আমেরিকায় উচ্চশিক্ষা: স্বপ্নপূরণ সাজিদের

প্রকাশ : ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৮: ০২
আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪: ০০

সাজিদ কামাল ঢাকার বিএএফ শাহীন কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেছেন। এরপর বৃত্তি নিয়ে আমেরিকার সোয়ার্থমোর কলেজে স্নাতক পড়ার সুযোগ পান। সাজিদের পড়ার বিষয় কম্পিউটার সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং এবং স্ট্যাটিসটিকস। তাঁর বৃত্তি পাওয়ার পেছনের গল্প শুনেছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম

সাজিদের শৈশব কেটেছে রাজধানী ঢাকার মিরপুরে। নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম তাঁর। দুই ভাইবোনের মধ্যে বড় সাজিদ। মা গৃহিণী, বাবা একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। সাজিদের ছোটবেলার স্বপ্ন ছিল পাইলট হবেন। ভর্তি হন বিএএফ শাহীন কলেজে। পিএসইতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিও পান সাজিদ। একই প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন।

স্বপ্ন দেখার পথচলা
বিএএফ শাহীন কলেজে সাজিদের খুব কাছের এক বন্ধু ছিল। অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন ওই বন্ধু পরিবারের সঙ্গে লন্ডন চলে যান। তাঁর সঙ্গে প্রায়ই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাজিদের কথা হতো। তখন তাঁর কাছে বিদেশে পড়াশোনার মান, সুযোগ-সুবিধা এবং আর্থসামাজিক অবস্থার গল্প শুনতেন সাজিদ। এভাবেই বিদেশে পড়াশোনার আগ্রহ বাড়ে সাজিদের। প্রথমে অবশ্য ইচ্ছা ছিল লন্ডন যাওয়ার। কিন্তু লন্ডনের আকাশচুম্বী পড়াশোনার খরচ বহন করা কোনোভাবেই সম্ভব ছিল না তাঁর পক্ষে। পরে বিভিন্ন দেশে বৃত্তি নিয়ে পড়তে যাওয়ার ব্যাপারে খোঁজখবর নিতে থাকেন। এর মধ্যে একদিন টেন মিনিট স্কুলের ইউটিউব চ্যানেলে বৃষ্টি শিকদারের ভিডিও চোখে পড়ে। ভিডিওতে আমেরিকায় স্নাতক পর্যায়ে আবেদনের বিস্তারিত তথ্য পান সাজিদ। সেখানে ফুল-রাইড বৃত্তি পাওয়ার সব পদ্ধতিও জানতে পারেন। একাদশ শ্রেণিতে থাকাকালীন সাজিদ আমেরিকাতে বৃত্তির জন্য আবেদনের সিদ্ধান্ত নেন। 

যেভাবে বৃত্তি
সাজিদ আবেদন করার অনেক আগে থেকে প্রস্তুতি শুরু করেন। স্নাতকোত্তর/পিএইচডির জন্য যেমন জিআরই/জিম্যাট দরকার হয়, তেমনই স্নাতকে আবেদনের জন্য স্যাট দিতে হয়। সাজিদ উচ্চমাধ্যমিক থেকেই স্যাটের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন। এরপর ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্টের জন্য টোফেল দেন। অনেকে মনে করেন, আইইএলটিএসের ওপর বৃত্তি নির্ভর করে। কিন্তু এটি ভুল ধারণা। আবেদনের জন্য আইইএলটিএস/ টোফেল/ডুলিঙ্গ; যেকোনো একটি দিতে পারবেন। আমেরিকায় আবেদনের জন্য শিক্ষকদের থেকে তিনটি রিকমেন্ডেশন লেটার নিতে হয়। একটি প্রিন্সিপাল বা কাউন্সিলর একটি সায়েন্স/সোশ্যাল সায়েন্স এবং একটি হিউমিনিটিস। এ ছাড়া অ্যাপ্লিকেশনের জন্য নিজের ব্যাপারে ৬৫০ শব্দের একটি প্রবন্ধ লিখতে হয়, যাকে ‘কমন অ্যাপ অ্যাসে’ বলা হয়। সাজিদ ছয় মাস হাতে রেখে প্রবন্ধ লেখা শুরু করেন। ইন্টারভিউ প্রস্তুতির ক্ষেত্রে তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে মক ইন্টারভিউ দিতেন। আমেরিকাতে স্নাতকে আবেদনের জন্য ‘কমন অ্যাপ্লিকেশন’ নামে একটি ওয়েবসাইট রয়েছে। সেখানে নিম্ন/মধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীরা বিনা খরচে ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করতে পারে। স্নাতকের জন্য আমেরিকার কলেজগুলো এসব বিবেচনা করে বৃত্তি দিয়ে থাকে, যাকে ‘হোলিস্টিক’ পদ্ধতি বলে। এখানে অনেক ফ্যাক্টরের ওপর বৃত্তি দেওয়া হয়। কলেজ অনুসারে কিছু কিছু কলেজ ‘নিড বেসড’ এবং কিছু কিছু কলেজ ‘নিড-ব্লাইন্ড’ পদ্ধতিতে বৃত্তি দিয়ে থাকে। কোনো প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নের সুযোগ পেলে ওই প্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করতে যত টাকা দরকার হবে, তা দেওয়া হয়। সাজিদ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ অ্যাপ্লিকেশন সাবমিট করেন। এরপর ফেব্রুয়ারি মাসে সোয়ার্থমোর কলেজ থেকে অফার লেটার পান।

