একজন লেখক। যিনি ফরাসি বিপ্লবে অনুপ্রেরণা দিয়েছিলেন। 
২য় প্রশ্নকর্তা: রুশো কী বই লিখেছেন? 
আমি: সরি স্যার, এই মুহূর্তে মনে করতে পারছি না। 

১ম প্রশ্নকর্তা: ইউনিভার্সিটির হলের খাবার কেমন? 
আমি: স্যার, খুব একটা মানসম্মত নয়। তবে মেসের খাবার তুলনামূলক ভালো। 
১ম প্রশ্নকর্তা: খাবারের দামের পার্থক্য কেমন? 
আমি: স্যার, মেসে ২০০ টাকার মতো কম। 

৪র্থ প্রশ্নকর্তা: এই যে বললেন মেস। এটার বানান কী? 
আমি: Mess. 
৪র্থ প্রশ্নকর্তা: বানান ঠিক বলেছেন। 
১ম প্রশ্নকর্তা: ঠিক আছে, মি. তৌফিক। ভালো থাকবেন। ধন্যবাদ। সালাম দিয়ে বের হয়ে এলাম। 

অনুলিখন: শাহ বিলিয়া জুলফিকার