 যেসব বিষয়ে পড়া যাবে
আমেরিকার আন্ডার গ্র্যাজুয়েটের পদ্ধতি বাংলাদেশ থেকে একটু ভিন্ন। এখানে স্কলারশিপের সঙ্গে বিষয়/বিভাগ নির্দিষ্ট করা থাকে না। আমেরিকাতে বৃত্তিসহ বা বৃত্তি ছাড়া পড়তে এলে প্রথম দুই বছর একটি নির্দিষ্ট ক্রেডিট মেইনটেইন করে যা ইচ্ছা পড়তে পারবেন। এরপর দ্বিতীয় বর্ষের শেষের দিকে এসে বিভাগ/বিষয় সিলেক্ট করবেন। অর্থাৎ এখানে যেকোনো বিষয়ে পড়া সম্ভব। সাজিদ বর্তমানে কম্পিউটার সায়েন্স মেজর এবং সঙ্গে ইঞ্জিনিয়ারিং আর স্ট্যাটিসটিকস ডাবল মাইনর নিয়ে পড়াশোনা করছেন।

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র 
পাসপোর্ট, এসএসসি/ও-লেভেল, এইচএসসি/এ-লেভেল, স্যাট (অপশনাল) ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্ট রেজাল্ট (আইইএলটিএস/টোফেল/ডুলিঙ্গ), কমন অ্যাপ্লিকেশন, রিকমেন্ডেশন লেটার, ইন্টারভিউ (অপশনাল) বৃত্তি পেতে এসব গুরুত্বপূর্ণ রেজাল্ট এবং কাগজপত্র লাগবে।

বৃত্তির সুযোগ-সুবিধা 
আমেরিকায় পড়াশোনা করতে এলে এফ-১ ভিসা নিয়ে আসতে হবে। এফ-১ ভিসায় ক্লাস থাকাকালীন প্রতি সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজ করতে পারবেন। সামার ভ্যাকেশনে সিপিটি/ওপিটি (কাজ করার সনদ) দিয়ে ৪০ ঘণ্টা কাজ করতে পারবেন। সাজিদ গত সামারে সিটিপি দিয়ে তিন মাসের জন্য আমাজনে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান।

বৃত্তি পেতে পরামর্শ 
নতুনদের প্রতি সাজিদ কামাল বলেন, ‘প্রথমেই আমেরিকার বিভিন্ন কলেজ সম্পর্কে বিস্তর গবেষণা করতে হবে। আমেরিকার সব কলেজের ওয়েবসাইটে সব ধরনের তথ্য থাকে। এ ছাড়া ইউটিউবে কলেজের নিজেদের চ্যানেলের ভিডিও দেখা যেতে পারে। বর্তমানে যারা এসব প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত, তাঁদের সঙ্গে নেটওয়ার্কিং করে আরও তথ্য জানা যেতে পারে। অনেকেই ভাবে, আমেরিকাতে আন্ডার গ্র্যাজুয়েট পড়তে আসা মানেই লাখ লাখ টাকার ব্যাপার, এটা আসলে সত্য নয়। মেধা ও যোগ্যতা থাকলে আমেরিকাতে পড়তে আসার জন্য কোনো টাকার দরকার হবে না। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে, আমেরিকার আবেদন প্রক্রিয়া অনেক দীর্ঘ। এ জন্য স্নাতক পড়ার জন্য ইন্টারমিডিয়েট থেকে প্রস্তুতি শুরু করতে হবে।

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাঙ্গাইলে দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার

পুলিশ ফাঁড়ি দখল করে অফিস বানিয়েছেন সন্ত্রাসী নুরু

ঢাকার রাস্তায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালকদের বিক্ষোভ, জনদুর্ভোগ চরমে

শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সুরক্ষায় নতুন উদ্যোগ

জাতিকে ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল নির্বাচন উপহার দিতে চাই: নতুন সিইসি

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত